জানাজা নামাজের গুরুত্ব ও নিয়ম কি? জানাজার নামাজ কেন পড়তে হয় ?
Sign up to join our community!
Please sign in to your account!
Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.
Please briefly explain why you feel this question should be reported.
Please briefly explain why you feel this answer should be reported.
Please briefly explain why you feel this user should be reported.
ইসলামে জানাজার নামাজের গুরুত্ব অনেক বেশি। পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পরেই অন্যতম ফরজ ইবাদত হলো জানাজার নামাজ। অথচ সমাজের অনেক মুসলমানই এ নামাজে অংশগ্রহণের ব্যাপারে অবহেলা করে। জানাজার নামাজ ফরজে কেফায়া বিধায় অনেকেই এ নামাজকে গুরুত্ব দেয় না। কোনো মুমিনের জন্য জানাজার নামাজকে এ দৃষ্টিতে দেখা উচিত নয়। বরং জানাজার নামাজকে গুরুত্ব দিয়ে তাতে থাকা সাওয়াব ও বরকতের পাওয়ার পাশাপাশি আল্লাহর খুশির বিষয়টি বিবেচনা করা খুবই জরুরি।
জানাজার নামাজ মূলত মৃত ও জীবিত উপস্থিত-অনুপস্থিত সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ দোয়া। হাদিসের অনেক বর্ণনায় জানাজার নামাজে মৃতের জন্য বেশি বেশি দোয়া করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
إذا صليتم على الميت فأخلصوا له الدعاء
‘যখন তোমরা মৃতের উপর (জানাজার) নামাজ আদায় করবে তখন তার জন্য আন্তরিকতার সঙ্গে দোয়া করবে।‘ (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)
মুসলিম মৃতব্যক্তির কাফন, জানাজা ও দাফন জীবিতদের উপর আবশ্যক পালনীয় নির্দেশ। কোনো মুসলিম মারা গেলে তার জানাজার নামাজ আদায় করা ফরজে কেফায়া। ইসলামে জানাজার নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে পাকে বিশেষ দিকনির্দেশনা এসেছে।
জানাজার নামাজে আছে অকল্পনীয় সাওয়াব ও বরকত। জানাজার নামাজে অংশগ্রহণের বিশেষ সাওয়াব থাকার কারণ হলো- জানাজার ইবাদতটি সৃষ্টির সেবা কেন্দ্রিক। আল্লাহ তাআলা এ সেবার কারণে সবচেয়ে বেশি খুশি হন এবং বান্দার জন্য এর বরকত বাড়িয়ে দেন। এক হাদিসে এসেছে-
১. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
من تبع جنازة فصلى عليها فله قيراط فإن شهد دفنها فله قيراطان القيراط أعظم من أحد
‘কেউ যদি কারো জানাজার যায় এবং নামাজে অংশগ্রহণ করে তবে সে এক ’কিরাত‘ সাওয়াব অর্জন করবে। আর যদি সে তার দাফনে (কবরস্থ করায়) উপস্থিত থাকে তাহলে সে দুই ‘কিরাত‘ সাওয়াব অর্জন করবে। এক ‘কিরাত‘ ওহুদ পাহাড়ের চেয়েও বড়।‘ (মুসনাদে আহমাদ, মুসতাদরাকে হাকেম)
২. অন্য বর্ণনায় হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন বলেন-
مَنْ أَصْبَحَ مِنْكُمُ الْيَوْمَ صَائِمًا ؟ ، قَالَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ : أَنَا ، قَالَ : فَمَنْ تَبِعَ مِنْكُمُ الْيَوْمَ جَنَازَةً ؟ ، قَالَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ : أَنَا ، قَالَ : فَمَنْ أَطْعَمَ مِنْكُمُ الْيَوْمَ مِسْكِينًا ؟ ، قَالَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ : أَنَا ، قَالَ : فَمَنْ عَادَ مِنْكُمُ الْيَوْمَ مَرِيضًا ؟ ، قَالَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ : أَنَا ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : مَا اجْتَمَعْنَ فِي امْرِئٍ إِلَّا دَخَلَ الْجَنَّةَ
‘তোমাদের মধ্যে আজ কে রোজা ছিলে? আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘আমি‘। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রশ্ন করেন, ‘তোমাদের মধ্যে কে আজ কোনো জানাজায় শরিক হয়েছ? হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘আমি‘। তিনি প্রশ্ন করেন, ‘তোমাদের মধ্যে কে আজ দরিদ্রকে খাদ্য দিয়েছ? হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘আমি‘। তিনি আবারও প্রশ্ন করেন, ‘আজ কে অসুস্থ কোনো মানুষকে দেখতে গিয়েছ? হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘আমি‘।
তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এই কাজগুলো যদি কোনো মানুষের মধ্যে একত্রিত হয় তবে সে ব্যক্তি অবশ্যই জান্নাতি হবে।‘ (মুসলিম)
এ কারণেই ইসলামি শরিয়তে কাফন, জানাজা ও দাফন অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আর জীবিত মুসলমানরা আবশ্যক ইবাদত মনে করে তা পালন করে। ইসলামের নির্দেশনাও এটি।
তাই ফরজে কেফায়া মনে করে অবহেলা বশতঃ জানাজার নামাজ থেকে বিরত থাকার কোনো সুযোগ নেই। কেননা জানাজার নামাজে রয়েছে অনেক বেশি সাওয়াব ও বরকতের হাতছানি। যা একজন মানুষকে জানাজায় অংশগ্রহণ করার কারণে জান্নাতি মানুষের পরিণত করে দেয়। মুমিন মুসলমানের জন্য এরচেয়ে বড় সৌভাগ্যের বিষয় আর কি হতে পারে!
