বাংলা রচনা : আধুনিক সভ্যতা ও প্রযুক্তি |
আধুনিক সভ্যতা ও প্রযুক্তি
অথবা, আধুনিক জীবন ও প্রযুক্তি
অথবা, বিজ্ঞান ও আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি
অথবা, প্রযুক্তির উৎকর্ষ ও আগামী দিনের সভ্যতা
ভূমিকা : বর্তমান বিশ্ব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির হাতের মুঠোয় । আধুনিক যুগ তথ্যপ্রযুক্তির যুগ । যুগের সভ্যতা গড়ে উঠেছে প্রযুক্তিকে কেন্দ্র করে । আর এই প্রযুক্তির কল্যাণেই আগামী দিনের সভ্যতা সমৃদ্ধ হবে । আধুনিককালের মানবজীবনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে। মানব জীবনের সাথে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সম্পর্ক যেন অবিচ্ছেদ্য। এই প্রযুক্তি মানুষকে উন্নয়নের পথ দেখাচ্ছে। প্রযুক্তির জন্মই হয়েছে মানবজাতির কল্যাণের জন্য। তারপরও এর কিছু ক্ষতিকর প্রভাব লক্ষ করা যায় । সামান্য কুফল থাকলেও আধুনিক যুগে বিজ্ঞানের বিজয় ঘােষিত হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বর্তমান মানব সমাজে এতটাই প্রভাব বর্তমান মানব সমাজে এতটাই প্রভাব বিস্তার করেছে যে, এখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ছাড়া মানবজীবন অচল।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পরিচয় : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে একটি বিষয় মনে হলেও আসলে এ দুটি পৃথক বিষয়। বিজ্ঞান মানে মানুষের বিশেষ ধরনের জ্ঞান, যা তত্ত্ব ও তথ্যের মাধ্যমে প্রমাণ করে বাস্তব সত্যকে ধারণ করে। আর প্রযুক্তি বলতে বােঝানাে হয় বিজ্ঞানের সত্য ও সত্রকে বৈজ্ঞানিক কায়দায় মানুষের জীবনে ব্যবহার উপযােগী করে গড়ে তােলার যন্ত্রকে। আবার অন্যভাবে বলা যায়, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সৃষ্ট মানুষের জীবনঘনিষ্ঠ ব্যবহারিক উপকরণাদিই প্রযুক্তি।
মানব সভ্যতায় প্রযুক্তির প্রভাব : বর্তমানে মানব জীবনে বিভিন্ন সমস্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এই সমস্যা বৃদ্ধির প্রধান কারণ ব্যাপক হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি। মানব সমাজের সকল সমস্যাকে পিছনে ফেলে আর্থনীতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। তাছাড়া আধুনিক পৃথিবীতে মানুষই সবচেয়ে সভ্য প্রাণী। আর মানুষের এই সভ্যতার পিছনে সবচেয়ে বেশি অবদান বিজ্ঞানের । বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সাথে আধুনিক মানুষের জীবন ওতপ্রােতভাবে জড়িত। মানুষের জীবনের জটিলতার অবসানের জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশেষ অবদান রাখছে। প্রতিনিয়তই মানবজীবন সমৃদ্ধ থেকে সমৃদ্ধতর হচ্ছে। এর পিছনে সবচেয়ে বড়াে অবদান রেখেছে বিজ্ঞানের বিকাশ। আর এই বিজ্ঞানের বিকাশের অন্যতম কারণ মানুষের অদম্য আগ্রহ ও স্পৃহা। দিন দিন বিজ্ঞানের উন্নতি হচ্ছে, নতুন নতুন। আবিষ্কার হচ্ছে। আর প্রযুক্তির সংস্পর্শে মানুষের জীবনে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ছাড়া আধুনিক মানবজীবন প্রায়। অচল। বর্তমানে মানুষের স্বাস্থ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা, যােগাযােগ, বিনােদনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। সারা বিশ্ব এখন মানুষের হাতের মুঠোয় । যে যত দূরে থাকুক না কেন ঘরে বসেই অনায়াসে সবার সাথে যােগাযােগ করা। সম্ভব হচ্ছে ।
