প্রসঙ্গ: সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ভারতবর্ষ গল্পে রাঢ়বাংলায় এক পৌষমাসের অকালদুর্যোগে মৃত এক থুথুড়ে ভিখারিনির মৃতদেহের সত্ত্বারকে ঘিরে হিন্দু মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে যে প্রবল বিরােধের সূত্রপাত হয়েছিল, সে প্রসঙ্গেই এই মন্তব্য করা হয়েছে।

ঘটনার বিবরণ : বুড়িকে নিয়ে টানাপােড়েন : বৃদ্ধ ভিখারিনি প্রাণ হারিয়েছে বলে মনে করে কয়েকজন হিন্দু গ্রামবাসী তাকে শুকনাে নদীর চড়ায় ফেলে আসে। কিন্তু সেদিনই বিকেলে দেখা যায় যে, কয়েকজন মুসলমান আরবি মন্ত্র পড়তে পড়তে বুড়িকে কবর দেওয়ার উদ্দেশ্যে বাজারে নিয়ে আসছে। হিন্দু-মুসলিম বচসা : বুড়ির মৃতদেহের অধিকার নিয়ে। মােল্লাসাহেবের নেতৃত্বে মুসলমানরা এবং ভটচাজমশাইয়ের নেতৃত্বে হিন্দুসম্প্রদায় প্রবল বচসায় জড়িয়ে পড়ে। উত্তেজনার প্রসার : বাজারের দোকানপাট একে একে বন্ধ হতে শুরু করে। পার্শ্ববর্তী গ্রাম থেকে দুই সম্প্রদায়ের বহু মানুষ অস্ত্রশস্ত্রসহ অকুস্থলে জড়াে হতে শুরু করে। বুড়ির মাচার দু-পাশে জড়ােহওয়া দু-দলের জনতা অসহায় চৌকিদারের উপস্থিতিতে পরস্পরের উদ্দেশ্যে প্ররােচনামূলক উক্তি করতে থাকে। মােল্লাসাহেব ‘নারায়েতকবির’, ‘আল্লাহুআকবর’ ইত্যাদি ধর্মীয় স্লোগান তুলে বিধর্মীদের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘােষণা করতে থাকেন। অন্যদিকে ভটচাজমশাই মাঝে-মাঝেই চিৎকার করে মা কালীর নামে জয়ধ্বনি দিতে লাগলেন। অহিনরক্ষকের নিষ্ক্রিয় ভূমিকা : এরকম দাঙ্গা-পরিস্থিতির মাঝখানেও কর্তব্য-সচেতন বিপন্ন আইনরক্ষক চৌকিদার তার লাঠিটি উচিয়ে দু-পক্ষের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকে। কোনাে পক্ষ এক কদম এগােনাের চেষ্টা করলেই সে লাঠি ঠুকে ‘সাবধান’ বা ‘খবরদার’ বলে গর্জন করতে থাকে। বালির বাঁধ : কিন্তু তার প্রচেষ্টা যখন বালির বাঁধের মতাে ভেঙে পড়ার মুখে, ঠিক তখনই দীর্ঘ ঘুম থেকে জেগে উঠে দাঁড়িয়ে বুড়ি সেই উত্তেজনায় জল ঢেলে দেয়।