বায়ুমণ্ডলের নীচের স্তরে গ্রিনহাউস গ্যাসের বৃদ্ধির প্রধান ফলাফল হল, পৃথিবী জুড়ে গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি, যা বিশ্ব উন্নয়ন (Global Warming) নামে পরিচিত। পৃথিবীর এরূপ তাপমাত্রা বৃদ্ধির কুপ্রভাব পরিবেশে লক্ষ করা যায়।

[1] জলবায়ুর পরিবর্তন : পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বাড়ার ফলে (প্রায় 1.5 °সে. বেড়েছে) পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটেছে। শীতের প্রকোপ কমেছে ও গ্রীষ্মের প্রকোপ বেড়েছে। নীতিশীতােয় জলবায়ু উয়তর হচ্ছে। ঋতুগুলাের অনিয়মিত আগমণ লক্ষ করা যাচ্ছে। পৃথিবীতে বজ্রঝড়, ঘূর্ণিঝড়, খরা ইত্যাদির প্রকোপ ধীরে ধীরে বাড়ছে।

[2] সমুদ্রজলের উষ্ণতা বৃদ্ধি : বিশ্ব উয়ায়নের ফলে সমুদ্রজলের গড় উষ্ণতা ক্রমশ বাড়ছে। এর ফলে সমুদ্রজলে কার্বন ডাইঅক্সাইড শােষণের পরিমাণ কমছে। পরিণতিস্বরূপ উদ্ভিদ প্ল্যাঙ্কটনগুলি কার্বন ডাইঅক্সাইডের অভাবে খাদ্য তৈরি করতে পারছে না ও মারা যাচ্ছে। এ ছাড়া সমুদ্রজলের উষ্ণতা বাড়ায় প্রবাল কীটসহ অন্যান্য বহু জলজ প্রাণীর অস্তিত্ব বিপন্ন হচ্ছে। সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের বিনাশ ঘটছে।

[3] বরফ ও হিমবাহের গলন : তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে মেরু অঞ্চলের বরফ, জলে ভাসমান হিমশৈল ও পার্বত্য অঞ্চলের হিমবাহ গলতে শুরু করেছে। ফলে সমুদ্রজলের উচ্চতার পরিমাণ বাড়ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য হিমালয়ের অমরনাথ গুহায় বরফের শিবলিঙ্গের উচ্চতা কমে গেছে। বিশ্ব উয়ায়নের ফলে হিমবাহের পশ্চাদপসরণ (Glacial Retreat) ঘটছে ও হিমরেখার উচ্চতা বাড়ছে।

[4] সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি : পুরু বরফের স্তর গলতে থাকায় সমুদ্রজলের পরিমাণ ও জলপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার কারণে উপকূলবর্তী এলাকার নীচু অংশ ক্রমশ জলে ডুবে যাবে, ক্ষয়চক্র ব্যাহত হবে, সমুদ্রে নােনা জলের প্রবেশে মাটি অনুর্বর হবে, সমুদ্রজলের উয়তার তারতম্যের জন্য সমুদ্রস্রোতের পরিবর্তন, সামুদ্রিক জীবজন্তু ও উদ্ভিদের মৃত্যু ঘটবে।

[5] কৃষিজমির পরিমাণ হ্রাস ও শস্য উৎপাদনের স্থান পরিবর্তন : তাপমাত্রার পরিবর্তনের কারণে দেখা যাচ্ছে যে, কুলু উপত্যকায় আপেল চাষের স্থানে পেঁয়াজ-রসুনের চাষ হচ্ছে এবং সেই সঙ্গে কৃষিজমির পরিমাণও কমছে।

[6] জীববৈচিত্র্য ধ্বংস : বিশ্ব উয়ায়নের ফলে অসংখ্য প্রাণী ও উদ্ভিদ চিরতরে হারিয়ে যাবে। গবেষক ডেনিস মার্কির পর্যবেক্ষণ-জনিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বায়ুমণ্ডলের গড় উষ্মতা 3° সে. বৃদ্ধি পেলে 40% স্তন্যপায়ী প্রজাতি এবং কয়েক শতাংশ পাখি চিরতরে বিলুপ্ত হবে।

[7] উদ্ভিদের বিনাশ : তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ, ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ ধ্বংস হবে এবং অত্যাধিক তাপমাত্রাজনিত কারণে দাবানলের সংখ্যাও বাড়বে।

[8] জলের জোগানে ঘটিতি : তাপমাত্রা বাড়ার কারণে বাষ্পীভবন দ্রুততর হবে। ফলে ভূপৃষ্ঠে হ্রদ, নদী, জলাশয়ের জলের পরিমাণ কমবে। এ ছাড়া মৃত্তিকায় আর্দ্রতার পরিমাণ হ্রাস পেলে ভূগর্ভের জলে টান পড়বে।