রুশ বিজ্ঞানী আইভান প্যাভলভ তার গবেষণায় উদ্দীপক এবং প্রতিক্রিয়া সংক্রান্ত সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এই তত্ত্বের নিরিখে তিনি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন পরীক্ষালব্ধ ফলাফল বিচার করে। প্রাচীন অনুবর্তনের ফলাফলগুলি নিম্নে আলােচনা করা হল—
(১) অনুবর্তিত উদ্দীপক: যে কৃত্রিম বা অস্বাভাবিক উদ্দীপক প্রাণীর মধ্যে নতুন স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে সমর্থ হয়, তাকে অনুবর্তিত উদ্দীপক বলে। এখানে ঘণ্টাধ্বনি হল অনুবর্তিত উদ্দীপক।
(২) অনাবর্তিত উদ্দীপক: যে স্বাভাবিক উদ্দীপকের জন্য প্রাণীর মধ্যে স্বভাবজাত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়, তাকে অনাবর্তিত উদ্দীপক বলে। এখানে খাদ্যবস্তু হল অনাবর্তিত উদ্দীপক।
(৩) অনুবর্তিত প্রতিক্রিয়া: অস্বাভাবিক উদ্দীপকের জন্য প্রাণীর মধ্যে যে নতুন স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়, তাকে অনুবর্তিত প্রতিক্রিয়া বলে। এখানে লালাক্ষরণ হল অনুবর্তিত প্রতিক্রিয়া।
(৪) অনাবর্তিত প্রতিক্রিয়া: স্বাভাবিক উদ্দীপকের জন্য স্বভাবজাত যে প্রতিক্রিয়া প্রাণীর মধ্যে সৃষ্টি হয় তাকে অনাবর্তিত প্রতিক্রিয়া বলে। এখানে সজাগভাব হল অনাবর্তিত প্রতিক্রিয়া।
অনাবর্তিত প্রতিক্রিয়া |
(৫) সময়: স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে গৌণ বা কৃত্রিম উদ্দীপককে সংযােগ সাধন করতে হলে স্বাভাবিক উদ্দীপকের উপস্থাপনের পূর্বেই কৃত্রিম উদ্দীপককে উপস্থাপন করতে হবে। সময়ের ব্যবধান বেশি হলে সাপেক্ষীকরণ ঘটবে না। যেমন— প্যাভলভের পরীক্ষায় কুকুরটিকে খাদ্য দেওয়ার পরে ঘণ্টাধ্বনি স্থাপন করলে লালাক্ষরণ হত না।
(৬) বিলােপ: স্বাভাবিক উদ্দীপকটিকে মাঝে মাঝেই উপস্থিত করতে হবে; না হলে কৃত্রিম উদ্দীপকের সঙ্গে স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ার সংযােগ বিচ্ছিন্ন হবে। একে বলে বিলােপ (Deconditioning) যেমন—কুকুরটিকে কয়েকবার খাবার দেওয়া না হলে ঘণ্টাধ্বনি শুনে তার লালাক্ষরণ হবে না। সেক্ষেত্রে পুনঃসংযােজন দরকার।
(৭) উদ্দীপকের সামান্যীকরণ: কৃত্রিম উদ্দীপকের সঙ্গে সাপেক্ষীকরণের পর সেই উদ্দীপকের অনুরূপ বিকল্প উদ্দীপকের প্রভাবে স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া ঘটে। যেমন— ঘণ্টাধ্বনির বিকল্প শব্দেও কুকুরের লালাক্ষরণ সম্ভব। এই বিষয়টিকে বলা হয় উদ্দীপকের সামান্যীকরণ (Stimulus Generalisation)
(৮) উদ্দীপকের পৃথকীকরণ: অনুবর্তনের কারণে উদ্দীপকের মধ্যে পৃথকীকরণ করা সম্ভব হয়।
(৯) বিকল্প উদ্দীপকের পুনরাবৃত্তি: যতক্ষণ পর্যন্ত না অনুরূপ বিকল্প উদ্দীপকটি সাপেক্ষিত হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত পুনরাবৃত্তি ঘটানাের প্রয়ােজন।
(১০) সদর্থক ও নঞর্থক উপাদান: খাদ্যের পরিবর্তে ঘণ্টাধ্বনি দিলে স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া সম্ভব-এটি সদর্থক অনুবর্তন। কিন্তু একটি বিড়ালকে রােজ গরম দুধ দিলে বিড়ালটি খাবে না, পরে ঠান্ডা। দুধ সামনে দিলেও খাবে না। এটি নঞর্থক অনুবর্তন।
(১১) প্রেষণামূলক উপাদান: অনুবর্তন প্রক্রিয়াটিকে দৃঢ় করতে হলে প্রেষণামূলক উপাদান (Motivational factors) প্রয়ােজন। যেমন— কুকুরটি ক্ষুধার্ত হলে সাপেক্ষীকরণ দ্রুত সম্ভব।
প্রাচীন অনুবর্তনের পরীক্ষাটি করতে গিয়ে প্যাভলভ উল্লিখিত ফলাফলগুলি লক্ষ করেন।
Leave a comment