হিমোফিলিয়া কি

হিমোফিলিয়া হলো একপ্রকার জন্মগত রক্ত রোগ। হিমোফিলিয়া রক্তে এমন
একটি  জিনগত রোগ যেখানে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়। এটি জন্মগত বা জিনগত
সমস্যা। আমাদের শরীরের রক্ত জমাট বাধার জন্য ১৩ টি ফ্যাক্টর রয়েছে। আর
হিমোফিলিয়া ফ্যাক্টর ৮ এবং হেক্টর ৯ এর অভাবে হয়ে থাকে। আমাদের শরীরের
কোন অংশ কেটে গেলে স্বাভাবিকভাবেই কিছুক্ষণ পরে আবার রক্ত জমাট বেধে যায়
এবং এতে করে আমাদের শরীরের রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়ে যায়।

কিন্তু হিমোফিলিয়া রোগীর ক্ষেত্রে আলাদা। এদের শরীরে রক্ত জমাট না বেঁধে
রক্তক্ষরণ হয়। রক্তক্ষরণের মূল কারণ হলো রক্ত জমাট বাঁধতে যে ১৩ টি
ফ্যাক্টর হয়েছে এর মধ্যে ফ্যাক্টর ৮ এবং হেক্টর ৯ এর
অভাবে  হিমোফিলিয়া নামক রোগ হয়। হিমোফিলিয়া মানুষের এক্স
ক্রোমোজোম এ থাকে।

হিমোফিলিয়া রোগের ইতিহাস

হিমোফিলিয়া হলো একটি জিনগত রোগ। উনিশ শতকের শুরুতে ব্রিটিশ পরিবারের রানী
ছিলেন রানী ভিক্টোরিয়া। আর রানী ভিক্টোরিয়া ছিলেন হিমোফিলিয়া রোগের
বাহক। যেহেতু হিমোফিলিয়া জিনগত রোগ তাই রানী ভিক্টোরিয়ার পুত্র
সন্তান লিউ পোল্ডের ও হিমোফিলিয়া রোগ ছিল। আর ব্রিটিশ রাজকন্যা অ্যালিশ ও
বেয়াত্রিস রাজকন্যাদ্বয় দুইজনেই ছিলেন এই রোগের বাহক। হিমোফিলে এমন
একটি রোগ যা বংশ পরস্পরায় চলতে থাকে।

আরো পড়ুনঃ বাত জ্বর কেন হয় – বাত জ্বর হলে করণীয় জেনে নিন

রানী ভিক্টোরিয়া লিওপোল্ড কে নিয়ে খুব চিন্তা করতেন এবং লিওপোল্ড কে খুব
যত্নে আগলে রাখতেন। লিওপোল্ড খেলতে গিয়ে মাথায় আঘাত লাগে এবং মস্তিষ্কের
রক্তক্ষরণে তিনি মারা যান। এরপর রানী ভিক্টোরিয়ার কন্যা দ্বয় ইউরোপ ও
রাশিয়ার রাজ পরিবারে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং তাদের দ্বারা ইউরোপ ও
রাশিয়ার রাজ পরিবারে এই রোগের জিন ছড়িয়ে পড়ে।

১৯৫২ সালের ব্রিটিশ রাজ পরিবারের স্টিফেন ক্রিসমাস হিমোফিলিয়া রোগে
আক্রান্ত হন আর এই স্টিফেন ক্রিসমাসের নাম অনুযায়ী এই রোগকে ক্রিসমাস
ডিজিজ  বলে নামকরণ করা হয়। আর এই নামকরণেই হিমোফিলিয়াকে আবার রয়েল
ডিজিজ ও বলা হয়। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় প্রত্যেকটি দেশেই হিমোফিলিয়া
রোগে আক্রান্ত রোগী দেখা যায়।

হিমোফিলিয়া কত প্রকার

হিমোফিলিয়া প্রধানত দুই প্রকার। যথা-

হিমোফিলিয়া এ (A) 

হিমোফিলিয়া বি (B)

হিমোফিলিয়া রোগের ফ্যাক্টর বা তীব্রতা অনুযায়ী আবার একে তিন ৩ ভাগে ভাগ
করা হয়। যেমন –

স্বল্প বা মৃদু ফ্যাক্টর

মাঝারি ফ্যাক্টর

মারাত্মক ফ্যাক্টর

স্বল্প বা মৃদু ফ্যাক্টর

স্বল্প বা মৃদু ফ্যাক্টরের মাত্রা হলো শতকরা ৪ থেকে ৪০%। এতে রোগের তেমন
উপসর্গ না থাকলে ও কেটে গেলে আর বা আঘাত পেলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়ে
থাকে।

মাঝারি ফ্যাক্টর

মাঝারি ফ্যাক্টর এর মাত্রা শরীরে ১ থেকে ৫০ ভাগ। মাঝারি ভাবে আক্রান্ত হলে
এইসব রোগীর মাঝে মাঝে মাংসপেশী, হাড়ের জয়েন্ট ও পেশীতে রক্তক্ষরণ হয়।

মারাত্মক ফ্যাক্টর

মারাত্মক ফ্যাক্টরের মাত্রা শতকরা ১০০ ভাগ। এখানে কোনরকম আঘাতের প্রয়োজন
হয় না, কোন আঘাত ছাড়াই রক্তক্ষরণ হতে পারে। এছাড়াও এই ফ্যাক্টরে
আক্রান্ত হলে মাংস পেশি, হাড়ের বিভিন্ন জয়েন্ট যেমন – কনুই, হাঁটু ও
পায়ের গোড়ালি ফুলে যায় এবং ব্যথা হয়। জয়েন্টের ফোলা স্থানে গরম অনুভূত
হয় এবং তীব্র ব্যথা হয়ে থাকে।

ত্বকে রক্তক্ষরণসহ দাঁতের মাড়ি দিয়েও রক্তক্ষরণ হতে পারে। হিমোফিলিয়ায়
মারাত্মক ভাবে আক্রান্ত হলে এটি শিশু বয়সে এর লক্ষণ প্রকাশ পায়। কোনরকম
সার্জারি, সুন্নতে খাতনা, আঘাত লাগা এমনকি দাঁত পড়ে গেলেও রক্তক্ষরণ হতে
পারে। হিমোফিলিয়ায়  আক্রান্ত হলে জয়েন্ট ফুলে যায় আর এই
জয়েন্ট ফুলে যাওয়াকে বলা হয় হেমটরাইজ।

আরো পড়ুনঃ হিট স্ট্রোক কাকে বলে  –  হিট স্ট্রোক কেন হয়  জেনে
নিন

শরীরের একই জয়েন্ট বারবার ফুলে যায় এবং জয়েন্ট তার
কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। যার কারণে রোগী হাঁটাচলা করতে পারেনা। এক সময়
সম্পূর্ণ জয়েন্ট তার কার্য ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।আরেক ধরনের
হিমোফিলিয়া হয়ে থাকে তা হল হিমোফিলিয়া সি C। হিমোফিলিয়া এ A হল কমন
একটি রোগ। শতকরা ৯০ ভাগ হিমোফিলিয়া রোগ এই ফ্যাক্টর ৮ এর অভাবে হয়ে থাকে।

আর হিমোফিলিয়া বি B কে বলা হয় ক্রিসমাস ডিজিজ। এই রোগ ফ্যাক্টর নয়.৯ এর
অভাবে হয়ে থাকে। তবে হিমোফিলিয়া সি C হলে সামান্য কোন আঘাতে রক্তপাত হয়
না, তবে বড় কোন সার্জারি করলে রক্তপাত বন্ধ হয় না। হিমোফিলিয়া হলো জিনগত
রোগ। সদ্য জাত শিশুর মধ্যে যেই হিমোফিলিয়া রোগ দেখা দেয় তাকে বলা
হয় অ্যাকুয়ারড  হিমোফিলিয়া। 

হিমোফিলিয়া কেন হয় / হিমোফিলিয়া রোগের কারণ

হিমোফিলিয়া রোগের বাহক হল মেয়েরা। আর ছেলেরা এই রোগে আক্রান্ত হয়।
বিজ্ঞানের ভাষায় হিমোফিলিয়াকে বলা হয় এক্স লিঙ্ক ডিজিজ যা ক্রোমোজোমের
মাধ্যমে বংশ পরস্পরাই হয়ে থাকে। বিজ্ঞানের পরিভাষায় পুরুষের জেনেটিক্স
গঠনে দুইটি ক্রোমোজোম থাকে। সেগুলো হল এক্স X ক্রোমোজোম এবং ওয়াই Y
ক্রোমোজোম। আর মেয়েদের দুটি এক্স X ক্রোমোজোম থাকে। জিন বহনকারী এক্স X
ক্রোমোজোম এ প্রোটিন ফ্যাক্টর ৮ ও ৯ থাকে।

এই দুইটি ফ্যাক্টর মেয়েদের দুটি ক্রোমোজোম এক্স এর মধ্যে যদি একটি নষ্ট
থাকে তাহলে এই রোগটি সে বহন করে থাকে। একে অটো জোমাল রিসেসিক ডিজঅর্ডার
বলে। ছেলেদের একটিমাত্র এক্স ক্রোমোজোম থাকে এবং তা তারা তাদের মায়ের কাছ
থেকে বহন করে থাকে। তাই যদি মা ত্রুটিপূর্ণ এক্স ক্রোমোজোম বহন করে তাহলে
তার পুত্র সন্তান হিমোফিলিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে।

আর মেয়ে সন্তান হলে তারা হিমোফিলিয়ার বাহক হয়ে থাকে। হিমোফিলিয়ায়
আক্রান্ত হলে জ্বীনের ত্রুটির কারণে রক্ত জমাট বাধাই প্রোটিন বা ফ্যাক্টর
স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম থাকে।আর এই জন্যই রোগীর দীর্ঘ রক্তক্ষরণ হয়।
হিমোফিলিয়ার জন্য পারিবারিক ইতিহাস জানা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যারা
হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত তাদের নিজের ভাই -বোন, সহ মা – মামা – খালা –
খালাতো ভাই সহ নানা – নানীর ইতিহাস জানা প্রয়োজন।

শতকরা ৭৫ ভাগই পারিবারিক জিনের কারণে হিমোফিলিয়ার রোগ হয়ে থাকে। তবে
শতকরা ২৫ ভাগ ক্ষেত্রে কোন পারিবারিক ইতিহাস ছাড়াও হতে পারে। অনেক সময়
নতুন মিউটেশন থেকেও চ রোগ হতে পারে।

হিমোফিলিয়া রোগ অস্বাভাবিক রক্তকরণ জনিত রোগ। এটি একটি জিনগত রোগ।
হিমোফিলিয়া রোগে আক্রান্ত হলে রক্ত জমাট বাধার ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি করে
থাকে তাই শরীরের রক্তক্ষরণ বন্ধ হয় না। শরীরের কোথাও কেটে গেলে স্বাভাবিক
নিয়মে রক্তপাত বন্ধ হয়ে যায় আর রক্ত জমাট প্ল্যাটিলেট সহ ১৩ টি ফ্যাক্টর
বা প্রোটিন কাজ করে থাকে।

তার মধ্যে ফ্যাক্টর এইট ৮ ও ফ্যাক্টর ৯ নামক জিন থাকে যা শরীরে প্রোটিন
তৈরি করে থাকে। এই প্রোটিন গুলো যদি স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে কম থাকে তাই
মানুষের শরীরের রক্ত জমাট বাঁধতে পারে না। আর এই রক্তক্ষরণ জনিত রোগকেই
চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় হিমোফিলিয়া বলা হয়।

হিমোফিলিয়া এ A হয়ে থাকে ফ্যাক্ট র এইটের viii  অভাবে

হিমোফিলিয়া বি B হয়ে থাকে ফ্যাক্টর নাইনের ix অভাবে এবং

হিমোফিলিয়া সি C হয়ে থাকে হেক্টর 11 xi এর অভাবে।

হিমোফিলিয়া রোগের লক্ষণ

হিমোফিলিয়া রোগের লক্ষণ সাধারণত এর ক্লটিং ফ্যাক্টর  এর উপর নির্ভর
করে থাকে। যাদের শরীরে ক্লটিং ফ্যাক্টর ৮ এবং ৯ এর অভাব থাকে তাদের এই
হিমোফিলিয়া নামক রোগ হয়ে থাকে। হিমোফিলিয়ার লক্ষণ গুলি হল –

  • অস্বাভাবিক রক্ত ক্ষরণ বা কেটে গেলে রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়া হিমোফিলিয়া
    রোগের প্রধান লক্ষণ
  • নাক থেকে বারবার রক্তকরণ
  • শিশুর সুন্নতে খাতনা করার পর রক্ত বন্ধ না হওয়া
  • কোন কারণ ছাড়াই হঠাৎ করে রক্তক্ষরণ
  • চামড়ার নিচে অস্থির সন্ধিতে হাঁটু ও কনুইয়ে রক্তক্ষরণ
  • জয়েন্ট ফুলে যাওয়া ও ব্যথা হওয়া
  • শরীরের মাংসপেশিতে কালশিটে দাগ উঠা
  • মল বা মূত্রের সাথে রক্তকরণ
  • দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া
  • শরীরের অন্যান্য অংশের মতো মস্তিষ্কও রক্তক্ষরণ হওয়া।
  • অসম্ভব মাথা ব্যথা করা
  • চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হওয়া
  • অনবরত বমি হওয়া
  • ঘাড় ব্যথা হওয়া
  • রোগের হাঁটা চলায় বিঘ্ন ঘটা
  • জয়েন্ট এর কাজ সম্পন্ন ব্যাহত হওয়া ইত্যাদি।

হিমোফিলিয়া রোগের পরীক্ষা

হিমোফিলিয়া রোগ নির্ণয় করতে হলে যেসব পরীক্ষাগুলো করতে হয় তা হলো –

রক্তের ফ্যাক্টর দুটি অর্থাৎ ফ্যাক্টর আট  ৮ ও ফ্যাক্টর নয় ৯ পরীক্ষা
করা।

রক্ত জমাট বাধার ক্ষমতা পরীক্ষা করা।

সঠিকভাবে ইতিহাস জানার পর রক্তের স্ক্রীনিং পরীক্ষার মাধ্যমে এ পি টি টি
নামক পরীক্ষা করা হয় এবং এই এপিটিটি পরীক্ষার ফলাফল সবচেয়ে ভালো এবং এরপর
নির্দিষ্ট ফ্যাক্টর গুলির পরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগ নির্ণয় করা হয়।
হিমোফিলিয়া রোগের পরীক্ষা সরকারি বা বেসরকারি যে কোন হাসপাতালে করানো হয়ে
থাকে।

তবে হিমোফিলিয়া রোগ সঠিকভাবে শনাক্তকরণের জন্য মাত্র কয়েকটি প্রতিষ্ঠান
রয়েছে যা চাহিদা তুলনায় অনেক কম

 হিমোফিলিয়া রোগের চিকিৎসা

  • হিমোফিলিয়া রোগের স্থায়ী কোন চিকিৎসা নেই তবে অস্বাভাবিকভাবে রক্তক্ষরণ
    থেকে সাবধানতা এই রোগের প্রধান চিকিৎসা। 
  • শরীরের যে ফ্যাক্টরের অভাব রয়েছে ইনজেকশন এর মাধ্যমে সেই ফ্যাক্টর গুলো
    প্রবেশ করানো এর মূল চিকিৎসা। 
  • অস্থি সন্ধিতে রক্ত ক্ষরণের সমস্যা দেখা দিলে ফিজিওথেরাপি নিতে
    হবে। 
  • রোগীকে নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক চলতে হবে। 
  • শরীরে প্রয়োজন অনুযায়ী ফ্রেশ ফ্রোজেন প্লাজমা ক্রায়ো প্রেসিড
    পরিসঞ্চালন করতে হবে। 
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে ফ্যাক্টর ৮ এবং ফ্যাক্টর নয় ৯ শরীরে তৈরি না হলে
    ইনজেকশনের মাধ্যমে নিতে হবে।
  •  কোন ঝুঁকিপূর্ণ কাজে অংশগ্রহণ করানো যাবে না।
  • মাংসপেশিতে ইনজেকশন নেওয়া যাবে না।
  • ব্যথা নাশক ঔষধ খাওয়ানো যাবে না
  • রক্ত তরল করে যেসব ঔষধ যেমন – এসপিরিন জাতীয় ঔষধ এড়িয়ে চলতে হবে

হিমোফিলিয়া রোগের চিকিৎসার ঔষধ বাংলাদেশে থাকলেও তা অত্যন্ত ব্যয়বহুল।
হিমোফিলিয়া রোগের সঠিক চিকিৎসা বাংলাদেশের অধিকাংশ লোকেরই নাগালের বাইরে।
গবেষকদের মতে, হিমোফিলিয়া রোগ সম্পূর্ণভাবে নিরাময় করা সম্ভব। উন্নত
দেশগুলোতে জিন থেরাপির মাধ্যমে হিমোফিলিয়া সম্পূর্ণভাবে নিরাময় করা সম্ভব
হচ্ছে।

আরো পড়ুনঃ ব্যায়ামের ১৫ টি উপকারিতা জেনে নিন

কিন্তু বাংলাদেশ সহ স্বল্প উন্নত দেশে এখনো জিনথেরাপি চিকিৎসা চালু হয়নি।
সচেতন হলে এই রোগের মৃত্যু অনেকাংশে কমানো সম্ভব। তাই হিমোফিলিয়া সম্পর্কে
সচেতন থাকা জরুরী।

