‘আধুনিক হিন্দী কথাসাহিত্যে প্রেমচন্দ নবচেতনার জনক এবং সর্বপ্রথম তাঁর প্রতিভাস্পর্শেই হিন্দী উপন্যাস ও কাহিনীসাহিত্য আধুনিকতার সিদ্ধি অর্জন করেছিল।’—আলোচনা করো।
আধুনিক হিন্দী সাহিত্যে—বিশেষত কথাসাহিত্যে মুন্সী প্রেমচন্দ যথার্থই একজন যুগস্রষ্টা। হিন্দী সাহিত্য-আলোচকগণ প্রায় অবিতর্কিতভাবেই আধুনিক হিন্দী কথাসাহিত্যের জনক হিসাবে প্রেমচন্দের অসামান্য ভূমিকাকে স্বীকার করে নিয়েছেন।
হিন্দী কথাসাহিত্যের ইতিহাস অতি প্রাচীন না হলেও নিতান্ত অর্বাচীনও নয়। ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের আনুকূল্যেই হিন্দী গদ্য চর্চারও সূত্রপাত ঘটেছিল ঊনবিংশ শতকের সূচনায়। এরপর ব্যক্তিগত উদ্যোগেও হিন্দী গদ্যসাহিত্য ও হিন্দী কথাসাহিত্যের চর্চা শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু সে যুগের হিন্দী কথাসাহিত্য অধিকাংশই অনুবাদ-নির্ভর। আধুনিক উপন্যাসের গঠনশৈলী ও মর্মবাণী তখনও আত্মস্থ হয়নি বলেই উপন্যাসের সুচনা বিলম্বিত হয়েছে হিন্দী সাহিত্যে।
ভারতেন্দু-যুগে সাহিত্যের অন্যান্য শাখার মতো হিন্দী উপন্যাসেরও সূত্রপাত। ভারতেন্দুর অসম্পূর্ণ প্রচেষ্টা ছাড়া লালা শ্রীনিবাস দাস, বলদেব প্রসাদ মিশ্র, কিশোরীলাল গোস্বামী, ব্রজনন্দন সহায়, কৃষ্ণপ্রসাদ সিংহ অখোরী প্রমুখরাও ঐতিহাসিক, রোমান্টিক, কল্পনামূলক উপন্যাস লিখেছেন। এ ছাড়াও প্রেমচন্দের পূর্বে উপন্যাস বা কাহিনী রচনার প্রচেষ্টা করেছেন বালকৃয় ভট্ট. রাধাকৃয় দাস, জগন্নাথ মিশ্র, কাশীপ্রসাদ, দেবকীনন্দন ক্ষত্রী. গোপালরাম গমরী প্রমুখ। কিন্তু আধুনিক উপন্যাস যে আধুনিক যুগমৃত্তিকা ও যুগমানসের বাস্তব পরিচয় বহন করে, প্রেমচন্দপূর্ব উপন্যাসে তার যথেষ্ট অভাব ছিল। তা ছাড়া আধুনিক সাহিত্যের অন্যান্য শাখার মতো উপন্যাসও প্রত্যক্ষভাবে ইংরাজি সাহিত্যের প্রভাবপুষ্ট। অথচ, হিন্দী উপন্যাসগুলিতে দেখা দিত অতিকল্পনা ও অলৌকিকতার অবাস্তবতা, সংস্কৃত ও ফারসি রোমান্সের স্থূল ছায়া, চরিত্র নির্মাণে অক্ষমতা এবং বাস্তব সমাজচেতনা ও যাথার্থতার চূড়ান্ত অভাব। প্রেমচন্দের সাহিত্যের ভূমিকা প্রসঙ্গে জনৈক আলোচকের মন্তব্য “সে একটা সময় ছিল, যখন হিন্দী সাহিত্য যাদুবিদ্যা, আর ভোজবাজি, আর রূপকথা আর হাজার রগড়ের গোলক ধাঁধায় ঘুরপাক খেত, বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়াবার মতো কলজের জোর ছিল না তার।….এসব কাহিনী পড়লে মনে হত পৌরাণিক উপকথা, কথা-সরিৎসাগর বা আলিফলায়লার উপাখ্যানের পাত্র-পাত্রীরাই নামধাম বদলে নেমে এসেছে আর খামোকা স্বপ্নলোকে পায়চারী করে বেড়াচ্ছে।”
