হেপাটাইটিস সাধারণ মানুষর কাছে জন্ডিস নামেই বেশি পরিচিত কিন্তু ডাক্তারি ভাষায় একে বলা হয় হেপাটাইটিস। তাই আমাদের হেপাটাইটিসের কারণ- লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। কারণ আমরা যদি হেপাটাইটিসের কারণ- লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে না জানি তাহলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। যারা হেপাটাইটিসের কারণ- লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানতে চান আমার পোস্ট তাদের জন্য।
হেপাটাইটিস প্রধানত পাঁচ প্রকার যথা এ,বি,সি,ডি এবং ই। আর হেপাটাইটিস ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। তাই আমাদের হেপাটাইটিসের কারণ- লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। নিচে হেপাটাইটিসের কারণ- লক্ষণ ও প্রতিকার বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
হেপাটাইটিস কি
হেপাটাইটিস হলো লিভারের যে কোন প্রদাহ জনিত রোগ। লিভারের প্রদাহ জনিত রোগের একমাত্র কারণ হলো হেপাটাইটিস ভাইরাস। এই হেপাটাইটিস ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে লিভারে প্রদাহ জনিত রোগ হয়। তাকে হেপাটাইটিস ভাইরাস বলা হয়। ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী বিশ্বজুড়ে ১১ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে হেপাটাইটিসের মারাত্মক সংক্রমণ, লিভার ক্যান্সার এবং সিরোসিস দ্বারা আক্রান্ত হয়ে। আর বাংলাদেশেও প্রায় এক কোটি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসে।
হেপাটাইটিস হলো এমন একটি ভাইরাস জনিত রোগ যা মানুষের লিভার এবং যকৃত কে আক্রমণ করে থাকে আর সাধারণত হেপাটাইটিস বি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে মানুষের এই রোগ হয়। তবে হেপাটাইটিস বি এমন একটি ভাইরাস যা মানুষের জীবনকে ঝুঁকির মুখে নিয়ে যায় আর এর প্রধান কারণ হলো কখনো কখনো এর লক্ষণ একেবারেই প্রকাশ পায় না।
হেপাটাইটিস কয় ধরনের
হেপাটাইটিস সাধারণত ৫ ধরনের হয়ে থাকে এবং হেপাটাইটিস হল একটি ভাইরাস জনিত রোগ আর এই পাঁচ প্রকারকে হেপাটাইটিসের বিভিন্ন রূপ সৃষ্টিকারী ভাইরাস হিসেবে চিহ্নিত করা হয় আর এগুলো হল হেপাটাইটিস এ, বি, সি, ডি এবং ই ।হেপাটাইটিস মূলত দুই ধরনের যথা-
একিউট হেপাটাইটিস বা ক্ষণস্থায়ী হেপাটাইটিস
ক্রনিক বা দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস
একিউট হেপাটাইটিস বা ক্ষণস্থায়ী হেপাটাইটিস
একিউট হেপাটাইটিস হয়ে থাকে সাধারণত এ বি ও ই ভাইরাস দিয়ে। এই হেপাটাইটি সাধারণত
-
- দুর্বলতা
-
- ক্ষুধামন্দা
-
- জন্ডিস
-
- পেটে অস্বস্তিবোধ
- বমি বমি ভাব ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়।আবার তা কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক
মাসের মধ্যে ভালো হয়ে যায়।
ক্রনিক বা দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস
হেপাটাইটিস ভাইরাস বি ও সি দ্বারা আক্রান্ত হলে দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ হতে পারে। আর এই দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহের ফলে লিভার ক্যান্সার বা লিভার সিরোসিসের মতো দূরারোগ্য ব্যাধি হয়ে থাকে।
হেপাটাইটিস পাঁচ ৫ প্রকার কি কি
হেপাটাইটিস যাকে আমরা জন্ডিস বলে জানি এবং আমরা সবাই এর সাথে সবচেয়ে বেশি পরিচিত। তবে আমাদের অনেকেরই মনে প্রশ্ন জাগে যে আসলে হেপাটাইটিস কত প্রকার এবং কি কি এবং কেনই বা আমাদের হেপাটাইটিস হয়ে থাকে। তাই আমাদের যাদের মনে প্রশ্ন জাগে হেপাটাইটি সম্পর্কে আমি তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, হেপাটাইটিস আসলে পাঁচ প্রকার আর এগুলো হলো – এ বি সি ডি এবং ই (A,B,C,D,E)। আর এই বিভিন্ন ক্যাটাগরির হেপাটাইটিস হওয়ার প্রধান কারণ হলো নির্দিষ্ট কিছু ঔষধ, অধিক পরিমাণে অ্যালকোহল পান করা এছাড়াও অটোইমিউন রোগ গুলির কারণে ও হেপাটাইটিস হতে পারে।
হেপাটাইটিসের লক্ষণ
হেপাটাইটিস দ্বারা আক্রান্ত হলে যে লক্ষণগুলো শরীরে প্রকাশ পায় তা হল-
- জ্বর হওয়া
- ক্লান্তি ভাব
- ক্ষুধা কমে যাওয়া
- জয়েন্টে ব্যথা
- মাথাব্যথা
- উপরের ডান পেটে ব্যথা
- ওজন কমে যাওয়া
- চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যাওয়া
- অস্বস্তি অনুভব করা
- শরীর দুর্বল লাগা
- বমি হওয়া
- রক্ত বমি হওয়া
- বমি বমি ভাব
- জন্ডিস হওয়া
- পেটে বা পায়ে পানি এসে ফুলে যাওয়া
- আলকাতরার মত নরম কালো পায়খানা হওয়া
- অজ্ঞান হয়ে পড়া
- তবে রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রথম পর্যায়ে কোন উপসর্গ প্রকাশনাও হতে পারে
হেপাটাইটিসের কারণ
কারণ ছাড়া কোন কার্য সংঘটিত হয় না তাই হেপাটাইটিসও এমনিতেই হয় না এরও কারণ রয়েছে। যেমন – বংশগত, বিপাকীয়, অনাক্রমণ, সংক্রামক ইত্যাদি। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং পরজীবীর কারণে সংক্রামক হেপাটাইটিস হয়ে থাকে। হেপাটাইটিসের বিপাকীয় কারণ গুলো হলো লিভারের চর্বিরোগ, বিভিন্ন ধরনের ঔষধ, অতিমাত্রায় অ্যালকোহল, টক্সিন ইত্যাদি। বংশগত কারণ,অনাক্রমণজনিত হেপাটাইটিস জিনগত কারণে হয়ে থাকে।
হেপাটাইটিস মূলত পাঁচ প্রকার যথা – এ,বি,সি,ডি এবং ই। তবে একেক ধরনের হেপাটাইসিস এক এক কারণে হয়ে থাকে। যথা এ এবং ই হেপাটাইটিস হয়ে থাকে মূলত দূষিত খাবার এবং পানির জন্য। হেপাটাইটিস বি হয়ে থাকে প্রধানত যৌনবাহিত কারণে, তবে গর্ভবতী মায়ের অনেক সময় হয়ে থাকে এবং মায়ের কাছ থেকে শিশুরও হয়ে থাকে। আবার রক্তের মাধ্যমেও এই ভাইরাস সংক্রামিত হয়ে থাকে। হেপাটাইটিস সি শুধুমাত্র রক্তের মাধ্যমে ছড়ায় এক্ষেত্রে যারা ড্রাগ ব্যবহার করে তাদের এই ভাইরাস সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে।
হেপাটাইটিসের চিকিৎসা
হেপাটাইটিস হলে অনেকেই বিভিন্ন ধরনের বিভ্রান্তিতে ভুগে থাকেন বিশেষ করে যারা গ্রামে বাস করেন তারা বিভিন্ন ধরনের গাছ এবং অন্যান্য জিনিস খাওয়ান যা লিভারের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তাই আপনারা যদি দেখেন হেপাটাইটিস হয়েছে তাহলে দেরি না করে অবশ্যই নিকটস্থ ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন এবং সে অনুযায়ী তাকে চিকিৎসা করাবেন। তবে মনে রাখবেন বিশ্রাম হল হেপাটাইটিসের প্রধান ঔষধ। তাই যাদের হেপাটাইটিস হয়েছে তাদের তরল জাতীয় খাবার খাওয়াবেন এবং যতদূর সম্ভব আমিষ জাতীয় খাবার একটু কম খাওয়াবেন তবে ভুলেও কোনো কবিরাজের কাছে গিয়ে গাছ খাওয়াবেন না।
হেপাটাইটিস বি কি ছোঁয়াচে রোগ
যে কোন রোগ দেখা দিলে আমাদের মনে হয় এটা ছোঁয়াচে রোগ কিনা এক্ষেত্রে হেপাটাইটিস বি সংক্রামক রোগ হলেও এটি ছোঁয়াচে রোগ নয়, হেপাটাইটিস বি হলো মূলত যৌনবাহিত রোগ। অনেক সময় গর্ভ অবস্থায় মা আক্রান্ত হয়ে থাকে আবার মায়ের কাছ থেকে শিশুর কাছে এই রোগ যেতে পারে এবং রক্তের মাধ্যমে ও হেপাটাইটিস বি সংক্রামিত হতে পারে।
হেপাটাইটিস প্রতিরোধ
যে ব্যাক্তি হেপাটাইটিসে এ দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে তার মল দ্বারা বা খাবার পানি দূষিত হলে হেপাটাইটিস এ ও ই ভাইরাস হতে পারে। তাই এই ভাইরাস থেকে দূরে থাকতে হলে বিশুদ্ধ পানি, পুষ্টিকর খাবার, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা থাকতে হবে।
হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস
হেপাটাইটিস বি ও সি প্রধানত রক্তের মাধ্যমে এক ব্যক্তির শরির থেকে অন্য ব্যক্তির শরিরে ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়াও গর্ভবতী মায়ের যদি এই ভাইরাস থাকে তাহলে জন্মের সময় বাচ্চাও এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। আবার অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক করলে, এক জনের নেল কাটার – রেজার এমনকি টুথব্রাশ অন্যজন ব্যবহার করলেও অন্য জনের মাঝে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। কিন্তু আবার খাবার পানি , স্পর্শ অথবা শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে হেপাটাইটিস বি ও সি ছড়ায় না। গর্ভবতী মায়ের একিউট ভাইরাস বা জন্ডিস হলে গর্ভের শিশু এমনকি মা ও মারা যেতে পারে আবার সন্তান প্রসবের সময় অনেক বেশি রক্তক্ষরণ হতে পারে।
হেপাটাইটিস বি
মানবদেহে সারফেশ এন্ড এর বিরুদ্ধে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয় তার নাম হেপাটাইটিস বি। একে আবার সারফেস অ্যান্টিবডি বা এন্টিএইচ বি এস ও বলা হয়। যদি কোন রোগীর রক্ত পরীক্ষা হয় তাহলে বুঝা যাবে সে আক্রান্ত হয়েছে। আর যদি রক্ত পরীক্ষায় এনটিএইচসি নেগেটিভ আসে এবং আন্টি এইচ বি এস পজিটিভ আসে তাহলে বুঝতে হবে ব্যক্তির হেপাটাইটিস বি টিকা নেওয়া আছে এবং যথেষ্ট প্রটেকশন আছে। তবে এই উভয় অবস্থাতে কারো টিকা নেওয়ার প্রয়োজন নেই।
ক্রনিক হেপাটাইটিস ভাইরাস
হেপাটাইটিস সি একটি আরএনএ ভাইরাস। সাধারণত এন্টি আ কিউট ইনফেকশন এটি দিয়ে হয় না আবার হেপাটাইটিস্ ভাইরাস তেমন কোনো উপসর্গ থাকে না তাই এই রোগী সনাক্ত করতে হলে রক্ত পরীক্ষা করতে হবে। হেপাটাইটিস সি ভাইরাস শরীরের প্রবেশের পর তা শতকরা ৮০ভাগ ক্ষেত্রে ৬ মাস পর বা সারা জীবনের জন্য শরীরে থেকে যায়। আর সারা জীবনের জন্য থেকে যাওয়ার জন্যই এই ভাইরাসকে ক্রনিক হেপাটাইটিসি ভাইরাস বলা হয়।
এই ভাইরাসের আক্রান্ত রোগীকে সঠিকভাবে চিকিৎসা না করালে ২০ থেকে ৪০ বছরের মাথায় রোগের লিভার সিরোসিস বা লিভার ক্যান্সার হতে পারে। মাত্র বারো সপ্তাহ মুখে খাবার ওষুধের মাধ্যমে হেপাটাইটিস সি ভাইরাস একেবারে নির্মূল করা সম্ভব। তবে এখন পর্যন্ত হেপাটাইটিস সি এর টিকা আবিষ্কার হয়নি।
হেপাটাইটিস সমস্যা
হেপাটাইটি সাধারণত এ বি সি ডি ই এই ৫ ধরনের হয়ে থাকে। এই বিশ্বে .৩৫ কোটিরও বেশি মানুষ কোন না কোন ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে জীবন যাপন করছে।এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে উঠে অথচ প্রতি ১00 জনের ৯৯ জনেই জানে না যে সে আক্রান্ত। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রতি বছর ৩০ সেকেন্ডে একজন ব্যক্তি প্রাণ হারাচ্ছে। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে জন্ডিস থেকে শুরু করে লিভার সিরোসিস, লিভার ফেলিওরবা লিভার ক্যান্সার হতে পারে।
যে কোন বয়সের মানুষের আক্রান্ত হতে পারে। ৩৫ শতাংশ লোক একিউট হেপাটাইটিস ,৭৫ শতাংশ ক্রনিক হেপাটাইটিস, ৬৫% লিভার ক্যান্সারের জন্য হেপাটাইটিস বি ভাইরাস দায়ী। ২০০৩ সাল থেকে বাংলাদেশে ইপিআই টিকার তালিকায় হেপাটাইটিস বি ভাইরাস যুক্ত করা হয়। বাংলাদেশে ১৯৮৪ সালে হেপাটাইটিস আক্রান্তের হার ছিল প্রায় ৯.৭ শতাংশ। ২০১৮ সালের হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্তের হার ছিল ৫.১ শতাংশ।
হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে নারীদের চেয়ে পুরুষেরা বেশি আক্রান্ত হয় এবং গ্রাম থেকে শহরের মানুষ বেশি আক্রান্ত হয়।আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭৫ লাখ হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত। আক্রান্ত জনসংখ্যার মধ্যে পুরুষ ৫৭ লাখ নারী ২৮ লাখ এবং শিশু চার ৪ লাখ আক্রান্ত পরিবারের সংখ্যা ১৫ লাখ। আমাদের দেশের যুবসমাজ অর্থাৎ ১৫ বছর থেকে ৩0 বছর বয়সীদের লোকদের মধ্যে আক্রান্তের হার প্রায় ২৫ লাখ ১৮ লাখ প্রজনন সক্ষম নারী হেপাটাইটিস এ আক্রান্ত।
ভাইরাল হেপাটাইটিস কেন হয়
হেপাটাইটিস আমাদের কাছে একটি সাধারন সমস্যা। তবে এটি আমরা সাধারণ হিসেবে গণ্য করলেও এই ভাইরাস মোটেও স্বাভাবিক নয় কারণ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এবং হেপাটাইটিস এ এবং হেপাটাইটিস ই সাধারণত যেসব ব্যক্তি এই হেপাটাইটিস দ্বারা আক্রান্ত তাদের মল দ্বারা দূষিত খাবার এবং পানির মাধ্যমে অন্য মানুষের দেহে ছড়িয়ে পড়ে।
এছাড়া হেপাটাইটিস ই হয়ে থাকে সাধারণত অল্প রান্না করা শূকরের মাংস,সেলফিশ এবং হরিণের মাংস খাওয়ার কারণে। আর হেপাটাইটিস সি এবং হেপাটাইটিস ডি দিয়ে সাধারণত সংক্রামিত ব্যক্তির রক্তের সাথে অন্য ব্যক্তির দেহে ছড়িয়ে থাকে।
হেপাটাইটিস প্রতিরোধে টিকা আছে কি
হেপাটাইটিস এ ও বি ভাইরাসের টিকা রয়েছে তবে হেপাটাইটিস সি এর টিকা এখনো আবিষ্কার হয়নি। তবে বারো ১২ সপ্তাহ মুখে ওষুধ খাওয়ার মাধ্যমে এই সি ভাইরাস প্রতিরোধ করা সম্ভব। হেপাটাইটিস সি ই ভাইরাসের টিকা কোন কোন দেশে চালু রয়েছে। তবে পৃথিবীর সব দেশে এখনো চালু হয়নি।
হেপাটাইটিস ভাইরাসের টিকা কখন নেয়া যায়
শিশু জন্মের ২৪ ঘন্টার মধ্যেই হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের টিকা নেওয়া যেতে পারে। তবে বাংলাদেশে ইপিআই ভ্যাকসিন এর মাধ্যমে নবজাতকদের হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের টিকা দেওয়া হচ্ছে। তবে পূর্ণবয়স্ক মানুষ ইচ্ছে করলে যে কোন সময় যে কোন বয়সে টিকা নিতে পারে। হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের টিকা শুধু জন্ডিস প্রতিরোধ করে তা নয় এটি লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সার ও প্রতিরোধ করে থাকে।
বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস
প্রতি বছর ২৮ জুলাই হেপাটাইটিস দিবস পালন করা হয়। বাংলাদেশে ২০০৫ সাল থেকে অধ্যাপক মোবিন খানের নেতৃত্বে হেপাটাইটিস সচেতনতা দিবস পালন শুরু হয়। ২০১৬ সালে ওয়ার্ল্ড হেলথ এসেম্বলি একটি অতি উচ্চ বিলাসী প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। সে প্রস্তাবে সব সদস্য দেশকে ২০২০ সালের মধ্যে হেপাটাইটিসের ব্যাপারে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করতে বলা হয়। এবং ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্ব থেকে হেপাটাইটিস নির্মূল করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।
সারা পৃথিবীতে কোন না কোন হেপাটাইটিসের ৩৫ কোটিরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়ে বসবাস করছে। এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে সাধারণত জন্ডিস থেকে শুরু করে লিভার সিরোসিস, লিভার ক্যান্সার, লিভার ফেইলিওর সহ জটিল ও দুরারোগ্য ব্যাধি হতে পারে। হেপাটাইটিস সম্পর্কে সচেতনতা অনেক জরুরী। হেপাটাইটিস ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সারা বিশ্বে প্রতি ৩০ সেকেন্ডে প্রায় একজন মানুষ মারা যাচ্ছে।
আমরা লিভার নিয়ে তেমন ভাবি না যখন অসুস্থ হই তখন উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠি। হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে প্রায় প্রতিবছর ১৫ লাখ লোক মৃত্যুবরণ করছে। সারা বিশ্বে প্রায় ৩৩ কোটিরও বেশি লোক আক্রান্ত হয় এই হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস দ্বারা। বিশ্বে বি ভাইরাসে আক্রান্ত প্রায় ৯০% মানুষ আর সি ভাইরাসে আক্রান্ত প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ। কিন্তু রোগীরা জানে না যে তারা এই ভাইরাসে আক্রান্ত। ভয়াবহতা সবচেয়ে বেশি শিশুদের ক্ষেত্রে।
এই ভাইরাসে আক্রান্ত শিশুদের শতকরা.৮0 থেকে ৯0 ভাগ দীর্ঘ মেয়াদী প্রদাহ তৈরি করে থাকে। এই আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে শতকরা ২৫ জন শিশু প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগে মারা গেছে অথচ জনন পরবর্তী মাত্র ৪৩ শতাংশ শিশু প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। বিশ্ব এই দিবস পালনের উদ্দেশ্য হলো সারা বিশ্বে হেপাটাইটিস এ, বি ,সি, ডি,ও ই ভাইরাস সম্পর্কে সচেতন করে তোলা। সারা বিশ্বে যে ৮ টি অফিসিয়াল পাবলিক হেলথ ডে পালন করা হয় হেপাটাইটি স ডে তাদের মধ্যে অন্যতম।
দিবস পালনের পটভূমি
বিশ্ব হেপাটাইটিস এলায়েন্স ২০০৮ সালের ২৮ জুলাই বিশ্ববাসীকে সচেতন করতে হেপাটাইটিস দিবস পালনের উদ্দেশ্য গ্রহণ করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা .২০১১ সালে হেপাটাইটিস দিবসকে স্বীকৃতি দেয়।আর এ ভাইরাস আবিষ্কার করেন নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী বারুদ স্যামুয়েল ব্লুম্বার। তিনি এই রোগের টিকা দেওয়া শুরু করেন এবং পরীক্ষার ব্যবস্থা উন্নত করেন। তিনি ২৮ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন আর তার চিকিৎসা বিদ্যায় তার অবদানকে স্বীকৃতি দান করতে তার জন্মদিনে অর্থাৎ ২৮ জুলাই কে হেপাটাইটিস দিবস পালন করা হয়।
প্রতি বছর ১৫ লাখ মানুষ এই হেপাটাইটিস রোগে মারা যায়। চালস গৌড় নামে একজন ব্রিটিশ নাগরিক ১৯৯৫ সালে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত হন। তখন হেলথ গাইডলাইন বলে কিছুই ছিল না। তাই তিনি চিকিৎসার কোন সহযোগিতা পাননি। নিজের টাকা খরচ করে তিনি ওষুধ কেনেন এবং তিনি সুস্থ হন। তিনি প্রথম কয়েকজন রোগীকে নিয়ে হেপাটাইটিস ট্রাস্ট গঠন করেন। এই ব্রিটিশ নাগরিক ২০০৪ সালে সর্বপ্রথম হেপাটাইটিস দিবস পালন শুরু করেন।
এরপর বাংলাদেশ অধ্যাপক মোবিন খানের নেতৃত্বে হেপাটাইটিস সচেতনতা দিবস পালন শুরু করে। এরপর ওয়ার্ল্ড হেপাটাইটিস অ্যালায়েন্স গঠিত হয় ২০০৮ সালে এবং হেপাটাইটিস দিবস পালন শুরু হয় ২৯ এ মে থেকে। এরপর বিশ্ব ব্যাপকভাবে এই হেপাটাইটিস রোগী সমিতির প্রচারণা শুরু হয় এবং এই প্রচারণার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ওয়ার্ল্ড হেলথ এসেম্বলিতে একটি নীতিমালা গ্রহণ করে।২০১০ সালে আর এই নীতিমালায় হেপাটাইটিসের সঙ্গে হেটারাইটিস বি কেও আনা হয়।
আর এরই পথ ধরে ভাইরাসের আবিষ্কারক অধ্যাপক শ্যামুয়েল ব্লুম বর্গের জন্ম দিনকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ২৮ জুলাই হেপাটাইটিস দিবস পালন করা হয়। তিনি শুধু এই ভাইরাসই আবিষ্কার করেছেন তা নয় তিনি এই ভাইরাসের প্রতিষেধ ও আবিষ্কার করেছেন। আর এই আবিষ্কারের জন্য তিনি .১৯৭৬ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
শেষ কথা
হেপাটাইটিস একটি গুপ্ত ঘাতক ব্যাধি যে ব্যক্তি আক্রান্ত সে নিজে অনেক সময় জানতেই পারেনা সে এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। অনেক সময় এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় না বলে মানুষের বেশি শারীরিক ক্ষতি হয়। এই রোগ থেকে বাঁচার উপায় সচেতন থাকা এবং ভ্যাকসিন গ্রহণ করা। জনগণকে সচেতন করার জন্য সরকারিভাবে এর ব্যাপক প্রচারণা চালানো উচিত সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাগুলোর উচিত এগিয়ে আসা। সবাই মিলে চেষ্টা করলে এই রোগ থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব।
Leave a comment