হিন্দু ধর্মের মানুষের বিশ্বাস ও তাঁদের জীবন-যাপনকে নিয়ন্ত্রণ করে এমন কিছু বিধি বিধান, প্রথা ও আচরণবিধির সমষ্টিই হলো হিন্দু আইন । এটি মূলতঃ একটি ধর্মভিত্তিক পারিবারিক আইন। এই আইনে হিন্দুদের বিবাহ, অভিভাবকত্ব, ভরণ-পোষণ, দত্তক, সম্পত্তি হস্তান্তর বিশেষ করে স্ত্রীধন, দান, দেবোত্তর সম্পত্তি, উইল, উত্তরাধিকার, পারিবারিক সম্পর্ক ও বিভিন্ন ধর্মীয় বিধান বর্ণিত হয়েছে।হিন্দু আইনের মূল প্রকৃতি বিশ্লেষণ করলে মূলত আমরা দেখতে পাই যে, প্রাচীন বা আনুষ্ঠানিক উৎস (Ancient/Formal Sources) ও ব্যবহারিক উৎস (Material Source) বা আধুনিক উৎস (Modern Sources)থেকে হিন্দু আইনের উৎপত্তি হয়েছে। নিচে হিন্দু আইনের উৎসসমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
হিন্দু আইনের উৎসসমূহ [The Sources of Hindu Law]
হিন্দু আইনের প্রাচীন বা আনুষ্ঠানিক উৎস (Ancient/Formal Sources)
ঐতিহ্যবাহী সূত্রগুলি সেই প্রাচীন হিন্দু আইনি ব্যবস্থাগুলোকে বোঝায় যা সেই নির্দিষ্ট সময়ে হিন্দুদের আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করতো। হিন্দু আইনের প্রথাগত উৎস হল বর্তমান ব্যবস্থায় কিছু পরিবর্তনসহ পথপ্রদর্শক নীতি। তাই হিন্দু আইনের ঐতিহ্যগত উৎসকে নিম্নরূপে আলোচনা করা যায়:
(i) শ্রুতি (বেদ) (Shruti/Smruti)
(ii) স্মৃতি (Smrity/Smṛti)
(iii) হিন্দু পুরাণ (Puranas)
(iv) সংহিতা, ব্যাখ্যা বা নিবন্ধ(Legal digest or commentaries or Nibandhas)
(v) প্রথা(Customs)
(vi)ফ্যাক্টাম ভ্যালেট (Factum Valet)।
(vii)প্রণীত আইন (Legislature)
(i) শ্রুতি (বেদ) (Shruti/Smruti)
শ্রুতি হলো এমন সব দৈববাণী [ঈশ্বর, জীব-জগৎ সম্পর্কে পারমার্থিক জ্ঞান] যা বৈদিক ঋষিগণ শুনেছেন । পরবর্তিতে মুনিবর কৃষ্ণ দ্বৈপায়নক এইসব দৈববাণী নিয়ে বেদশাস্ত্র সংকলন করেন। বেদশাস্ত্র (Vedas) মূলত চার খন্ডে বিভক্ত: যেমন-
১। ঋগ্বেদ→ হিন্দু বিয়ে ও প্রার্থনাকালে পঠিত হয়।
২। সামবেদ্ → প্রার্থনামূলক ধর্মগ্রন্থ।
৩। যজুর্বেদ→ আচার-অনুষ্ঠানের পদ্ধতির কথা বলা আছে।
৪। অথর্ব বেদ→ দৈনন্দিন জীবনযাত্রার প্রণালী সম্পর্কিত ।
প্রতিটি বেদের মূলত তিনটি অংশ রয়েছে: যথা-
সংহিতা (দেবস্তুতি বা বন্দনার সংকলন)
ব্রাহ্মণ (বেদমন্ত্রের ব্যাখ্যা যেখানে কর্তব্য ও পালনের উপায় বলা রয়েছে)
উপনিষদ বা বেদান্ত (কর্তব্যের সারাংশ যা সম্পূর্ণরূপে জ্ঞানাশ্রয়ী )
(ii) স্মৃতি (Smrity/Smṛti)
সংস্কৃত শব্দ ‘স্মৃতি’ যার অর্থ “স্মৃতি, স্মৃতিচারণ, চিন্তা কিংবা মনের কথা বলা। প্রাচীন ভারতবর্ষের মুণি-ঋষিগণ ঈশ্বরের যে সব বাণী মনে রেখেছিলেন এবং পরবর্তীতে গুরু-শিষ্য পরম্পরায় সেসব বাণী শিষ্যগণ মনে রেখেছিলেন তাকে স্মৃতিশাস্ত্র বলা হয়। এই স্মৃতিশাস্ত্র মূলত হিন্দু আইনের সংহিতা যার মাধ্যমে হিন্দুদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক আদর্শ সম্পর্কিত আচরনবিধি পরিচালিত হয়। স্মৃতি ঈশ্বরের সরাসরি বাণী নয়। শ্রুতির ভিত্তিতে স্মৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বলা হয়ে থাকে যে, ১৮ জন মুণি-ঋষিগণ যারা ধর্ম সম্পর্কে স্মৃতিশাস্ত্র লিখেছিলেন, এ কারণেই স্মৃতিকে “১৮” নম্বরের প্রতীকী সমার্থক শব্দ হিসেবে গণ্য করা হয়। আইনের উৎস হিসেবে শ্রুতির পরেই স্মৃতির স্থান হলেও স্মৃতির কোন নীতি শ্রুতির সহিত সাংঘর্ষিক হলে তা পরিত্যজ্য।
