হায়েজ কি – হায়েজ অবস্থায় নামাজ – কোরআন পড়ার বিধান আমাদের সবার জানা উচিত।
হায়েজ হলো প্রকৃতির নিয়মে রক্তপাত হওয়া। তাই আমাদের হায়েজ কি – হায়েজ
অবস্থায় নামাজ – কোরআন পড়ার বিধান সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান প্রয়োজন।
একটি মেয়ের ৯ বছর বয়স হলে হায়েজ হতে পারে এটা আল্লাহ প্রদত্ত প্রাকৃতিক
নিয়ম।হায়েজ কি – হায়েজ অবস্থায় নামাজ – কোরআন পড়ার বিধান সম্পর্কে নিচে
বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
পোস্ট সূচীপত্রঃহায়েজ কি – হায়েজ অবস্থায় নামাজ – কোরআন পড়ার বিধান
হায়েজ কি
শরীয়তের ভাষায় হায়েজ হলো প্রাকৃতিক রক্ত যা কোন বাহ্যিক কারণ ছাড়াই মেয়েদের
যোনিপথ দিয়ে নির্গত হয়। হায়েজের আভিধানিক অর্থ হলো প্রবাহিত হওয়া বা কোন বস্তু
নির্গত হওয়া। হায়েজ হলো মেয়েদের প্রাকৃতিক রক্ত। এই রক্তের সাথে পড়ে যাওয়া,
অসুস্থতা, আঘাত লাগা বা প্রসাবের কোন সম্পর্ক নেই। একে আবার ঋতুস্রাব, মাসিক,
হায়েজ বা পিরিয়ড ও বলা হয়। তবে পরিবেশ পরিস্থিতির বিভিন্নতার কারণে এটি নানা
রকম হয়ে থাকে। যখন ঋতুস্রাব শুরু হয় তখন মেয়েদের মধ্যে বেশ পার্থক্য পরিলক্ষিত
হয়।
হায়েজ শুরু ও শেষ হওয়ার বয়স
যখন কোন মেয়ের হায়েজ শুরু হয় তখন তাকে প্রাপ্ত বয়স হয়েছে বলে মনে করা হয়।
সাধারণত এটি মেয়েদের নয় (o৯)বছর বয়স হলে তার হায়েজ হতে পারে। তবে শারীরিক
গঠনের কারণে এক বছর দেরিতে বা (১০) বছর বয়সেও হায়েজ হতে পারে তবে নয় বছরের আগে
এ রক্ত দেখা দেয় না যদিও দেখা দেয় তাহলে তাকে হায়েজ বলে গণ্য করা যাবে না
একে বলা হয় এসকে হাজা বা অসুস্থতার রক্ত তেমনি একটি মেয়ের বয়স ৫৫ বছর হলে আর
তার হায়েজ হবে না
এরপরেও যদি কারো রক্ত দেখা দেয় এবং রক্তের রং যদি লাল হয় তাহলে তাকে
হায়েজ বলে গণ্য করা হয় কিন্তু রং যদি লাল না হয়ে হলুদ বা ধূসর মাটির মতো
হয় তাহলে তাকে হায়েজ না বলে গণ্য হবে
হায়েজ কত দিন থাকে
মেয়েদের শারীরিক গঠনের ওপর নির্ভর করে হায়েজ কম দিন বা বেশিদিন থাকতে পারে। তবে
সময় সেবা সর্বনিম্ন হলো তিন দিন এবং তিন রাত এবং সর্বোচ্চ সময় হলো ১০ দিন ১০
রাত এই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যদি রক্ত একাধারে না থাকে না থেকে থেমে থেমে আসে
তাহলেও তা হায়েস বলে গণ্য হবে তবে দশ দিন দশ রাত অতিক্রম হয়ে গেলে তা আর
হায়েজ বলে গণ্য হবে না তখন তা এসকে হাজা বা অসচতা বলে ধরে নিতে হবে
(তুহফায়ে খাওয়াতেন)।
হায়েজ অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজ
হায়েজ অবস্থায় কিছু কাজ করার ব্যাপারে ইসলামে নিষেধাজ্ঞা আছে। যেমন – হায়েজ
