বাংলাদেশের কৃষক
অথবা, বাংলাদেশের কৃষি ও কৃষক

[ সংকেত: ভমিকা; বাংলাদেশের কষকদের অতীত অবস্থা; বর্তমান অবস্থা; কষকদের দুরবস্থার কারণ; দুরবস্থা পুন ম ন | কৃষকের উন্নতির জন্য গৃহীত পদক্ষেপ; উপসংহার । ]

ভামকা : আমাদের দেশ বাংলাদেশ। বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। বিশ্বে বাংলাদেশকে কষিপ্রধান দেশ হিসেবে সবাই চেনে। এদেশের শতকরা ৮০ জন লােক কৃষিকাজের সাথে জড়িত। প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষভাবেই বাংলাদেশের লােক কৃষিজাবা। 

বাংলাদেশের কৃষকদের অতীত অবস্থা : আগেকার দিনে আমাদের দেশে লােকসংখ্যা কম ছিল। এজন্য জমির পরিমাণ বিেশ ছিল। তখন জমির উর্বরতাও ছিল অধিক। জমিতে প্রচুর ফসল ফলত। এজন্য তখনকার দিনে কৃষকদের বেশি কষ্টের সম্মুখীন হতে হতাে না। তাদের জীবনযাত্রা মােটামুটি ভালাে ছিল। পর্যটক ইবনে বতুতার বর্ণনায় বাংলার যে পরিচয় পাওয়া যায় তাতে সে যুগের কৃষকরা বেশ সচ্ছল ছিল। তখন কৃষকদের ছিল গােলাভরা ধান, গােয়াল ভরা গােরু, পুকুর ভরা মাছ। মানুষ তৃপ্তির সাথে পরতে ও খেতে পারত। তারা সুখে ও আনন্দের সাথে জীবন পরিচালনা করতে পারত। মােটকথা তারা সকল দিক থেকে সুখী ছিল। 

বর্তমান অবস্থা : আগেকার দিনের মতাে বর্তমান কালের বাংলাদেশের কৃষক আর সুখে দিন কাটাতে পারছে না। বর্তমানে এদেশের কৃষকের অবস্থা অতি শােচনীয়। এখন বাংলাদেশের কৃষককে চরম দারিদ্র্যের সাথে লড়াই করে দিন কাটাতে হচ্ছে। এক বেলা খায় তাে আর এক বেলা না খেয়ে, দুঃখে, পরিশ্রমে, শীতে কেঁপে, বর্ষায় ভিজে জীবনকে পরিচালিত করতে হচ্ছে। আজকের দিনে উন্নয়নশীল দেশগুলােতে যে উন্নতি দেখা যায়, আমাদের দেশকে এর ছোঁয়া পেতে হলে আরও কিছুকাল অপেক্ষা করতে হবে। 

কৃষকদের দুরবস্থার কারণ : আজ এদেশের বিরাট জনগােষ্ঠী চাষিসম্প্রদায় দারিদ্র্যের চরমসীমায় পৌছে গেছে। বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে অনেক দেশই চরম উন্নতি সাধন করেছে। কিন্তু আমাদের দেশ তেমন উন্নতি করতে পারেনি। কারণ, প্রাচীনকালে আমাদের দেশে যে পদ্ধতিতে কৃষিকাজ করত, আজও ঐ পদ্ধতির উল্লেখযােগ্য কোনাে পরিবর্তন হয়নি। এছাড়াও কৃষকের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়েছে কিন্তু জমির পরিমাণ তাে আর বাড়েনি। ফলে তাদের পেটের খাবার যােগাতেই তারা হিমসিম খাচ্ছে। এটিই দুরবস্থার প্রধান কারণ। 

বাংলাদেশের জমিতে প্রচুর সেচ ব্যবস্থা নেই। ফলে আজও এ উন্নত জগতে এখানে অনাবৃষ্টির সময় চাতক পাখির মতাে আকাশের দিকে চেয়ে থাকতে হয় বৃষ্টির জন্য। অপর দিকে অতিবৃষ্টির সময় অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের তেমন কোনাে ব্যবস্থা নেই। ফলে কৃষকদের হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকা ছাড়া আর কোনাে উপায় থাকে না। তাছাড়াও কৃষিযােগ্য জমিতে ক্রমাগত চাষ করতে করতে ভূমির উর্বরতা একসময় কমে আসে। এতে কৃষির উৎপাদন আগের তুলনায় কমে যায়। 

এখন আমাদের দেশে প্রায়ই শােনা যায় পােকামাকড়ের উপদ্রব হতে ফসল রক্ষা পায় না। এদের উপদ্রব হতে ফসলকে রক্ষা করতে হলে প্রয়ােজনমতাে কীটনাশক ঔষধ ছিটানাের ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু আজও আমাদের দেশে এ ব্যবস্থা করা হয়নি।

দুরাবস্থা দূর করার উপায় : বাংলাদেশের কৃষকদের দুরাবস্থা দূর করতে হলে অবশ্যই কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন করতে হবে। বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থায় চাষাবাদের ব্যবস্থা করতে হবে । অনাবৃষ্টির সময় প্রকৃতির দিকে চেয়ে না থেকে জমিতে কূপ খনন করে পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। অতিবৃষ্টির সময় জমি থেকে অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। কীটপতঙ্গের হাত থেকে ফসল রক্ষার জন্য প্রয়ােজনে কীটনাশক ছিটিয়ে ফসল উৎপাদনের ব্যবস্থা করতে হবে। বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে জমি চাষ করে অল্প সময়ে অধিক ফসল উৎপাদনের ব্যবস্থা করতে হবে। চাষিগণের মধ্যে স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান করে উন্নতমানের বাজ ও সার সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে। 

কৃষকদের উন্নতির জন্য গৃহীত পদক্ষেপ : আমাদের দেশের কৃষকদের অবস্থার উন্নয়নের জন্য ইতােমধ্যে কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। দেশ থেকে নিরক্ষরতা দূর করে আধুনিকতার পথে জনজীবনকে পরিচালিত করার জন্য গণশিক্ষার কাজ চলছে। শিক্ষার হার বাড়ানাের জন্য উদ্যোগ নেওয়ায় কিছুটা অগ্রগতিও হয়েছে। আগামী দিনগুলােতে শিক্ষার হার বৃদ্ধির কারণে অবশ্যই কৃষকরা তাদের অবস্থার পরিবর্তন করে উন্নত জীবনযাপনে সক্ষম হতে পারবে বলে আশা করা যাচ্ছে। 

কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধনের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় ও কৃষি উন্নয়ন সংস্থা অনেক কার্যক্রম বাস্তবায়িত করেছে। উন্নতমানের বীজ, পর্যাপ্ত সার ও কীটনাশক; সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধনের মাধ্যমে কৃষকদের জীবনের নতুন দিগন্ত উন্মােচিত হচ্ছে। বর্তমানে থানা/উপজেলা পর্যায়ে কৃষি সম্প্রসারণ কর্মীরা উন্নয়ন কর্মে নিয়ােজিত আছে। এখন কৃষি উপকরণ যাতে সব কৃষকের হাতের কাছেই অতি সহজে পাওয়া যায় তার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। 

উন্নত চাষাবাদ পদ্ধতির পরামর্শ গ্রহণের জন্য এখন আর কোনাে সমস্যা নেই । গ্রামে গ্রামে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে। 

কৃষির বিভিন্ন দিক অবলম্বনে নানা প্রকার গবেষণার কাজ চলছে। কষি বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন গবেষণা কেন্দ্র যেসব কার্যক্রম গ্রহণ করেছে তা কৃষকদের জীবনের অবস্থার পরিবর্তন করে তাদের অর্থনীতিক বুনিয়াদ পােক্ত করতে সাহায্য করছে। সরকার কৃষকদের জন্য কৃষিঋণ এবং শস্যঋণের ব্যবস্থা করেছে। কৃষি ব্যাংক, গ্রামীণ ব্যাংক ও অন্যান্য ব্যাংকেরও কৃষিঋণ প্রদানের সুযােগ রয়েছে, যার সুষ্ঠু ব্যবহারে দেশের কৃষক সমাজ অনেক উপকৃত হবে। 

উপসংহার : বর্তমান জাতীয় উন্নতির মেরুদণ্ড হলাে আমাদের কৃষক সমাজ। আমাদের দেশের কৃষকদের ওপর নির্ভর করে আমাদের সমাজের গতিশীলতা। শহরের শিক্ষিত জনগােষ্ঠী, যাদের ওপর কৃষকের ভাগ্যের উন্নয়ন নির্ভর করে তাদের স্মরণ রাখতে হবে তা অর্ধনগ্ন কৃষককুলই জাতির জন্য একমাত্র ভাগ্য বিধাতা। এদের উন্নতিতেই দেশে উন্নতি। কৃষকগণকে বাদ দিয়ে জাতি কখনাে মাথা & করে দাঁড়াতে পারবে না। আর তাই দেশ ও জাতির স্বার্থের কথা ভেবেই কৃষকদের অবস্থার উন্নয়নে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে।