কবি নজরুল তাঁর ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতায় লক্ষ করেছেন ঔপনিবেশিক শােষণের নির্মম পেষণে দিশেহারা জাতিকে। দেখেছেন কীভাবে ইংরেজের কারাগারে সত্যকে বন্দি করে রাখা হয়। ব্রিটিশদের অত্যাচার কীভাবে স্বাধীনতার কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করে দিতে চায়। অথচ এরই মধ্যে দেশের মুক্তিসাধনার বেশ কিছু নিদর্শনও কবির চোখে ধরা পড়ে। স্বাধীনতার স্বপ্নে বিভাের কবির মনে তাই প্রশ্ন জাগে- ‘মুক্ত কি আজ বন্দিনী বাণী?/ ধ্বংস হল কি রক্ষ-পুর?’ কিন্তু একইসঙ্গে কবি এও জানেন যে, স্বাধীনতার লক্ষ্য পূরণ হওয়া খুব একটা সহজসাধ্য কাজ নয়। আত্মদানের মধ্য দিয়েই সে পথের সৃষ্টি হয়। কিন্তু বিপ্লবের নামে শৌখিন দেশপ্রেমের বিস্তারকেও কবি একইসঙ্গে লক্ষ করেছেন। স্বার্থত্যাগ আর আত্মনিবেদনের মানসিকতাহীন এই দেশপ্রেমের হুজুগকে কবি পছন্দ করেননি। এই তাৎপর্যেই কবি উদ্ধৃত মন্তব্যটি করেছেন। এখানে শৌখিন পূজারি বলতে কবি সখের আন্দোলনকারীদের বুঝিয়েছেন। স্বাধীনতা আন্দোলনের নামে সমাজে ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠা অর্জন এবং নিজের আখের গােছানােই এই সখের আন্দোলনকারীদের একমাত্র লক্ষ্য। কবি বলতে চেয়েছেন, এই নরম-মনােভাবাপন্ন বিলাসী আন্দোলন কখনােই ভারতবর্ষকে তার কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা এনে দিতে পারবে না।

নজরুল তাঁর দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতায় ইংরেজশাসিত ভারতবর্ষে প্রত্যক্ষ করেছেন অস্ত্রের সাহায্যে কীভাবে স্বাধীনতার কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করে দেওয়া হয়। প্রতিবাদী বিপ্লবী প্রাণকে বন্দি করে রাখা হয় কারাগারের আড়ালে। বন্দি স্বদেশের মুক্তি আর শােষণ ব্যবস্থার অবসানের সেই উত্তেজনাই ধরা পড়েছে প্রশ্নোধৃত অংশে।

আলােচ্য পক্তিতে দুটি শব্দবন্ধ আলাদা করে লক্ষ করার মতাে। একটি হল বন্দিনী বাণী, অন্যটি রক্ষ-পুর। বাণী বলতে এখানে ভারতবাসীর স্বাধীনতার সংগত দাবিকে বােঝানাে হয়েছে। কিন্তু ব্রিটিশ শাসকরা এর জন্য দেশপ্রেমিকদের অপরাধী সাব্যস্ত করে আন্দামানে দ্বীপান্তরে পাঠিয়ে দেয়। দেশবাসীকে ভয় দেখিয়ে তাদের প্রতিবাদ বা আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দেওয়াই ছিল সেইসময় ইংরেজদের একমাত্র লক্ষ্য। যেনতেনপ্রকারেণ তারা নীরব করে দিতে চেয়েছিল স্বাধীনতার বাণীকে। আর এই বাণী উচ্চারণ করতে গিয়েই অনেক স্বদেশপ্রেমিককে শাস্তিস্বরূপ দ্বীপান্তরে পাঠিয়ে দেওয়ায় সেই বাণী হয়ে উঠেছে বন্দিনী বাণী। রামায়ণে দেখা যায়, রাবণ যেমন সীতাকে সমুদ্র পেরিয়ে লঙ্কার অশােকবনে বন্দি করে রেখেছিল, ব্রিটিশরাও অনুরূপে ভারতীয় স্বাধীনতা-সংগ্রামীদের সমুদ্র পেরিয়ে আন্দামানে আটক করে রেখেছিল। অর্থাৎ এই কবিতায় ব্রিটিশরা অত্যাচারী রাবণের সঙ্গে তুলনীয় হয়েছে, আর তাদের শাসনব্যবস্থা তুলনীয় হয়েছে। ‘রক্ষ-পুর’এর সঙ্গে।

ফণী-মনসা কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতায় কবি নজরুল ইসলামের কবিচেতনায় ‘আন্দামান হয়ে উঠেছে ইংরেজের শােষণ-অত্যাচারের প্রতীক। দেশের স্বাধীনতার জন্য উন্মুখ এবং সংগ্রামরত মানুষদের ওপরে ইংরেজের যে অত্যাচার নেমে এসেছিল, আন্দামান এই কবিতায় সম্ভবত তারই প্রতীক। কারণ সেকালের আন্দামানই ছিল রাজদ্রোহী বিপ্লবীদের নির্বাসন ক্ষেত্র। ইংরেজ শাসন যেন এক রুপাের কাঠি যা দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতাকে বিবশ করে দেয়। পদ্মরূপ স্বাধীনতার পাপড়ি শতছিন্ন হয়ে যায় ইংরেজদের অস্ত্রের আঘাতে। শস্ত্রপাণি’ বলতে এই কবিতায় ব্রিটিশের পুলিশ প্রশাসনকে বােঝানাে হয়েছে। সাম্রাজ্যবাদী শােষণের এই নগ্ন চরিত্রই প্রশ্নোধৃত অংশে তুলে ধরা হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে কবি প্রত্যাশা করেছেন বন্দিনী বাণী মুক্ত হােক। বাণী বলতে কবি এখানে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পক্ষে দেশবাসীর সমবেত কণ্ঠস্বরকে বুঝিয়েছেন। ইংরেজদের রাক্ষসপুরী ধ্বংস হল কি না তার জন্য কবি উদগ্রীব হয়ে উঠেছেন। কারণ তৎকালীন কংগ্রেসের আবেদন-নিবেদন নীতির প্রতি নজরুলের বিন্দুমাত্র আস্থা ছিল না। এতে রক্তস্নাত ভারতবর্ষ যে কিছুতেই শুভ্র হতে পারবে না—তা তিনি বুঝেছিলেন। যদিও রক্ত্নাত সমাজে শান্তি এবং শুচিতার শুভ্রতা প্রত্যাশা করেছেন কবি। কবি দেখতে চেয়েছেন মুক্ত ভারতী অর্থাৎ স্বাধীন স্বদেশভূমিকে।

‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতায় কবি নজরুল পরাধীনতা ও সাম্রাজ্যবাদী শােষণের প্রেক্ষাপটে স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের পক্ষে সরব হয়েছেন। ব্রিটিশ শাসনতন্ত্র চেয়েছিল দেশবাসীর মনে ভীতির সঞ্চার করে ভারতবর্ষে তাদের শােষণের সাম্রাজ্য অটুট রাখতে। দ্বীপান্তরের নির্বাসন কিংবা অত্যাচারের নির্মমতা ছিল সেই বাণীর কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করে দেওয়ারই প্রয়াস। এমনকি বিচারব্যবস্থাও তখন ছিল ন্যায়বিচারের বিপক্ষে। যারা ন্যায় এবং সত্যের পক্ষে দাঁড়িয়েছে, তাদেরই উলটে ‘বিদ্রোহী’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে ব্রিটিশ শাসনে। অর্থাৎ, আইনের অপপ্রয়ােগের মাধ্যমেও তারা সচেষ্ট হয়েছিল তাদের শােষণের রাজত্ব কায়েম করে রাখতে। ব্রিটিশ শাসনের এরূপ অত্যাচারী স্বরূপকে বােঝানাের জন্যই আলােচ্য মন্তব্যটি করা হয়েছে।

বিদ্রোহের অগ্নি-অক্ষরেই নজরুলের কাব্যসাধনা। কিন্তু প্রত্যক্ষ বিদ্রোহের বদলে নজরুল এই কবিতায় এক ধরনের কাব্যিক আড়াল তৈরি করেছেন। শােষণ-অত্যাচারের ভরকেন্দ্র হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন ‘আন্দামান-কে। সাম্রাজ্যবাদী শাসকের নাম একবারও উচ্চারণ না করে অত্যাচার, শােষণের নির্মমতাকে ফুটিয়ে তুলেছেন কবি। কিন্তু সব কিছুর মধ্যে দিয়েই স্পষ্ট হয়েছে মুক্ত ভারতী র অর্থাৎ স্বাধীন স্বদেশের জন্য কবির তীব্র আকুলতা। কবি যুগান্তরের ধর্মরাজ’-এর আবির্ভাবের অপেক্ষা করেছেন। তার জন্যই পাঞ্জন্য শাঁখ বাজাতে বলেছেন। পরিবর্তনের প্রত্যয়েই বিশিষ্ট হয়ে উঠেছে ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতায় নজরুলের স্বদেশচেতনা।

‘বাড়ির কাছে আরশীনগর’—লালনের এই গানটির মূল বক্তব্য ও তার রূপক অর্থ সংক্ষেপে আলােচনা করাে।

‘বাড়ির কাছে আরশীনগর’ গানে বাউলতত্ত্ব কীভাবে প্রতিফলিত হয়েছে তা আলােচনা করাে।

‘বাড়ির কাছে আরশীনগর’-এই রচনাটিতে লালনের কবিপ্রতিভার যে পরিচয় পাওয়া যায় তার মূল্যায়ন করাে।

“আমার বাড়ির কাছে আরশিনগর/ও এক পড়শী বসত করে” -মন্তব্যটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করে, কবির সঙ্গে তাঁর পড়শির কাছাকাছি থাকা সত্ত্বেও ‘লক্ষ যােজন ফাক’-এর কারণ বিশ্লেষণ করাে।

“গ্রাম বেড়িয়ে অগাধ পানি / ও তার নাই কিনারা নাই তরণী পারে” -মন্তব্যটির তাৎপর্যের আলােকে এই অগাধ পানি’কে কীভাবে অতিক্রম করা সম্ভব তা আলােচনা করাে।

“বাড়ির কাছে আরশিনগর/ও এক পড়শী বসত করে” -আরশিনগরে থাকা পড়শির পরিচয় দাও। কবির সঙ্গে এই পড়শির সম্পর্ক আলােচনা করাে।

“..ক্ষণেক থাকে শূন্যের উপর/ ক্ষণেক ভাসে নীরে।” -প্রসঙ্গ উল্লেখ করাে। এই মন্তব্যের আলােকে কবির মানসিকতা বিশ্লেষণ করাে।

“পড়শী যদি আমায় ছুঁত / আমার যম-যাতনা সকল যেত দূরে।” -মন্তব্যটির তাৎপর্য আলােচনা করাে।

“নাই কিনারা নাই তরণী পারে”- মন্তব্যটির প্রকৃত অর্থ বিশ্লেষণ করাে। সেখানে যাওয়ার অন্য কোন্ পথের কথা কবি উল্লেখ করেছেন?

“হস্ত-পদ-স্কন্ধ-মাথা নাই রে”—মন্তব্যটির তাৎপর্য আলােচনা করাে। এরকম পড়শী কবিকে স্পর্শ করলে কী হত?

“সে আর লালন একখানে রয় / তবু লক্ষ যােজন ফাঁক রে।”— একখানে থাকার তাৎপর্য কী?

“তবু লক্ষ যােজন ফাক রে” -লক্ষ যােজন ফাক বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?

বাউল তত্ত্ব ভাবনার উৎপত্তি কীভাবে হয়েছে লেখাে।

বাউল সাধক লালন ফকির কীভাবে চিত্ত পরিশুদ্ধির কথা বলেছেন?

‘বাড়ির কাছে আরশীনগর’ ‘বাড়ির কাছে আরশীনগর’ বলতে কী বােঝানাে হয়েছে?

লালনের মতে যম-যাতনা কীভাবে দূর করা যেতে পারে?

‘বাড়ির কাছে আরশীনগর’ কবিতায় বর্ণিত ‘পড়শী’-র স্বরূপ বর্ণনা করাে।

পাঠ্য লালন-গীতিতে বাউল সাধনার যে গুহ্যতত্ত্ব প্রকাশিত হয়েছে তা সংক্ষেপে লেখাে।

“আমি বাঞ্ছা করি দেখব তারি” -কবি কী বা করছেন এবং কেন?

“আমি বাঞ্ছা করি দেখব তারি” -বক্তা কাকে দেখতে চান? কিভাবে তার দর্শন পাওয়া যাবে?

“ও সে ক্ষণেক থাকে শূন্যের উপর/আবার ক্ষণেক ভাসে নীরে।” -কার কথা বলা হয়েছে? মন্তব্যটির তাৎপর্য আলােচনা করাে।

“..এক পড়শী বসত করে।” -পড়শী বলতে কবি কাকে বুঝিয়েছেন? বক্তা তার পড়শীকে দেখতে পাচ্ছেন না কেন তা কবিতা অবলম্বনে আলােচনা করাে।

“আমার বাড়ির কাছে আরশীনগর” -কার বাড়ি? আরশীনগর কথাটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করাে।

‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতায় কবির যে স্বদেশপ্রেমের প্রকাশ ঘটেছে তা আলােচনা করাে।

দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতায় সাম্রাজ্যবাদী শাসকের যে বর্ণনা কবি দিয়েছেন তা নিজের ভাষায় লেখাে।

দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতায় কবির রচনাশৈলীর অভিনবত্ব আলােচনা করাে।

“কামান গােলার সীসা-স্তৃপে কি / উঠেছে বাণীর শিশ মহল?” -কবির এই মন্তব্যের তাৎপর্য বিচার করাে।