প্রশ্নঃ ফৌজদারী কার্যবিধিতে বর্ণিত হাইকোর্ট বিভাগ এবং দায়রা জজ আদালতের ‘রিভিশনাল’ এখতিয়ার বর্ণনা কর ।
হাইকোর্ট বিভাগের রিভিশনাল এখতিয়ারঃ ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৩৯ ধারায় হাইকোর্ট বিভাগের উপর এবং ৪৩৯ (ক) ধারায় দায়রা আদালতের উপর রিভিশনের এখতিয়ার অর্পণ করা হয়েছে। রিভিশনের এখতিয়ারটি অবশ্য ৪৩৫ ধারায় প্রদত্ত হাইকোর্ট বিভাগের নথি তলব করার ক্ষমতার বিস্তৃত বিষয় । সেজন্য ৪৩৯ ধারার সাথে ৪৩৫ ধারাও বিবেচনা করতে হয় । বিচার প্রশাসন তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ করার জন্য হাইকোর্ট বিভাগকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তাই আইনের অপব্যাখ্যার কারণে কিংবা পদ্ধতিগত কোন কারণে কিংবা যথাযথ সতর্কতার সাথে বিচারকার্য পরিচালনার অভাবে বিচারের পরিবর্তে অবিচার হবার সম্ভাবনা থাকে। কাজেই নিম্ন আদালত কোন বিচারকার্যে কি পেয়েছেন, কি রায় বা আদেশ দিয়েছেন সেটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার
জন্য নথি তলব করে এবং প্রয়োজনবোধে সংশোধন করে দেয়ার এখতিয়ার হাইকোর্ট বিভাগের রয়েছে। হাইকোর্ট বিভাগের রিভিশনের এখতিয়ার চূড়ান্ত এবং এর পরে আর রিভিশনের সুযোগ থাকে না। হাইকোর্ট বিভাগের রিভিশনের এখতিয়ার যদিও খুব ব্যাপক ও বিস্তৃত এটি অধিকার হিসেবে দাবী করা যায় না। কেননা এটি আদালতের স্বেচ্ছাধীন।
এটি উচ্চ আদালতের একটি অসাধারণ ক্ষমতা বা বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়। পরিস্থিতি এরূপ হস্তক্ষেপের দাবী না করলে সাধারণত দাবী না করলে সাধারণত হাইকোর্ট বিভাগ তার রিভিশনের এখতিয়ার প্রয়োগ করেন না।
দায়রা জজের রিভিশনাল এখতিয়ারঃ নিম্ন আদালতের বিচারে যদি কোন অনিয়ম, ভুল বা ন্যায়-নীতির পরিপন্থী কার্যকলাপ পরিলক্ষিত হয় তবে তা সংশোধনের জন্য উচ্চতর আদালত রিভিশনের এখতিয়ার প্রয়োগ করতে পারেন। ৪৩৯ ধারায় হাইকোর্ট বিভাগের উপর রিভিশনের যে এখতিয়ার প্রদত্ত রয়েছে তা অক্ষুণ্ণ রেখে ১৯৭৮ সালে এক সংশোধনীর মাধ্যমে ৪৩৯ ক ধারা সংযোজন করে হাইকোর্ট বিভাগের এরূপ সকল ক্ষমতা দায়রা জজের উপর অর্পিত হয়েছে। এর ফলে নিম্ন আদালতের ভুল-ভ্রান্তি বা অবৈধ কার্যকলাপের প্রতিকার স্থানীয়ভাবে দেয়া সম্ভব হয়েছে।
৪৩৯ ক (১) ধারায় বলা হয়েছে যে, এমন যে কোন কার্যক্রমে যার নথি দায়রা জজ. কর্তৃক তলব করা হয়েছে বা যা অন্যভাবে তার অবগতিতে আনা হয়েছে, তখন ৪৩৯ ধারা মোতাবেক হাইকোর্ট বিভাগ যে সকল ক্ষমতা প্রয়োগ করে থাকেন, দায়রা আদালত সেগুলোর সকল বা যে কোন একটি ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন।
অর্থাৎ সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ ৪৩৯ ধারা মোতাবেক রিভিশনের এখতিয়ার প্রয়োগ করে নিম্ন আদালতের রায় বা আদেশের বিরুদ্ধে যে প্রতিকার দেন তেমনি প্রতিকার দায়রা আদালত রিভিশনের মাধ্যমে তাঁর অধ:স্তন আদালতের রায় বা আদেশের বিরুদ্ধে দিতে পারবেন।
এই ধারা (২) উপধারায় বলা হয়েছে যে, যেখানে দায়রা আদালতে কোন ব্যক্তি কর্তৃক বা তার পক্ষে রিভিশনের জন্য দরখাস্ত পেশ করা হয়েছে, সেখানে ঐ ব্যক্তির দরখাস্তের উপর দায়রা আদালতের প্রদত্ত সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হিসেবে গণ্য হবে ।
(৩) উপ-ধারায় বলা হয়েছে যে, বর্তমান অধ্যায়ের আওতায় দায়রা জজের যে কোন সাধারণ বা বিশেষ আদেশবলে স্থানান্তরযোগ্য যে কোন মোকদ্দমা সম্পর্কে একজন অতিরিক্ত দায়রা জজ একজন দায়রা জজের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন।
অতএব দেখা যায় যে, শুধু দায়রা জজই স্থানীয়ভাবে রিভিশনের প্রতিকার দেন না, প্রয়োজনবোধে এবং দায়রা জজের অনুমতিক্রমে অতিরিক্ত দায়রা জজ অনুরূপ প্রতিকার দিতে পারেন। এছাড়া সংক্ষুব্ধ পক্ষের আবেদন ছাড়াও আদালত নিজেই (Suo moto) এই এখতিয়ার প্রয়োগ করতে পারেন।
Leave a comment