১.২১ হিসাব সমীকরণের ধারণা ও তাৎপর্য
Concept & Significance of Accounting Equation
আধুনিক হিসাবশাস্ত্রবিদগণ হিসাববিজ্ঞানের দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে একটি গাণিতিক সূত্র প্রকাশ করেছেন, যা হিসাব সমীকরণের নামে পরিচিত। হিসাব সমীকরণটি হলাে—
A = L+ OE
(সম্পদ) = (দায়) + (মালিকানা স্বত্ব)
উদাহরণঃ উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি পরিষ্কার করা যাচ্ছে-
জনাব আকবর ‘রেখা স্টোর’ নামে একটি ব্যবসায় স্থাপন করল। এজন্য তিনি প্রথমে ৫০,০০০ টাকা দিয়ে ব্যবসায় আরম্ভ করতে চান। যখন আকবর ব্যবসায়ের জন্য ৫০,০০০ টাকা পৃথক করে আনলেন তখন এই নগদ ৫০,০০০ টাকা ব্যবসায়ের সম্পদ। সাথে সাথে এই ৫০,০০০ টাকা আকবরের মালিকানা স্বত্ব। অর্থাৎ ৫০,০০০ টাকা বিনিয়ােগের সাথে সাথে নগদ তহবিল ৫০,০০০ টাকা = আকবরের মালিকানা স্বত্ব ৫০,০০০ টাকা।
এখানে, সম্পদ (Assets) = মালিকানা স্বত্ব (Equity)
ব্যবসায় যখন তার কার্যক্রম আরম্ভ করবে তখন স্বত্বাধিকারের সাথে কিছু বহিঃদায় সৃষ্টি হবে আবার নতুন নতুন সম্পদও সৃষ্টি হবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় আকবর ব্যবসায়ের জন্য ১০,০০০ টাকার আসবাবপত্র বাকিতে ক্রয় করল। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ের আসবাবপত্র অর্থাৎ সম্পদ বৃদ্ধি পেল ১০,০০০ টাকা সাথে দেনা বা দায় বৃদ্ধি পেল ১০,০০০ টাকা। তাহলে ব্যবসায়ের আর্থিক অবস্থা হলাে—
নগদ টাকা + আসবাবপত্র = স্বত্বাধিকার/মালিকানা স্বত্ব + দায়
৫০,০০০ + ১০,০০০ = ৫০,০০০ + ১০,০০০
৬০,০০০ টাকা = ৬০,০০০ টাকা।
এখন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান যতই লেনদেন করুক না কেন সবসময় উক্ত সমীকরণের উভয় পার্শ্ব সমান থাকবে। অর্থাৎ যে সমীকরণের সাহায্যে ব্যবসায়ের সম্পদ = মালিকানা স্বত্ব + দায় প্রমাণ করা যায় তাকে হিসাব সমীকরণ বলে।
সম্পদ (Asset): সম্পদ বলতে কোনাে দৃশ্যমান বা অদৃশ্যমান বস্তুকে বােঝায়, যা ভবিষ্যতে সুবিধা প্রদান করবে, যা উপযােগ সৃষ্টি বা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। যেমনঃ আসবাবপত্র, দালানকোঠা, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি।
দায় (Liability): ব্যবসায়ের সম্পত্তির ওপর মালিক ব্যতীত তৃতীয় পক্ষের দাবি হলাে ব্যবসায়ের দায় বা বহিঃদায়। অর্থাৎ বর্তমানে গৃহীত কোনাে ঋণ এবং পরিশােধযােগ্য তৃতীয় পক্ষের কোনাে দাবি দায় বলে বিবেচিত। সাধারণত সব ধরনের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে তার ব্যবসায়িক কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেয়া এবং ধারে পণ্য ক্রয় করতে হয়। ঋণ, পাওনাদার, প্রদেয় বিল, প্রদেয় নােট, বকেয়া ব্যয়, অগ্রিম আয় ইত্যাদি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের জন্য দায়।
