সূচনা: প্রাচীন রােম ও প্রাচীন ভারতে দাসপ্রথার অস্তিত্ব ছিল। উভয় দেশের দাসপ্রথার মধ্যে কিছু সাদৃশ্য ও কিছু বৈসাদৃশ্য লক্ষ করা যায়।

প্রাচীন রােম ও প্রাচীন ভারতের দাসপ্রথার সাদৃশ্য

প্রাচীন রােম

  • প্রাচীন রােমে ক্রীতদাসরা তাদের প্রভুর গৃহ, খামারবাড়ি, কৃষিক্ষেত্র, ব্যাবসা ও অন্যান্য যাবতীয় ক্ষেত্রের পরিশ্রমসাধ্য কাজগুলি সম্পাদন করত।

  • প্রাচীন রােমে ক্রীতদাসরা পালানাের চেষ্টা করলে বা নির্দিষ্ট কাজ যথাসময়ে শেষ না করতে পারলে প্রভুরা ক্রীতদাসদের ওপর সীমাহীন অত্যাচার চালাত। শারীরিক নির্যাতনের ফলে ক্রীতদাসের শরীরের নানা স্থানে সর্বদা ক্ষত হয়ে থাকত।

প্রাচীন ভারত

  • প্রাচীন ভারতেও পরাজিত শত্রুপক্ষের যুদ্ধবন্দিদের ক্রীতদাসে পরিণত করা হত। এ ছাড়া বিদেশ থেকে ভারতে ক্রীতদাস আমদানি করা হত।

  • প্রাচীন ভারতেও ক্রীতদাসরা তাদের প্রভুর গৃহ, খামারবাড়ি, কৃষিক্ষেত্র, ব্যাবসা ও অন্যান্য যাবতীয় ক্ষেত্রের পরিশ্রমসাধ্য কাজগুলি সম্পাদন করত।

  • প্রাচীন ভারতেও ক্রীতদাসদের ওপর তাদের প্রভুরা সীমাহীন নির্যাতন চালাত। পালানাের চেষ্টা, পর্যাপ্ত পরিশ্রম না করা প্রভৃতিই ছিল নির্যাতনের প্রধান কারণ।

প্রাচীন রােম ও প্রাচীন ভারতের দাসপ্রথার বৈসাদৃশ্য

প্রাচীন রােম

  • প্রাচীন ভারতের তুলনায় প্রাচীন রােমে দাসপ্রথার প্রসার বা ব্যাপকতা ছিল অনেকটাই বেশি। বস্তুত রােমের একটি বড়াে অংশের মানুষই ছিল ক্রীতদাস।

  • প্রাচীন রােমের প্রায় প্রতিটি ধনী ব্যক্তির অধীনেই কিছু সংখ্যক ক্রীতদাস থাকত। তারা ক্রীতদাসদের দিয়েই যাবতীয় কাজ করাত। এর ফলে রােমের। অর্থনীতি সম্পূর্ণরূপে ক্রীতদাসদের শ্রম-নির্ভর হয়ে পড়ে।

  • প্রাচীন রােমে সরকার ক্রীতদাস রাখার জন্য দাস মালিকদের কাছ থেকে কর আদায় করত। এর  বিনিময়ে সরকার ক্রীতদাস প্রথাকে মদত দিত।

  • প্রাচীন রােমের ক্রীতদাসরা ছিল সম্পূর্ণরূপে পরাধীন। তারা সমাজ, রাষ্ট্র, আইনকানুন প্রভৃতি কোনাে ক্ষেত্রে কোনাে অধিকার বা সুবিধা পেত না।

  • প্রাচীন রােমে ক্রীতদাসরা ছিল তাদের প্রভুর ব্যক্তিগত সম্পত্তি। প্রভুরা তাদের অধীনস্ত ক্রীতদাসদের বন্ধক, বিক্রি, এমনকি হত্যাও করতে পারত।

  • প্রাচীন রােমে ক্রীতদাসরা মদ, মাংস, তেল, বিভিন্ন পণ্যসামগ্রীসহ নানান রপ্তানিপণ্য উৎপাদন করত। এসব বাণিজ্যিক পণ্য বিদেশে রপ্তানি করে রােমের যথেষ্ট অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এসেছিল।

  • প্রাচীন রােমে মালিকের সঙ্গে ক্রীতদাসদের সম্পর্ক ছিল প্রভু-ভূত্যের। সেখানকার ক্রীতদাসদের জীবন ছিল বদ্ধ। তাদের পালানো প্রতিরােধ করতে হাতে-পায়ে শেকল দিয়ে বেঁধে এবং গলায় ধাতব গলাবন্ধনী পরিয়ে রাখা হত।

  • প্রাচীন রােমে সাধারণ নাগরিকদের অবসর বিনােদনের উদ্দেশ্যে ক্রীতদাসদের গ্ল্যাডিয়েটরের লড়াই নামে এক নিষ্ঠুর অমানবিক খেলায় অংশ নিতে হত।

  • প্রাচীন রােমে কোনাে কোনাে ক্ষেত্রে প্রভু ও তাদের অধীনস্ত ক্রীতদাসদের মধ্যে সহমর্মিতা প্রকাশের উদ্দেশ্যে সতুরনালিয়া নামে উৎসব অনুষ্ঠিত হত।

প্রাচীন ভারত

  • প্রাচীন ভারতে প্রতিটি ধনী ব্যক্তির অধীনে ক্রীতদাস থাকত না। কৃষি বা শিল্পের কাজে ব্যুক্ষেত্রে সাধারণ শ্রমিক ও মজুর নিযুক্ত হত। ফলে ভারতের অর্থনীতি সম্পূর্ণরূপে ক্রীতদাসদের শ্রম-নির্ভর হয়ে পড়েনি।

  • প্রাচীন ভারতে সরকার ক্রীতদাস রাখার জন্য দাস মালিকদের কাছ থেকে কর আদায় করত না। তাই সরকারি কাজের বাইরে ক্রীতদাস প্রথাকে মদত দেওয়ার প্রশ্ন ছিল না।

  • প্রাচীন ভারতের ক্রীতদাসরা রােমের ক্রীতদাসদের তুলনায় কিছুটা স্বাধীন ছিল। রাষ্ট্র, সমাজ, আইনকানুন প্রভৃতি বিষয়ে তারা কিছু কিছু অধিকার ভােগ করত।

  • প্রাচীন ভারতে ক্রীতদাসরা তাদের প্রভুর ব্যক্তিগত সম্পত্তি হলেও প্রভু ক্রীতদাসদের হত্যা করতে পারত না। তবে ক্রীতদাসদের বন্ধক বা বিক্রি করার অধিকার প্রভুদের ছিল।

  • প্রাচীন ভারতেও ক্রীতদাসরা বিভিন্ন উৎপাদনমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকত। তবে সমগ্র দেশের বিচারে এই উৎপাদন ছিল সামান্য। তাই এসব পণ্য রপ্তানি করে রােমের মতাে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ভারতে আসেনি।

  • প্রাচীন ভারতে ক্রীতদাসদের জীবন প্রাচীন রোমের ক্রীতদাসদের মতাে এতটা বদ্ধ ছিল না। বহু ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, ভারতের ক্রীতদাসরা তাদের প্রভুর কাছ থেকে পারিবারিক সদস্যের মতো ব্যবহার পেত।