শিক্ষাকে উদ্দেশ্যের নিরিখে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা—সাধারণ ধর্মীয় শিক্ষা, বিশেষ ধর্মীয় শিক্ষা ও সামাজিক শিক্ষা। আবার বিশেষধর্মী শিক্ষাকে তিনটি প্রকারে ভাগ করা হয়েছে। যথা— বৃত্তিমূলক শিক্ষা, পেশাগত শিক্ষা ও কারিগরি শিক্ষা। 

বৃত্তিমুখী শিক্ষা হল, এমন এক শিক্ষা যার দ্বারা শিক্ষার্থীদের হাতে কলমে বাস্তবে কাজের মাধ্যমে কোনো বিশেষ বৃত্তি সম্পর্কে জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করতে পারে। এই শিক্ষার উদাহরণগুলি যেমন— কৃষিকাজ, ক্ষুদ্র ও বৃহৎ নানা শিল্পের কাজ, যন্ত্র চালানোর কাজ, বিভিন্ন ধরনের কাজ ইত্যাদি। অর্থাৎ যে শিক্ষা শিক্ষার্থীকে কোনাে কাজের মাধ্যমে জীবিকা অর্জনের উপযােগী জ্ঞান ও দক্ষতা দান করে, তাকে বলে বৃত্তিমুখী শিক্ষা। যেমন— আইনবিদ্যা, সাংবাদিকতা, সেবামূলক বৃত্তি, কুটির শিল্প, হস্তশিল্প ইত্যাদি।

বৃত্তিমূলক শিক্ষার উপযােগিতা

শিক্ষাবিদ হার্টশোন-এর মতে, বৃত্তিমুখী শিক্ষা হল এমন এক ধরনের প্রয়োজনীয় শিক্ষা যার অভাবে শিক্ষার্থীকে সারাজীবন দুঃখ ভােগ করতে হয়, তাই এই শিক্ষার উপযোগিতা বা প্রয়োজন গুলি হল—

(১) শিক্ষার্থীকে স্বনির্ভর হতে সাহায্য করা: বৃত্তিমুখী শিক্ষা শিক্ষার্থীকে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে হাতে কলমে কাজ করার সুযোগ করে দেয়, যার ফলে সে ওই বিষয়ে অভিজ্ঞ হয়ে ওঠে। ফলে ভবিষ্যৎ জীবনে সে ওই বিষয়ে স্বনিযুক্ত হয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে।

(২) শ্রমের প্রতি উৎসাহ প্রদান: বৃত্তিমুখী শিক্ষা শিক্ষার্থীদের শ্রমের প্রতি মর্যাদা উপলব্ধি করতে সাহায্য করে। সমাজের বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে অভিযােজনে এবং নৈতিক চরিত্র গঠনেও এই শিক্ষার বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।

(৩) শিক্ষার প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গঠন: পুথিগত, নীরস সাধারণ শিক্ষা শিক্ষার্থীদের মানসিক ক্লান্তি এনে দেয়। বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষায় ব্যবহারিক ও হাতে কলমে কাজ করার সুযোগ থাকায় তা সহজে একঘেয়ে হয়ে যায় না। এর ফলে শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীদের ইতিবাচক মনোভাব গড়ে ওঠে।

(৪) শিক্ষার্থীর চাহিদার পরিতৃপ্তি: এই শিক্ষা ব্যক্তিকে নিজের চাহিদা পরিতৃপ্ত করে। প্রত্যেকটি মানুষ ভবিষ্যতে কী হতে চায়, সেইমতাে সে প্রশিক্ষণ নেয়। ফলে তার চাহিদা পরিতৃপ্ত হয় এবং পেশায় সফলতা পায়।

(৫) বিশেষজ্ঞ রূপে শিক্ষার্থী গড়ে তোলা: এই শিক্ষা সমাজকে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি সরবরাহ করে। আমাদের সমাজে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি প্রয়োজন। যেমন – কৃষিকাজ, শিল্প, শিক্ষা, ব্যবসা বাণিজ্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি সরবরাহ করে।

(৬) ব্যতিক্রমী শিক্ষার্থীদের জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ: ব্যতিক্রমী বা প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েদের জন্য বৃত্তিমূলক শিক্ষা বিশেষভাবে প্রয়োজনীয়। তাদের মধ্যে অনেকেই সাধারণ ধর্মীয় শিক্ষার খুব একটা পারদর্শিতা অর্জন করতে পারে না। এর পরিবর্তে কোন বিশেষ বৃত্তিমূলক শিক্ষা নিলে হাতেকলমে তারা কিছু উৎপাদন করতে পারে এবং অর্থ উপার্জনে সক্ষম হয়ে ওঠে।

(৭) কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি: বর্তমানে অত্যধিক জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং বিজ্ঞান ও শিল্পের দ্রুত উন্নয়নের ফলে সাধারণধর্মী শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তিরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে রুজিরােজগারের দিক থেকে পিছিয়ে পড়েছে। তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। অন্যদিকে বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত ছাত্রছাত্রীরা নিজেরাই নিজেদের কর্মসংস্থানে সক্ষম।

(৮) জাতির উন্নয়নে সহায়তা: বৃত্তিমুখী শিক্ষা জাতির উন্নয়নে সাহায্য করে। দেশ ও জাতির উন্নয়নে শিল্পের প্রয়োজন অত্যন্ত বেশি। তাই প্রয়োজন দক্ষ কারিগর। বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমেই দক্ষ কারিগর তৈরি করা সম্ভব।

(৯) ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জনে সহায়তা: বৃত্তিমুখী শিক্ষা ব্যক্তির কর্মদক্ষতা তা বৃদ্ধিতে ও ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জনে সহায়তা করে, যে তাকে যথার্থ বৃত্তি নির্বাচনে সহায়তা করে।

(১০) মানবসম্পদ উন্নয়নকারী শিক্ষা : বৃত্তিমুখী শিক্ষা দক্ষ ব্যক্তি তৈরি করে, যা একসময় মানবসম্পদে পরিণত হয়, অর্থাৎ এটি একটি মানবসম্পদ তৈরির শিক্ষা।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে বলা যায়, বৃত্তিমূলক শিক্ষার উপযোগিতা আধুনিক পৃথিবীতে দিনে দিনে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে।