জ্ঞানহীন মানুষ পশুর সমান

ভাব-সম্প্রসারণ : জ্ঞানহীন মানুষ পশুর মতােই ভয়ংকর । পশুর যেমন হিতাহিত জ্ঞান নেই, তেমনি জ্ঞানহীন মানুষদেরও বিবেক-বিবেচনা বােধশক্তি থাকে না। শুধু মানুষ হিসাবে জন্ম নিলে মানুষ হওয়া যায় না, বরং জ্ঞানার্জনের মধ্য দিয়ে প্রকৃত মানুষ হতে হবে; এছাড়া মানুষ আর পশুতে কোনাে প্রভেদ থাকে না । পৃথিবীতে মানুষ জ্ঞানের সাধনা করে বলে তারা সেরা জীব হিসেবে পরিচিত। তাই মানবজীবনে জ্ঞানার্জন করা একটি অন্যতম মহকর্মও বটে। জ্ঞানের আলােয় মানুষের বিবেক জাগ্রত হয় বলে মানুষ নিজেই ভালাে-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, বিচার-অবিচার বুঝতে পারে । তাই সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকেই জ্ঞানার্জনের প্রতি মানুষের গভীর মনােযােগ লক্ষ করা যায় । মানুষ শুধু আগুন আবিষ্কার করেই ক্ষান্ত হয়নি, এর যথার্থ ব্যবহারও নিশ্চিত করেছে । আজকের যে গগণচুম্বী সংস্কৃতি দাড়িয়েছে তার মূলেও জ্ঞানের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। তাই জ্ঞান মানবজীবনের এক হিরণায় দ্যতির নাম। আর জ্ঞানার্জনের অন্যতম মাধ্যম হলাে। শিক্ষা। শিক্ষাজনের ফলে মানুষ জ্ঞানী হয় এবং তার সমস্ত পাশবিক সত্তা বিনষ্ট হয়; তার অন্তর হয়ে ওঠে পূত-পবিত্র । তাই বিশ্বব্যাপী অদ্যাবধি শিক্ষার জন্য মানুষের এত আয়ােজন। প্রাচীনকালে মানুষ উপাসনালয়ে যেতেন, ধর্মগুরু কিংবা কোনাে মহৎ ব্যক্তির কাছ থেকেও শিক্ষাদীক্ষা লাভ করতেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায় যে, আরও কিছু সম্প্রদায় আছে; যারা তাদের। ধর্মগুরু বা মুর্শিদের কাছ থেকে শিক্ষাদীক্ষা গ্রহণ করে জ্ঞানার্জনের পথকে সুগম করে । জ্ঞানার্জনের বিষয়কেই সর্বাধিক প্রাধান্য দিয়ে মানুষ তাই গড়ে তুলেছে পাঠশালা, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও অনেক প্রতিষ্ঠান । শিক্ষাদীক্ষা ছাড়া বস্তুত জ্ঞানার্জন সম্ভব হয় না; আল্লাহ তায়ালা শিক্ষার গুরুত্ব প্রতিপন্ন করার জন্যই বিশ্বনবি হজরত মুহম্মদ (সা.)-এর ওপর পবিত্র কুরআনের প্রথম বাণী নাজিল করেন ইকরা’ অর্থাৎ পড় । আর হজরত মুহম্মদ (সা.) জ্ঞানার্জনের জন্য সুদূর চীনেও যেতে বলেছেন । কিন্তু প্রশ্ন হলাে বিশ্বে শিক্ষাদীক্ষা আর জ্ঞানার্জনের জন্য মানুষের অপরিসীম ত্যাগ-তিতিক্ষা সত্ত্বেও পৃথিবীতে এত অশান্তি কেন? প্রকৃতপক্ষে, যে শিক্ষায় কিংবা জ্ঞানার্জনে মানুষের মনুষ্যত্ব জাগ্রত হবে না; সেখানে পশুসত্তা প্রবল হওয়াই স্বাভাবিক। আর পশুসত্তা তথা পাশবিকতা জ্ঞানার্জনের পথে বড়াে অন্তরায়। তাই জ্ঞানহীন মানুষ অন্তরের পশুশক্তির তাড়নায় নানা ধরনের কুকর্মে জড়িয়ে পড়ে। তার কাছে ন্যায়-অন্যায়, ভালাে-মন্দ ইত্যাদির বিচার-বিবেচনা মূল্যহীন। এ ধরনের মানুষদের পশুসুলভ আচরণে বিশ্বে সর্বদা জন্ম দেয় হিংসা, বিদ্বেষ, লােভ-লালসা, খুন-ধর্ষণসহ বহুবিধ অপরাধ । বিশ্বময় যে। অশান্তি বিরাজ করছে তার অন্যতম কারণ হলাে মানুষের এই পাশবিক আচরণ । তাই দেখা যায়, একটি ফুটফুটে শিশু যাকে। দেখলেই যেকোনাে মানুষের আদর করতে ইচ্ছা করে; অথচ সেই শিশুও ধর্ষিত হয়, খুন হয়— একি কোনাে মানুষের কর্ম? নিশ্চয়ই নয় । মানুষ যখন কাণ্ডজ্ঞানহীন হয়ে পশুতে পরিণত হয়, তখনই এটি সম্ভব। মানুষের মধ্যে পশুত্ব শক্তি সরিয়ে ফেলে। বিবেককে জাগ্রত করতে হবে । বিশ্বশান্তির প্রয়ােজনে প্রকৃত জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে তা করা সম্ভব । মানুষ মানবিক এবং পাশবিক দুই সত্তা নিয়েই জন্মায় । কিন্তু প্রকৃত জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে পাশবিকতা দূর করা যায় । আর মানুষের পশুশক্তিকে পরাস্ত করে সুন্দর পৃথিবী গড়ে তােলাই হােক মানুষের ব্রত।

ভাব-সম্প্রসারণ