জানাজার নামাজ যেভাবে পড়তে হবে
জানাজার নামাজ সেজদাবিহীন ৪ তাকবির ও সালামের মাধ্যমে আদায় করতে হয়। এ নামাজের কোনো আজান ও ইকামত নেই। এ নামাজে ইমাম ও মুক্তাদি সবাই তাকবির ও সালামগুলো মুখে উচ্চরণ করবে।
১. নিয়ত করা : উপস্থিত মৃতব্যক্তির (নারী/পুরুষ/শিশু) জানাজার ফরজে কেফায়া নামাজ ৪ তাকবিরের সঙ্গে এ ইমামের পেছনে পড়ছি- ‘আল্লাহু আকবার’।
২. জানাজার নামাজের প্রথম তাকবির তাকবিরে তাহরিমা’র মতো উভয় হাত বাঁধবে।
৩. তারপর দ্বিতীয় তাকবিরের আগে ছানা পড়বে। অনেকে সুরা ফাতিহাও পড়ে থাকেন। তারপর ইমাম দ্বিতীয় তাকবির বলবে; মুসল্লিরাও তাকবির বলবে।
৪. দ্বিতীয় তাকবিরের পর তৃতীয় তাকবিরের আগে দরূদ শরিফ (দরূদে ইবরাহিম) পড়বে। তা না পারলে ছোট কিংবা বড় যে কোনো দরূদ শরিফ পড়লেও হবে। তারপর ইমাম তৃতীয় তাকবির দেবে; মুসল্লিরাও তৃতীয় তাকবির বলবে।
৫. তৃতীয় তাকবিরের পর চতুর্থ ও শেষ তাকবিরের আগে মৃতব্যক্তিসহ জানাজায় অংশগ্রহণকারী মুসলিম উম্মাহর জন্য দোয়া করবে। তারপর ইমাম চতুর্থ তাকবির দেবে; মুসল্লিরাও তাকবির বলবে।
৬. তারপর ইমাম ডান-বামে সালাম ফেরাবে। মুসল্লিরাও ডান-বামে সালাম ফেরানোর মাধ্যমে জানাজার নামাজ শেষ করবে। তবে অনেকে শুধু ডান দিকে সালাম ফেরানোর মাধ্যমেও জানাজার নামাজ সম্পন্ন করেন।
উল্লেখ্য, জানাজা যদি নাবালক শিশুর হয় তবে ভিন্ন দোয়া রয়েছে। নাবালক ও প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য তৃতীয় তাকবিরের পর যে দোয়াটি পড়া হয় তা তুলে ধরা হলো-
প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য দোয়া
১. للَّهُمَّ اغْفِرْ لحَيِّنَا وَمَيِّتِنَا وَشَاهِدِنَا وَغَائِبِنَا وَصَغِيرِنَا وَكَبِيرِنَا وَذَكَرِنَا وَأُنْثَانَا اللَّهُمَّ مَنْ أَحْيَيْتَهُ مِنَّا ، فَأَحْيِهِ عَلَى الإِسْلامِ ، وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلَى الإِيمَانِ اللَّهُمَّ لاَ تَحْرِمْنَا أجْرَهُ وَلاَ تَفْتِنَا بَعْدَهُ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাগফিরলি হাইয়্যিনা ওয়া মাইয়্যিতিনা ওয়া শাহিদিনা ওয়া গায়িবিনা ওয়া সাগিরিনা ওয়া কাবিরিনা ওয়া জাকারিনা ওয়া উনসানা। আল্লাহুম্মা মান আহ-ইয়াইতাহু মিন্না ফাআহ-য়িহি আলাল ইসলাম। ওয়া মান তাওয়াফফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফফাহু আলাল ঈমান। আল্লাহুম্মা লা তাহরিমনা আজরাহু ওয়ালা তাফতিন্না বাদাহু।
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমা করুন আমাদের মৃতদের এবং জীবিতদের, উপস্থিত সবাইকে এবং অনুপস্থিতদেরও, ছোটদের এবং বড়দের, পুরুষদের এবং নারীদেরকে। হে আল্লাহ! আমাদের মধ্য থেকে যাকে আপনি জীবিত রাখবেন, তাকে ইসলামের উপর জীবিত রাখুন এবং যাকে আপনি মৃত্যু দেবেন, তাকে আপনি ঈমানের উপর মৃত্যু দান করুন। হে আল্লাহ! তার (তার জন্য দোয়া করার বা সবর করার) পুরস্কার থেকে আমাদের বঞ্চিত করবেন না এবং তার পরে আমাদেরকে ফিতনায় (পরীক্ষায় বা বিপদে) ফেলবেন না।’ (তিরমিজি, আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, মুসতাদরাকে হাকেম)
২. اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ وَارْحَمْهُ وَعَافِهِ وَاعْفُ عَنْهُ وَأَكْرِمْ نُزُلَهُ وَوَسِّعْ مُدْخَلَهُ وَاغْسِلْهُ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ وَنَقِّهِ مِنْ الْخَطَايَا كَمَا نَقَّيْتَ الثَّوْبَ الْأَبْيَضَ مِنْ الدَّنَسِ وَأَبْدِلْهُ دَارًا خَيْرًا مِنْ دَارِهِ وَأَهْلًا خَيْرًا مِنْ أَهْلِهِ وَزَوْجًا خَيْرًا مِنْ زَوْجِهِ وَأَدْخِلْهُ الْجَنَّةَ وَأَعِذْهُ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ أَوْ مِنْ عَذَابِ النَّارِ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাগফির লাহু, ওয়ারহামহু, ওয়া আফিহি, ওয়াঅ্ফু আনহু, ওয়া আকরিম নুযুলাহু, ওয়া ওয়াসসি মুদখালাহু, ওয়াগসিলহু বিলমায়ি ওয়াস সালজি ওয়াল বারাদি। ওয়া নাক্বক্বিহি মিনাল খাতাইয়া কামা নাক্বক্বাইতাস সাওবাল আবইয়াদ্বা মিনাদ দানাস। ওয়া আবদিলহু দারান খাইরাম মিন দারিহি, ওয়া আহলান খাইরাম মিন আহলিহি, ওয়া যাওজান খাইরাম মিন যাওজিহি, ওয়া আদখিলহুল জান্নাতা ওয়া আইযহু মিন আযাবিল ক্বাবরি (আযাবিন নার)।‘
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনি তাকে ক্ষমা করুন, রহমত করুন, নিরাপত্তা দান করুন, তাকে মাফ করে দিন, তাকে সম্মানের সাথে আপনার কাছে স্থান দান করুন, তার প্রবেশস্থান (আবাসস্থান) প্রশস্থ করুন, তাকে পানি, বরফ ও শীতল দিয়ে ধৌত করুন, তাকে পাপরাশি থেকে এমনভাবে পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন করুন যেভাবে সাদা কাপড়কে ময়লা থেকে পরিচ্ছন্ন ও ঝকঝকে করেছেন। তাকে দান করুন তার (ফেলে যাওয়া) বাড়ির চেয়ে উত্তম বাড়ি, তার পরিজনের চেয়ে উত্তম পরিজন, তার দাম্পত্য সঙ্গীর চেয়ে উত্তম সঙ্গী। তাকে আপনি জান্নাত প্রদান করুন এবং কবরের বা জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন।’ (মুসলিম)
৩. اَللَّهًمَّ (أنْتَ رَبُّهَا وَ) أنْتَ خَلَقْتَهَا وَأنْتَ هَدَيْتَهَا (لِلإسُلَامِ) وَأنْتَ قَبَضْتَ رُوْحَهَا تَعْلَمُ سِرَّهَا وَعَلَانِيَّتَهَا جِئْنَا شُفَعَاءَ فَاغْفِرْ لَهَا
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বুহা, ওয়া আনতা খালাক্বতাহা, ওয়া আনতা হাদাইতাহা- লিল ইসলাম, ওয়া আনতা ক্বাবাদ্বতা রূহাহা, তাঅ্লামু সিররাহা ওয়া আলা নিয়্যাতাহা, জিয়না শুফাআআ ফাগফিরলাহা।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনি তার প্রভু, আপনিই তাকে সৃষ্টি করেছেন, আপনিই তাকে ইসলামের পথ দেখিয়েছেন, আপনিই তার রূহ গ্রহণ করেছেন, আপনি তার গোপন ও প্রকাশ্য সবকিছু জানেন। আমরা তার জন্য সুপারিশ (শাফাআত) করতে এসেছি, অতএব আপনি তাকে ক্ষমা করে দিন।’ (নাসাঈ, মুসনাদে আহমদ, মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, বায়হাকি)
নাবালক ছেলে হলে-
اَللَّهُمَّ اجْعَلْهُ لَنَا فَرَطَا وَاجْعَلْهُ لَنَا اجراً وَاجْعَلْهُ لَنَا شَافِعًا مُشَفَّعًا
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মাঝআলহু লানা ফারাত্বাও ওয়াঝআলহু লানা আঝরাও ওয়াঝআলহু লানা শাফিআম মুশাফফাআ।’
অর্থ : হে আল্লাহ! এ বাচ্চাকে আমাদের নাজাত ও আরামের জন্য আগে পাঠিয়ে দাও, তার জন্য যে দুঃখ তা আমাদের প্রতিদান ও সম্পদের কারণ বানিয়ে দাও, তাকে আমাদের জন্য সুপারিশকারী বানাও, যা তোমার দরবারে কবুল হয়।’
নাবালক মেয়ে হলে-
اَللَّهُمَّ اجْعَلْهَا لَنَا فَرَطَا وَاجْعَلْهَا لَنَا اجراً وَاجْعَلْهُ لَنَا شَافِعًا مُشَفَّعًا
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মাঝআলহু লানা ফারাত্বাও ওয়াঝআলহু লানা আঝরাও ওয়াঝআলহু লানা শাফিআম মুশাফফাআ।’
অর্থ : হে আল্লাহ! এ বাচ্চাকে আমাদের নাজাত ও আরামের জন্য আগে পাঠিয়ে দাও, তার জন্য যে দুঃখ তা আমাদের প্রতিদান ও সম্পদের কারণ বানিয়ে দাও, তাকে আমাদের জন্য সুপারিশকারী বানাও, যা তোমার দরবারে কবুল হয়।’
কেউ যদি জানাজার দোয়া না জানে-
তাদের জন্য রয়েছে সহজ ও ছোট্ট একটি দোয়া-
اَللهُمَّ اغْفِرْ لِلْمُؤْمِنِيْنَ وَ الْمُؤْمِنَاتِ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মাগফির লিলমু’মিনিনা ওয়াল মু’মিনাতি।’
অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি মুমিন নারী-পুরষকে ক্ষমা করে দাও।’
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, জানাজার নামাজকে অবহেলা না করা। যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে জানাজার নামাজে উপস্থিত হওয়া। মৃতব্যক্তি ও নিজেদের কল্যাণে জানাজার নামাজে অংশগ্রহণ করা।
জানাজার নামাজ পড়তে হবে কারণঃ
কোনো মুসলমান মারা গেলে জানাজার নামাজ আদায় করার পর তাকে দাফন করা হয়। জানাজার নামাজ ফরজে কেফায়া তথা সমগ্রিক ফরজ। যদি সমাজের একদল মানুষ মৃত ব্যক্তির জানাজা আদায় করে, তবে সবাই দায়মুক্ত হয়ে যাবে। আর কেউ তা আদায় না করলে সবাই গুনাহগার হবে।ও
রাসুলুল্লাহ (সা.) জানাজার নামাজে অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি মৃতের জন্য সালাত আদায় করা পর্যন্ত জানাজায় উপস্থিত থাকবে, তার জন্য এক কিরাত, আর যে ব্যক্তি মৃতের দাফন হয়ে যাওয়া পর্যন্ত উপস্থিত থাকবে তার জন্য দুই কিরাত। জিজ্ঞাসা করা হলো দুই কিরাত কী? তিনি বললেন, দুটি বিশাল পর্বত সমতুল্য (সওয়াব)।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৩২৫)জানাজা নামাজের রহস্য
জানাজার নামাজের প্রতি ইসলাম এত বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কিছু অন্তর্নিহিত কারণ আছে।
