১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় শিক্ষানীতি গৃহীত হওয়ার চার বছর পর এই শিক্ষানীতি পুনর্বিবেচনার জন্য ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দের ৭ মে ১৭ জন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ কে নিয়ে আচার্য রামমূর্তি সভাপতিত্বে রামমূর্তি কমিটি গঠিত হয়।

জাতীয় শিক্ষানীতি (১৯৮৬ খ্রিঃ.) এবং রামমূর্তি কমিটি (১৯৯০ খ্রি.) পর্যালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে জনার্দন রেড্ডি কমিটির সুপারিশগুলি  হল—

(A) শিক্ষার কাঠামাে: সারা দেশে একই শিক্ষাকাঠামাে থাকবে। অর্থাৎ ১০+২+৩ কাঠামো গৃহীত হবে।

(B) প্রাথমিক শিক্ষা: প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে যে যে বিষয়গুলির উপর গুরুত্ব দেওয়া হয় সেগুলি হল—

  • (১) সার্বিক সাক্ষরতার দিকে নজর দেওয়া।
  • (২) ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত সব শিশুদের জন্য সর্বজনীন ও অবৈতনিক শিক্ষা প্রচলন। 
  • (৩) প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন।
  • (৪) Dropout সমস্যা সমাধানের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ। 
  • (৫) প্রাথমিক শিক্ষার পদ্ধতি ও বিষয়বস্তুর বিবেচনা। 
  • (৬) প্রাথমিক শিক্ষা যাতে সমস্ত শিক্ষার্থীরা শেষ করতে পারে সে ব্যাপারে তাদের পিতা-মাতাকে সচেতন করে তোলা।
  • (৭) প্রাথমিক শিক্ষার মানােন্নয়নের জন্য Operation Blackboard পরিকল্পনাকে সঠিকভাবে কার্যকরী করা।
  • (৮) প্রাথমিক স্তরে MLL অর্থাৎ Tete Minimum Level of Learning কতটা হওয়া উচিত তা নির্দিষ্ট করা।
  • (৯) প্রাথমিক শিক্ষার জন্য জাতীয় স্তরে একই পাঠক্রমের ব্যবস্থা করা ও এই পাঠক্রম তৈরির দায়িত্ব প্রদান NCERT-কে।

(C) মাধ্যমিক শিক্ষা :

  • (১) ভালোভাবে সাজ সরঞ্জাম দ্বারা নবোদয় বিদ্যালয় তৈরি করা না গেলে নিম্নমানের নবোদয় বিদ্যালয়ের পরিবর্তে গ্রামীণ স্কুলগুলোকে নবোদয় বিদ্যালয়ে পরিণত করা ভালো।
  • (২) প্রতিটি স্কুলে প্রয়োজনীয় স্টাফ ও শিক্ষা সহায়ক যন্ত্রপাতি প্রয়োজন।
  • (৩) বেশিসংখ্যক শিক্ষার্থীদের বৃত্তিদান ব্যবস্থা করা।
  • (৪) বর্তমানের পরীক্ষা পদ্ধতি ও মূল্যায়ন পদ্ধতিকে আরও বেশি বাস্তবসম্মত ও নৈর্ব্যক্তিক করা দরকার।
  • (৫) যেসব শিক্ষার্থীর বিশেষ প্রতিভা রয়েছে তাদের দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়া প্রয়ােজন। 
  • (৬) প্রতিটি শিক্ষার্থীকে নাগরিক হিসেবে সাংবিধানিক দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্বন্ধে সচেতন করা দরকার।
  • (৭) মাধ্যমিক স্তরের ইতিহাস জাতীয় স্তরের পরিপ্রেক্ষিতে আলোচনা করা প্রয়োজন।
  • (৮) Common School System Neighbourhood System-কে (যা কোঠারি কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছিল) গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা দরকার। 
  • (৯) যারা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল তাদের জন্য আধুনিক পরিকাঠামো-সহ নতুন স্কুল স্থাপন করতে হবে। 
  • (১০) স্কুলের প্রশাসন ও পরিদর্শন ব্যবস্থার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।
  • (১১) মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের পুনর্গঠন ও তাদের স্বশাসনের সুযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে মাধ্যমিক শিক্ষার উন্নয়নের সুযোগ ঘটে।
  • (১২) মাধ্যমিক স্তরের বিদ্যালয়গুলিতে কম্পিউটার শিক্ষার সুযোগ সুবিধা দিতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা উন্নত প্রযুক্তিতে অভ্যস্ত হতে পারে।
  • (১৩) SC বা ST বা অন্যান্য পশ্চাৎপদ মানুষজন যেখানে রয়েছে সেখানে নতুন স্কুল স্থাপন করতে হবে।
  • (১৪) মেয়েদের শিক্ষার উপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।
  • (১৫) মাধ্যমিক পাঠক্রমের আধুনিকীকরণ ও মান উন্নয়ন প্রয়োজন।
  • (১৬) মাধ্যমিক শিক্ষার পাঠক্রম বাস্তবসম্মত ও বিজ্ঞানভিত্তিক হওয়া প্রয়োজন। 
  • (১৭) প্রতিটি শিক্ষার্থীকে সাংবিধানিক দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে অবহিত করানো দরকার।
  • (১৮) অনুন্নত ও দুর্বল সম্প্রদায়ের জন্য নতুন বিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে।
  • (১৯) নবোদয় বিদ্যালয়ের গুণগত মান অবশ্যই বজায় রাখতে হবে। যদি সম্ভব না হয় তাহলে নিম্নমানের নবোদয় বিদ্যালয়গুলোকে গ্রামের বিদ্যালয়ে পরিণত করা ভালো।

