বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার কাঠামাে সম্পর্কে কমিশনের বক্তব্য

রাধাকৃষ্মণ কমিশন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার উন্নতিসাধনের লক্ষ্যে পঠনপাঠনের কাঠামাের একটি ধারণা দেয়।

(১) বিদ্যালয় ও ইন্টারমিডিয়েট কলেজে মােট ১২ বছর শিক্ষাগ্রহণের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারবে।

(২) পাস কোর্সের শিক্ষার্থীরা দু-বছর পরে এবং অনার্সের শিক্ষার্থীরা এক বছর পরে মাস্টার ডিগ্রি লাভ করবে।

(৩) গ্রামীণ শিক্ষার কাঠামােটি হবে—

  • ৭/৮ বছরের নিম্ন বুনিয়াদি বা প্রাথমিক শিক্ষা,
  • ৩/৪ বছরের উত্তর বুনিয়াদি বা মাধ্যমিক শিক্ষা, 
  • ৩ বছরের গ্রামীণ কলেজীয় শিক্ষা এবং 
  • ২ বছরের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার ক্ষেত্রে কৃষি, জনশিক্ষা, গ্রামােন্নয়ন, সমাজ উন্নয়ন প্রভৃতি বিষয়ে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার পাঠক্রম সম্পর্কে কমিশনের সুপারিশ

শিক্ষাব্যবস্থায় পাঠক্রম একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কমিশন বিভিন্ন শিক্ষায় উন্নত দেশগুলির পাঠক্রম পর্যালােচনা করে স্বাধীন ভারতে উচ্চশিক্ষার পাঠক্রম কীরূপ হওয়া প্রয়ােজন সেই বিষয়ে কলা, বিজ্ঞান, কৃষি, কারিগরি শিক্ষার বিষয়ে লক্ষ রেখে সাধারণ শিক্ষা এবং পেশাগত শিক্ষার মধ্যে সমন্বয়সাধনের চেষ্টা করে। এক্ষেত্রে কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলি হল—

সাধারণ শিক্ষা (কলা ও বিজ্ঞান বিভাগ):

(১) পাঠক্রম কর্মকেন্দ্রিক ও উৎপাদনমুখী হবে। সাধারণ শিক্ষায় তত্ত্বগত ও ব্যাবহারিক উভয় অংশের মধ্যে সমন্বয় রেখে উপযােগী পাঠক্রম রচনা করতে হবে।

(২) পাঠক্রম এমনভাবে রচনা করতে হবে, যাতে বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে সংযােগ থাকে। অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ের প্রতি সমন্বয়ী দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তােলা।

(৩) সাধারণধর্মী শিক্ষা ও বিশেষধর্মী শিক্ষার মধ্যে সম্পর্ক রাখতে হবে। তাই সাধারণধর্মী শিক্ষার পাঠক্রমে কিছু কিছু বিশেষধর্মী শিক্ষার উপাদান সংযােজন করতে হবে।

(৪) ডিগ্রি কোর্সের পাঠক্রমে থাকবে সর্বভারতীয় রাষ্ট্রীয় ভাষা, ইংরেজি এবং মাতৃভাষা, সমাজবিদ্যা, ভৌতবিজ্ঞান, জীবনবিজ্ঞান ইত্যাদি।

(৫) বিশ্ববিদ্যালয় পাঠক্রমের প্রধান বিষয়গুলি হল— 

  • ভাষা, 
  • দর্শন, 
  • পদার্থবিদ্যা, 
  • জীববিদ্যা, 
  • সমাজবিদ্যা, 
  • কৃষিবিজ্ঞান, 
  • অর্থশাস্ত্র ইত্যাদি।

(৬) শিক্ষার্থীদের স্বাধীন চিন্তন ক্ষমতার বিকাশের উপযােগী পাঠক্রম রচনা করতে হবে।

(৭) সর্বোপরি ব্যক্তিত্বের বিকাশ ও যােগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তােলার জন্য পাঠক্রমের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল।