গ্রস্ত মহিলা বা স্ত্রীর সাথে মিলন করা হারাম। এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনের সূরা
বাকারা ২২২ নং আয়াতে মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন, “আর আপনার কাছে জিজ্ঞেস করে হায়েজ
সম্পর্কে বলে দেন, এটা অনুচিত বা অপবিত্র কাজ।
তোমরা হায়েজ অবস্থায় স্ত্রী মিলন থেকে বিরত থাকো যতক্ষণ না তার পবিত্র হয়ে
যায় ততক্ষণ তোমরা তাদের নিকটবর্তী হয়ো না। যখন উত্তমরূপে পরিশুদ্ধ হয়ে যায়
তখন গমন করো তাদের কাছে যেভাবে আল্লাহ হুকুম দিয়েছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারী
এবং যারা অপবিত্র থেকে বেঁচে থাকে তাদের পছন্দ করেন”।
আরো পড়ুনঃ রোজা – শাওম কি – রোজার গুরুত্ব ও ফজিলত জানুন
হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত ! রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাই সালাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোন ঋতুবর্তির সঙ্গে মিলিত হয় কিংবা কোন মহিলার
পশ্চাৎদ্বারে সঙ্গম করে অথবা কোন গণকের নিকটে যায়, নিশ্চয় সে মোহাম্মাদের
উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তা অস্বীকার করে”। (তিরমিজি হাদিস নং ১৩৫, সুনানে ইবনে
মাজাহ হাদিস নং ৬৩৯, মোশনাদে আহমদ হাদিস নং ৯২ ৯০)।
সূরা ওয়াকিয়ার ৭৯ নং আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেন, “অর্থাৎ যারা পাক পবিত্র তারা
ব্যতীত অন্য কেউ একে অর্থাৎ কোরআনকে স্পর্শ করবে না”।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম বলেছিলেন, “হজ্জ সম্পাদনকারী
একজন ব্যক্তি যা করে তুমিও তা করতে থাকো, তবে পবিত্রতা অর্জন পর্যন্ত পবিত্র
কাবার তাওয়াফ থেকে বিরত থাকবে”। (বুখারী ও মুসলিম)।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “কোন ঋতুবর্তী এবং নাপাক ব্যক্তির
জন্য যার উপর গোসল ফরজ মসজিদে অবস্থান করা আমি বৈধ করিনি”। (আবু দাউদ)। তবে মসজিদ
থেকে কোন জিনিস নেয়ার দরকার থাকলে তা নিতে পারবে”।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা আয়েশা রাযিআল্লাহু আনহাকে বললেন,
মসজিদ থেকে আমার চাদরটি এনে দাও, তিনি বলেন আমি তো ঋতুবর্তি। রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমার হাতে তো হায়েজ নেই” (মুসলিম শরীফ)।
উপরোক্ত বিষয়গুলো থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, হায়েজ অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করা
অনুচিত যতখন স্ত্রী হায়েজ মুক্ত হয়ে পবিত্র না হয় ততক্ষণ স্ত্রী সহবাস