(D) উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা : ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দের Programme of Action (POA)-এ উচ্চমাধ্যমিক স্তরের জন্য যে গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলি করা হয়েছে সেগুলি হল— 

  • (১) জাতীয় পাঠক্রম রচনা এবং এর ভিত্তিতে Informational Package-এর ব্যবস্থা করা।
  • (২) এই শিক্ষাকে Common School System-এ নিয়ে আসার প্রস্তাব করা হয়।
  • (৩) উচ্চমাধ্যমিক পাঠক্রম হবে বহুমুখী।
  • (৪) আগ্রহ ও সামর্থ্য অনুযায়ী পাঠক্রম নির্বাচনের সুযোগ থাকবে।

(E) উচ্চশিক্ষা : এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলি হল—

  • (১) উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানবতাবোধ যাতে জাগ্রত হয়, বিশেষ বিষয় সমূহ জ্ঞান ও দক্ষতা যাতে বৃদ্ধি পায় এবং তা যাতে জাতীয় উন্নতির সহায়ক হয় সেই দিকে নজর দিতে হবে। উচ্চশিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য উপযুক্ত শিক্ষক তৈরি করা।
  • (২) বর্তমানে যে-সমস্ত উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেগুলির পরিকাঠামোগত উন্নয়নের দিকে নজর দিতে হবে।
  • (৩) স্বয়ং শাসিত কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা করতে হবে।
  • (৪) কলেজের আসন সংখ্যা অনুযায়ী ভর্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
  • (৫) পাঠক্রমের পুনর্বিন্যাসের এবং উচ্চ শিক্ষার বিভিন্ন কর্মসূচি রূপায়ণের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন। 
  • (৬) উন্নতমানের গবেষণার ব্যবস্থা করা দরকার।
  • (৭) মুক্ত শিক্ষার উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করা প্রয়োজন।
  • (৮) এই শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য হল উপযুক্ত শিক্ষক তৈরি করা।

