স্বাক্ষর জনগণ সামাজিক এবং জাতীয় উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। যে দেশে সাক্ষরতার হার যত বেশি, সেই দেশ তত উন্নত বলে বিবেচিত হয়। ভারতের মতো বিশাল জনসংখ্যার দেশে সাক্ষরতার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
(১) জাতীয় সংহতি বজায় রাখতে : ভারতবর্ষ বহু ভাষাভাষী, ধর্মাবলম্বী, বহুসংস্কৃতি সম্পন্ন দেশ। তাই বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য একান্ত প্রয়োজন। বিভিন্ন সময়ে দেশের মানুষের মধ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন দেখা দেয়। এর প্রধান কারণ হল অজ্ঞতা ও নিরক্ষরতা। একজন শিক্ষিত চেতনাসম্পন্ন মানুষ জাতীয় সংহতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
(২) গণতন্ত্রকে সাফল্যমন্ডিত করা : গণতন্ত্রের সাফল্য নির্ভর করে প্রতিটি নাগরিকের সঠিক দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের উপর। সঠিক শিক্ষা এই বােধগুলি তৈরিতে সাহায্য করে।
(৩) জাতীয় পরিকল্পনায় অংশগ্রহণ : জাতীয় উন্নয়নের জন্য প্রতিটি রাষ্ট্র বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে থাকে। এইসকল পরিকল্পনা গুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে জনগণের অংশগ্রহণ আবশ্যিক। নিরক্ষর মানুষের পক্ষে এই দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়। তাই প্রতিটি মানুষের সাক্ষরতার প্রয়োজন।
(৪) অধিকারবোধ সম্পর্কে সচেতনতা : গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে প্রতিটি নাগরিকের সমান অধিকার আছে। নিরক্ষর মানুষ এই অধিকারবোধ সম্পর্কে সচেতন থাকুন না। কিন্তু একজন শিক্ষিত সাক্ষর মানুষ ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী তার করণীয় কর্তব্য এবং অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকেন। জাতীয় উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হন।
(৫) জাতির নিরাপত্তা : জাতির নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দেশের জনগণের মধ্যে জাতীয়তাবোধের উন্মেষ ঘটানো একান্ত আবশ্যক। এর জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত জনগণের দ্বারাই জাতির নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।
(৬) স্বাস্থ্য চেতনা : কথায় আছে স্বাস্থ্যই সম্পদ। সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ব্যক্তিরাই সঠিক দায়িত্ব, কর্তব্য পালনে সক্ষম হন। এজন্য প্রতিটি ব্যক্তির মধ্যে স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বোধ গড়ে তুলতে হবে। তাই প্রয়োজন উপযুক্ত শিক্ষা।
(৭) জনসংখ্যা হ্রাস : অতিরিক্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধি জাতির উন্নয়নে বাধাস্বরূপ। নিরক্ষর এর তুলনায় স্বাক্ষর মানুষের মধ্যে সচেতনতাবোধ বেশি। তাই ভারতবর্ষে সাক্ষরতার প্রয়োজন।
(৮) জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি : শিক্ষিত ব্যক্তিগণ জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হন। কৃষি, শিল্প এবং অন্যান্য উৎপাদন ব্যবস্থায় স্বাক্ষর ব্যক্তিগণ বিজ্ঞানসম্মত আধুনিক পদ্ধতি ও কৌশল প্রয়োগ করে দক্ষতা অর্জনে সমর্থ হন।
(৯) মূল্যবোধ গঠন করা : ভারতবর্ষ বহুভাষী, বহু ধর্মাবলম্বী দেশ। একের অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবােধ, সহযােগিতা, উদারনীতি অবলম্বন করা, উদার জীবনদর্শন গঠন করা আবশ্যিক, তাই সাক্ষরতার প্রয়োজন।
Leave a comment