আমরা যে দেশে জন্মগ্রহণ করি সেটাই আমাদের জন্মভূমি বা স্বদেশ। আমাদের পরীক্ষার্থীদের বিভিন্ন পরীক্ষায় স্বদেশপ্রেম রচনা রচনা লিখতে আসে। তাই আমি স্বদেশপ্রেম রচনা যথাযথভাবে লিখার চেষ্টা করেছি। তোমরা যারা পরীক্ষায় স্বদেশপ্রেম রচনা লিখতে চাও আমার পোস্ট তাদের জন্য।
দেশ প্রেম মানে পতাকা ওড়ানো নয়, বরং আমাদের দেশ ধার্মিক ও শক্তিশালী হবে এই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া – জেমস ব্রাইটস। আমি স্বদেশপ্রেম রচনা এর মাধ্যমে যাবতীয় বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আমি আশা করি স্বদেশপ্রেম রচনা লিখলে তোমরা ভালো নম্বর পাবে। নিচে স্বদেশপ্রেম রচনা বিস্তারিত লিখা হলো-
স্বদেশপ্রেম রচনা
ভূমিকা
প্রত্যেকটি মানুষ তার জন্মভূমিকে ভালোবাসে। কারণ প্রতিটি মানুষের সবচেয়ে বড় আশ্রয়স্থল হলো তার নিজের স্বদেশ বা মাতৃভূমি। প্রতিটি মানুষই তার দেশের মাটির,আলো, বাতাস, পানি সব কিছুর সংস্পর্শে ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে। প্রতিটি পাখি যেমন দিন শেষে নীড়ে ফিরে, প্রতিটি মানুষ ও তেমনি ভালোবেসে তার আশ্রয়স্থলে ফিরে আসে। আর এই থেকেই তৈরি হয় স্বদেশপ্রেম। স্বদেশ প্রেম প্রতিটি মানুষের কাছে তার সহজাত প্রবৃত্তি।
আরো পড়ুনঃ মাদকাসক্তি ও যুবসমাজ রচনা সম্পর্কে জেনে নিন
স্বদেশের এক বিন্দু ধূলিকণা তার কাছে সোনার চেয়ে দামি। মানুষের দেশের প্রতি যে প্রবল অনুরাগ, নিবিড় ভালোবাসা এবং যথার্থ আনুগত্য আর একেই বলা হয় স্বদেশ প্রেম। আর তাই উইলিয়াম এইচ বার্নহাম বলেছেন – “স্বদেশ প্রেমের মূল কথা হচ্ছে জনগণের কল্যাণে ব্যক্তিগত স্বার্থকে ত্যাগ করা”। আর কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও বলেছেন –
“সার্থক জন্ম আমার জন্মেছি এই দেশে,
সার্থক জনম মাগো তোমায় ভালোবেসে”।
স্বদেশ প্রেম কি
আমরা যে দেশে জন্মগ্রহণ করি সেটি আমাদের স্বদেশ বা জন্মভূমি। আর এই দেশের সাথে আমাদের নাড়ীর সম্পর্ক। আর স্বদেশ প্রেম হচ্ছে নিজের দেশের প্রতি, ভাষার প্রতি, জাতির প্রতি গভীর আকর্ষণ অনুভব করা। দেশের প্রতি নিবিড় ভালোবাসা, প্রবল অনুরাগ এবং যথার্থ আনুগত্যকে দেশপ্রেম বলে। মোট কথা জন্মভূমির স্বার্থে সর্বস্ব ত্যাগের সাধনায় হচ্ছে স্বদেশপ্রেম। আর এজন্যই হয়তো বীরচাঁদ রাঘবজী গান্ধী বলেছেন -“এটা আমার দেশ ওইটা তোমার দেশ এগুলি সংকীর্ণ মনের প্রকাশ উদারমনা মানুষের কাছে গোটা বিশ্ব একটি পরিবার”। আর স্বদেশ প্রেমিক কবি হয়তো এজন্যই বলেছেন –
“আমার এ দেশেতেই জন্ম যেন, এই দেশেতেই মরি”।
স্বদেশ প্রেমের স্বরূপ
স্বদেশ বলতে নিজের দেশ বা নিজের জন্মভূমিকে বোঝানো হয়। প্রতিটি মানুষই তার নিজের দেশকে ভালোবাসে। মানুষ যেমন নিঃস্বার্থ ভাবে তার মাকে ভালবাসে তেমনি প্রতিটি মানুষের কাছে তার দেশের স্বার্থ সকল কিছু ঊর্ধ্বে। প্রতিটি মানুষের চিন্তায়, কথায় এবং কাজে তার স্বদেশ প্রেম প্রকাশ পায়। আর এই চেতনা বোধ মানুষের হৃদয়ের গভীর থেকে উৎসারিত হয়।আর হয়তো এর জন্যই অ্যাড উইন অর্নল্ড বলেছিলেন – ” জীবনকে ভালবাসি সত্যি কিন্তু দেশের চেয়ে বেশি নয়”। স্বদেশ প্রেম নিয়ে সংস্কৃতিতেও একটি প্রবাদ রয়েছে তা হল – “জননী ও জন্মভূমি স্বর্গের চেয়েও শ্রেষ্ঠ”।
স্বদেশ প্রেমের উৎস
প্রতিটি মানুষের স্বদেশ প্রেমের উৎস হচ্ছে তার অন্তর। প্রতিটি মানুষ যেমন নিজেকে ভালবাসে ঠিক তেমনি অন্তর থেকে তার দেশ কেও ভালোবাসে কারণ জন্মের পরে আমাদের সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় হচ্ছে মা এবং মাতৃভূমি। আর এই জন্যই আমাদের সকলের মাতৃভূমির প্রতি গভীর মমতা বোধ সৃষ্টি হয়। আমরা মাছের দিকে তাকালে দেখতে পাই মাছ যেমন পানি থেকে তুলে আনলে তা আবার পানিতে ফিরে যাওয়ার জন্য ছটফট করে, মানুষ ওঠিক তাই কোথাও গেলে আবার নিজ ভূমিতে ফিরে আসার জন্য গভীর আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়ে। আর এই জন্যই কবি বলেছেন-
আরো পড়ুনঃ ধান রচনা – সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
” স্বদেশের প্রেম যত সেই মাত্র অবগত
বিদেশেতে অধিবাস যার,
ভাব তুলে ধ্যানে চলে, চিত্রপটে চিত্র করে
স্বদেশের সকল ব্যাপার”।
স্বদেশ প্রেমের বৈশিষ্ট্য
স্বদেশের প্রতি ভালবাসা প্রতিটি মানুষের স্বভাবজাত ধর্ম। প্রতিটি মানুষই তার নিজ আশ্রয়স্থলকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে। গরুর জন্য যেমন গোয়াল, বাঘের জন্য যেমন গুহা, পাখির জন্য যেমন নীড় তেমনি প্রত্যেকটি মানুষের জন্য রয়েছে তার নিজের দেশ। মানুষের আছে নিজস্ব সংস্কৃতি. চেতনা এবং সেই সাথে রয়েছে ইতিহাসের পাতা থেকে আহরিত জ্ঞান। আর মমত্ববোধের সাথে মিশে আছে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও গৌরব বোধের আকাঙ্ক্ষা। হয়তো কবি এর জন্যই বলেছেন –
” অজান্তেই বেজে ওঠে
আমার কুটির খানি
সে যে আমার হৃদয়ের রানী”।
স্বদেশ প্রেমের রূপরেখা
আমরা যে দেশে জন্মগ্রহণ করি এবং যে দেশে বেড়ে উঠি, সেই দেশের মাটি, পানি, বাতাস, সেখানকার জনগণ, ঐতিহ্য, ইতিহাস, ভাষা, সংস্কৃতি সবকিছুর সাথে আমাদের একটি নিবিড়ী সম্পর্ক থাকে। মাতৃভূমির প্রতিটি ধূলিকণার সাথে থাকে আমাদের আত্মার সম্পর্ক। স্বদেশের প্রতি আমাদের যে ভালোবাসা তা কোন মাপকাঠি দিয়েই পরিমাপ করা যাবেনা। আর স্বদেশের প্রতি ভালোবাসা থেকেই জন্ম নেয় মাতৃভূমির প্রতি শ্রদ্ধা। তাই তো কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত বলেছেন –
“মনে মনে স্থির ভাবে কর করণে ধান
যাহাতে দেশের হয় কুশল বিধান”।
স্বদেশ প্রেমের অনুভূতি
মানুষের মনে স্বদেশ প্রেমের জন্ম হয় দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি দুর্নিবার আকর্ষণ থেকে। পৃথিবীর সব জায়গার আলো, বাতাস, আকাশ,চাঁদ, সূর্য এক হলেও স্বদেশের চেতনা থেকে মানুষ নিজের দেশের আকাশ, চন্দ্র, সূর্য সবকিছুকে আলাদাভাবে ভালোবাসে। যখন দেশের স্বাধীনতা বিপন্ন হয় মানুষের স্বদেশের প্রতি অনুভূতি তখন সবচেয়ে বেশি প্রকাশিত হয়। আর এজন্যই হয়তো কবি বলেছেন –
” নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান
ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই”।
স্বদেশ প্রেমের প্রভাব
মানবীয় গুণাবলীর মধ্যে অন্যতম গুণাবলী হলো স্বদেশ প্রেম। কারণ মানব চরিত্রের গুণাবলী বিকাশের ক্ষেত্রে স্বদেশপ্রেম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। একমাত্র স্বদেশ প্রেমের চেতনায় উজ্জীবিত হলেই মানুষের মন ও মানসিকতায় স্বার্থ, গুণের সমাবেশ ঘটে। আর তার মন থেকে দূর হয় স্বার্থপরতা এবং সংকীর্ণতা এবং মানুষের মনে আলোর দিশা জাগ্রত করে। একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক নিজের সকল স্বার্থ ত্যাগ করে দেশের কল্যাণে এগিয়ে আসে। কবি সমুদ্র গুপ্তের ভাষায় –
আরো পড়ুনঃ বৃক্ষরোপণ রচনা -বৃক্ষরোপণ অভিযান রচনা সম্পর্কে জেনে নিন
” স্বদেশ প্রেম থেকে বিশ্ব প্রেম, যে নিজের দেশকে ভালোবাসে সে বিশ্বপ্রেমিক, মানব প্রেমিক, মানবতাবাদী”।
স্বদেশ প্রেমের উপায়
স্বদেশ প্রেমের কথা পৃথিবীর প্রতিটি ধর্মেই বলা হয়েছে। দেশ ও জাতির কল্যাণে আত্মত্যাগকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। মানুষ পৃথিবীর যেকোনো স্থানে থেকে যে কোন দেশে বসেই নিজের দেশকে ভালবাসতে পারে এবং সে তার স্বদেশ প্রেমের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে পারে। প্রতিটি মানুষ তার নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে দেশ ও জাতির জন্য এবং দেশের প্রতিটি মানুষের প্রতি তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করতে পারে। নিজের দুঃখ – দুর্দশা ভুলে গিয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করতে হবে। তাই জেমস ব্রাইটস বলেছেন-
“দেশ প্রেম মানে পতাকা ওড়ানো নয়, বরং আমাদের দেশ ধার্মিক ও শক্তিশালী হবে এই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া”।
অন্ধ স্বদেশ প্রেম
দেশের প্রতিটি নাগরিকের মধ্যে স্বদেশ প্রেম থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তাই বলে নিজের দেশের কথা চিন্তা করে অন্যদেশকে ক্ষতি করার কামনা করা যাবে না। আর এমন মনোভাব কখনোই নিজের স্বদেশের শুভ ফলাফল বয়ে আনতে পারেনা। আর কেউ যদি এ কাজ করে তাহলে তাকে বলা হয় অন্ধ স্বদেশ প্রেম। মানুষ যেমন তার প্রতিবেশীর হাড়ি পুড়িয়ে কখনো নিজে মানসিক শান্তিতে খেতে পারে না, তেমনি অন্য রাষ্ট্রের ক্ষতি করেও নিজের রাষ্ট্রকে উন্নয়নের শিখরে পৌঁছানো যায় না। আর এজন্য কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন –
” যারে তুমি নিচে ফেলো সে তোমারে বাঁধিবে যে নিচে
পশ্চাতে রেখেছো যারে সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে”।
স্বদেশ প্রেমের প্রায়োগিক ক্ষেত্র সমূহ
দেশপ্রেমের কথা শুধু মুখে বললে হবে না, প্রতিটি কাজ কর্মে, আচার আচরণে, চলনে বলনে, পোশাক পরিচ্ছদে সবকিছুর মধ্যে এর বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে হবে। সংস্কৃতি দেশের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই নিজ দেশকে ভালোবাসা মানে দেশীয় সংস্কৃতিকে নিজের হৃদয়ে লালন করা। তাই পাশ্চাত্য সংস্কৃতিতে অন্ধ অনুকরণ না করে তাদের কথা বার্তা, চাল-চলন,পোশাক পরিচ্ছদ, খাদ্য ভাস, রুচি প্রভৃতিতে প্রভাবিত না হয়ে নিজের দেশের সংস্কৃতিতে প্রভাবিত হতে হবে। দেশীয় পণ্য ব্যবহার করতে হবে। আর দেশকে ভালোবাসলেই দেশের মর্যাদার সামনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা যায়।
স্বদেশ প্রেমের উগ্রতা
স্বদেশপ্রেম পতিটা জাতির জন্য একটি গৌরবের বিষয়। কিন্তু অন্ধ ও উগ্র প্রেম জাতির জীবনের জন্য বিপদজনক। আর জাতির জন্য ডেকে আনে এক ভয়াবহ সর্বনাশা পরিণতি। যারা উগ্র দেশপ্রেম দিয়ে শুধু জাতির শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা কে প্রতিষ্ঠা করতে চায় তারা কখনোই সফল হয় না। সারা পৃথিবী জার্মানির হিটলারের উগ্র দেশপ্রেমের কথা জানে কারণ হিটলারের উগ্র দেশপ্রেমের কারণে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। তাই উগ্র দেশপ্রেমের মানসিকতা থেকে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
ছাত্র জীবনে স্বদেশ প্রেমের শিক্ষা
ছাত্ররাই দেশের ভবিষ্যৎ কর্ণধার। যে কোন দেশের ভবিষ্যৎ কান্ডারী হলো সে দেশের ছাত্র। দেশ ও জাতির আসা পূরণের আশ্রয়স্থল হল সেই দেশের ছাত্রসমাজ। তাই দেশ ও জাতির প্রতি গভীর মমত্ববোধ ছাত্র জীবনে জাগে তুলতে হবে। দেশকে ভালোবাসার মন্ত্রে দীক্ষিত হতে হবে দেশের ছাত্রদের। যেসব ছাত্র অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় সেটাই হচ্ছে প্রকৃত দেশপ্রেম। আর এজন্যই বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন –
আরো পড়ুনঃ অধ্যবসায় – রচনা সম্পর্কে জেনে নিন
“কারার ঐ লৌহ কপাট
ভেঙ্গে ফেল করবে লোপাট
রক্ত জমাট শিকল পূজার পাষাণ বেদী”।
স্বদেশ প্রেমের শিক্ষা
স্বদেশ প্রেম মানুষেকে সংকীর্ণ মানসিকতা থেকে বের করে উদার মনা হওয়ার শিক্ষা দান করে। তাই স্বদেশপ্রেম মানুষকে ত্যাগী হতে শিক্ষা দেয়। আর প্রতিটি মানুষকে বিশ্বাস করতে হবে “ভোগে নয়, ত্যাগেই সুখ”। আর এর মধ্যে নিহিত থাকে স্বদেশপ্রেম।এক মাত্র স্বদেশ প্রেমে আবদ্ধ ব্যক্তি অন্যের বিপদে এগিয়ে আসতে পারে। কবি গোবিন্দ চন্দ্র দাস বলেছেন –
” জননী জন্মভূমি তোমারি পরশে জীবন
দিতেছে জীবন মরে নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে
সুন্দর মুখ উজ্জ্বল তপন”।
বাঙালির স্বদেশপ্রেম
বাঙালির দেশপ্রেমের কথা সারা বিশ্ব জানে। ১৯৫২ সাল থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বরের মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত বাঙালি তাদের বুকের তাজা রক্ত বিসর্জন দিয়ে দেশের স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে এনেছে। শহীদ হয়েছে ৩০ লক্ষ বাঙালি। তেমনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনেও সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার তাদের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছে রাজপথে। এখনো বাঙালি তাদের স্বদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে যেকোনো আশঙ্কায় গর্জে ওঠে। আর এজন্যই বলা হয় –
” উদয়ের পথে শুনি কার বাণী ভয়
নাই ওরে ভয় নাই
নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান
ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই”।
সাহিত্য ও দেশপ্রেম
সাহিত্য হল মানব জীবনের প্রতিচ্ছবি। আমাদের জীবনধারাকে কবিতা উপন্যাসের বইয়ের পাতায় পরিস্ফুট করে। বাংলার কবি রবীন্দ্রনাথ, নজরুল তাদের কলমে বাংলা রূপ তুলে ধরেছেন পুরো বিশ্বের সামনে। তেমনি জাহানারা ইমামের একাত্তরের দিনগুলো, হুমায়ূন আহমেদের আগুনের পরশমনি, আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যায় সেই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোতে। আর তাইতো মহাকবি কায়কোবাদ তার বাংলা কবিতা লিখেছেন –
“বাংলা আমার
আমি বাংলার
বাংলা আমার জন্মভূমি
গঙ্গা ও যমুনা
পদ্মা ও মেঘনার
রহিয়াছে চরণ চুমি”।
স্বদেশপ্রেমের দৃষ্টান্ত
প্রতিটি স্বাধীন দেশের গল্পকথায় সেই দেশের কিছু মহৎ ব্যক্তির আত্মত্যাগের কথা জড়িয়ে থাকে। তেমনি এই উপমহাদেশেও শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, তিতুমীর, মহাত্মা গান্ধী, নেতাজি সুভাষ বসু, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহান ব্যক্তিদের কথা স্বর্ণাক্ষরে লিখিত রয়েছে। এছাড়া ও রাশিয়ার লেলিন ও স্ট্যালিন, ইতালির গ্যারি বল্ডিং, আমেরিকার জজ ওয়াশিংটন, ভিয়েতনামের মাও সেতুং প্রমুখ ব্যক্তিগণ সারাবিশ্বে উদাহরণ হয়ে রয়েছেন।
স্বদেশপ্রেম ও ৫২ এর ভাষা আন্দোলন
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পরে ও পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে দেশকে ভাষার জন্য যুদ্ধ করতে হয়েছে। দিতে হয়েছে বুকের তাজা রক্ত। আর স্বদেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলার দামাল ছেলেরা রাজপথে তাদের বুকের তাজা রক্ত ছড়িয়ে দিয়েছে। সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিক সহ হাজার হাজার তরুণ তাদের বুকে তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছে বাংলার রাজপথে। আর তাদের ত্যাগের কথা চিন্তা করে ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক বাংলাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দান করেছেন। সারা বিশ্বে বাঙালি একমাত্র জাতি যারা ভাষার জন্য প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে।
“মোদের গৌরব মোদের আশা আ মরি বাংলা ভাষা”।
স্বদেশপ্রেম ও ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ
স্বদেশ প্রেমের উদ্বুদ্ধ হয়ে ১৯৭১ সালে লাখো লাখো বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তাদের দেশকে রক্ষা করার জন্য। স্বদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে ছিনিয়ে এনেছে এই দেশের স্বাধীনতা। ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ অর্জন করেছে তাদের স্বাধীনতা। আর এজন্যই হয়তো কবি রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন –
” স্বাধীনতা হীনতাইকে বাসিতায় চাই হে
কে বাঁসিতে চায়”।
স্বদেশপ্রেম ও বিশ্বপ্রেম
স্বদেশ প্রেম এবং বিশ্বপ্রেমের মধ্যে রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। বিশ্ব যদি ভালো না থাকে তাহলে নিজের দেশকে ভালো রাখা যায় না। নিজের দেশেকে স্বাধীন স্বাচ্ছন্দে বাঁচতে হলে বিশ্বকে আগে ভালবাসতে হবে, বিশ্বকে ভালো রাখতে হবে। আর যদি বিশ্ব ভালো থাকে তাহলে আমরা ভালো থাকতে পারবো। কারণ স্বদেশপ্রেম ও বিশ্বপ্রেম একক সূত্রে গাঁথা। প্রতিটি মানুষের মনে স্বদেশপ্রেম থেকে জাগ্রত হয় বিশ্ব প্রেমের। তাই তো কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন –
আরো পড়ুনঃ আমার প্রিয় শিক্ষক – রচনা সম্পর্কে জেনে নিন
” ও আমার দেশের মাটি, তোমার পরে ঠেকাই মাথা
তোমাতে বিশ্বময়ী – তোমাতে বিশ্ব মায়ের আঁচল পাতা”।
স্বদেশপ্রেম ও রাজনীতি
স্বদেশপ্রেম হলো সবার ওপরে নিজের দেশকে স্থান দেওয়া। আর রাজনীতি হলো দেশকে পরিচালনার জন্য জনগণের সেবক হয়ে তাদের পাশে থাকা। আর চালকের আসনে অধিষ্ঠিত ব্যক্তির মধ্যে যদি দেশ প্রেম না থাকে তাহলে সে দেশের ধ্বংস অনিবার্য। তাই রেদেওয়ান মাসুদের ভাষায় বলতে হয়-
” রাজনীতি হলো দেশ শাসনে উপযুক্ত ব্যক্তি নির্বাচনের মূল হাতিয়ার,
কিন্তু যদি সমাজের ভালো মানুষেরা রাজনীতিতে আসতে ভয় পায়, তাহলে দেশের ধ্বংস অনিবার্য”।
স্বদেশ প্রেমহীনতার কুফল
দেশপ্রেমহীনতা একটা জাতির জন্য ধ্বংসের অন্যতম মূল কারণ। যে জাতীর মধ্যে দেশপ্রেমের অভাব যত বেশি সেই দেশ তত তাড়াতাড়ি ধ্বংস হয়। আর বিদেশী পরাশক্তি খুব সহজেই তাদের মধ্যে কন্দোল সৃষ্টি করতে পারে। সারা বিশ্ব ঐতিহাসিক পলাশীর প্রান্তরে মীরজাফরের কথা এখনো স্মরণে রেখেছে। স্বার্থপর ব্যক্তি নিজের স্বার্থের জন্য দেশের স্বাধীনতা বিলিয়ে দিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করে না। তাই দেশকে রক্ষা করতে হলে স্বদেশ প্রেম একান্ত প্রয়োজন।
উপসংহার
পরিশেষে আমরা একথা বলতে পারি যে, স্বদেশের প্রতি যার ভালবাসা নেই সে জাতি পশুর সমান। কারণ স্বদেশ প্রেম মানুষের জীবনের একটি অন্যতম মহৎ চেতনা। স্বদেশ প্রেম মানব জীবনের একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও মহৎ গুণ। প্রতিটি মানুষের মধ্যে দেশপ্রেম থাকা অবধারিত। দেশের যেকোনো পরিস্থিতিতে হিংসা- ভেদাভেদ- সাম্প্রদায়িকতা- বৈষম্য ভুলে দেশের কল্যাণে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে আর এটাই হবে স্বদেশ প্রেম।
Leave a comment