(F) বৃত্তিগত শিক্ষা : POA-1992-9 এর বৃত্তিশিক্ষা সুপারিশ গুলি হল—

  • (১) উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের ১০% ছাত্রছাত্রীদের ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ও ২৫% ছাত্রছাত্রীদের ২০০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বৃত্তিশিক্ষার আওতায় আনতে হবে।
  • (২) পরিকল্পিত বৃত্তিমুখী শিক্ষা চালু করা দরকার।
  • (৩) সাধারণ শিক্ষার জন্য যে বিদ্যালয় গুলো রয়েছে তাদের দ্বারা সঠিক বৃত্তিশিক্ষা দেওয়া সম্ভব নয়। তাই এর জন্য আরও উন্নত চিন্তাভাবনার দরকার।
  • (৪) বৃত্তিশিক্ষার পর অধিকাংশ শিক্ষার্থী যাতে চাকুরি পায় অথবা বিভিন্ন ধরনের স্বনিযুক্তি প্রকল্পের নিজেকে নিয়োজিত করতে পারে, তার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। 
  • (৫) বৃত্তিশিক্ষার জন্য অধিক সংখ্যক বৃত্তিশিক্ষার প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে।

(G) শিক্ষক-শিক্ষণ :

  • (১) শিক্ষকের শিক্ষণ ও প্রশিক্ষণের মান উন্নয়ন প্রয়োজন।
  • (২) পরিবর্তিত অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষক-শিক্ষণ কর্মসূচির দিকে অধিক নজর দেওয়া প্রয়োজন।
  • (৩) শিক্ষা সহায়ক উপকরণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

(H) প্রথামুক্ত শিক্ষা :

  • (১) Dropout শিক্ষার্থীদের জন্য প্রথামুক্ত শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
  • (২) প্রথামুক্ত শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য উন্নতমানের শিক্ষা সহায়ক উপকরণের ব্যবস্থা করতে হবে।। 
  • (৩) আগ্রহী ও উপযুক্ত ব্যক্তিদেরকে প্রথামুক্ত শিক্ষার শিক্ষক হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।
  • (৪) প্রথামুক্ত শিক্ষার শেষে শিক্ষার্থীরা যাতে প্রথাগত (Main Stream) শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত হতে পারে সেদিকে নজর দিতে হবে।
  • (৫) উন্নতমানের শিক্ষা উপকরণ প্রস্তুত করা প্রয়োজন এবং গুলি শিক্ষার্থীদেরকে বিনা পয়সায় দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
  • (৬) প্রথামুক্ত শিক্ষার ক্ষেত্রে খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ভ্রমণ ইত্যাদির উপর গুরুত্ব দিতে হবে। 
  • (৭) প্রথামুক্ত শিক্ষার ক্ষেত্রে পঞ্চায়েত ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে গুরুত্ব দিতে হবে।
  • (৮) প্রথামুক্ত শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সরবরাহ করতে হবে। 
  • (৯) প্ৰথামুক্ত শিক্ষা যাতে প্রথাগত শিক্ষার গুণমানের সঙ্গে এক হয়, সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।
  • (১০) কর্মরত শিশু এবং যে সকল মেয়েরা দিনের বেলা স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পায় না, তাদের জন্য প্রথামুক্ত শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।

(I) অন্যান্য সুপারিশ : এ ছাড়াও POA-1992-এর অন্যান্য সুপারিশ গুলি হল—

  • (১) সারাদেশে বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি।
  • (২) শিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন বাের্ডের ভূমিকার পরিবর্তন প্রয়ােজন।
  • (৩) সমস্ত স্তরের শিক্ষার পাঠক্রমের আধুনিকীকরণ প্রয়োজন।
  • (৪) পাঠক্রম সংক্রান্ত গবেষণা ও উন্নতির সঙ্গে যুক্ত সংস্থাগুলির উন্নতির উপর গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।
  • (৫) সর্বাঙ্গীন বিকাশের দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন। 
  • (৬) সমস্ত স্তরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামাজিক চেতনা, ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতান্ত্রিকতার বিকাশ ঘটানো প্রয়োজন।
  • (৭) শিক্ষা ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করতে সমতা আনা প্রয়োজন।
  • (৮) শিক্ষকদের মান উন্নয়নের জন্য সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
  • (৯) শিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন বোর্ডের কার্যকারিতার উপর গুরুত্ব দিতে হবে।
  • (১০) পরীক্ষা ও মূল্যায়ন পদ্ধতি বিজ্ঞানসম্মত করতে হবে।