ব্যাস(Vyasa) বলেন যে, “যেখানে শ্রুতি (বেদ) ও স্মৃতির মধ্যে সাংঘর্ষিক হয় সেখানে শ্রুতিই (বেদ) প্রাধান্য পাবে”। [“Where there is a conflict between the Vedas and the Smriti, the Vedas should prevail.”]
শ্যাম সুন্দর প্রসাদ সিং বনাম বিহার রাজ্য, (১৯৮০) Supp. SCC ৭২০ মামলায় ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট পর্যবেক্ষণ করেছে যে, ‘The court should consult the prevailing practice among the people, while deciding a case. If there is a clear usage to the contrary, the Smriti must yield to such usage.’
স্মৃতিশাস্ত্র প্রধানত তিনটি। যেমন-
১। মনুসংহিতা বা মনুস্মৃতি: বৈদিক সনাতন ধর্মের অনুসারীদের অনুশাসনে ব্যবহৃত মূখ্য এক স্মৃতিগ্রন্থ যা প্রাচীনতম স্মৃতি । এই স্মৃতিশাস্ত্রটি খ্রিস্টপূর্ব ২০০ অব্দ থেকে ২০০ খৃস্টাব্দের মধ্যে উত্তর ভারতে মনু কর্তৃক সংকলিত হয়েছে। শাস্ত্রে অনেক মনুর উল্লেখ পাওয়া যায়। যেমন- প্রাচেতসেন মনু(মহাভারত), বৈবস্বত মনু প্রমূখ। বর্তমানে মনুসংহিতা বা মনুস্মৃতি নামে প্রচলিত যে গ্রন্থটি পাওয়া যায় তা মোট ১২ প্রকরণে বিভক্ত এবং ২৬৮৩ পঙ্ক্তি বা শ্লোক বিশিষ্ট সংকলন।
২। যাজ্ঞবল্ক্য বা যজ্ঞবল্ক্য স্মৃতিশাস্ত্র: খ্রিস্টীয় ৩য় শতাব্দী থেকে ৪র্থ শতাব্দীর মধ্যে যাজ্ঞবল্ক্য এ সংহিতা সংকলন করেন বলে এর নাম যাজ্ঞবল্ক্য বা যজ্ঞবল্ক্য স্মৃতিশাস্ত্র। এটি ৩টি পুস্তকের সমন্বয় গঠিত। যথা:আচারকান্ড,ব্যবহারকান্ড ও প্রায়শ্চিত্যকান্ড।
৩। নারদসংহিতা বা নারদস্মৃতি: নারদস্মৃতি হলো ধর্মশাস্ত্রের একটি অংশ। নারদস্মৃতিতে যেসব বিচারিক শ্লোক রয়েছে তা মূলত পদ্ধতিগত ও মূল আইনের উপর আলোকপাত করে।
এখানে বলে রাখা ভালো যে,স্মৃতি দুই প্রকার । তার একটি ধর্মসূত্র(গদ্যে রচিত) এবং অন্যটি হলো ধর্মশাস্ত্র (কবিতায় বা শ্লোক আকারে রচিত)। স্মৃতি দ্বারা নির্ধারিত নিয়মগুলোকে নিম্নলিখিত শ্রেণীতে বিন্যস্ত করা হয়ে থাকে:
আচার (এটি আচরণ ও নৈতিকতা সম্পর্কিত)
ব্যবহার (এটি বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য একজন রাজার অনুসরণ করা উচিত এমন মৌলিক নিয়ম সম্পর্কিত)
প্রায়শ্চিত্ত (কোনো অপরাধ সংঘটনের ক্ষেত্রে শাস্তির বিধান যা নিয়ে কাজ করে। তাই এটি শাস্তি তত্ত্ব নামেও পরিচিত।)
(iii) হিন্দু পুরাণ (Puranas)
শ্রুতি শাস্ত্রে যে সকল বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে সেই সকল বিষয়ে সাধারণ মানুষের বোধগম্য এর জন্য কাব্য আকারে যে সংকলন প্রতিষ্ঠা হয়েছে তাই মূলত হল পুরাণ। প্রধান পুরাণের সংখ্যা ১৮টি যাদেরকে একত্রে বলা হয় মহাপুরাণ(Mahapurana/Hinduism, the 18 Great Puranas of Hindu belief)। তাই Brian K. Smith বলেন, যেহেতু মহাভারতে রামায়ণের একটি সংক্ষিপ্ত সংস্করণ রয়েছে, তাই মহাভারত পঞ্চম বেদ হিসাবে বিবেচনা করা যায় ।
এলাহাবাদ হাইকোর্ট ১৮৮৬ সালের Ganga Sahai v. Lekhraj (9 All. 253 at page-289) মামলার পর্যবেক্ষণ বলা হয় যে,প্রাধান্যের ক্রমানুসারে শ্রুতি ও স্মৃতি মধ্যবর্তী সময়ে কিংবা সম্ভবত এই সময়ের পরে পুরাণগুলি(Puranas) এসেছে। [‘Somewhere in the order of precedence, either between the Srutis and the Smritis, or more probably after them, come the Puranas.’]
ছন্দে রচিত পৌরানিক কাহিনী নির্ভর পুরাণে বর্ণিত অনেক শ্লোকের(Shlok/Shloka) মাধ্যমে হিন্দু ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ বিধি বিধান বর্ণিত হয়েছে বলেই হিন্দু পুরাণ (Puranas) কে হিন্দু আইনের অন্যতম উৎস মনে করা হয় ।
(iv) সংহিতা, ব্যাখ্যা বা নিবন্ধ (Legal digest or commentaries or Nibandhas)
স্মৃতিশাস্ত্রগুলোর মধ্যে অর্থগত বিরোধের ফলে আইন বিশেজ্ঞগণ বিভিন্ন সময়ে যে সমস্ত আইনী ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ প্রদান করে যে সংকলন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাকে সংহিতা, ব্যাখ্যা বা নিবন্ধ (Legal digest or commentaries or Nibandhas) বলা হয় । এই সংহিতা, ব্যাখ্যা বা নিবন্ধ হিন্দু আইনের উৎস হিসেবে পরিগণিত হয়ে থাকে।
প্রাচীন কালে ঋষিগণের মুখের বাণীসমূহ লিখিত আকারে না থাকার ফলে ব্যাখ্যাকারগণ স্মৃতিশাস্ত্রকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আঞ্চলিক রীতি-নীতি দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার কারণে অর্থগত সাংঘর্ষিক হয়। যেমন হিন্দু আইনে সাধারনতঃ দুই শ্রেণীর নিবন্ধ- বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে জীমূত বাহন কর্তৃক সংকলিত ‘দায়ভাগ মতবাদ’ প্রচলিত রয়েছে। আবার, ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে বিজ্ঞানেশ্বর (Vigneshwar, যাজ্ঞবল্ক্য স্মৃতির ভাষ্যকার ) কর্তৃক সংকলিত ‘মিতাক্ষরা মতবাদ’ প্রচলিত রয়েছে ।
শ্রুতিশাস্ত্র বা স্মৃতিশাস্ত্রগুলোর মধ্যে মৌলিক কোন নীতির সাথে নিবন্ধ সাংঘর্ষিক হলে তা গ্রহনযোগ্য নয়। অর্থাৎ ব্যাখ্যা বা নিবন্ধের পরে স্মৃতির স্থান দেওয়া হয়ে থাকে ।
১৮৬৮ সালের Collector of Madras vs. Moottoo Ramalinga, 12 M.I.A. 397( Ramnaad Case) মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘পন্ডিত সম্প্রদায়ের বিশেষ কোন একটা মতবাদ সবচেয়ে প্রাচীন প্রামানিক সূত্র হতে গ্রহণ করা হয়েছে কিনা তা অনুসন্ধান করার এখতিয়ার আদালতের নেই। ভাষ্য বা ব্যাখ্যা আইন প্রণয়ন করে না। এটি শুধু ব্যাখ্যা করে এবং আইন গঠনের সহায়তাকারী প্রথাকে শক্তিশালী করে।’
এলাহাবাদ হাইকোর্ট ‘Kastoori Devi v. Chiranjit Lai ( A.I.R. 1960 All. 446)’ মামলায় এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে “There is a distinction between a law-giver and a commentator. A Code enunciated by the former has the force of law, but the opinion of a commentator, however valuable for elucidation of the Code, cannot override the law itself.”
(v) প্রথা (Customs)
মুসলিম আইনে যেমন প্রথা বা উ’রফ এর মাধ্যমে আইনের সৃষ্টি হয়েছে, তেমনিভাবে হিন্দু আইনেও প্রথার দ্বারা আইনের সৃষ্টি হয়েছে বলে প্রথা (Customs) কে উৎস হিসেবে গণ্য করা হয়। কোন নির্দিষ্ট সমাজ বা অঞ্চলে বা পরিবারে দীর্ঘদিন ধরে পালিত বা অনুসৃত তবে যুক্তিযুক্ত রীতি- নীতির নামই প্রথা (Customs) ।
এ প্রসঙ্গে Hurpurshad And Ors v. Sheo Dyal And Ors (1876, 3 I.A. 259) মামলায় প্রিভি কাউন্সিলের পর্যবেক্ষণ হলো,“প্রথা হলো এমন একটি নিয়ম যা একটি নির্দিষ্ট পরিবারে, বা একটি নির্দিষ্ট জাতি বা সম্প্রদায়ে বা একটি নির্দিষ্ট জেলায় দীর্ঘকাল ধরে প্রচলিত থাকার ফলে সেগুলো আইনের যোগ্যতা করেছে। এটি অবশ্যই প্রাচীন,সুনির্দিষ্ট ও যুক্তিযুক্ত হতে হবে”। [“A custom is a rule which, in a particular family, or a particular caste or community, or in a particular district, has from long usage obtained the force of law.It must be ancient, certain and reasonable”]
বৈধ প্রথার হিসেবে স্বীকৃত হতে হলে নিচে শর্ত/বৈশিষ্ট্যগুলো থাকতে হবে ( Essential Elements of Valid Custom)-
(i) প্রথাকে অবশ্যই প্রাচীন(Antiquity) হতে হবে;
(ii) এটি সর্ব সাধারণের সম্মতি দ্বারা গৃহীত হতে হবে;
(ii) প্রথাটি অবশ্যই নিশ্চিত, যুক্তিসংগত (certain and reasonable) ও স্পষ্ট হতে হবে;
(iii) প্রথা অবশ্যই যুক্তিসঙ্গত হবে তবে বিদ্যমান আইনে বা পাবলিক নীতির পরিপন্থী হবে না(Custom must be compulsory, and not in conflict with Statute Law, Even if it deviates from the common law); এবং
(iv) প্রথাটি অবশ্যই দীর্ঘকাল যাবত অবিচ্ছিন্ন(continuity) ও অভিন্নভাবে অনুসরণীয় এবং প্রমাণ (proof) সাপেক্ষ হতে হবে।
যা হোক, প্রথার গুরুত্ব তুলে ধরে নারদস্মৃতি (Naradasmriti)এর সংকলক নারদ (Narada or Narad Muni) বলেন, প্রথা শক্তিশালী হলে তা ঐশ্বরিক আইনকেও বাতিল করে।
তাই বলা হয়ে থাকে যে, ‘হিন্দু আইনে সুপ্রমাণিত প্রথা লিখিত ধর্ম শাস্ত্রগুলোর চেয়েও অধিক শক্তিশালী।’ বর্তমান সময়েও ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথাকে আইনের গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
(vi) ফ্যাক্টাম ভ্যালেট (Factum Valet)
ফ্যাক্টাম ভ্যালেট হলো একটি ল্যাটিন Maxim যার অর্থ ‘যে কাজ করা উচিত নয়, সেই কাজ যদি কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ করে থাকে তবে সেটিকে অবৈধ(Invalid Work) গণ্য হবে না । [‘Factum valet quod fieri non debuit’.Meaning- ‘what not to be done, become valid when done it already.’] এ নীতির প্রবর্তক স্মৃতিকার জীমূত বাহন, Jimut Bahan (আনু. ১০৫০-১১৫০)। এ নীতি মিতক্ষরা (Mitakshara) পন্থীগণ স্বীকার করে থাকে।
Gocoolanund Dass Vs Wooma Daee (1887 cal 3 C. 587) মামলায় এমন সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, একমাত্র পুত্রকে দত্তক নেওয়া কিংবা দেওয়া যাবে না- এটি একটি দিকনির্দেশক বিধি মাত্র। তবে এ অবস্থায়, কেউ যদি দত্তক গ্রহণ করে, তবে তা অবৈধ হয়ে যাবে এমন কথাও বলা হয়নি। মোটকথা, যে সকল বিষয়ে শুধুমাত্র শাস্ত্রীয় দিক নির্দেশনা (সুপারিশমূলক কাজ) রয়েছে কিন্তু আদেশমূলক (বাধ্যবাধকতামূলক) কাজের কার্যকারিতা নেই, এমন ক্ষেত্রে ফ্যাক্টাম ভ্যালেট প্রযোজ্য হয়ে থাকে। তবে অনেকেই মনে করেন যে,ফ্যাক্টাম ভ্যালেট হিন্দু আইনের উৎস হলেও এটি বরং দায়ভাগ (Dayabhaga, হিন্দুদের উত্তরাধিকার আইনের গ্রন্থ) আইনের একটি নীতি মাত্র।
হিন্দু আইনের ব্যবহারিক উৎস (Material Source) বা আধুনিক উৎস (Modern Sources)
ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসন দ্বারা হিন্দু আইন ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছে। হিন্দু আইনের ব্যবহারিক বা আধুনিক উৎসগুলো মূলত ব্রিটিশ শাসন আমলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।নিচে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
(i) বিধিবদ্ধ আইন (statutes)
হিন্দু আইনের আধুনিক উৎস হিসেবে আইনসভা(Legislature) কর্তৃক প্রণীত বিধিবদ্ধ আইন(statutes) বা অধ্যাদেশসমূহ আইনের পরিপূর্ণতা দান করেছে। পরিবর্তনশীল সমাজের প্রয়োজনে প্রচলিত আইন ও প্রথার অক্ষমতার অনেক বিষয়কে যুগোপযোগী করতে ভারতের বিধানসভায় বিভিন্ন সময়ে বিদ্যমান আইন সংশোধন করেছেন। একটা সময় ছিল যখন ভারতবর্ষে প্রাচীন ধর্মশাস্ত্র ও প্রথার উপর ভিত্তি করেই হিন্দুদের জীবনের সকল কর্মকান্ড পরিচালিত হতো। কিন্তু ইংরেজ শাসনামলে এসব কিছুর অনেক বিষয়ে বিশেষ পরিবর্তন সাধন করে । উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে যে,- হিন্দু শাস্ত্রীয় বিধান অনুযায়ী হিন্দু বিধবা পুনর্বিবাহ নিষিদ্ধ হলেও ইরেজরা হিন্দু বিধবা পুনর্বিবাহ আইন, ১৮৫৬ (Hindu Widows’ Remarriage Act, 1856) প্রণয়নের মাধ্যমে শাস্ত্রীয় বিধানকে বাতিল করে এবং এই ধরনের বিবাহকে আইন দ্বারা বৈধতা দিয়েছে। ভারতে ২০০৬ সালের পর উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী মেয়েরাও পিতার সম্পত্তিতে অংশীদার হয়েছে যা পূর্বে ছিল না। একইভাবে দত্তক নেওয়ার ক্ষেত্রেও সমাজের প্রয়োজন ও চাহিদার ভিত্তিতে নারীর অধিকারকে প্রাধান্য দিয়ে তা সংশোধন করা হয়েছে [এগুলো বাংলাদেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়]।
Leave a comment