ভারতের অভ্যন্তরীণ এবং সামুদ্রিক মৎস্য উৎপাদনে অভাবনীয় উন্নতির যে ঘটনা তাকে নীল বিপ্লব বলে। ভারত সরকার মৎস্যের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য একগুচ্ছ কর্মসূচি গ্রহণ করে। যেমন—উন্নত প্রযুক্তির সাহায্য মৎস্য প্রজনন, মৎস্যের সঠিক বিপণন এবং মৎস্যের রপ্তানি বৃদ্ধি ইত্যাদি। যার ফলে মৎস্যের উৎপাদন অভাবনীয়ভাবে বেড়ে যায় যা পরবর্তীকালে নীল বিপ্লব নামে পরিচিত হয়। সাধারণত 1960-এর দশককে নীল বিপ্লবের সূচনাকাল হিসেবে ধরা হয়।
1960-এর দশকে ভারত সরকার মৎস্যের উৎপাদন বৃদ্ধি করার জন্য যেসব উদ্যোগগুলি গ্রহণ করে তা পরবর্তীকালে নীল বিপ্লবের উদ্দেশ্য হিসেবে পরিচিত। এই উদ্দেশ্যগুলি ছিল—
(১) খাদ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা : ধান, গম, ডাল ইত্যাদি ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি খাদ্য সুরক্ষা সুনিশ্চিতের জন্য ভারত সরকার অভ্যন্তরীণ ও সামুদ্রিক মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধির দিকে নজর দেয়।
(২) পুষ্টি সুরক্ষা নিশ্চিত করা : মাছ পুষ্টিকর খাদ্য। তাই পুষ্টি সুরক্ষা নিশ্চিত করতে মৎস্যের উৎপাদন বাড়ানাে জরুরি।
(৩) কর্মসংস্থানের সুযোগ : মৎস্য চাষ, বিপণন ও মৎস্যভিত্তিক শিল্পকে কেন্দ্র করে বহু মানুষের কর্মসংস্থানের সুযােগ হয়।
(৪) বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন : মৎস্য ও মৎস্য শিল্পজাত সামগ্রী বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যায়।
(১) অভ্যন্তরীণ মৎস্য উৎপাদন : ভারতে উৎপাদিত মৎস্যের মােট 60% আসে অভ্যন্তরীণ মৎস্য ক্ষেত্র থেকে। 1950-51 খ্রিস্টাব্দে ভারতে অভ্যন্তরীণ মৎস্য উৎপাদিত হত 2.18 লক্ষ টন, 2011-12 খ্রিস্টাব্দে তা বেড়ে হয় 49.81 লক্ষ টন। অভ্যন্তরীণ মৎস্য উৎপাদনে অগ্রণী রাজ্যগুলি হল -পশ্চিমবঙ্গ, অবিভক্ত অপ্রদেশ, ওডিশা, কর্ণাটক ও তামিলনাড়ু ইত্যাদি।
(২) সামুদ্রিক মৎস্য উৎপাদন : ভারতে উৎপাদিত মৎস্যের মােট 40% আসে সমুদ্র থেকে। 1950-51 খ্রিস্টাব্দে ভারতে সামুদ্রিক মৎস্য উৎপাদিত হত 5.34 লক্ষ টন, 2010-11 খ্রিস্টাব্দে তা বেড়ে হয় 32.49 লক্ষ টন। সামুদ্রিক মৎস্য উৎপাদনে অগ্রণী রাজ্যগুলি হল—গুজরাত, কেরল, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, অবিভক্ত অন্ধপ্রদেশ ও কর্ণাটক ইত্যাদি।
(৩) মােট মৎস্য উৎপাদন : নীল বিপ্লবের ফলে মােট মৎস্য উৎপাদনে ভারত উল্লেখযােগ্য অগ্রগতি ঘটিয়েছে। 1950-51 খ্রিস্টাব্দে ভারতে মােট 7.52 লক্ষ টন মৎস্য উৎপাদিত হত। 2010-11 খ্রিস্টাব্দে তা বেড়ে হয় 82.31 লক্ষ টন।
(৪) মৎস্য বন্দর নির্মাণ : মৎস্য সংগ্রহের জন্য 5 টি বড়াে মাপের সামুদ্রিক মৎস্য বন্দর (কোচি, চেন্নাই, বিশাখাপত্তনম, রায়চক ও পারাদ্বীপ), 28 টি ছােটো মাপের বন্দর এবং 113 টি মৎস্য আহরণ কেন্দ্র গড়ে তােলা হয়েছে।
Leave a comment