ঠিক এই পরিপ্রেক্ষিতেই প্রেমচন্দের ভূমিকাটি হিন্দী উপন্যাস ও কথাসাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ। কেননা প্রেমচন্দই প্রথম হিন্দী কথাসাহিত্যকে কল্পলোক থেকে ভারতীয় সমাজের বাস্তব পরিপ্রেক্ষিতের ওপর দৃঢ়ভাবে স্থাপন করলেন। তাঁর কাহিনীর বিষয়বস্তুতে প্রতিফলিত হল শোষণক্লিষ্ট, অত্যাচারিত, নিপীড়িত, ধর্ম-বর্ণভেদে লাঞ্ছিত জনসাধারণের জীবনসংগ্রাম; তাঁর চরিত্রগুলিও কল্পলোকের অধিবাসী হবার পরিবর্তে হয়ে উঠল আমাদের ভারতীয় সমাজের গ্রাম-নগরের পরিচিত জগতের বাসিন্দা। সর্বোপরি তাঁর সাহিত্যে বাস্তবজীবন বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গিতেই জীবন্ত হয়ে প্রতিফলিত হল—যা আধুনিক বাস্তবতার প্রধানতম লক্ষণ। সেই কারণেই প্রেমচন্দকেই হিন্দী কথাসাহিত্যে আধুনিকতার যথার্থ জনক হিসাবে চিহ্নিত করা হয় এবং বলা যেতে পারে তাঁর হাতেই হিন্দী উপন্যাস ও কাহিনীর যথার্থ সিদ্ধিও।
বারাণসীর নিকট লামাহি গ্রামে মুন্সী প্রেমচন্দের জন্ম ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে। তাঁর পারিবারিক নাম ছিল ধনপত রায়। শৈশবে অত্যন্ত দারিদ্র্যের মধ্যে তাঁর দিন অতিবাহিত হয়। পিতার মৃত্যুর পর প্রায় কৈশোর থেকেই তাঁকে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকুরি করতে হয়েছিল। সেইভাবেই তিনি ক্রমে বি.এ. পাশ করেন এবং পরিশ্রম, নিষ্ঠা ও অধ্যাবসায়ের গুণে চাকুরিক্ষেত্রে ডেপুটি সাব ইন্সপেক্টর অফ স্কুলস্ পদে পৌঁছান।
কৈশোরে উর্দু যাদুকাহিনী ও রোমাঞ্চকর রোমান্স পাঠের মধ্য দিয়ে তাঁর সাহিত্যপ্রীতির উন্মেষ। ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে তিনি তাঁর প্রথম উপন্যাস রচনা করেন উর্দু ভাষায়। রবীন্দ্রনাথের কয়েকটি গল্পের ইংরাজি অনুবাদ তাঁকে আকৃষ্ট করে ও সেগুলি উর্দুতে অনুবাদ করেন। দেশপ্রেমমূলক পাঁচটি উর্দুর্তে লেখা গল্প গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় ১৯০৮-তে। কিন্তু এই উর্দু গল্পসংকলনটি সরকারি কোপদৃষ্টিতে পড়ে ও নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। এরপর ১৯১০-এ তিনি সরকারি দৃষ্টি এড়ানোর জন্যই প্রথম ‘প্রেমচন্দ’ ছদ্মনামে ‘বড়ে ঘর কী বেটী’ শীর্ষক গল্প রচনা করেন।
এরপর গান্ধীজীর উদাত্ত ভাষণে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি সাহিত্য মাধ্যমে দেশসেবার কারণে চাকরিতে ইস্তফা দেন ও পুরোপুরি সাহিত্যসাধনায় আত্মনিয়োগ করেন। সমকালেই প্রেমচন্দ সাহিত্য রসিকদের কাছে প্রতিষ্ঠিত ও প্রগতিশীল কথাশিল্পী হিসাবে যথেষ্ট সম্মান অর্জন করতে পেরেছিলেন।
প্রেমচন্দের কথাসাহিত্য সাধনাকে দু’টি পর্যায়ে বিন্যস্ত করা যেতে পারে-(ক) ঔপন্যাসিক প্রেমচন্দ এবং (খ) গল্পকার প্রেমচন্দ। উভয়তই প্রেমচন্দ তাঁর উদার ব্যাপ্ত মানবিকতা, বাস্তববোধ, সমাজচেতনা ও প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় রেখেছেন।
প্রেমচন্দ দুই ধরনের উপন্যাস লিখেছেন— রাজনৈতিক এবং সামাজিক। তাঁর উপন্যাসের মধ্যে ব্যক্তিগত বা পারিবারিক সমস্যাও এসেছে সমষ্টিচেতনার সঙ্গে লগ্ন হয়েই। এবং কল্পলোক ও রোমান্টিকতার পরিবর্তে স্বদেশে, সমাজ, অর্থনীতির সমস্যা যন্ত্রণাকে তুলে ধরাই যেন তাঁর রচনার প্রধান উদ্দেশ্য।
প্রেমচন্দের প্রথম উপন্যাস ‘সেবাসদন’ ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়। মধ্যবিত্ত মানুষের বিড়ম্বনাময় জীবন, সমাজে গণিকা-সংক্রান্ত সমস্যা, স্ত্রীশিক্ষা, অসবর্ণ বিবাহ, পণপ্রথা ইত্যাদি বিষয়ে অসাধারণ দক্ষতায় জীবন্ত চিত্র রূপায়িত করেছেন প্রেমচন্দ এই উপন্যাসে।
প্রেমচন্দের ‘প্রেমাশ্রম’ ও ‘বরদান’ দুটি অন্যতম উপন্যাস। প্রেমাক্রম উপন্যাসে প্রেমচন্দ কৃষক সমাজের ওপর জমিদারী শোষণের নির্মমতা উপস্থাপিত করেছেন।
১৯২৫-এ প্রকাশিত ‘রঙ্গভূমি’ প্রেমচন্দের লেখা সর্ববৃহৎ উপন্যাস। ভারতীয় সাধারণের প্রতি ইংরাজ সরকার ও আমলা, দেশীয় রাজা ও জমিদারদের বিমাতৃসুলভ আচরণ, শোষণ, অত্যাচার, বঞ্চনার বিস্তৃত বিবরণ এই উপন্যাসে আছে। সেইসঙ্গে সত্যাগ্রহ আন্দোলন ও গান্ধীবাদী দর্শনের চিত্রণ ও প্রদর্শন এই উপন্যাসটিকে এক মহত্তর মাত্রা দান করেছে।
‘কায়াকল্প’ প্রেমচন্দের ভিন্ন স্বাদের একটি উপন্যাস। এখানে ভারতীয় সমাজ-সংস্কৃতির অন্যতর এক পরিচয় উদ্ঘাটিত। ভারতীয় যোগসাধনা ও জাদুবিদ্যা এই উপন্যাসের কেন্দ্রীয় বিষয়। পুনর্জন্ম, যোগসাধনার দ্বারা চিরযৌবন লাভের চেষ্টা, জাদু-সংক্রান্ত নানা ক্রিয়াচার ইত্যাদি চিত্রিত হয়েছে ‘কায়াকল্প’তে। তবে অবিতর্কিতভাবেই বলা যায় যে, এই উপন্যাসটি প্রেমচন্দের জীবনদৃষ্টি ও সমাজভাবনার পরিচয় বহন করে না। প্রেমচন্দের উপন্যাসধারায় ‘কায়াকল্প’ ব্যতিক্রমী।
