নগরজীবনের ছবি: প্রাক্কথন: সমর সেনের ‘মহুয়ার দেশ’ কবিতাটি নগরজীবনের ক্লান্তি, বিষন্নতা আর কৃত্রিমতা নিয়ে কবির অনুভবের প্রকাশ। এখানে সন্ধ্যার চিরন্তন অনাবিল পটভূমিতে ‘ধোঁয়ার বঙ্কিম নিঃশ্বাস’ ঘুরে-ফিরে আসে। এই আসা কবির কাছে একেবারেই কাম্য নয়, তাই তাশীতের দুঃস্বপ্নের মতােই মনে হয়।

ক্লান্তি থেকে মুক্তি : এই নাগরিক ক্লান্তি থেকে মুক্তির জন্য কবির চেতনা জুড়ে থাকে মহুয়ার দেশ, যা রাত্রির নির্জন নিঃসঙ্গতাকেও আলােড়িত করে। কবি চান তার ক্লান্তির ওপরে ঝরুক মহুয়া ফুল, আবেশ ছড়াক তার মাদকতাময় গন্ধ।

প্রকৃতির কোলে যন্ত্রসভ্যতার ধ্বনি : কিন্তু নগরজীবন এই রােমান্টিক ভাবনাকে প্রশ্রয় দেয় না। তাই নাগরিক জীবনের প্রবল কোলাহলের মধ্যে কবি শেষপর্যন্ত শুধু মহুয়ার দেশের কয়লাখনির প্রবল আওয়াজটুকুই পান, পান না কোনাে স্নিগ্ধতা অথবা নির্মলতা, পান না দেবদারু গাছের দীর্ঘ রহস্যময় ক্লান্তিদূরকারী ছায়া। শিশির-মাখা সবুজ সকালেও তাই তার চোখে ভেসে ওঠে মহুয়ার দেশের মানুষদের ধুলাের কলঙ্কমাখা অবসন্ন মুখ।

অপূর্ণ সাধ : কবি প্রত্যক্ষ করেন, নাগরিক পৃথিবীর ক্লান্তি, ক্ষয়, সংকট ও বিপন্নতার হাত থেকে ‘মেঘ-মদির ‘মহুয়ার দেশ’ও মুক্তি পায় না। প্রকৃতপক্ষে মহুয়ার দেশ এর কবি যেন শহরে নির্বাসিত এক যনক্ষ। সবুজ প্রকৃতির রূপে এবং তার মদির সুগন্ধে তিনি মােহিত হতে চান, ভুলতে চান ‘রাত্রের নির্জন নিঃসঙ্গতাকে’। কিন্তু তার সাধ অপূর্ণ থেকে যায়।

শেষের কথা : গ্রাম আজ আর গ্রাম নেই, নগরজীবন তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছে। তাই কবি নগরজীবনের এই সর্বগ্রাসী চেহারাকে তুলে ধরেন এই কবিতায়।