শুরুর কথা: জীবনানন্দ দাশ তাঁর মহাপৃথিবী কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া ‘শিকার কবিতায় রাত্রিশেষে ‘ভাের’ হওয়ার ঘটনাকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণভাবে ব্যবহার করেছেন।
প্রথম ভােরের বর্ণনা : কবিতার প্রথম অংশে ‘ভাের’ যেন নির্মল প্রকৃতির আত্মপ্রকাশের উপযুক্ত পটভূমি। তখন আকাশের রং ‘ঘাসফড়িঙের দেহের মতাে কোমল নীল’, চারদিকের পেয়ারা ও নােনার গাছের রং ‘টিয়ার পালকের মতাে সবুজ’। সেই ভােরেই আকাশে জেগে থাকা একমাত্র তারাটি কবির মনে বিপরীত অনুভবের ভালাে লাগা তৈরি করে। এই ভােরেই অল্পপ্রাণ শালিকের হৃদয়ের বিবর্ণ ইচ্ছার মতাে স্নান হয়ে যায় হিমের রাতে দেশােয়ালিদের জ্বালানাে আগুনের শিখা। সকালের আলােয় টলমল শিশিরে ঝিলমিল করে ওঠে চারপাশের বন ও আকাশ।
দ্বিতীয় ভােরের বর্ণনা : এই ভােরের পটভূমিতেই কবিতায় আগমন ঘটে একটি ‘সুন্দর বাদামি’ হরিণের। তার কচি বাতাবিলেবুর মতাে সবুজ, সুগন্ধি ঘাস ছিড়ে খাওয়া বা নদীর জলে ঘুমহীন, ক্লান্ত শরীর ভেজানাের মধ্যে দিয়ে জীবনের স্বচ্ছন্দ বিচরণকেই প্রত্যক্ষ করা যায়। কিন্তু সুন্দরের এই সহজ প্রকাশকে ছিন্নভিন্ন করে দেয় ‘একটা অদ্ভুত শব্দ’। নদীর জল এরপর মচকাফুলের মতাে লাল হয়ে ওঠে হরিণের রক্তে। শিকারি মানুষের লােভের শিকার হয়ে হরিণটিকে চলে যেতে হয় ‘নিস্পন্দ নিরপরাধ ঘুম’-এর দেশে। তৈরি হয় ‘ভাের’ এর আর-এক ছবি।
উপসংহার : এই ভােরকে প্রকৃতি লালন করেনি; কিংবা সারারাত চিতাবাঘিনির হাত থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে হরিণও এই ভােরের জন্য অপেক্ষা করেনি। মানুষের ক্ষুধার ও হিংস্রতার সাক্ষী হয়ে থাকে এই ভাের।
Leave a comment