পেশাগত শিক্ষার পাঠক্লম সম্পর্কিত সুপারিশ

পেশাগত মনােভাব নিয়ে দায়িত্বপূর্ণ কাজের প্রকৃতিকেই পেশাগত শিক্ষা বলা চলে। রাধাকৃষ্মণ কমিশনে পেশাগত শিক্ষার ক্ষেত্রে কৃষি, বাণিজ্য, শিক্ষাবিজ্ঞান, কারিগরি, প্রযুক্তিবিদ্যা, আইন এবং চিকিৎসাশাস্ত্র– এই ছয়টি বিষয়ের পাঠক্রম সম্পর্কে সুপারিশ করা হয়। কৃষি মহাবিদ্যালয়ের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নতির বিষয়টিও যুক্ত করতে হবে।

(১) কৃষিবিদ্যা: প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চতর শিক্ষাক্ষেত্রে কৃষিবিদ্যা চর্চার বিশেষ ব্যবস্থা রাখতে হবে। অধিক সংখ্যক কৃষিখামার স্থাপন করতে হবে এবং কৃষি বিষয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে আরও বেশি নজর দিতে হবে।

(২) বাণিজ্য: বাণিজ্য বিভাগে পাঠরত শিক্ষার্থীরা যাতে হাতেকলমে কাজ শেখার সুযােগ পায়, তার জন্য বিভিন্ন ফার্মে তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। বাণিজ্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি যেন পুথিগত না হয়, সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।

(৩) শিক্ষাবিজ্ঞান: শিক্ষাবিজ্ঞানের পাঠক্রমকে নতুনভাবে প্রণয়ন করতে হবে। বিদ্যালয়ে শিক্ষাদানের অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য উপযুক্ত বিদ্যালয়ের সাহায্য গ্রহণ করতে হবে।

(৪) কারিগরি ও প্রযুক্তিবিদ্যা: মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ে কারিগরি ও প্রযুক্তিবিদ্যা পঠনপাঠনের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা যাতে কর্মঅভিজ্ঞতা লাভের সুযােগ পায়, তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

(৫) আইন: বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনশিক্ষা অন্যান্য বিষয়ের শিক্ষার মতােই নিয়মানুগ হওয়া উচিত এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত। আইন পড়ার আগে ন্যূনতম তিন বছরের স্নাতক স্তরে পাঠগ্রহণ আবশ্যিক করা দরকার। আইনের ডিগ্রি পড়ার সময় একই সঙ্গে অন্য কোনাে ডিগ্রি পড়তে দেওয়া উচিত হবে না। আইন পড়তে পড়তে কোনাে অভিজ্ঞ উকিলের অধীনে প্র্যাকটিসের সুবিধা দিতে হবে যাতে ব্যাবহারিক জ্ঞান লাভ করতে সে সক্ষম হয়।

(৬) চিকিৎসাশাস্ত্র: পাবলিক হেলথ ইঞ্জিনিয়ারিং এবং নার্সিং কোর্সগুলির উপর বিশেষ নজর দিতে হবে। চিকিৎসাশাস্ত্রে প্রথম স্নাতক কোর্সে ভারতীয় নিজস্ব পদ্ধতিসহ ভেষজ শাস্ত্রের ইতিহাস পড়ানাের ব্যবস্থা করতে হবে। চিকিৎসাশাস্ত্রের যে সমস্ত বিষয়ের জন্য হাসপাতালের সহায়তা দরকার সেই বিষয়গুলির জন্য হাসপাতাল সংলগ্ন প্রয়ােজনীয় বিভাগ থাকতে হবে।

সুতরাং বলা যেতে পারে, রাধাকৃষ্মণ কমিশন বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের শিক্ষার ক্ষেত্রে সাধারণ শিক্ষা ও পেশাগত বা বৃত্তিমুখী শিক্ষার মধ্যে সমন্বয়ী দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছিল।