আমার চারপাশের প্রকৃতি

ভূমিকা : সবুজের চাদরে ঢাকা আমাদের এই দেশ। এ দেশের প্রাকৃতিক শােভা আমাদের মুগ্ধ করে। এ দেশের প্রকৃতির রূপ বড় বিচিত্র। এ দেশের নদী, মাঠ, অরণ্য, আকাশ, পাহাড় দেখে আমরা পুলকিত হই। আমাদের মাতৃভূমি তার অপরূপ ঐশ্বর্য ও সম্পদে অনন্য। 

চারপাশের প্রকৃতি : আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা গ্রামের পরিবেশে। এখানকার মাঠ, ঘাট, বন ও প্রান্তর সবকিছুর সঙ্গেই আমার আত্মার সম্পর্ক। তাই এ প্রকৃতি আমার কাছে অন্য সব স্থানের চেয়ে অনেক বেশি আপন। 

বন-বনানী : আমার চারদিকে সবুজের সমারােহ। যেদিকে তাকাই সেদিকেই ঘন সবুজ। আম, জাম, কাঁঠাল, তাল, নারিকেল, বট, শাল, সেগুন, মেহগনি, কড়ইসহ আরও কত গাছ। এসব গাছগাছালি মিলে চারপাশে একটা বনের মতাে সৃষ্টি হয়েছে। কবি জসীমউদ্দীনের ভাষায় : 

বনের পরে বন চলেছে বনের নাহি শেষ, 

ফুলের ফলের সুবাস ভরা এ কোন পরীর দেশ। 

বর্ষার দিনে যখন এ বনে বৃষ্টি আসে, তখন মনে হয় প্রকৃতি যেন তার দুহাত বাড়িয়ে আমাকে ডাকছে। আবার শীতের দিনে যখন গাছগুলাের পাতা ঝরে পড়ে, তখন প্রকৃতিকে অসহায় মনে হয়। বসন্তে নতুন পাতা এলে গাছগুলাে নতুন সাজে সেজে ওঠে। শুধু বড় গাছগুলােই নয়, ছােট গাছগুলােও অপরূপ শােভা সৃষ্টি করে চারপাশে।

মাঠ-প্রান্তর : বনের দিক থেকে চোখ ঘােরাতেই ধানখেত সামনে এসে পড়ে। যখন তার উপর দিয়ে বাতাস বয়ে যায়, তখন মনে হয় সবুজের সমুদ্র বুঝি হাতছানি দিয়ে ডাকছে। পাটক্ষেতের পাটগাছগুলােও বেশ বড় হয়েছে। সেদিকে তাকিয়ে মনটা আনন্দে ভরে যাচ্ছে। গমখেতের গমগুলাে পেকে উঠেছে। তার উপর যখন সূর্যের আলাে পড়ছে, তখন সােনালি আলােয় চারদিক ভরে যাচ্ছে। এ মাঠেই শীতের সময় ফোটে সর্ষেফুল। তখন চারদিক হলুদ হয়ে ওঠে। মৌমাছির দল এসে তখন সেখান থেকে মধু সংগ্রহ করে। 

জলাশয় : মাঠ পার হয়ে রাস্তায় আসতেই একটা বড় পুকুর চোখে পড়ে। পুকুরের চারদিকে নারিকেল ও কলাগাছ লাগানাে। পানি কাচের মতাে স্বচ্ছ। তার এক কোণে ফুটে আছে শাপলা ফুল। মাঝে মাঝে একটা দুটো মাছ লাফ দিচ্ছে এদিক থেকে ওদিকে। দুটো ছেলে অনেক উঁচু একটা গাছের ডাল থেকে পুকুরের পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে চারদিকে টেউ বয়ে গেল। পুকুরপাড় দিয়ে সামনে আসতেই একটা বিল চোখে পড়ে। বিলে অনেক পানি। জেলেরা সেখানে জাল দিয়ে মাছ ধরছে। বিলের পানিতে হালকা হালকা টেউ। তবে বর্ষায় এমন থাকে না। তখন অনেক বড় বড় টেউ এপার থেকে ওপার অবধি বয়ে যায়। বিলের ওপরে কিছু নৌকা ভেসে চলেছে। কিছু মানুষ বিলের এপার থেকে ওপারে যাচ্ছে। 

পশুপাখি : গাঙশালিক, বক, বেলে হাঁস, মাছরাঙা ছাড়াও বিলের ধারে রয়েছে আরও অনেক পাখি। রাতে মাঝে মাঝে দু-একটা মেছাে বাঘ বিলের ধারে দেখা যায়। এ ছাড়া সবুজ ধানখেতে ও গাছের মাথায় ছুটে আসে টিয়া, চড়ুই, শালিক, ঘুঘু, বুলবুলি, ফিঙে, দোয়েলসহ আরও অনেক পাখি। ঘন সবুজ গাছের আড়ালে মাঝে মাঝে দু-একটা শেয়াল দেখা যায়। তবে সাপ, বেজি, বনবিড়াল সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দা। 

রাতের আকাশ : রাতের আকাশ দেখে মনে হয় এ যেন স্বর্গের লীলাভূমি। অগণিত তারা রাতের আকাশকে উজ্জ্বল করে তােলে। পূর্ণিমার সময় চাঁদের আলােয় ঝলমল করে চারপাশ। আবার অমাবস্যার রাতে চারদিকে কালাে অন্ধকারে ভরে যায়। তখন জোনাকির আলােয় মানুষ পথ চিনে ঘরে ফেরে। 

সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত : প্রকৃতি জেগে ওঠে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে। কাকডাকা ভােরে মানুষ ঘুম থেকে উঠে আপন কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সারা দিন পর আকাশ রাঙিয়ে যখন সূর্যাস্ত হয়, তখন প্রকৃতির কোলে যে যার স্থানে ফিরে যায়। 

উপসংহার : আমার চারপাশের প্রকৃতি চোখ জুড়ানাে ও মন ভুলানাে। তাই যে একবার এ প্রকৃতির মাঝে আসে, সে আর এখান থেকে যেতে চায় না। খুঁজতে চায় না অন্য কোনাে রূপ। কবি জীবনানন্দের ভাষায়: 

বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি
তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর
এ দেশের প্রকৃতি ও এর সৌন্দর্য আমার গর্ব। আমি আমার দেশকে খুব ভালােবাসি।