হাওড়া :-
১৯৩৮ সালে হাওড়া পশ্চিমবঙ্গের স্বতন্ত্র জেলার মর্যাদা পায়। ১৮৪৩ সাল পর্যন্ত জেলাটি হুগলি জেলার অংশ ছিল। ১৮৬৩ সালে বর্ধমান বিভাগ থেকে বিচ্ছিন্ন করে হাওড়াকে প্রেসিডেন্সি বিভাগের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
হাওড়া নামের উৎপত্তি নিয়ে অনেকের অনেক রকম মতামত প্রচলিত। হাওড়া জেলা গেজেটিয়ার অনুযায়ী নীচুজমি ও জলাভূমিকে পূর্ববঙ্গে ‘হাওড়’ বলা হয়ে থাকে। সুতরাং এই জেলার ভূভাগও তেমন ধরনের ছিল বলে নামকরণ হয়েছে হাওড়া। আবার অনেকের মতে, হাওড়া নামের জন্ম হয় আজকের হাওড়া শহরের কাছাকাছি হাড়িড়া নামের অখ্যাত একটি গ্রাম থেকে অষ্টাদশ শতাব্দীর শুরুতে এই গ্রামটির অস্তিত্ব ছিল। মানুষের মুখে মুখে হাড়িড়া শব্দ থেকে হাওড়া হয়েছে।
হাওড়া জেলার উত্তরে রয়েছে হুগলি জেলা, দক্ষিণে পূর্ব মেদিনীপুর, পূর্বে কলকাতা ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা এবং পশ্চিমে রয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর।
এই জেলার আয়তন ৬৩.৫৫ বর্গকিমি। মোট জনসংখ্যা ২০১১ সালের গননা অনুযায়ী ১৩,৭০,৪৪৮ জন। প্রধান শহর হাওড়া।
হাওড়া জেলার বিখ্যাত কিছু সেতু :-
বাকল্যান্ড ব্রীজ :-
পূর্ব রেলপথ ও দক্ষিণ-পূর্ব রেলপথের উপর বাকল্যান্ড ব্রীজ যা বর্তমানে ঋষি বঙ্কিম সেতু নামেও পরিচিত এটি ১৮৮৪ সালে নির্মিত হয়।
হাওড়া সেতু :-
হাওড়া সেতুর আগে হুগলি নদীর বুকে একটি ভাসমান পলটুন ব্রিজ তৈরি হয়েছিল ১৮৭৪ সালে। জাহাজ চলাচলের সময় সেতুটিকে মাঝ বরাবর খোলার ব্যবস্থা ছিল। এতে যানবাহন ইত্যাদি চলাচল কিছুক্ষণ বন্ধ থাকত। পরে সেতুটি বাতিল করে দেওয়া হয়।
পরিবর্তে সেই সেতুর উত্তর পাশে বর্তমান এই ক্যান্টিলিভার সেতুটি নির্মাণ করে ১৯৪৩ খ্রীস্টাব্দে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। বর্তমানে এই সেতুর নাম রবীন্দ্র সেতু। রবীন্দ্র সেতু হল বিশ্বের দীর্ঘতম এবং ব্যস্ততম ক্যান্টি-লিভার সেতু। এর দৈর্ঘ্য হল ১৫০০ ফুট। এর চুড়ায় ২৯০ ফুট উঁচু। ১৯৩৭-এ ব্রিজ তৈরি শুরু হয়, কাজ শেষ হয় ১৯৪২-এর অগস্টে। ১৯৪৩-এর ফ্রেব্রুয়ারিতে তা জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়।
বিবেকানন্দ সেতু :-
১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে হাওড়ার বালি ও দক্ষিণেশ্বরের সঙ্গে সংযোগকারী হুগলি নদীবক্ষে নির্মিত হয় উইলিশ ডন ব্রিজ, যা বর্তমানে বিবেকানন্দ সেতু নামে পরিচিত। বিবেকানন্দ সেতুর পাশে আর একটি সেতু নির্মিত হয়েছে যা দ্বিতীয় বিবেকানন্দ সেতু বা ভগিনী নিবেদিতা সেতু নামে পরিচিত।
শরৎ সেতু :-
এই জেলার পশ্চিম সীমানা দিয়ে প্রবাহিত রূপনারায়ণ নদের উপর ৬নং জাতীয় সড়ক এর সংযোগকারী ৭৩১৫ মিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট সেতুটি নির্মিত হয়েছে ১৯৬৮ খ্রিঃ। বর্তমানে এর নাম শরৎ সেতু।
বিদ্যাসাগর সেতু :-
এশিয়ার সবচেয়ে লম্বা কেবল ব্রীজ। যা কলকাতা শহর ও হাওড়াকে (শিবপুর) যুক্ত করেছে। এই সেতু তৈরী করতে ২২ বছর সময় লেগেছে এবং ৩৮৮ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। ১৯৯২ সালের ১০ই অক্টোবর এই সেতু সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল।
হাওড়া রেল স্টেশন :-
১৮৫৪ সালে হাওড়া স্টেশন প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে হাওড়া হল পূর্ব রেলওয়ে ও দক্ষিণ পূর্ব রেলওয়ের প্রধান কেন্দ্র। হাওড়ার অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ রেল স্টেশন শালিমার।
Leave a comment