তাৎপর্য :

কথামুখ : রবীন্দ্রনাথ তাঁর শেষ লেখা কাব্যগ্রন্থের ১১ সংখ্যক কবিতা ‘রূপনারানের কূলে’-তে জীবনের মধ্য থেকেই জীবনকে উপলখির কথা বলেছেন। রূপনারান’ শব্দটি এখানে কোনাে বিশেষ নদীকে বােঝাতে নয়, এই প্রবহমান জীবনকালকে বােঝাতেই তা ব্যবহৃত হয়েছে। কবির অনুভব : জীবন-সায়াহ্নে উপনীত হয়ে কবি অনুভব করেছেন, এই জগৎ শুধুই স্বপ্ন নয়, বরং আঘাত ও বেদনার মধ্য দিয়ে জীবনের বিকাশই প্রকৃত সত্য। আঘাতে-বেদনায়, রক্তের অক্ষরে অর্থাৎ অজস্র সামাজিক ও রাজনৈতিক সংঘাতের মধ্য দিয়ে এই সত্যকে উপলব্ধি করেছেন কবি। সে সত্য কঠিন, দ্বন্দ্বমুখর, কিন্তু সেই কঠিনকেই কবি ভালােবাসতে চেয়েছেন। কারণ কবির কথায়, “সেইখানেই প্রাণের গতি।” অন্য একটি কবিতায় রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন-

“সপ্ত সিন্ধু দশ দিগন্ত 

নাচাও যে ঝংকারে, 

আরাম হতে ছিন্ন করে 

সেই গভীরে লও গাে মােরে 

অশান্তির অন্তরে যেথায় 

শান্তি সুমহান।”

সত্যের মূল্য : জীবন মানে কবির কাছে আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা। এই দুঃখের তপস্যার উদ্দেশ্য আসলে সত্যের মূল্য দিয়ে জীবনের সমস্ত দেনা শােধ করে দেওয়া। তারপরেই মৃত্যুতে নিজেকে নিশ্চিন্তে সমর্পণ করে দেওয়া সম্ভব। এইভাবেই রবীন্দ্রনাথ অলীক কল্পনা বা ভাবের জগৎ থেকে দুঃখ-আঘাত-সংঘাত মুখর বাস্তব পৃথিবীতেই মানবের মুক্তি প্রত্যক্ষ করেছেন। শেষের কথা: জীবনের শেষপ্রান্তে পৌঁছে কবি মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও মানবসংসারের তীরেই নিজের আশ্রয় খুঁজেছেন। ‘রূপনারানের কূলে’ জেগে ওঠা আসলে সেই সন্ধানেরই কাহিনি।