১৯২৮-এ প্রকাশিত হয় ‘নির্মলা’ এবং ১৯২৯-এ ‘প্রতিজ্ঞা’ উপন্যাস। ভারতীয় সমাজের পণপ্রথা, অসবর্ণ বিবাহ, বালবিবাহ, বৃদ্ধকুলীনের সঙ্গে বিবাহ ইত্যাদি বিচিত্র দাম্পত্য-সংক্রান্ত সামাজিক সমস্যা এই উপন্যাস দুটিতে স্থান পেয়েছে।
১৯৩১-এ প্রকাশিত হয়েছিল প্রেমচন্দের আর এক অন্যতম উপন্যাস ‘গবন’। এই উপন্যাসটিকে বলা যেতে পারে সমস্যাপ্রধান উপন্যাস। লোভের কুপরিণাম এই উপন্যাসের প্রতিপাদ্য বলা যেতে পারে।
প্রেমচন্দের আর এক মহত্তর সৃষ্টি ‘কর্মভূমি’। এটিও রাজনৈতিক উপন্যাস। ভারতের স্বদেশি আন্দোলন, শোষণ ও দাসত্বের বিরুদ্ধে ভারতীয় জনমানসের ক্ষোভ ও প্রতিবাদ, ভারতীয় নারী-পুরুষের সম্মিলিত বিদ্রোহ ও আত্মবলিদানের পথে মুক্তির পথ সন্ধান এই উপন্যাসে বিবৃত।
প্রেমচন্দের ‘গোদান’ উপন্যাসের প্রকাশ হয় ১৯৩৬-এ। এটিই প্রেমচন্দের সর্বশ্রেষ্ঠ উপন্যাস হিসাবে স্বীকৃত। ‘গোদান’-এর নায়ক হোরি দুঃখের মধ্যে জন্ম নিয়ে দুঃখে লালিত এবং চূড়ান্ত দুঃখের মধ্যেই মৃত্যুমুখে পতিত হয়। সুখ নামক বস্তুটি আমৃত্যু তার কল্পনাতেই থেকে যায়। হোরির এই জীবনের দুঃখময়তাকেও প্রেমচন্দ হোরির ব্যক্তিগত জীবনসমস্যা হিসাবে দেখাননি। হোরি ভারতীয় নিম্নবিত্ত মানুষেরই প্রতিনিধিত্ব করেছে এই উপন্যাসে। হোরির জীবন-রূপায়ণের মধ্য দিয়ে প্রেমচন্দ কৃষক সমাজের দারিদ্র্য-লাঞ্ছনা-বঞ্চনার কথাকেই তুলে ধরেছেন। এ ছাড়াও সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির চরিত্র উপস্থিত হয়ে বহুকৌণিক এই সমাজের বিস্তৃত রূপকে স্পষ্ট করেছে। জমিদার, উকিল, অধ্যাপক, ব্যবসায়ী, মধ্যবিত্ত চাকুরিজীবী, গৃহবধূ ইত্যাদি বিচিত্র চরিত্র জীবন্তভাবে চিত্রিত হয়েছে ‘গোদান’-এ। বিষয়ের জীবন্ত রূপায়ণে, ব্যাপ্তিতে, অভিজ্ঞতার নিবিড়তায় অনুভবের গভীরতায়, চরিত্রের বিশ্বাসযোগ্যতায় ও সজীবতায়, ‘গোদান’ নিঃসন্দেহে প্রেমচন্দের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস এবং সমগ্র হিন্দী কথাসাহিত্যেই এক উল্লেখযোগ্য শ্রেষ্ঠ সম্পদ।
উপন্যাসের মতো গল্প রচনার ক্ষেত্রেও প্রেমচন্দ আধুনিক হিন্দী সাহিত্যের যুগপ্রবর্তক ও আজও পর্যন্ত প্রথম সারির সাহিত্যিক। তবে সর্বদা তাঁর গল্পগুলিকে ‘ছোটগল্প’ বলা যাবে কিনা, সে বিষয়ে সংশয় থেকে যায়। কেননা বহু গল্পই দৈর্ঘ্যে প্রায় উপন্যাসিকার মতো। তবু গল্পের মধ্যেও বিষয়ের ব্যাপ্তি ও বাস্তব জীবনচিত্রণ অসাধারণ।
বহু ধরনের গল্প রচনা করেছেন প্রেমচন্দ। রাজনৈতিক ও সামাজিক উপন্যাসের মতো রাজনীতি বিষয়ক ও সামাজিক বিষয়ভিত্তিক গল্প তো আছেই। এ ছাড়াও রয়েছে তাঁর ইতিহাসভিত্তিক গল্প, মনোবিজ্ঞাননির্ভর গল্প, ঘটনাপ্রধান গল্প, চরিত্রপ্রধান গল্প প্রভৃতি। তবে প্রতিটি গল্পেই বাস্তবতা, ভাষাসারল্য ও সহজ বিবরণ তাঁর গল্পকে অনেক বেশি সজীবতা ও গ্রহণযোগ্যতা দান করেছে।
জীবনের প্রথম গল্পটি প্রেমচন্দ লিখেছিলেন উপন্যাসের মতোই উর্দুতে। ১৯০৭-এ তাঁর প্রথম গল্প উর্দুতে লেখা ‘সনসার কা সবসে অনমোল রতন’। স্বদেশপ্রেমমূলক পাঁচটি গল্প নিয়ে সংকলন গ্রন্থও প্রকাশিত হয়েছিল। উর্দুভাষাতেই। ১৯১০-এ প্রকাশিত হয় প্রেমচন্দের গল্প ‘বড়ে ঘর কী বেটী’।
প্রেমচন্দের রচিত গল্পের সংখ্যা প্রায় আড়াইশ’। ‘মানসরোবর’ নামক ৮টি খণ্ডে প্রকাশিত গ্রন্থে এই গল্পগুলি সংকলিত। এ ছাড়াও রয়েছে তাঁর গল্পসংকলন গ্রন্থ ‘প্রেমদ্বাদশী’, ‘প্রেম পচিশী’, ‘প্রেম-পূর্ণিমা’, ‘প্রেম-প্রসূন’, ‘সপ্তসরোজ’, ‘নবনিধি’ ইত্যাদি।
তাঁর কিছু বিখ্যাত ছোটগল্প বা গল্প ‘পঞ্চপরমেশ্বর’, ‘আত্মারাম’, ‘বড়ে ঘর কী বেটী’, ‘শতর কী খিলাড়ী’, ‘বজ্রপাত’, ‘ঈদগাহ’, ‘অগ্নিসমাধি’, ‘কফন’ ইত্যাদি।
উপন্যাসের মতো ছোটগল্পের ক্ষেত্রেও ভারতীয় সমাজের বিশেষত গ্রামীণ জীবনের বহুবিধ সমস্যা ও যন্ত্রণাকে বিস্তৃত ও জীবন্তভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন প্রেমচন্দ। ছোটগল্পের ক্ষেত্রে বরং প্রেমচন্দের সৃষ্টি আরও প্রখর, ইঙ্গিতবাহী এবং বহুমুখী সমস্যাক্ষেত্রে আলোকসঞ্ঝারী।
গ্রামীণ জীবনের দারিদ্র্য, শোষণ, কুসংস্কার, যন্ত্রণা, কৃষিজীবী বা শ্রমজীবী মানুষের প্রতি তীব্র সহানুভূতিসিক্ত জীবনের সার্বিক রূপায়ণে প্রেমচন্দের গল্প ও উপন্যাস বাংলা সাহিত্যের শরৎচন্দ্রকে স্মরণ করায় অবশ্যম্ভাবীভাবে। সাহিত্যের আলোচকগণ তাই অনেকক্ষেত্রেই শরৎচন্দ্রের সঙ্গে প্রেমচন্দের প্রতিতুলনায় আগ্রহী হন।
আচার্য হাজারীপ্রসাদ প্রেমচন্দের সাহিত্য প্রতিভা সম্পর্কে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে তাই বলেন—“প্রেমচন্দ একটি শতাব্দীর ভারতীয় নিপীড়িত, অপমানিত, উপেক্ষিত মানুষের কৃষিজীবী মানুষের কণ্ঠকে ভাষা দিয়েছেন; প্রতি পদে শৃঙ্খলিত, লাঞ্ছিত, অসহায় নারী জাতির মহিমা ও হৃদয়গত মহত্ত্বকে রূপ দিয়েছেন সহানুভূতির সঙ্গে। উত্তর ভারতের সমস্ত জনতার আচার-বিচার, ভাষা-ভাব, আশা-আকাঙ্ক্ষা, দুঃখ-সুখকে বুঝতে চাইলে, তার উত্তম পরিচয় পাওয়া যাবে প্রেমচন্দের সাহিত্যে।”
Leave a comment