করা যাবে না।হায়েজ থেকে মুক্ত হয়ে গোসল করে পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত
স্ত্রী মিলন করা হারাম। বর্তমানে চিকিতসা বিজ্ঞানের মতে হায়েজ অবস্থায় মেয়েদের
জরায়ু থেকে যে রক্তচাপ আসে তাতে বিষাক্ত কিছু যৌগ বের হয়। তাই মাসিক অবস্থায়
সহবাস করলে স্বামীদের গেনোরিয়া, শিফিলিশ, লিঙ্গ বিকৃতি ও লিঙ্গ ছোট হয়ে যেতে
পারে।
আরো পড়ুনঃ শবে বরাত কত তারিখ ২০২৩ – শবে বরাত কি বিদাত জানুন
মাসিকের সময় মেয়েদের কোন ডিম্বানু থাকে না রক্তচাপের সাথে ডিম্বাণু বের হয়ে
যায়। তবে কখনো কখনো মাসিকের সময় ডিম্বাণু তৈরি হয় যার কারণে মাসিকের সময়
সহবাস করলে সন্তান হবে না বলে যারা ধারণা করেন তাদের ধারণা একেবারে ঠিক
নয়।হায়েজ রত একটি মেয়ে শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকে, পেটে অসহ্য ব্যথা থাকে,
মাথাব্যথা হয়, বমি বমি ভাব হয় বা কখনো কখনো বমি হতে পারে। তাই হায়েজ অবস্থায়
সহবাস করলে একটি মেয়ের অনেক শারীরিক কষ্ট হয়।
এছাড়াও হায়েজ অবস্থায় যে কাজগুলো নিষিদ্ধ তা হল-
- হায়েজ গ্রস্ত অবস্থায় নামাজ আদায় করা যাবে না এবং এর কাজা আদায় করতে হবে
না। - হায়েজ অবস্থায় রোজা করা যাবে না তবে এর কাজ আদায় করতে হবে।
- হয়েজ অবস্থায় কোরআন স্পর্শ করা হারাম এমনকি উচ্চারণ করা ও ঠিক নয়।
- হায়েজ শেষ হয়েছে কিন্তু ফরজ গোসল করেনি এমন অবস্থায় সহবাস করা না জায়েজ।
- তিন ৩ দিনের কম বা ১০ দিনের বেশি হলে এটা এস্তেহাজা অবস্থায় করতে হবে
- কাবা ঘর তাওয়াফ করা যাবে না তবে হজের অন্যান্য কাজ করা যাবে।
তবে কেউ যদি ভুল করে না জেনে অনিচ্ছাকৃতভাবে স্বামী বা স্ত্রী সহবাস করে তাহলে
তার গুনাহ হবে না। তবে যদি ইচ্ছা করে করে তাহলে তাকে কাফফারা দিতে হবে। আর
কাফফারার পরিমাণ হলো এক ১ দিনার বা অর্ধ দিনার। স্বামী যে কোন একটি দিতে
পারবে আবার অনেক ওলামাদের মতে হায়েজ এর প্রথম দিকে সহবাস করলে এক দিনার এবং
শেষের দিকে সহবাস করলে অর্ধ দিনার কাফফারা দিতে হবে। (কিতাবুল কাবার পৃষ্ঠাঃ
৫৫)
হায়েজ অবস্থায় সহবাস করলে যে ক্ষতি হতে পারে তা হল-
- মিলনের সময় এবং পরবর্তী সময় প্রচন্ড ব্যথা হতে পারে
- রক্তপাত তুলনামূলকভাবে বেশি হতে পারে
- মাসিকের সময় জরায়ু ও যনি মুখের অম্ল ভাব থাকে না তাই এটি খুব সহজে জীবাণু
দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। - পুরুষের লিঙ্গে রক্ত লেগে অরুচি ভাব হতে পারে।
- পুরুষের লিঙ্গে কোন রোগ থাকলে তা নারীর যোনিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
- হায়েজের সময় নারীদের রক্তের সাথে একটি যৌগ পদার্থ বের হয় যা পুরুষের রোগের
কারণ হতে পারে। - নারীদের জরায়ুর মুখ ঘুরে যেতে পারে যা পরবর্তীতে সমস্যা সৃষ্টি হতে
পারে।
হায়েজ অবস্থায় আয়তুল কুরসি পড়া যাবে
আয়াতুল কুরসি হায়েজ অবস্থায় পড়া জায়েজ আছে। তবে আয়াতুল কুরসি কোরআন পাঠের
উদ্দেশ্যে করা যাবেনা। দোয়া – দরুদ হিসাবে পাঠ করা যাবে।
হায়েজ অবস্থায় কোরআন পড়ার বিধান
হায়েজ রত অবস্থায় কোরআন স্পর্শ করা এবং তিলাওয়াত করা যাবে না। হায়েজ নেফাস
অবস্থায় কোরআনে কারীম তেলাওয়াত করা মুখস্ত হোক বা দেখে হোক জায়েজ নয়।
কোন মেয়ের হেফজ বা কোরআন মুখস্ত করা অবস্থায় হায়েজ হয়ে গেলে এবং মুখস্ত করার
জন্য কোরআন তেলাওয়াতের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে বা কোন হাফেজ মেয়ের হায়েজ
অবস্থায় কোরআন হেফসের কোন তেলাওয়াত অব্যাহত রাখতে চাইলে মনে মনে তেলাওয়াত করবে
মুখে উচ্চারণ করবে না।
হায়েজে যে রক্ত ১০ দিন পার হয়ে গেলে তাকে ইস্তেহাজা বলা হয়। ইস্তেহাজার
অবস্থায় নারীরা কোরআন শরীফ তেলাওয়াত বা স্পর্শ করতে পারবে।
হায়েজ গ্রস্থ নারী বাচ্চাদের কোরআন শরীফ বানান করে শিক্ষা দিতে পারবে। তবে রিডিং
পড়ানো সময় এক নিঃশ্বাসে পূর্ণ এক আয়াত পড়তে পারবে না। বরং শ্বাস ভেঙ্গে
ভেঙ্গে এক দুই শব্দ করে পড়াতে হবে।
আরো পড়ুনঃ শবে বরাত অর্থ কি – শবে বরাতের ফজিলত জেনে নিন
কোরআন শরীফের সঙ্গে যুক্ত গিলাফ এবং যে কাপড় সরিয়ে সঙ্গে যুক্ত আছে যেমন ওড়না
জামার হাতা ইত্যাদি দ্বারা কোরআন শরীফ স্পর্শ করা ধরা জায়েজ নয়।
হায়েজ রত কোন নারী হায়েজ অবস্থায় কোরআন তেলাওয়াত শুনলে যদি সিজদার আয়াত
শুনতে পায় তাহলে তার সিজদা করা ওয়াজিব নয়।
কোরআন শরীফের গিলাফ যদি কোরআন শরীফ থেকে আলাদা হয় তবে তা দ্বারা কোরআন
শরীফ ধরা জায়েজ আছে তেমনি ভাবে শরীর থেকে বিছানো কাপড় দ্বারা কোরআন শরীফ ধরা
জায়েজ আছে।
হায়েজ রত কোন নারী যদি কোন শোপিস, জিনিসপত্র, পিরিজ কাপড় কিংবা কাগজের উপর যদি
শুধু কোরানের আয়াত লেখা থাকে তাতে হাত লাগানো যাবে না। তবে পৃথক কোন কাপড় দিয়ে
সে ধরতে পারবে।
হায়েজ অবস্থায় নামাজ পড়ার বিধান
হায়েজ অবস্থায় নামাজ পড়ার কোন বিধান নেই এবং নামাজের কোন কাজা করতে হবে না।
হযরত আয়েশা উম্মুল মুমিনীনকে জিজ্ঞাসা করা হলো – আজ থেকে পবিত্র হওয়ার পর
মহিলারা কি নামাজ ও রোজা কাজা আদায় করবে? তিনি বললেন, এই অবস্থায় রোজার কাজা
আদায় করতে হবে, নামাজের নয়। (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)
হায়েজ অবস্থায় আজানের উত্তর
আজানের উত্তর দেওয়া ও মহিলা এবং পুরুষ ও উভয়ের জন্যই মুস্তাহাব। হায়েজ গ্রস্ত
মহিলারাও আজানের জবাব দিতে পারবেন। হায়েজ গ্রস্ত অবস্থায় ও আযানের জবাব
