১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় শিক্ষানীতির প্রথম অংশটি হল ভূমিকা বিষয়ক। এই অংশের মূল কথা হল— শিক্ষানীতি গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা। ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় শিক্ষানীতি সম্পূর্ণরূপে কার্যকর করা না গেলেও শিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রে যথেষ্ট উন্নতি হয়েছিল এই সময়ে দেশের সর্বত্র শিক্ষায় সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি পেয়েছে, গ্রামের ৯০% শিশুর কাছে শিক্ষার সুযােগ পৌছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। ১০+২+৩ এই শিক্ষা কাঠামোটি দেশের সর্বত্র গৃহীত হয়েছে।
শিক্ষার প্রতিটি স্তরের মান উন্নয়ন, বিজ্ঞান সচেতনতা, নৈতিক মূল্যবোধ, জাতীয় সংহতি বোধ সৃষ্টি ইত্যাদি অনেকটাই সফল হয়েছে। স্নাতকোত্তর স্তরের শিক্ষা ও গবেষণার প্রয়োজনে গড়ে উঠেছে Centre of Advanced Studies। বিদ্যালয় স্তরে পাঠক্রমে বিজ্ঞানের, গণিত, কর্ম অভিজ্ঞতা ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
(১) সার্বিক বিকাশ: আমাদের জাতীয় শিক্ষানীতিতে সবার জন্য শিক্ষার কথা বলা হয়েছে। এই শিক্ষার লক্ষ্য হবে শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীণ বিকাশ। তাই পাঠক্রমে এমন সব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, যা সার্বিক বিকাশে সাহায্য করে। যেমন— ভাষাবিজ্ঞান, সমাজবিদ্যা, বিজ্ঞান, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক বিষয়, শরীরচর্চা ইত্যাদি।
(২) উন্নয়নের মূল সূত্র : আমাদের জাতীয় শিক্ষানীতিতে বলা হয়, শিক্ষা হল সকলের জন্য। শিক্ষাই হল বৈষয়িক ও আধ্যাত্মিক সর্বাঙ্গীণ উন্নয়নের মূল সূত্র।
(৩) সংস্কৃতি মূলক ভূমিকা : শিক্ষায় সংস্কৃতিমূলক ভূমিকা উল্লেখযোগ্য শিক্ষা আমাদের অনুভূতিকে এবং জাতীয় সংহতি সম্পর্কে ধারণাকে স্বচ্ছ করে। আমাদের বিজ্ঞানভিত্তিক ভাবধারা ও স্বাধীন মানসিকতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে শিক্ষার ভূমিকা অনন্য।
(৪) মানব সম্পদ বিকাশ : শিক্ষা হবে মানব সম্পদের বিকাশের উপযােগী। শিক্ষার্থীকে এমনভাবে তৈরি করতে হবে, যাতে সে জাতীয় সম্পদে পরিণত হয়, দেশের উন্নয়নে নিজেকে নিয়োজিত করতে পারে।
(৫) গবেষণা ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে উন্নয়ন : গবেষণার মান উন্নত করতে হবে। যতটা সম্ভব প্রযুক্তি বিদ্যাকে শিক্ষা ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে হবে। এতে শিক্ষার মান উন্নয়ন সম্ভব হবে। এর মাধ্যমে স্বনির্ভরতা বিকাশ ঘটছে।
সমগ্র দেশের জন্য জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা একটি জাতীয় ভিত্তিতে প্রণীত পাঠক্রম কে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা হবে। এই পাঠক্রমে এমন বিষয় সমূহ থাকবে যা সমগ্র দেশের একই পর্যায়ের সকল ছাত্রছাত্রী অধ্যয়ন করবে। এই বিষয়গুলিকে বলা হবে কোর বিষয়। এ ছাড়া ঐচ্ছিক বিষয়ও থাকবে যা ছাত্রছাত্রীদের পছন্দের ভিত্তিতে গৃহীত হবে।
কোর বিষয়ের অন্তর্গত বিষয় সমূহ : আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস, সংবিধানের দায়দায়িত্ব সম্পর্কিত ধারণা, সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার, সমান অধিকার ইত্যাদি বিষয় সমূহ কোন বিষয়ের অন্তর্গত।
(১) আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থা এবং দেশের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বিতর্কিত বৈষম্য দূর করে উভয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করা প্রয়োজন। ভারতের ইতিহাস ও সংস্কৃতি থেকে আগামী প্রজন্মের পদস্খলন না ঘটনা হল আধুনিক প্রযুক্তি বিজ্ঞানের প্রাথমিক কর্তব্য। যে-কোনো মূল্যে সংস্কৃতি ও মানসিকতা থেকে বিচ্যুতি ও বিচ্ছেদকে পরিত্যাগ করতেই হবে। দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের নিরবচ্ছিন্নতা এবং পরিবর্তনমুখী প্রযুক্তির মধ্যে সূক্ষ্ম সমন্বয় বিধানের দায়িত্ব নিয়েই শিক্ষাকে এগিয়ে আসতে হবে।
(২) শিক্ষার বিষয়সূচি ও পদ্ধতি হবে যথেষ্ট উন্নত, যেন এর মধ্যে যতদূর সম্ভব সাংস্কৃতিক বিষয় অন্তর্ভুক্ত হয়। সৌন্দর্য, ঐক্য ও শিষ্টাচার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির অনুকূলে শিশুদের সক্ষম করে তুলতে হবে। আনুষ্ঠানিক শিক্ষাগত গুণ আছে কি না তা বিচার না করে জনসমাজের ভিতর থেকে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের নির্বাচন করে শিক্ষার সংস্কৃতিগত অংশের উন্নয়নে নিয়োগ করা হবে। সংস্কৃতি গত ঐতিহাকে বহাল রাখার উদ্দেশ্যে বয়স্ক শিক্ষকরা অতীতে যে চিরাচরিত পদ্ধতিতে শিক্ষাদান করতেন, সেই ভূমিকা ও পদ্ধতিকে সমর্থন করে তাকেই আধুনিক ধারায় পুনর্বিন্যাস করা হবে।
(৩) কলা, প্রত্নতত্ত্ব, প্রাচ্যবিদ্যা ইত্যাদির ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় রীতি ও উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগত রীতির মধ্যে অনুকুল সংগতি বিধান করা হবে। কলাশাস্ত্র, মিউজিওলজি, লোককাহিনী ইত্যাদি বিশেষ বিষয়ের প্রতি প্রয়োজনীয় মনােযােগ দেওয়া হবে। আবার সব ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় জনশক্তির যোগানকে অব্যাহত রাখার উদ্দেশ্যে উক্ত বিষয় গুলোর জন্য শিক্ষক, শিক্ষা ও গবেষণার প্রক্রিয়া জোরদার করা হবে। উন্নয়ন ও সংস্কার সাধনের জন্য জাতীয় শিক্ষানীতির এই সকল সুপারিশ উল্লেখযোগ্য।
Leave a comment