উদ্দিষ্ট ব্যবস্থা: সুভাষ মুখােপাধ্যায় ‘মেঘের গায়ে জেলখানা’ রচনায় বলেছেন, বক্সা জেলখানায় স্বাধীনতার পরেও দেশপ্রেমিক স্বাধীনতা সংগ্রামী ভারতীয়দেরকেই বন্দি করে রাখা হত। তাই খাসাহেব, নীরদ চক্রবর্তী, শিবশঙ্কর মিত্রকে এই জেলখানায় দেখেন লেখক। বাংলাদেশের অর্ধশতাব্দী বিস্তৃত মুক্তিযুদ্ধের অগ্নিগর্ভ ইতিহাসে যাঁর জীবন উৎসর্গীকৃত হয়ে আছে- সেই সতীশ পাকড়াশীও রয়েছেন বক্সা জেলে। এ ছাড়া এই জেলে রয়েছেন। বাংলাদেশের অগণিত মানুষের বিশ্বস্ত প্রতিনিধিরাও। যে-সমস্ত মানুষ দুরন্ত অজয় নদের তীরে দাঁড়িয়ে বন্যারােধী বাঁধ বেঁধেছেন, যাঁরা অন্ধকার খনিগর্ভে পৌঁছে দিয়েছেন উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় নতুন দিনের সুসমাচার, হেলে পড়া ধানের শিষগুলােকে যারা সাহস জুগিয়ে বর্শার ফলার মতাে টানটান করে দিয়েছেন, কারখানার চিমনির ধূমায়িত মুখে যাঁরা জুগিয়ে দিয়েছেন আগুনের ভাষা— তাদের সবারই ঠাই হয়েছে এই বক্সার জেলে।

বন্দিশিবির তৈরির সময়কার পরিবেশ : ভুটানের রাজার কাছ থেকে দীর্ঘকালীন মেয়াদে ইজারা নিয়ে ইংরেজরা এই বক্সার জেল তৈরি করে। প্রথমে এটা ছিল কেল্লা। তখন গভীর জঙ্গলে ভরা এই অঞ্চলে বাঘের ডাক শােনা। যেত, বিষধর সাপেরা ঘুরে বেড়াত। বক্সার বায়ু ছিল দূষিত ও অস্বাস্থ্যকর, আর ঝরনার জল ছিল জীবাণুপূর্ণ। এই অঞ্চলের আশেপাশে দোকান-বাজার, হাসপাতাল— কিছুই ছিল না। গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে মৃত্যু অনিবার্য ছিল।