যা নিম্নে বর্ণনা করা হলো।১. মৃত ব্যক্তির জন্য সুপারিশ : পৃথিবীর নিয়ম হলো, যখন কোনো ব্যক্তি কোনো রাজদরবারে নতুন আগমন করে, তখন তাঁর জন্য উপস্থিত ব্যক্তিরা বিনয়ের সঙ্গে সুপারিশ করতে থাকে। যেন আগত ব্যক্তির জন্য উত্তম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। তেমনি কোনো মুসলমান যখন পৃথিবী ছেড়ে আল্লাহর দরবারে হাজির হয়, তখন মুমিনরা জানাজার মাধ্যমে তাঁর পরকালীন জীবনের কল্যাণ কামনা করে।
আল্লাহর দরবারে মুমিনের এই সুপারিশের বিশেষ মূল্য আছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোনো মুসলিম মারা গেলে, তার জানাজায় যদি এমন ৪০ জন দাঁড়িয়ে যায়, যারা আল্লাহর সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করে না, তবে মহান আল্লাহর তার অনুকূলে তাদের প্রার্থনা কবুল করেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২০৮৮)২. আল্লাহর সুসংবাদ লাভ : হাকিমুল উম্মত আল্লামা আশরাফ আলী থানবি (রহ.) বলেন, ‘মানুষের আত্মা দেহ ত্যাগ করার পরও অভ্যন্তরীণ ইন্দ্রিয়গুলো সঙ্গে সঙ্গে অক্ষম হয় না; বরং তাতে অনুভূতি অবশিষ্ট থাকে। জাগতিক জীবনে অর্জিত জ্ঞানও তাঁর সঙ্গে থাকে। এই সময় ঊর্ধ্বজগৎ থেকে তার প্রতি এক ধরনের জ্ঞান ও বার্তা অবতীর্ণ হয়।
যার ভিত্তিতে সে শাস্তি বা প্রশান্তি অনুভব করে। এই সময় যদি আল্লাহর বান্দারা তার জন্য দোয়া করতে থাকে, মৃত ব্যক্তির জন্য সদকা করে, তবে মৃত ব্যক্তি আল্লাহর পক্ষ থেকে উপকারী জ্ঞান ও বার্তা লাভ করে। (যুক্তির আলোকে শরয়ি আহকাম, পৃষ্ঠা ১১০)৩. আমৃত্যু ভ্রাতৃত্ব : পৃথিবীতে মুমিনের সঙ্গে মুমিনের ভ্রাতৃত্ব আমৃত্যু। মৃত্যুর পরও তা অটুট থাকে এবং ভাই হিসেবে তার অধিকার শেষ হয়ে যায় না। এ জন্য নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘এক মুসলিমের প্রতি অপর মুসলিমের অধিকার পাঁচটি। তা হলো—১. সালামের উত্তর দেওয়া, ২. অসুস্থ ব্যক্তির খোঁজখবর নেওয়া, ৩. জানাজার অনুসরণ করা, ৪. দাওয়াত কবুল করা, ৫. হাঁচির উত্তর দেওয়া। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১২৪০)
৪. ক্ষমার শিক্ষা : জানাজার নামাজে দাঁড়িয়ে মুমিন ব্যক্তি সবার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। যা তাকে পারস্পরিক ক্ষমার শিক্ষা দেয়। বিশেষত মৃত ব্যক্তির প্রতি যেন তার মনে কোনো ক্ষোভ ও কষ্ট ধরে না রাখে। জানাজায় সে পাঠ করে, ‘হে আল্লাহ, আপনি আমাদের জীবিত ও মৃত, উপস্থিত ও অনুপস্থিত, ছোট ও বড়, পুরুষ ও নারী সবাইকে ক্ষমা করে দিন।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৪৯৮)
৫. মৃত্যুর স্মরণ : জানাজায় উপস্থিত হওয়ার মাধ্যমে জীবিত ব্যক্তিদের ভেতর মৃত্যুর স্মরণ জাগ্রত হয়। আর মৃত্যুর স্মরণ মানুষকে পাপ থেকে বিরত রাখে। বারা (রা.) বলেন, ‘আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে এক জানাজায় উপস্থিত ছিলাম। তিনি কবরের কিনারে বসে কাঁদলেন, এমনকি তাঁর চোখের পানিতে মাটি ভিজে গেল। অতঃপর তিনি বলেন, ‘আমার ভাইয়েরা, তোমাদের অবস্থাও তার মতোই হবে, সুতরাং তোমরা প্রস্তুতি গ্রহণ কোরো।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪১৯৫)