প্রশ্নঃ স্বাধীনতায় সাম্যের গুরুত্ব আলোচনা কর। 

ভূমিকাঃ সাম্যের অর্থ সমান। সাধারণ অর্থে সাম্য বলতে বোঝায় সব মানুষ সমান। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নীতিগতভাবে, স্বীকার করা হয় যে, সকল মানুষই সমান। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, সব মানুষ এক সমান নয়। শারীরিক ও মানসিক গঠন এবং ক্ষমতা ও যোগ্যতার দিক থেকে একজনের সাথে অন্যজনের পার্থক্য রয়েছে। এজন্যই রাষ্ট্রের কাছ থেকে সকলেই সমান ব্যবহার দাবি করতে পারে না। একজন ডাক্তার ও একজন ঠিকাদার সমাজের কাছ থেকে সমপরিমাণ মর্যাদা ও স্বীকৃতি দাবি করতে পারে না।

স্বাধীনতায় সাম্যের গুরুত্ব (Importance of Equality in Liberty): স্বাধীনতা ও সাম্যের মধ্যে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। আইন সাম্যকে অর্থবহ করে তোলে। রাষ্ট্র আইন প্রয়োগ করে অসাম্যকে দূর করতে পারে। সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করতে যুগে যুগে অনেক আইন সহায়তা করছে। ভারতে আইন করে অস্পৃশ্যতা দূর করা হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার আইন করে বর্ণভেদ প্রথা দূর করা হয়েছে এবং পৃথিবীর অনেক দেশেই আইন করে সকল প্রকার অসাম্য দূর করার চেষ্টা করা হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে।

সাম্য ও স্বাধীনতার সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। সাম্য নিশ্চিত করার জন্য স্বাধীনতার প্রয়োজন। স্বাধীনতার শর্ত পূরণ না হলে সান্য প্রতিষ্ঠিত হয় না। আবার স্বাধীনতাকে ভোগ করতে চাইলে সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তা না হলে দুর্বলের সাম্য সবলের সুবিধায় পরিণত হবে। সাম্য ও স্বাধীনতা একই সাথে বিরাজ না করলে গণতান্ত্রিক অধিকার ভোগ করার প্রশ্নই ওঠে না। সামা উঁচু নীচুর ভেদাভেদ দূর করে, আর স্বাধীনতা সমাজের সুযোগ সুবিধাগুলো ভোগ করার অধিকার দান করে। কোল (Cole) এ জন্যই বলেছেন যে, “অর্থনৈতিক সাম্য ব্যতীত রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্থহীন।” (Political liberty in the absence of economic equality is held to be a mere myth.)

আর, এইচ, টনি (R, H. Tawney)-এর মতে “স্বাধীনতা বলতে যদি মানবতার নিরবচ্ছিন্ন সম্প্রসারণ বোঝায়, তাহলে সেই স্বাধীনতা সাম্যভিত্তিক সমাজেই শুধু সম্ভব।” এজন্যই অধ্যাপক পোলার্ড (Prof. Pollard) বলেছেন যে, “স্বাধীনতার

সমস্যার একটিমাত্র সমাধান রয়েছে। সাম্যের মাঝেই তা নিহিত।” (There is only one solution of problem of liberty. It lies in equality.)

আদর্শ হিসেবে সাম্য ও স্বাধীনতার সুসমন্বিত রূপ প্রকাশ পায় ১৭৭৬ সালে, আমেরিকার স্বাধীনতার ঘোষণা পত্রে এবং ১৭৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবের ঘোষণায়।

উপসংহারঃ সুতরাং বলা যায় যে, স্বাধীনতা ও সাম্যের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। স্বাধীনতা ও সাম্য একে অপরের পরিপূরক ও সহায়ক । স্বাধীনতা ও সাম্য একই সাথে বৃহত্তর পরিসরে ব্যক্তি ও সমাজজীবনকে প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রণ করে। স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে হলে সাম্য থাকতে হবে। সাম্য না থাকলে ব্যক্তি তথা সমাজজীবন পূর্ণতা প্রাপ্ত হয় না। সুতরাং স্বাধীনতা ও সাম্য বৃহত্তর পরিসরে ব্যক্তি ও সমাজজীবনকে প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এ জন্যই বলা হয় যে, স্বাধীনতা ও সাম্যের মধ্যে রয়েছে একটি দ্বি-মাত্রিক সমগ্রতা।