দিতে কোন অসুবিধা নেই। (ফাতাওয়া সিরাজিয়া, পৃষ্ঠাঃ ৮, ফাতাওয়া হিন্দিয়.১/৮৩,
আদুরুল মুক্তার১/২৯৩)।
হায়েজ অবস্থায় রোজার বিধান
হায়েজ অবস্থায় রোজা রাখার কোন বিধান নেই অর্থাৎ হায়েজ হলে রোজা রাখা যাবে না।
হায়েজ সম্পর্কে মহান আল্লাহতালা সূরা বাকারার ২২২ নং আয়াতে বলেন পিরিয়ড বা
হায়েজের রক্ত থাকাকালীন নারী আপন অবস্থায় থাকবে তারপর ভালো হয়ে গেলে গোসল করে
নামাজ ও রোজা আদায় করতে পারবে”।
সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ আগেও যদি রোজা পালনকারী নারীর হায়েজ বা পিরিয়ড
দেখা দেয় তাহলে তার ওই দিনের রোজা ভেঙ্গে যাবে। পরে রোজার কাজা করতে হবে। সূরা
বাকারার ১৮৪ নং আয়াতে মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন, “তবে অন্য দিনে এগুলো গণনা
কাজা করে নেবে’। সুবেহ সাদিকের সামান্য আগেও যদি কোন
নারীর পিরিয়ড থেকে পবিত্র হয় তাহলে তার ওপর রোজা পালন আবশ্য।
কারণ তিনি রোজা পালনকারী লোকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।
তবে রোজা পালনের এখন কোন বাধা না থাকায় তার জন্য রোজা পালন করা ওয়াজিব।
এক্ষেত্রে তার পবিত্র হওয়ার গোসল, ফরজ গোসল যদি সুবেহ সাদিকের পর করে তাহলে তার
রোজা হয়ে যাবে। হায়েজের দিন থেকে শুরু করে হায়েজের শেষ পর্যন্ত একজন নারীর
রমজানের সম্মানার্থে অন্যদের সামনে পানাহার থেকে বিরত থাকবে এটা তাকওয়ার
পরিচয়ক। (সূরা হাজ্ব, আয়াতঃ ৩২)।
হায়েজ অবস্থায় রোজা রাখা নিষেধ তবে পরবর্তীতে এই রোজার কাজা আদায় করতে হবে।
পিরিয়ডের রক্ত যদি ১০ দিন পরেও থেকে যায় তাহলে তাকে এসতে হাজা বলা হয়। তখন আর
পিরিয়ড বলে গণ্য হবে না। তাই এ সময় রোজা রাখতে হবে রোজা না রাখার কোন অনুমতি
নেই।
এসতে হায়েজ অবস্থায় নারীদের নিজ ঘরে অবস্থান করা ওয়াজিব। তবে
সুন্নত ও নফল ইতে কাপ করতে পারবে।
আরো পড়ুনঃ শুক্রবারে – বা জুমার দিনের – অতি গুরুত্বপূর্ণ ১১ টি বিশেষ আমল
সম্পর্কে জেনে নিন
একজন নারী নয় বছর বয়স হলে এবং তার হায়েজ শুরু হলে তাকে প্রাপ্তবয়স্ক বলা হয়।
আর একজন প্রাপ্ত বয়স্ক নারীর হায়েজ আল্লাহ প্রদত্ত প্রাকৃতিক নিয়ম।
আর নিয়মিত মাসিক হওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।আর এই জন্য ইসলামী শরিয়ায় এই
সময় মেয়েদের রোজা না রাখার বিধান রয়েছে এরপরেও যদি কোন নারী ওষুধ সেবনের
মাধ্যমে হায়েজ বন্ধ রেখে রোজা রাখতে চায় তাহলে তার রোজা হয়ে যাবে। তবে
পরবর্তীতে স্বাস্থ্য ঝঁকির কথা চিন্তা করে এটি না করাই উত্তম। পরবর্তীতে রোজার
কাজা আদায় করলেই তা হয়ে যাবে।
হায়েজ অবস্থায় একজন নারী রোজা নামাজ ও কোরআন তেলাওয়াত করতে পারবে না তবে আর সব
যাবতীয় দোয়া দরুদ জিকির আজগর ও তাজবি তাহলিল পাঠ করতে পারবে ।এমনকি দোয়ার
নিয়তে কোরআনের আয়াত ও সে পাঠ করতে পারবে।
হায়েজ অবস্থায় যদি কোন নারী কোরআনের সিজদার আয়াত শোনে তাহলে তার সিজদা করা
জায়েজ নয়।
পবিত্র অবস্থায় রোজা রাখার পর যদি কোন নারীর হায়েজ হয় তাহলে তার রোজা ভেঙ্গে
যাবে। পরে তা কাজা করতে হবে। সেটা ফরজ বা নফল রোজা যাই হোক না কেন।
রমজান মাসে মেয়েরা রোজা রাখলে অথবা রোজা রাখার পর হায়েজ শুরু হলে তার জন্য
দিনের বেলা খাওয়া ও পান করার অনুমতি আছে। তবে অন্য রোজাদার লোকের সামনে
পানাহার না করাই ভালো দিনের বেলায় যদি হায়েজ বন্ধ হয়ে যায় তাহলে দিনের বাকি
অংশে রোজাদারের মতো পানাহার বন্ধ করা ওয়াজিব। আহসানুল ফাতাওয়া ৪/৪২০।
উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রাযিআল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তাকে জিজ্ঞাসা
করা হলো হায়েজ থেকে পবিত্র হওয়ার পর মহিলারা কি নামাজ ও রোজা কাজা
আদায় করবে। তিনি বললেন, এই অবস্থায় আমাদের রোজা কাজা আদায় করতে বলা হয়েছে
নামাজের নয়। (সহিহ ও বুখার।১/৮৩,১/২৯৩)।
হায়েজ অবস্থায় মৃত্যু
হায়েজ অবস্থায় কোন মেয়ের মৃত্যু হলে অনেকেই মনে করেন তাকে দুইবার গোসল করে
দিতে হবে। কিন্তু এটা ঠিক নয়। মৃত ব্যক্তিকে একবার গোসল করালেই তা যথেষ্ট হয়ে
যাবে কারণ দুইবার গোসল করানোর কোন বিধান ইসলামে নেই। ইসলাম পবিত্রতায় বিশ্বাসী
তাই একবার তাকে গোসল করালেই তিনি পবিত্র হয়ে যাবেন।
কোন কারণে যদি হায়েজ গ্রস্ত অবস্থায় কোন নারীর মৃত্যু হয় তাহলে তার জন্য একটি
গোসলই যথেষ্ট। তার এই গোসল মৃত্যুর পরের গোসল এবং পবিত্রতা অর্জনের গোসল একসঙ্গে
আদায় হয়ে যাবে।
শেষ কথা
হায়েজ হলো প্রাকৃতিক রক্ত যা কোন বাজে কারো ছাড়াই মেয়েদের যোনিপদ দিয়ে নির্গত
হয়। একে আবার ঋতুস্রাব মাসিক হায়েজ বা পিরিয়ড বলা হয়ে থাকে। যখন কোন মেয়ের
হায়েজ শুরু হয় তখন তাকে প্রাপ্ত বয়স হয়েছে বলে মনে করা হয়। এটা নয় বছর থেকে
শুরু হয় এবং ৫৫ বছর পর্যন্ত তা চলতে থাকে। হায়েজ অবস্থায় কিছু কাজ করার
ব্যাপারে ইসলামী নিষেধাজ্ঞা আছে সেগুলো আমাদের যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে।
আমি আমার পোষ্টের মাধ্যমে হায়েজ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি
আমি আশা করি আমার এই পোস্ট আপনাদের অনেক উপকারে আসবে আর যদি উপকারে আসে তাহলে
অবশ্যই একটি কমেন্টস করে জানাবেন এবং বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন।
Leave a comment