“হিয়ার পরশ লাগি হিয়া মোর কান্দে।

পরাণ পিরীতি লাগি থির নাহি বান্ধে।।”

উত্তর: নির্বাচিত অংশটুকু ‘মধ্যযুগের বাংলা গীতিকবিতা’ সংকলনের জ্ঞানদাসের ‘অনুরাগ’ বিষয়ক পদ থেকে গৃহীত। কৃষ্ণকে দেখার পর থেকে রাধার মনে যেন প্রবল আলোড়ন সৃষ্টি হয় তা এখানে তুলে ধরা হয়েছে।

কৃষ্ণের প্রতি রাধা অনুরাগে বিভোর। কৃষ্ণের রূপসৌন্দর্য ও তার মোহন বাঁশির সুর তাকে মনের দিক থেকে বেঁধে ফেলেছে। প্রেমের উন্মাতাল হাওয়া রাধার হৃদয়কে এলোমেলো করে দিয়েছে। কৃষ্ণের প্রতি তার আকর্ষণ বেড়েই চলেছে। কৃষ্ণকে পাওয়ার জন্য রাধার চোখ থেকে বেদনার অশ্রু ঝরছে। কৃষ্ণ তার সমস্ত দেহমন জুড়ে আছে। কিন্তু কৃষ্ণ সশরীরে রাধার কাছে উপস্থিত নেই। কৃষ্ণকে লাভের জন্য তার নিজের শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যেন কেঁদে চলেছে। কৃষ্ণের প্রেমের টানে রাধা এতই অস্থির যে- তার আমিত্ব এবং কুলগর্ব সবকিছু ভেঙে চুরমার হয়েছে। কুলমানের সমস্ত কথা ভুলে গিয়ে এখন রাধার একমাত্র ধ্যান-জ্ঞান কৃষ্ণ। রূপ রাধার মধ্যে প্রেমের বাতি জ্বালিয়ে রাধাকে যন্ত্রণাদগ্ধ করেছে। এরপরই দেহের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে রাধা মনের সন্ধান করেছে।

সুতরাং সার্বিক বিচারে বলা যায়- রূপ থেকে প্রেম, প্রেমে থেকে হৃদয়ের রক্তক্ষরণ এ যেন এক চিরন্তন নিয়ম; সে নিয়মের বেড়াজালে রাধাও দগ্ধ- যা প্রদত্ত পদগুচ্ছে উপস্থাপিত।