প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ওডিশায় ব্রাত্মণী নদীর তীরে জার্মানির কুপস ও ডেমাগ কোম্পানির সহায়তায় রাউরকেলা ইস্পাত কারখানাটি গড়ে ওঠে। এই কারখানাটি মূলত লােহা-আকরিক নির্ভর। রাউরকেলা ইস্পাত কারখানা গড়ে ওঠার কারণগুলি হল一

[1] আকরিক লােহা : ওডিশার কিরিবুরু, ময়ূরভঞ্জ থেকে আকরিক লােহা পাওয়ার সুবিধা।

[2] কয়লা : ঝরিয়া ও গিরিডি থেকে কয়লা পাওয়ার সুবিধা।

[3] চুনাপাথর : বীরমিত্রপুর থেকে চুনাপাথর ও কালাহাণ্ডি থেকে ম্যাঙ্গানিজ পাওয়ার সুবিধা।

[4] বিদ্যুৎশক্তি : হীরাকুঁদ প্রকল্পের জলবিদ্যুৎ ও রাউরকেলার নিজস্ব তাপবিদ্যুতের জোগান।

[5] জল : ব্রাহ়্মণী ও কোয়েল নদীর জলাধার থেকে জল সরবরাহের সুবিধা।

[6] পরিবহণ ব্যবস্থা : দক্ষিণ-পূর্ব রেলপথ এবং জাতীয় সড়কপথের মাধ্যমে পরিবহণের সুবিধা।

[7] বন্দরের সান্নিধ্য : পারাদ্বীপ, কলকাতা-হলদিয়া ও বিশাখাপত্তনম বন্দরের মাধ্যমে বাণিজ্যের সুবিধা।

কলকাতার 158 কিমি উত্তর পশ্চিমে, গ্র্যান্ড ট্রাংক রােড-এর ওপর। দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় সরকারি উদ্যোগে পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুরে ব্রিটিশ কারিগরি সহযােগিতায় একটি ইস্পাত কারখানা গড়ে তােলা হয়। দুর্গাপুরের এই কারখানাটি মূলত কয়লার। উৎসের উপর নির্ভর করে গড়ে তােলা হয়েছে। দুর্গাপুরে লৌহ ইস্পাত শিল্প গড়ে ওঠার কারণগুলি হল

[1] আকরিক লােহা : ওডিশার ময়ূরভঞ্জ, সুলাইপাত, বাদামপাহাড়, গােরুমহিষানি এবং ঝাড়খণ্ডের সিংভূম থেকে উন্নত আকরিক লােহা পাওয়ার সুবিধা।

[2] কয়লা : পশ্চিমবঙ্গের রানিগঞ্জ ও ঝাড়খণ্ডের ঝরিয়া অঞ্চল থেকে কয়লা পাওয়ার সুবিধা।

[3] ম্যাঙ্গানিজ, ডলোমাইট ও চুনাপাথর : ওডিশার বােনাই থেকে ম্যাঙ্গানিজ, সুন্দরগড় থেকে ডলােমাইট এবং বীরমিত্রপুর থেকে চুনাপাথর পাওয়ার সুবিধা।

[4] জল : দামােদর নদ ও দুর্গাপুর জলাধার থেকে জল পাওয়ার সুবিধা।

[5] বিদ্যুৎশক্তি : D.V.C. থেকে জলবিদ্যুৎ ও তাপবিদ্যুৎ এবং নিজস্ব কেন্দ্র থেকে তাপবিদ্যুৎ পাওয়ার সুবিধা।

[6] পরিবহণ ব্যবস্থা : পূর্ব রেলপথ, সড়কপথ ও দামােদর খালের মাধ্যমে সহজে পণ্য পরিবহণ।

[7] সুলভ শ্রমিক : স্থানীয় ঘন বসতিপূর্ণ অঞ্চল থেকে শ্রমিক পাওয়ার সুবিধা।

[8] চাহিদা : নিকটবর্তী হুগলি শিল্পাঞ্চলে ইস্পাতের চাহিদা।

[9] বন্দরের সান্নিধ্য : কলকাতা-হলদিয়া বন্দরের মাধ্যমে বাণিজ্যের সুবিধা এই শিল্পাঞ্চলের বিকাশে সহায়তা করেছে।

জার্মানির রুর শিল্পাঞ্চলের মতাে দুর্গাপুর শিল্পনগরীও প্রধানত দামােদর উপত্যকার কয়লাখনি অঞ্চলের ওপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে বলে, দুর্গাপুরকে ভারতে রুর বলা হয়।