বাড়িতে প্রাথমিক চিকিৎসা

  • আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ
    নেওয়া
  • আক্রান্ত স্থানকে বিশ্রাম দেওয়া এবং সম্ভব হলে উঁচু করে রাখা
  • দ্রুত বরফ বা ঠান্ডা পানি দেওয়া
  • রক্তকরণের স্থানকে চেপে ধরে রাখা

সাবধানতা

হিমোফিলিয়া রোগে আক্রান্ত হলে যেসব সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন তা হল

  • চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত ঔষধ না খাওয়ানো
  • বাড়িতে সব সময় বরফ রাখা
  • সার্জারির আগে পারিবারিক ইতিহাস জেনে নেওয়া
  • মাংসপেশিতে ইনজেকশন না দেওয়া
  • যেকোনো আঘাত থেকে শিশুকে রক্ষা করা
  • শিশুকে সংরক্ষিত রাখা

রয়েল হিমোফিলিয়া কি

ব্রিটিশ রাজপুত্র ছিলেন স্টিফেন ক্রিসমাস। তিনি .১৯৫২ সালে হিমোফিলিয়া
নামক রক্ত রোগে আক্রান্ত হন এবং এই রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান।
যেহেতু স্টিফেন ক্রিসমাস রাজ পরিবারের সদস্য ছিলেন বা রাজপুত্র ছিলেন তাই
তার নাম অনুসারে হিমোফিলিয়া রোগকে আবার স্টিফেন ক্রিসমাস বা রয়েল ডিজিজ ও
বলা হয়।

হিমোফিলিয়ার প্রতিপাদ্য

হিমোফিলিয়ার এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো – “সবার জন্য অধি-গোম্যতা, সবার
জন্য চিকিৎসা”।

হিমোফিলিয়ার প্রতিপাদ্য হলো – হেয়ার দেয়ার ভয়েজ  (Hear their
voice)  “তাদের কথা শুনুন”। হিমোফিলিয়াকে জানতে হবে”এবং রোগীদের জীবন
যাত্রার গল্প শুনতে হবে। হিমোফিলিয়া রোগের অগ্রগতি সাধন করতে হলে প্রয়োজন
সবার অংশ-দারিত্ব এবং স্বাস্থ্য নীতিতে সম্পৃক্ততা করন। উন্নয়নশীল দেশগুলো
সহ সারা বিশ্বে প্রায় শতকরা ৭৫ ভাগ রোগী এখনো সনাকতের বাইরে রয়েছে। তাই
সবার জন্য রোগ সনাক্তকরণের সুবিধা সুনিশ্চিত করা একান্ত প্রয়োজন।

কারণ হিমোফিলিয়ার রোগের সুচিকিৎসা তাদের রাষ্ট্রীয় অধিকার।.১৯৬৩ সালে
হিমোফিলিয়া ফেডারেশন প্রতিষ্ঠিত হয় এরপর ১৯৮৯ সাল থেকে প্রতিবছর ১৭ই
এপ্রিল হিমোফিলিয়া দিবস পালন করা হয়। বাংলাদেশে হিমোফিলিয়া রোগী ও তাদের
পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গঠিত একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান হল “বাংলাদেশ
হিমোফিলিয়া সোসাইটি”।

শেষ কথা

বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৭ এপ্রিল হিমোফিলিয়া দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ১৭ই
এপ্রিল বিশ্ব হিমোফিলিয়া দিবস। গবেষকদের মতে, সারা বিশ্বে প্রায় ১০ হাজার
জনের মধ্যে প্রতি একজন হিমোফিলিয়া সহ অন্যান্য রক্তক্ষরণ জনিত রোগে
আক্রান্ত। বাংলাদেশে আনুমানিক বিশ ২০  হাজারেরও বেশি হিমোফিলিয়া রোগে
আক্রান্ত রোগী রয়েছে।

কিন্তু দুঃখের বিষয় হলেও এ কথা সত্য যে, মাত্র ২৬০০ জন রোগী নিবন্ধিত
হয়েছে। তবে বর্তমানে বাংলাদেশ হিমোফিলিয়া সোসাইটি রোগী সনাক্ত করা সহ
সচেতনতা মূলক বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এক লক্ষে প্রায়
২০ জন রোগী হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত।