বর্তমানে আধুনিক সমাজ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির হাত ধরে এগিয়ে চলেছে। কিন্তু কুফলস্বরূপ ডেকে আনছে আত্মগরিমা এবং একাকিত্বকে। মুঠো ফোনের বন্ধুত্ব সোশ্যাল মিডিয়া নয়। বর্তমান যুগের অন্যতম সমস্যা একাকিত্বের অসুখ। সমাজবদ্ধ জীব মানুষ শেষপর্যন্ত যুথবদ্ধভাবেই বাঁচতে চায়। ব্যক্তি জীবনের আশা-আকাঙ্ক্ষা, সুখ-দুঃখের পরিতৃপ্তির কারণে সমাজ জীবনের প্রয়ােজন। অপরের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালােবাসা, সহানুভূতি, সহযােগিতার বন্ধন থেকে সামাজিক বন্ধন তৈরি হয়।
যে শিক্ষা পরস্পরের সঙ্গে হিংসা, বিদ্বেষ ভুলে মিলেমিশে থাকার শিক্ষা দেয়, যার পথ ধরে বিশ্ব ভ্রাতৃত্ববােধের প্রসার ঘটে এবং সম্প্রদায়গত বিচ্ছিন্নতা, জাতিগত বিভেদ থেকে মুক্ত করে সহযােগিতার মনােভাব গড়ে তােলে তাই হল একত্রে বসবাসের শিক্ষা। এর মাধ্যমে মানুষে মানুষে সংঘাত, গৃহযুদ্ধ দূর হয়।
(১) শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান: হিংসা, পরশ্রীকাতরতা, অসুস্থ প্রতিযোগিতা ইত্যাদিকে দূরীভূত করে প্রেম, ভালােবাসা, সহযােগিতা, সহমর্মিতাকে জাগ্রত করে সুন্দর ও শান্তিপূর্ণভাবে বেঁচে থাকতে উৎসাহিত করে।
(২) ঐক্যবােধ : ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, ভাষাগত বিভিন্নতা সত্ত্বেও জীবনে। চলার পথে দর্শন হবে বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য। একত্রে বেঁচে থাকার শিক্ষার মধ্য দিয়ে এই উদ্দেশ্যপূরণ ব্যক্ত হয়েছে।
(৩) আন্তর্জাতিকতাবাদ : দুটি বিশ্বযুদ্ধের বীভৎসতা, ভয়াবহতা, লােকক্ষয়, আর্থিক ক্ষয় থেকে মুক্তি পেতে প্রধান হাতিয়ার হবে আন্তর্জাতিকতাবাদ অর্থাৎ বিশ্বশান্তি, বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধ, বিশ্বনাগরিকতা। এর জন্য চাই একত্রে বাঁচা যার মাধ্যমে বিকশিত হবে মানবিকতা, সামাজিক ন্যায়বিচার, শান্তি, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ইত্যাদি।
(৪) অন্যদের প্রতি শ্রদ্ধাবােধ : ভালোভাবে বেঁচে থাকতে হলে পারস্পরিক নির্ভরশীলতাকে বুঝে একে অন্যের প্রয়ােজনীয়তাকে বুঝে শ্রদ্ধা দেখাবে।
(৫) সহনশীলতা : একত্রে মিলেমিশে বসবাসের মাধ্যমে একের অপরের প্রতি সহনশীল মনােভাব তৈরি হয়। কেউ কারাের উপর বিদ্বেষভাবাপন্ন হয় না।
(৬) জ্ঞানের অন্বেষণ : একত্রে বসবাসের মাধ্যমে ব্যক্তিগণ একে অপরের থেকে বিভিন্ন অভিজ্ঞতা, শিক্ষা, জ্ঞানের আদানপ্রদান করে। তার ফলে জ্ঞানের বিকাশ ঘটে, জ্ঞানের অন্বেষণের উত্তর পেতে সুবিধা হয়।
(৭) সামাজিক সমস্যা নিরসন : সমাজে বিভিন্ন সমস্যা যা সমাধান করা একা কোনাে ব্যক্তির পক্ষে অসম্ভব। একত্রে কাজ করার মাধ্যমে আসবে সাফল্য।
(৮) বিশ্বব্যাপী সংকট নিরসন : বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন সংকট যেমন-বিশ্ব তাপমাত্রা বৃদ্ধি, খনিজ তেলের সংকট, পানীয় জলের সংকট ইত্যাদি সমস্যা মােচনের দায়িত্ব কোনাে একা মানুষ, একটি দেশে বা সমাজের ক্ষেত্রে সম্ভব নয়। একত্রে বসবাস-এর নীতিতে সকলে মিলে এই সমস্যা দূর করতে হবে।
একত্রে বসবাসের শিক্ষা এইভাবে শ্রদ্ধা, সহনশীলতার মনােভাব গড়ে তােলে। আধুনিক শিক্ষাবিদগণ এই কারণে একত্রে বসবাসের শিক্ষাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হিসেবে নির্বাচন করেছেন।
Leave a comment