মালিকানা স্বত্ব (owner’s Equity): ব্যবসায়ের সম্পত্তির উপর মালিকের দাবিই হলাে মালিকানা স্বত্ব বা অন্তঃদায়। ব্যবসায়ের মােট সম্পত্তি থেকে মােট বহিঃদায় বাদ দিলে তা মালিকানা স্বত্বের সমান হবে। যদি ব্যবসায়ের কখনাে বিলােপসাধন ঘটে তবে পাওনাদার বা তৃতীয় পক্ষের দায় পরিশােধ করার পর মালিকের দাবি পরিশােধ করা হয় বিধায় মালিকের দাবিকে সাধারণত অবশিষ্ট দায় বা দাবি বলা হয়।
বর্ধিত হিসাব সমীকরণ (Expanded Accounting Equation): ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলাে মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে কিছু নিয়মিত কার্যাবলি পরিচালনা করে থাকে। হিসাব সমীকরণের তিনটি উপাদান সম্পদ, দায় এবং মালিকানা স্বত্বের মধ্যে শুধু মালিকানা স্বত্ব ব্যবসায়ের স্বাভাবিক কার্যাবলির দ্বারা প্রভাবিত হয় বা হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে। এক্ষেত্রে বর্ধিত হিসাব সমীকরণটি হবে নিম্নরূপঃ
A = L+C+ R – Ex – D
এখানে,
A = Assets (সম্পদ)
C= Capital (মূলধন)
R = Revenue (আয়)।
Ex = Expenses (খরচ)
D= Drawings (মালিকের উত্তোলন)
হিসাব সমীকরণের মালিকানা স্বত্ব যেসব উপাদানের দ্বারা প্রভাবিত হয় সেগুলাে নিচে সংক্ষেপে আলােচনা করা হলাে-
মূলধন (Capital): মালিক কর্তৃক ব্যবসায়ে সরবরাহকৃত বা বিনিয়ােগকৃত বস্তু বা সেবাই হলাে মূলধন। উদাহরণস্বরূপ, ব্যবসায়ের শুরুতে বা মাঝামাঝিতে নগদ অর্থ, আসবাবপত্র, যন্ত্রপাতি ও পণ্যদ্রব্য প্রভৃতি মূলধন বাবদ আনয়ন।
উত্তোলন (Drawings): মালিক তার ব্যক্তিগত প্রয়ােজনে ব্যবসায় থেকে নগদ অর্থ, পণ্য বা অন্য কোনাে প্রকার সেবা বা সুবিধা গ্রহণ করলে তার জন্য তার মূলধন কমিয়ে আলাদাভাবে তা মালিকের উত্তোলন হিসাবে দেখানাে হয়।
আয় (Revenue): মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে কোনাে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তার ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। উক্ত কার্যক্রম অর্থাৎ পণ্য বা সেবার বিনিময়ের ফলে ব্যবসায়ের মধ্যে যে বস্তুগত বা নগদ আন্তঃপ্রবাহ ঘটে তাই হলাে আয়। আয়ের ফলে ব্যবসায়ের মালিকানাস্বত্ব বৃদ্ধি পায়। সাধারণত পণ্য বিক্রয়, সেবা প্রদান, কোননা সম্পত্তির ভাড়া প্রদান অথবা অলস অর্থ বিনিয়ােগের মাধ্যমে এ আয় অর্জিত হয়ে থাকে।
খরচ (Expense): আয় অর্জনের উদ্দেশ্যে পণ্য ক্রয় বা সেবা বিনিময়ের ফলে ব্যবসায়ের যাবতীয় বহিঃপ্রবাহকে খরচ বলে। ব্যবসায়ের খরচের ফলে মালিকানা স্বত্ব হ্রাস পায়। আয়ের ন্যায় খরচেরও কিছু খাত রয়েছে। যেমন: পণ্য ক্রয়, বেতন, ভাড়া, বিমা সেলামি ও অবচয় ইত্যাদি।
Leave a comment