অথবা, স্বাধীনতা ও আইনের সম্পর্ক কীরূপ সংক্ষেপে লিখ।
ভূমিকাঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলােচনায় স্বাধীনতা শব্দটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বাধীনতার ইংরেজি প্রতিশব্দ Liberty ল্যাটিন শব্দ Liber থেকে গৃহীত যা Libertinus হতে উদ্ভূত। এর অর্থ a freed man বা মুক্তিপ্রাপ্ত ক্রীতদাস। আবার স্বাধীন শব্দটি ভাঙলে স্ব+অধীন পাওয়া যায়। অর্থাৎ নিজের অধীনে থাকার নামই স্বাধীনতা।
আইন ও স্বাধীনতার সম্পর্কঃ আইন ও স্বাধীনতার সম্পর্ক নিম্নে আলােচিত হলাে-
(১) আইন স্বাধীনতার অভিভাবকঃ আইন স্বাধীনতাকে লালন-পালন করে তােলে। কোনাে বিশেষ কুচক্রীর চক্রান্তে জনগণের স্বাধীনতা ব্যাহত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে আইন জনগণের স্বাধীনতার অভিভাবকরূপে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে ও যেকোনাে ধরনের চক্রান্ত থেকে জনগণের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে পারে।
(২) আইন স্বাধীনতার রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করেঃ আইন স্বাধীনতার পথকে প্রশস্ত করে। আইন সভা কর্তৃক স্বীকৃত আইনই জনগণের স্বাধীনতা রক্ষা করে। আইন থাকলে জনগণ স্বাধীনতায় আঘাতকারীদের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নিতে পারে। জনগণ হেবিয়াস কর্পাসের সাহায্যে তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে পারে।
(৩) আইন স্বাধীনতার ক্ষেত্র প্রসারিত করেঃ মানুষ হিসেবে বাঁচতে হলে মানুষের প্রয়ােজন শিক্ষা-দীক্ষা, চিকিৎসা, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান প্রভৃতি। এগুলাে আইনের মাধ্যমে সুরক্ষিত হয়। সুতরাং স্বাধীনতার সম্প্রসারণে অধিকতর আইনের প্রয়ােজন।
(৪) আইন জনগণের আত্মবিকাশের সুযােগ দেয়ঃ স্বাধীনতা ছাড়া ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশ সম্ভবপর নয়। কিন্তু এরূপ অধিকার ভােগ করতে হলে আইন দ্বারা তা স্বীকৃত হতে হবে। তাছাড়া বেঁচে থাকার জন্য সকল সুযােগ-সুবিধা আইন দ্বারা সৃষ্ট হয়।
(৫) আইন স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ করেঃ স্বেচ্ছাচারী শাসকদের কবল থেকে আইন স্বাধীনতাকে রক্ষা করে। আইনের সঠিক প্রয়ােগ থাকলে শাসকগণ শাস্তিভভাগের ভয়ে স্বেচ্ছাচারী আচরণ করে না। সুতরাং আইন নাগরিকদের শােষণ বন্ধ করে স্বীয় স্বাধীনতা উপভােগের সুযােগ সৃষ্টি করে।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, আইন ও স্বাধীনতা পরস্পর বিরােধী নয় বরং পরস্পরের পরিপূরক। তাই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী Locke বলেন, ‘Where there is no law there no freedom’ আইন যাতে স্বাধীনতার পরিপন্থী না হয়, সেজন্য জনগণকে সদা জাগ্রত ও সতর্ক থাকতে হবে।
Leave a comment