উদ্দিষ্ট বিষয়: জীবনানন্দ দাশের লেখা ‘শিকার’ কবিতার প্রশ্নোেদ্বত অংশে হিমের রাতে শরীর গরম রাখার জন্য দেশােয়ালি মানুষেরা সারারাত মাঠে যে আগুন জ্বেলেছিল, এখানে সেই আগুনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মােরগফুলের মতাে সেই লাল আগুন সূর্যের আলােয় ঔজ্জ্বল্য হারিয়েছে। শুকনাে অশ্বখপাতায় আগুন জ্বলতে থাকলেও সূর্যের আলােয় সে আগুনের কুকুমের মতাে অসাধারণ দীপ্তি ম্লান হয়ে গেছে। ভােরের আলােয় বিবর্ণ হয়ে যাওয়া সেই আগুনের কথাই এখানে বলা হয়েছে।
মন্তব্যটির গুরুত্ব
ইঙ্গিতধর্মিতা : সারারাত জ্বলতে থাকা আগুনের স্লান হয়ে যাওয়া আসলে ভাের হওয়ার ইঙ্গিত। তখনই সকালের আলােয় টলমল করা শিশিরে চারদিকের বন আর আকাশ ঝিলমিল করে ওঠে। যেন রাতের অস্পষ্টতা থেকে গভীর নিশ্চিন্তে জীবনের জাগরণের পটভূমি রচিত হয়। কিন্তু সবটাই কাল্পনিক ধারণা মাত্র।
নির্মম বাস্তবতার প্রকাশ : কবিতার শেষে তার নির্মম বাস্তবতা নৃশংস রূপ প্রকাশ করে। সারারাত চিতাবাঘিনির হাত থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা সুন্দর বাদামি হরিণ যেন এই ভােরের কাছ থেকে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা পেয়েছিল। ভােরের আলােয় তাই সে কচি বাতাবিলেবুর মতাে সবুজ, সুগন্ধি ঘাস ছিড়ে খাচ্ছিল। তারপর যখন সে নদীর জলে নামে ক্লান্তি কাটানাের জন্য, তখনই শিকারির বন্দুকের গুলিতে মৃত্যু হল তার। নদীর জল মচকাফুলের মতাে লাল হয়ে উঠল।
বৈপরীত্যময় প্রতীক : এক আগুন নিভে গিয়ে আর-এক আগুন জ্বলল, হরিণের মাংস তৈরির জন্য। তাই প্রশ্নোদ্ধৃত মন্তব্যটি যেন হয়ে ওঠে এই নৃশংসতার এক বৈপরীত্যময় প্রতীক।
Leave a comment