কোনাে প্রকার শাস্তি ব্যতিরেকে কারও অধিকার খর্ব করা হলে, মামলার খুঁটিনাটি বিষয়ের মধ্যে না গিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার জন্য হাইকোর্টের হাতে লেখ জারি করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এই লেখগুলি হাইকোর্ট ভৌগােলিক সীমার মধ্যে থেকেই জারি করে থাকে। সংবিধানের ২২৬ নং ধারানুসারে হাইকোর্টের জারি করা পাঁচটি লেখ হল一
- (1) বন্দি-প্রত্যক্ষীকরণ (Habeas Corpus),
- (2) পরমাদেশ (Mandamus),
- (3) প্রতিষেধ (Prohibition),
- (4) অধিকার পৃচ্ছা (Quo Warranto),
- (5) উৎপ্রেষণ (Certiorari)।
[1] বন্দী-প্রত্যক্ষীকরণ: কোনাে ব্যক্তিকে বেআইনিভাবে আটক করা হলে এই ধরনের আইন প্রয়ােগ করা হয়। এই ধরনের লেখ জারির অর্থ হল গ্রেফতারকারী কর্তৃপক্ষের উপর নির্দেশ দেওয়া, যাতে বন্দিকে আদালতের সামনে হাজির করার কারণ ব্যাখ্যা করা হয়। যদি এই গ্রেফতার বেআইনি বলে প্রমাণিত হয় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে বন্দি ব্যক্তিকে মুক্তি দেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়। মূলত এই লেখ নাগরিকদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা বজায় রাখার জন্যই জারি করা হয়।
সুপ্রিমকোর্ট মৌলিক অধিকার খর্ব করার জন্য বন্দি-প্রত্যক্ষীকরণ লেখ জারি করতে পারে একমাত্র রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে। কিন্তু হাইকোর্ট বেসরকারি ব্যক্তিদের এই ধরনের লেখ জারি করতে পারে যদি অন্যায়ভাবে কোনাে ব্যক্তিকে আটক রাখা হয়।
[2] পরমাদেশ: আইনসম্মতভাবে কাজ করা এবং বেআইনিভাবে কাজ থেকে দূরে থাকার জন্য উচ্চ আদালত নিম্ন আদালতসমূহকে যে নির্দেশ দিয়ে থাকে, তাকে ম্যানডামাস বলা হয়। যেমন-ক’-এর আইনি অধিকার ‘খ’-এর আইনি দায়িত্বের সঙ্গে যুক্ত। অর্থাৎ ‘ক’ম্যানডামাস প্রার্থনা করতে পারে যাতে ‘খ’ তার কর্তব্য সম্পাদন করতে পারে। হাইকোর্ট মূলত এই লেখ জারি করতে পারে কোনাে উচ্চপদস্থ কর্মচারীকে তার সাংবিধানিক ও আইনগত দায়িত্ব পালনের জন্য এবং কোনাে নাগরিককে তার সাংবিধানিক দায়িত্ব সম্পাদনের জন্য এমনকি অসাংবিধানিক আইন প্রয়ােগ না করতে রাজ্য সরকারকে বাধ্য করার জন্য।
[3] প্রতিষেধ: উচ্চ আদালত থেকে নিম্ন আদালত বা ট্রাইবিউনালে প্রহিবিশন বা প্রতিষেধ জারি করা যায়। নিম্ন আদালতসমূহ যাতে নিজেদের এলাকার বাইরে না যায় সেইজন্য এই আদেশ জারি করা হয়, কোন প্রশাসনিক সংস্থার বিরুদ্ধে এই আদেশ জারি করা হয় না। এই আদেশটি শুধুমাত্র বিচারবিভাগীয় বা আধা বিচারবিভাগীয় সংস্থার ক্ষেত্রে প্রযােজ্য বলে মনে করা হয়।
[4] অধিকার পৃচ্ছা: অধিকার পৃচ্ছা প্রশ্ন তােলে কোনাে অধিকারে বা কোনাে ক্ষমতাবলে। যখন কোনাে ব্যক্তি সরকারি পদে আসীন থাকার দাবি পেশ করে তখন জনস্বার্থে এই লেখ জারি করা হয়। যে-কোনাে ব্যক্তি এমন লেখ জারির আবেদন করতে পারে, যদি আলােচ্য পদটি স্থায়ী সরকারি এবং সংবিধান-স্বীকৃত হয়, তাহলে ওই পদের নিয়ােগটি সংবিধান বা দেশের আইনের বিরুদ্ধাচরণ করে না।
[5] উৎপ্রেষণ: উৎপ্রেষণ শুধুমাত্র বিচার বিভাগ বা আধা বিচার বিভাগের ক্ষেত্রে প্রযােজ্য হয়। যখন কোনাে ট্রাইবিউনাল বা নিম্ন আদালত নিজ এক্তিয়ারের বাইরে চলে যায় বা কোনাে বেআইনি আদেশ জারি করে, তখন উচ্চতর আদালত সেই আদেশ খারিজ করে সমস্ত কাগজপত্র উচ্চ আদালতের বিচারার্থে তলব করতে পারে।
আপিল এলাকা: প্রত্যেক রাজ্যের হাইকোর্টগুলি হল সেই রাজ্যের সর্বোচ্চ আপিল আদালত। দেওয়ানি ও ফৌজদারি উভয় প্রকার মামলার আপিল নিম্নতম আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করা যায়। দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রে বিষয়গুলি হল一
- (a) জেলা জজ এবং সহকারী জেলা জজের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে সরাসরি আপিল করা চলে, এই ধরনের আপিলকে প্রথম আপিল বলে।
- (b) আবার নিম্নতম আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিচার করতে গিয়ে হাইকোর্টের অধস্তন কোনাে বিচারালয় যে রায় দেয়, তার সঙ্গে যদি আইন পদ্ধতিগত কোনাে প্রশ্ন জড়িত থাকে, তবে সেই রায়ের বিরুদ্ধে পুনরায় হাইকোর্টে আপিল করা যায়। এই ধরনের আপিলকে বলে দ্বিতীয় আপিল।
- (c) তা ছাড়া হাইকোর্টের কোনাে বিচারকের একক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেও হাইকোর্টে আপিল করা যায়।
অপরদিকে, ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে যদি কোনাে দায়রা বা অতিরিক্ত দায়রা জজ বিচারে কোনাে অপরাধীকে ৭ বছরের অধিক কালের জন্য কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে, তবে ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করা চলে। তা ছাড়া যদি কোনাে ম্যাজিস্ট্রেট তাঁর রায়ে ৪ বছরের বেশি কারাদণ্ড দেন তাহলে সেই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করা যায়।
মুলতুবি প্রস্তাব ও দৃষ্টি আকর্ষণী প্রস্তাব সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
ভারতের বিচারব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যসমূহ আলােচনা করো।
ভারতের সুপ্রিমকোর্টের গঠন ও কার্যাবলি ব্যাখ্যা করাে।
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান এলাকাগুলি কী কী? সুপ্রিমকোর্টের মূল এলাকাভুক্ত ও আপিল এলাকাভুক্ত ক্ষমতাগুলি আলােচনা করাে।
সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শদান এলাকা বলতে কী বােঝাে? ভারতীয় সামাজিক প্রগতিতে সুপ্রিমকোর্টের ভূমিকা বিষয়ে একটি টীকা লেখো।
সুপ্রিমকোর্টের মর্যাদা | সুপ্রিমকোর্টের ভূমিকার মূল্যায়ন | ভারতীয় সামাজিক প্রগতিতে সুপ্রিমকোর্টের ভূমিকা | ভারতীয় সংবিধানের অভিভাবক ও ব্যাখ্যা কর্তা হিসেবে সুপ্রিমকোর্টের ভূমিকা
হাইকোর্টের গঠন ও কার্যাবলি ব্যাখ্যা করাে।
Leave a comment