অতীত অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে স্বাধীন ভারতের শাসকগণ উপলব্ধি করেন যে ভারতকে সংবিধানের প্রস্তাবনা অনুযায়ী সমাজতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র রূপে প্রতিষ্ঠা করতে, ন্যায়বিচার, সাম্য, স্বাধীনতা, জাতীয় ঐক্য বজায় রাখতে শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ দরকার।

ভারতীয় সংবিধানে কেন্দ্রীয় তালিকায় ১০০টি বিষয়ের মধ্যে ৭টি বিষয় শিক্ষাসংক্রান্ত। রাজ্য তালিকার ৬১টি বিষয়ের মধ্যে ২টি বিষয় এবং যুগ্ন তালিকার ৫২টি বিষয়ের মধ্যে ৬টি বিষয় শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত, [তবে পূর্বেযুগ্ন তালিকার বিষয় সংখ্যা ৪৭ ছিল যা ৭ম সংবিধান সংশােধনে পরিবর্তিত হয়ে ৫টি বিষয় অন্তর্ভুক্ত হয়]।

সংবিধান প্রবর্তনের সময়ে প্রথাগত শিক্ষা রাজ্য সরকারের অধিকার ছিল কিন্তু ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে ১৮ ডিসেম্বর শরণ সিং কমিটির সুপারিশ ও রাষ্ট্রপতির সম্মতিতে ৪২ তম সংবিধান সংশােধনীতে যুগ্ন তালিকার অন্তর্ভুক্ত হয়।

সপ্তম তপশিলের ৬২, ৬৩, ৬৪, ৬৫, ৬৬, ৬৭নং ধারা (Article 246, List-I Union List)

কেন্দ্রীয় তালিকার মােট ১০০টি বিষয়ের মধ্যে ৭টি শিক্ষা সংক্রান্ত। যেমন— 

[1] ৬২নং ধারায় আছে, সংবিধান শুরু হওয়ার সময় থেকে জাতীয় গ্রন্থাগার, ভারতীয় জাদুঘর, রাজকীয় যুদ্ধ বিষয়ক জাদুঘর, ভিক্টোরিয়া মেমােরিয়াল এবং ওইরকম অন্যান্য সংস্থাগুলি, যা ভারত সরকারের পুরাে বা আংশিক অর্থসাহায্যে পরিচালিত হয়, তা পার্লামেন্ট দ্বারা জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সম্পত্তি বলে ঘােষিত হল।

[2] ৬৩নং ধারায় বলা হয়েছে, সংবিধান চালু হওয়ার সময় বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়, আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় এবং আরও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান— যেগুলি পার্লামেন্ট দ্বারা জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান বলে পরিচিত।

[3] ৬৪নং ধারায় আছে, বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার জন্য যে-সমস্ত প্রতিষ্ঠানের পূর্ণ বা আংশিক ব্যয়ভার ভারত সরকার বহন করে— সেগুলি পার্লামেন্ট দ্বারা জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান বলে ঘােষিত হল।

[4] ৬৫নং ধারায় বলা হয়েছে, (১) পেশাগত, বৃত্তিগত, কারিগরি, ও পুলিশ অফিসারদের ট্রেনিং, (২) বিশেষ পঠনপাঠন অথবা গবেষণার উন্নতি, (৩) অপরাধ অনুসন্ধান ও অপরাধ নির্ণয়, বৈজ্ঞানিক ও টেকনিক্যাল প্রতিষ্ঠান— এগুলি ভারত সরকারের প্রতিনিধি ও নিজস্ব প্রতিষ্ঠান।

[5] ৬৬নং ধারায় আছে, উচ্চশিক্ষা বা গবেষণা এবং বৈজ্ঞানিক ও টেকনিক্যাল প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে সংহতিসাধন ও মান নির্ণয় অত্যাবশ্যক।

[6] ৬৭নং ধারায় বলা হয়েছে, পার্লামেন্ট কর্তৃক স্বীকৃত জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশকসমূহ যেমন— স্মৃতিসৌধ, প্রাচীন সৌধ বিভিন্ন পুরাতাত্ত্বিক ভগ্নাবশেষ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের।

Article-246, List-all (State List) বা রাজ্য তালিকা

এই তালিকায় মােট ৬১টি বিষয়ের মধ্যে মাত্র দুটি ধারা শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রযােজ্য। এই দুটি ধারার মধ্য দিয়ে শিক্ষায় রাজ্যের স্বাধিকারের কথাই বলা হয়েছে।

১১ নং ধারা: কেন্দ্রীয় তালিকাভুক্ত ৬৩, ৬৪, ৬৫, ৬৬নং এবং যুগ্ন তালিকাভুক্ত ২৫নং ধারা ব্যতীত বিশ্ববিদ্যালয়-সহ সব শিক্ষার বিষয়ই রাজ্য তালিকাভুক্ত হবে।

১২ নং ধারা: রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত এবং আর্থিক সাহায্যপ্রাপ্ত পাঠাগার, মিউজিয়াম ও একই ধরনের প্রতিষ্ঠান এবং প্রাচীন ও ঐতিহাসিক স্মৃতিসৌধ ও রেকর্ড (ঘাষিত জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ব্যতীত) যা পার্লামেন্টে, আইন বলে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বলে ঘােষিত হয়নি তা রাজ্য তালিকাভুক্ত হবে।

List-lll (Concurrent List) বা যুগ্ন তালিকা

মােট ৫২ টি বিষয়ের মধ্যে ৬ টি বিষয়ে শিক্ষার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরােক্ষভাবে জড়িত। এই বিষয়গুলি ধারা অনুসারে নিম্নে আলােচনা করা হল —

২০ নং ধারা : অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিকল্পনা এই তালিকার অন্তর্ভুক্ত।

২৫ নং ধারা: এই ধারায় ৫ টি উপধারা রয়েছে যে উপধারায় শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয় প্রত্যক্ষ বা পরােক্ষভাবে জড়িত আছে।

  • (১) নং উপধারা : বৃত্তিগত ও কারিগরি প্রশিক্ষণ এই ধারার অন্তর্গত। 
  • (২) নং উপধারা : দাতব্য প্রতিষ্ঠানসমূহ।
  • (৩) নং উপধারা : আইন ও প্রযুক্তিগত বিষয়ে পেশার নিয়ন্ত্রণ।
  • (৪) নং উপধারা : সংবাদপত্র, ছাপাখানা ও বিভিন্ন প্রকার পুস্তকের উপর নিয়ন্ত্রণ।
  • (৫) নং উপধারা : আইন পরিষদ দ্বারা ঘােষিত নয় এমন কোনাে জাতীয় সৌধ যুগ্ন তালিকার অন্তর্ভুক্ত হয়।