পরস্পর ছেদকারী দ্রাঘিমারেখা ও অক্ষরেখার জালিকাকে সাধারণত গ্র্যাটিকিউল বলে।


ভূগােলকের যে অক্ষরেখা বরাবর শঙ্কু বা বেলন তল স্পর্শক- রূপে অবস্থান করে সেই অক্ষরেখাকে প্রমাণ অক্ষরেখা বলে।


প্রমাণ অক্ষরেখার বৈশিষ্ট্যগুলি হল- (i) প্রমাণ অক্ষরেখার সুনির্দিষ্ট ব্যাসার্ধ থাকে। (ii) প্রমাণ অক্ষরেখার স্কেল ঠিক থাকে এবং মানচিত্রের এই অক্ষরেখার দৈর্ঘ্য সৃজনী ভূগােলকের ওই অক্ষরেখার দৈর্ঘ্যের সমান হয়।


অভিক্ষেপে দ্রাঘিমাগত বিস্তৃতির ঠিক মাঝখানে অবস্থিত দ্রাঘিমারেখাটিকে মধ্য দ্রাঘিমারেখা বলা হয়।


(i) এটি অভিক্ষেপের মাঝখানের সরলরেখাটিকে নির্দেশ করে। (ii) এই রেখা বরাবর স্কেল সর্বত্র ঠিক থাকে এবং অভিক্ষেপে মহাবৃত্তের অংশরূপে অবস্থান করে।


সৃজনী ভূগােলকের একটি বিন্দুতে যখন কোনাে সমতল পৃষ্ঠকে স্পর্শকরূপে কল্পনা করা হয় এবং সেইমত অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমারেখাকে ওই তলের ওপর স্থানান্তরের মাধ্যমে অভিক্ষেপ অঙ্কন করা হয় তখন তাকে প্ল্যানার অভিক্ষেপ বলে।


যখন শঙ্কু পৃষ্ঠ সৃজনী ভূগােলকের একটি অথবা দুটি অক্ষরেখাকে স্পর্শকরূপে বেষ্টন করে থাকে এবং ওই স্পর্শক তলে অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমারেখাগুলি স্থানান্তরিত হয় বা বিকশিত হয়ে যেসব অভিক্ষেপ গঠন করে, তাদের শাঙ্কব অভিক্ষেপ বলে।


সৃজনী ভূগােলককে বেলন পৃষ্ঠের সঙ্গে স্পর্শ করিয়ে বা ছেদ ঘটিয়ে বেলন তলে অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমারেখাগুলিকে স্থানান্তর করা হয়। এভাবে গঠিত অভিক্ষেপকে বেলন অভিক্ষেপ বলে।


একটি নির্দিষ্ট উৎস বিন্দু থেকে আলােকরশ্মির বিচ্ছুরণের ফলে কোনাে তলের ওপর স্বচ্ছ ভূগােলকের অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমারেখার জালিকা প্রতিস্থাপিত হয়ে যে অভিক্ষেপ গঠন করে তাকে দৃশ্যানুগ অভিক্ষেপ বলে।


দৃশ্যানুগ অভিক্ষেপের বৈশিষ্ট্যগুলি হল- (i) এই শ্রেণির অভিক্ষেপে আলাের উৎস ভূগােলকের বিভিন্ন বিন্দুতে এমনকি বাইরের থেকেও হতে পারে। (ii) আলাের উৎসের অবস্থান অভিক্ষেপের ধর্মকে প্রভাবিত করে।


কোনাে নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যপূরণের জন্য যখন এক শ্রেণির ছেদরেখাগুলিকে (ধরা যাক, সমাক্ষরেখা) দৃশ্যানুগভাবে এবং অন্যশ্রেণির ছেদরেখাগুলিকে (যেমন, দ্রাঘিমারেখা) অন্যভাবে (গাণিতিকভাবে), কোনাে তলের ওপর প্রতিস্থাপন করে অভিক্ষেপ গঠন করা হয়, তখন সেই অভিক্ষেপকে প্রায় দৃশ্যানুগ অভিক্ষেপ বলে।


কোনাে নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য সাধনের জন্য আলাের উৎস ছাড়াই যখন সুনির্দিষ্ট নীতি, অনুসরণ করে কোনাে তলের ওপর গ্র্যাটিকিউল অঙ্কন করা হয়, তখন তাকে অদৃশ্যানুগ অভিক্ষেপ বলে।


(i) নির্দিষ্ট নীতির ওপর অভিক্ষেপের গুণ বা ধর্ম নির্ভর করে। (ii) ভূগােলকের কোনাে বিন্দু অভিক্ষেপ পূষ্ঠের কোথায় অবস্থান করবে তা নির্ভর করে অভিক্ষেপের নির্দিষ্ট কোনাে গুণ বা ধর্ম বজায় রাখার ওপর।


নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যপূরণ করতে আলাের উৎস ছাড়াই এবং বিকাশযােগ্য তল হাড়াই পুরােপুরি গাণিতিক পদ্ধতি অনুসরণ করে গ্র্যাটিকিউল আঁকা হলে তাকে প্রচলিত বা কনভেনশনাল অভিক্ষেপ বলে।


(i) অক্ষরেখাগুলি এক কেন্দ্রবিশিষ্ট বৃত্তচাপ নির্দেশ করে এবং পরস্পর সমান্তরালে অবস্থান করে। (ii) দ্রাঘিমারেখা গুলি অভিক্ষেপের কেন্দ্র থেকে বাইরের দিকে সরলরেখায় ছড়িয়ে পড়ে থাকে বলে কেন্দ্রবিমুখ সরলরেখা।


এক বা দুই প্রমাণ অক্ষরেখাবিশিষ্ট সহজ শাঙ্কব অভিক্ষেপ।


প্রমাণ অক্ষরেখা যে গােলার্ধের অবস্থান করে শঙ্কুর শীর্ষ সেই গােলার্ধের মেরুবিন্দুর দিকে অবস্থান করে।


অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমারেখাগুলি সরলরেখায় পরস্পরের সমকোণে অবস্থান করে। এর জন্য বেলন অভিক্ষেপটি আয়তাকৃতি হয়।


সৃজনী ভূগােলককে একটি বেলনের মধ্যে স্থাপন করা হলে স্বাভাবিকভাবে নিরক্ষরেখার সঙ্গ বেলন তল স্পর্শক হবে।


মানচিত্র অভিক্ষেপে ভূগােলকের আকৃতি বা রূপ (Shape), ক্ষেত্রফল, (Area), দূরত্ব (Distance), দিক (Direction)-ধর্ম বজায় থাকে।


কেবল দ্রাঘিমারেখা বরাবর সমদূরবর্তী ধর্ম বজায় থাকে। অক্ষরেখা বরাবর নয়।


যে সমস্ত দেশের অক্ষাংশগত বিস্তৃতি কম কিন্তু দ্রাঘিমাংশগত বিস্তৃতি তুলনামূলকভাবে বেশি সেইসব দেশের মানচিত্র এই অভিক্ষেপে আঁকা হয়। সাধারণত মধ্য অক্ষাংশ বা নাতিশীতােয় অঞ্চলের দেশগুলি এই অভিক্ষেপে আঁকা হয়।


সমক্ষেত্রফলবিশিষ্ট বেলন অভিক্ষেপে পৃথিবীর মানচিত্র আঁকা গেলেও নাতিশীতােয় ও মেরু অঞ্চলের বিচ্যুতির পরিমাণ বেশি হওয়ায় মূলত ক্রান্তীয় অঞ্চলের দেশ বা মহাদেশের মানচিত্র এর ওপর আঁকা হয়। সমক্ষেত্রফল বজায় থাকার কারণে ক্রান্তীয় অঞ্চলের জনসংখ্যা, বনজ ও খনিজ সম্পদের বণ্টন, কৃষি অঞ্চল ইত্যাদি এই অভিক্ষেপে যথাযথভাবে দেখানাে সম্ভব। সমগ্র পৃথিবীর মানচিত্র এই অভিক্ষেপে কদাচিৎ আঁকা হয়।


মােটামুটিভাবে 30° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষরেখা পর্যন্ত স্কেলের বিচ্যুতির পরিমাণ খুবই কম থাকে। তাই, ওই অংশের মধ্যে বিস্তৃত দেশ বা মহাদেশের আকৃতি প্রায় ঠিকমততা বজায় থাকে। কিন্তু 30° অক্ষাংশের পর থেকে মেরুর দিকে মহাদেশগুলির আকৃতির প্রচণ্ড বিকৃতি ঘটে। মেরুবৃত্ত প্রদেশীয় অঞ্চলে এর বিকৃতি সবচেয়ে বেশি। সেই কারণে গ্রিনল্যান্ড, উত্তর আমেরিকা ও কুমেরু মহাদেশকে সমক্ষেত্রফলবিশিষ্ট বেলন অভিক্ষেপে ভালােভাবে আঁকা যায় না।


যে অভিক্ষেপে একটি নির্দিষ্ট অংশের ক্ষেত্রফল সবসময় সৃজনী ভূগােলকের ওই একই অংশের অর্থাৎ অনুরূপ অংশের ক্ষেত্রফলের সমান বা ক্ষেত্রফলের সঙ্গে তুলনীয় তাকে সমক্ষেত্রফলবিশিষ্ট অভিক্ষেপ বলে।


সমক্ষেত্রফলবিশিষ্ট অভিক্ষেপকে অ্যায়ুথালিক অভিক্ষেপ বলা হয়।


যে অভিক্ষেপের কোনাে একটি অতি ক্ষুদ্র অংশের আকৃতি সৃজনী ভূগােলকের ওই একই অংশের আকৃতির সঙ্গে সঠিকভাবে তুলনীয় হয় তাকে সমাকৃতি অভিক্ষেপ বলে।


যে অভিক্ষেপে একটি অথবা দুটি বিন্দু থেকে সব দিকের দূরত্ব সৃজনী ভূগােলকের ওপর অনুরূপ দূরত্বের সঙ্গে সর্বদা সমান হয় তাকে সমদূরবর্তী অভিক্ষেপ বলে।


যে অভিক্ষেপের কেন্দ্রে যে-কোনাে সরলরেখা ও নির্দেশকারী দ্রাঘিমারেখার (Reference Meridian) মধ্যে উৎপন্ন কোণ এবং সৃজনী ভূগােলকের অনুরূপ মহাবৃত্ত ও দ্রাঘিমারেখার মধ্যে উৎপন্ন কোণের পরিমাণ যথার্থ এক থাকে তাকে দিগদর্শী অভিক্ষেপ বলে।


সৃজনী ভূগােলকের যে স্কেল অনুযায়ী মানচিত্র অভিক্ষেপ অঙ্কন করা হয় সেই স্কেলকে মূল বা প্রধান স্কেল বলে।


মূল বা প্রধান স্কেলের অপর নাম নমিল স্কেল।

Geography সব প্রশ্ন উত্তর (দ্বাদশ শ্রেণীর)