জীবন ও প্রযুক্তির বন্ধন : আধুনিক জীবনব্যবস্থায় জীবন ও প্রযুক্তি একে অন্যের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। দিন দিন মানবজীবন। প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে পড়েছে। প্রযুক্তির অবদানে মানুষ বিপদমুক্ত হয়ে উঠেছে, নিরাপদ থাকতে পারছে। এই প্রযুক্তি মানুষকে আধুনিক থেকে আধুনিকতর করে তুলছে। প্রযুক্তির সাথে মানব জীবনের সম্পর্ক না থাকলে মানবজীবন আদিমতায় ঢেকে যেত। বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে মানুষ প্রতিনিয়তই একেকটি প্রযুক্তির দেখা পাচ্ছে। প্রযুক্তিই মানুষের জীবনের অভাব অনটন দূর করতে। সহায়তা করছে। প্রযুক্তি মানুষের জ্ঞানের পরিধিকে যেভাবে প্রসারিত করছে, তেমনিভাবে মানুষের খাদ্যের চাহিদা মিটাতেও অবদান। রাখছে। খাদ্যের চাহিদা মেটাতে কৃষি প্রযুক্তির উদ্ভাবন ঘটে; রােগ-ব্যাধি নির্মূলে উন্নতমানের চিকিৎসা প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হয়েছে। তাছাড়া জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রযুক্তির অবদান সীমাহীন।
প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্ব : বিজ্ঞানীদের বিস্ময়কর আবিষ্কার প্রযুক্তি। প্রযুক্তির সংস্পর্শে পৃথিবীতে নবচেতনার দ্বার উন্মােচিত হয়েছে। প্রযুক্তিনির্ভর পৃথিবী দ্রুত উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রযুক্তির সাহায্যে মানুষ অল্প সময়ের মধ্যে কাজ সমাধান করতে পারে । প্রযুক্তির সহায়তায় মানুষ অল্প পরিশ্রম করে অধিক কাজ করতে পারে এবং আর্থনীতিক উন্নতিও হয় দ্রুত। তাই বিশ্ব এখন প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়েছে। এক দেশে উদ্ভাবিত প্রযুক্তি অন্য দেশে রপ্তানি করে আর্থিক উন্নতি করছে। তাছাড়া কোনাে কোনাে দেশ প্রযুক্তির উন্নয়নের জন্য কাঁচামাল রপ্তানি করে আর্থিক উন্নতি করছে।
প্রযুক্তির অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ সভ্যতা : নব নব প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ফলে আধুনিক বিশ্বে মানবজীবনের ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে । বৈজ্ঞানিকগণ প্রতিনিয়ত গবেষণা করে প্রযুক্তির উন্নতি করছে, আর সেই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে মানুষ দেশ, জাতি এমনকি সমগ্র বিশ্বের উন্নতি করছে। প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলেই মানুষের অভাব দূর হচ্ছে, উন্নত চিকিৎসার ফলে মানুষ রােগমুক্ত হচ্ছে। প্রযুক্তিই। এখন মানব জীবনের সকল সমস্যা সফলভাবে সমাধান করছে। প্রযুক্তির প্রভাবে সারা বিশ্বে এখন উন্নতির ধারা প্রবাহিত হচ্ছে। প্রযুক্তির উন্নয়নের ধারার সাথে তাল মিলিয়ে মানুষ সভ্য হচ্ছে। প্রযুক্তির অগ্রগতি অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে মানবজাতি আর্থনীতিক, রাজনীতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়ে উন্নতির শিখরে পৌঁছাতে পারবে ।
প্রযুক্তির কুফল : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মানবজীবন ও সভ্যতার উন্নয়ন সাধন করলেও এর কিছু ক্ষতিকর প্রভাব লক্ষ করা যায়। প্রযুক্তির দিক থেকে উন্নত দেশগুলাে অনুন্নত দেশের ওপর প্রভাব বিস্তার করে থাকে । পারমাণবিক অস্ত্রের হুমকিতে তারা বিশ্বশান্তি বিপন্ন করছে। বিশ্ব সংঘাতের মূলেও রয়েছে এই প্রযুক্তি। সুতরাং আমরা বলতে পারি, আধুনিক প্রযুক্তি আমাদের যুদ্ধ, অশান্তি এবং নানা প্রকার কুফলতার পথ দেখালেও আমরা তার কুফলটা গ্রহণ না করে সুফলটা গ্রহণ করব ।
উপসংহার : আধুনিক প্রযুক্তি সারা বিশ্বকে জয় করেছে। প্রযুক্তির অবদানে বিশ্ব এখন মানুষের হাতের মুঠোয় । প্রযুক্তি মানুষকে যেমন উন্নতির শিখরে পৌঁছে দিয়েছে তেমনি কঠিন কাজগুলােকে করেছে সহজ। তাছাড়া প্রযুক্তির আকাশছোঁয়া সাফল্যের বিপরীতে রয়েছে সভ্যতা ধ্বংসের হাতছানি। তবে এর কুফল মানুষের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তার জন্য আমাদেরকে সচেতন হতে হবে। কেননা মানুষ যদি প্রযুক্তির উদ্ভাবন করতে পারে তাহলে নিয়ন্ত্রণও করতে পারবে । সুতরাং প্রযুক্তির কুফল বর্জন করে প্রযুক্তিকে মানবকল্যাণে প্রয়ােগ করে বিশ্বকে আরও উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
বাংলা রচনা,bengali-composition
Leave a comment