ভূমিকা: চিত্ররূপময় কবি জীবনানন্দ দাশের ‘শিকার’ কবিতাটির সূচনা হয়েছে একটি ভােরের দৃশ্যকে পটভূমি করে। সেই সূত্র ধরেই কবি উপমার জগতে প্রবেশ করেছেন।

প্রথম উপমা : প্রথমেই কবি জীবনানন্দ ভােরবেলায় আকাশের রংকে ঘাসফড়িঙের শরীরের মতাে কোমল নীল বলে মনে করেছেন। ঘাসফড়িঙের সঙ্গে ভােরের আকাশকে তুলনা করায় প্রকৃতির মধ্যে প্রাণের একটি চাঞ্চল্য স্পষ্টভাবে অনুভব করা যায়।

দ্বিতীয় উপমা : তারপরেই তিনি এই ভােরবেলায় চারদিকের পেয়ারা আর নােনার গাছকে টিয়ার পালকের মতাে সবুজ বলেছেন। গাছের পাতাকে পাখির পালকের সঙ্গে তুলনা করার মধ্য দিয়ে প্রকৃতিরাজ্যে প্রাণের স্পর্শ এবং গতিশীলতাকে তুলে ধরা হয়েছে। একটি তারা তখনও আকাশে জেগে রয়ে গেছে—যেন সে রাতের বিদায়ী অস্তিত্বকে নিজের মধ্যে ধারণ করে রেখেছে।

তৃতীয় উপমা : ভােরের এই তারাকে কবি তুলনা করেছেন পাড়াগাঁর বাসরঘরে ‘সব চেয়ে গােধূলিমদির মেয়েটির’ সঙ্গে। অর্থাৎ তার উপস্থিতির মধ্যে কবি লক্ষ করেন গ্রামবাংলার মেয়েদের মতাে লজ্জা এবং কুণ্ঠাকে। ‘বাসরঘরে’ আর ‘মদির’ শব্দের ব্যবহারে কবি সেই লজ্জাকে আরও গভীর ও জীবন্ত করে তুলতে চান।

চতুর্থ উপমা : এরপরে তারাটির উপস্থিতিকে কবি তুলনা করেছেন সেই মিশরের মানুষীর সঙ্গে, যে হাজার হাজার বছর আগে এক রাতে তার বুকের থেকে মুক্তা নিয়ে রেখেছিল কবির নীল মদের গেলাসে। একটু আগে গ্রাম্য মেয়ের সঙ্গে তুলনায় প্রকৃতির যে সহজতা ছিল, তাও ভেঙে যায় মিশরের এই মানুষীর ঐতিহাসিক আড়ম্বরে।

ইতিকথা : ‘মিশরের মানুষী’ আর ‘হাজার হাজার বছর’ মিলে ছবিটি এভাবেই দেশের সীমা অতিক্রম করে এক চিরকালীন বিস্তৃতি পায়।