যে অভিক্ষেপে একটি সৃজনী ভূগােলককে বৃত্তাকার বেলনের অভ্যন্তরে কল্পনা করা হয় এবং কেবল সৃজনী ভূগােলকের নিরক্ষরেখা বৃত্তাকার বেলনের গাত্র স্পর্শ করে থাকে সেই অভিক্ষেপকে সমক্ষেত্রফলবিশিষ্ট বেলন অভিক্ষেপ বলে। এই অভিক্ষেপের স্রষ্টা হলেন জার্মান মানচিত্রবিদ জোহান হেনরিখ ল্যামবার্ট (Johann Heinrich Lambert)। এটি একটি অদৃশ্যানুগ (Non-perspective) শ্রেণির অভিক্ষেপ।

সমক্ষেত্রফলবিশিষ্ট বেলন অভিক্ষেপের নীতি

এই অভিক্ষেপের অভিক্ষেপ তলটি হল চোঙ বা বেলন, এটি সৃজনী ভূগোলকের নিরক্ষরেখাকে স্পর্শ করে থাকে। এখানে অভিক্ষিপ্ত অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমারেখাগুলি সরলরেখার মতাে হয় এবং অক্ষরেখাগুলি নিরক্ষরেখার সমান্তরালে অভিক্ষিপ্ত হয়। প্রত্যেকটি অক্ষরেখার দৈর্ঘ্য নিরক্ষরেখার সমান এবং সমান দূরত্বে অবস্থান করে। নিরক্ষরেখা থেকে যত মেরুর দিকে যাওয়া যায় অক্ষরেখাগুলির মধ্যেকার‌ দূরত্ব তত দ্রুত হ্রাস পেতে থাকে।

সমক্ষেত্রফলবিশিষ্ট বেলন অভিক্ষেপের গুণাগুণ বা ধর্ম

  • সমক্ষেত্রফলবিশিষ্ট বেনল অভিক্ষেপে অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমারেখা উভয়ই সরলরেখার দ্বারা অঙ্কন করা হয় এবং একটি অপরটির সঙ্গে লম্বভাবে অবস্থান করে।

  • এই ধরনের অভিক্ষেপে অক্ষরেখার দৈর্ঘ্য নিরক্ষরেখার দৈর্ঘ্যের সমান (27R) হয় এবং সকল দ্রাঘিমারেখার দৈর্ঘ্য পৃথিবীর ব্যাস-এর সমান (2R)।

  • নিরক্ষরেখা থেকে মেরুর দিকে স্কেল, আকৃতি, দূরত্ব প্রভৃতির বিচ্যুতি ক্রমশ দ্রুত হারে বাড়তে থাকে। এই বিচ্যুতির পরিমাণ নিরক্ষরেখায় শূন্য এবং মেরুবিন্দুতে সর্বাধিক।

  • এই অভিক্ষেপ নিরক্ষীয় অঞ্চলের দেশগুলির মানচিত্র অঙ্কনে ব্যবহৃত হয়। যেমন—আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা ইত্যাদি।

সমক্ষেত্রফলবিশিষ্ট বেলন অভিক্ষেপের সীমাবদ্ধতা

মােটামুটিভাবে 30° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষরেখা পর্যন্ত স্কেলের বিচ্যুতির পরিমাণ খুবই কম থাকে। তাই, ওই অংশের মধ্যে বিস্তৃত দেশ বা মহাদেশের আকৃতি প্রায় ঠিকমততা বজায় থাকে। 30° অক্ষাংশের পর মেরুর দিকে মহাদেশগুলির আকৃতির প্রচণ্ড বিকৃতি ঘটে। মেরুবৃত্ত প্রদেশীয় অঞ্চলের বিকৃতি সবচেয়ে বেশি। সেই কারণে গ্রিনল্যান্ড, উত্তর আমেরিকা ও কুমেরু মহাদেশকে এই অভিক্ষেপে ভালােভাবে আঁকা যায় না।