স্বাভাবিক উদ্ভিদের ওপর জলবায়ুর প্রধান যে দুটি উপাদান সবথেকে বেশি প্রভাব বিস্তার করে তা হল—অধঃক্ষেপণ (বৃষ্টি, তুষার, কুয়াশা, শিশির, শিলাবৃষ্টি ইত্যাদি) ও তাপমাত্রা। মূলত এই দুই উপাদানের প্রভাবে বিভিন্ন উদ্ভিদগােষ্ঠীর সৃষ্টি হয়েছে এবং সেইমতাে তারা তাদের প্রাকৃতিক বাসস্থান গড়ে তুলেছে।

(১) অধঃক্ষেপণের প্রভাব : গাছের শারীরবৃত্তীয় ও অন্যান্য কাজের জন্য জল অপরিহার্য। বৃষ্টিপাত, তুষারপাত, শিলাবৃষ্টি প্রভৃতি কারণে মাটির উপ-পৃষ্ঠীয় স্তরে জল জমা হয়। ওই জল গাছ প্রয়ােজন মতাে গ্রহণ করে। মাটির ভিতরের খনিজ পদার্থ জলে দ্রবীভূত অবস্থায় থাকে। গাছ ওইসব পুষ্টিমৌল জলের মাধ্যমে গ্রহণ করে সালােকসংশ্লেষ, রস সংরক্ষণ প্রভৃতি ক্রিয়া সম্পন্ন করে। সজীব কোশের প্রােটোপ্লাজমের জন্য জল দরকার। তাই মাটিতে জলের সরবরাহ ও বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণের ওপর উদ্ভিদের বৃদ্ধি, গঠন ইত্যাদি নির্ভর করে। এজন্য বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ যেমন প্রভাব ফেলে তেমনি ঋতুকালীন বৃষ্টিপাতের বণ্টনও লতা, গুল্ম, তৃণ ইত্যাদি জন্মানাের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেমন— শীতপ্রধান অঞ্চলে শুধুমাত্র বসন্তকালের বৃষ্টিপাতে লতানাে গুল্ম ও ঘাস প্রচুর জন্মায়। যেসব অঞ্চলে গ্রীষ্মকাল উয় ও শুষ্ক কিন্তু শীতকালে ঠান্ডা বিশেষ থাকে না, সেইসব অঞ্চলে শুষ্ক গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ জন্মায়।

মােট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ, এর ঋতুকালীন বণ্টন এবং বাতাসের আর্দ্রতা যে-কোনাে অঞ্চলের উদ্ভিদের বিন্যাস ও প্রকৃতিকে প্রভাবিত করে।

  • 200 থেকে 300 সেমি বৃষ্টিপাত : চিরসবুজ বৃষ্টি অরণ্য (শিশু, গর্জন)

  • 100 থেকে 200 সেমি বৃষ্টিপাত : আর্দ্র ক্রান্তীয় মৌসুমি অঞ্চলের পর্ণমােচী উদ্ভিদ (শাল, শিমূল)

  • 50 থেকে 100 সেমি বৃষ্টিপাত : শুষ্ক ক্রান্তীয় পর্ণমােচী উদ্ভিদ (পলাশ, খয়ের)

  • 25 থেকে 50 সেমি বৃষ্টিপাত : উপমেরু অঞ্চলের সরল- বর্গীয় বৃক্ষ, মধ্য অক্ষাংশের নাতিশীতােয় তৃণ (পাইন, ফার)

  • 25 সেমির কম বৃষ্টিপাত : ক্রান্তীয় মরু অঞ্চলের জাঙ্গল উদ্ভিদ (বাবলা, ফণীমনসা)

উদ্ভিদের সঙ্গে জলের সম্পর্কের ভিত্তিতে 1880 খ্রিষ্টাব্দে ই. ওয়ারমিং মাটিতে জলের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে উদ্ভিদকে প্রধান তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করেছেন। যেমন

  • জলজ উদ্ভিদ : সাধারণত পর্যাপ্ত পরিমাণ জলে যেসব উদ্ভিদ জন্মায়। উদাহরণ শালুক, কচুরিপানা।

  • সাধারণ বা মধ্যবর্তী উদ্ভিদ : মাটিতে জলের পরিমাণ চাহিদামত অর্থাৎ স্বাভাবিক হলে যেসব উদ্ভিদ জন্মায়। উদাহরণ আম, জাম।

  • এ ছাড়াও নােনা জল ও কাদামাটিতে লবণাম্বু উদ্ভিদ (Halophytes) জন্মায়। উদাহরণ সুন্দরী, গরান।

(২) তাপমাত্রার প্রভাব : মাটি থেকে গৃহীত বিভিন্ন খনিজের মধ্যে দ্রুত রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটাতে এবং শ্বসন, বাম্পমােচন, অঙ্কুরােদ্গম ইত্যাদি শারীরবৃত্তীয় কাজকর্মের জন্য উয়তা এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেমন বীজ থেকে অঙ্কুরােদ্গমের জন্য 20° থেকে 27 °সে. তাপমাত্রা দরকার। খুব কম বা খুব বেশি তাপমাত্রায় প্রােটোপ্লাজম নষ্ট হয় এবং কম তাপমাত্রা ও বেশি আদ্রর্তায় গাছের মূল পচে যেতে পারে।

এ ছাড়া কুয়াশা, মেঘ ইত্যাদি পরােক্ষভাবে গাছের বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন-আকাশ কুয়াশাচ্ছন্ন বা মেঘাচ্ছন্ন থাকলে সূর্যালােকের পরিমাণ কমে যায় ও আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ বেড়ে যায়। এর ফলে বাষ্পীভবন হ্রাস পায়। বাষ্পীভবন হ্রাস পেলে গাছের জলত্যাগের পরিমাণও কমে যায়। তাপমাত্রা কমে গেলে উদ্ভিদের কাজকর্ম কমে যায়। এজন্য নাতিশীতােয় অঞ্চলে শীতকালকে উদ্ভিদের বিশ্রামকাল বলা হয়। তাপমাত্রার চাহিদা অনুযায়ী রনকাইয়ার উদ্ভিদগােষ্ঠীকে চার ভাগে ভাগ করেছেন

  • মেসােথার্মস : সারাবছর মাঝারি ধরনের তাপমাত্রায় (22 °সে.) এসব উদ্ভিদ জন্মায়। যেমন-ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় অঞলের উদ্ভিদ।

  • হেকিস্টোথার্মস : দীর্ঘ শীতযুক্ত অঞ্চলে, অত্যধিক কম উয়তায় (44 °সে.) এইসব উদ্ভিদ জন্মায়। যেমন তুন্দ্রা অঞ্চলের উদ্ভিদ।