প্রশ্নঃ স্বজ্ঞা কাকে বলে? স্বজ্ঞাবাদের বিভিন্ন রূপ আলোচনা কর।

ভূমিকাঃ ইন্দ্রিয় প্রবৃত্তি বা বিচার বুদ্ধির সাহায্য না নিয়ে অনেক সময় নৈতিক নিয়মের অন্তর্নিহিত মূল্যের সরাসরি নৈতিকতা নিরূপণ করা হয়। মানুষের অন্তরে বিবেক বা স্বজ্ঞা নামে একটা বৃত্তি রয়েছে, যার সাহায্যে মানুষ তার কাজের নৈতিকতা সরাসরি পরিমাপ করতে পারে। নৈতিক মানদণ্ড সম্পর্কীয় স্বজ্ঞাবাদী মতবাদ নৈতিক নিয়মের অন্ত নিহিত মূল্য সম্পর্কীয় বক্তব্যকে স্বীকার করার মধ্য দিয়ে জন্ম লাভ করে।

স্বজ্ঞাবাদঃ ‘স্বজ্ঞা’ শব্দটি একটি অবৈজ্ঞানিক শব্দ। সেজন্য বিভিন্ন চিন্তাবিদ এ শব্দটিকে বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার করেছেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, দার্শনিক প্রবন্ধে ‘স্বজ্ঞা’ শব্দটি “নিশ্চিত কোনো কিছুর প্রত্যক্ষ অনুভূতি” কোনো কিছুর সত্যতা বা ভালোত্বের প্রত্যক্ষ অন্তর্দৃষ্টির” ‘সহানুভূতিমূলক অন্তর্দৃষ্টি’ ইত্যাদি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।

স্বজ্ঞাবাদের বিভিন্ন রূপঃ অনেক নীতিবিদ যেমন সিজউইক স্বজ্ঞাবাদকে তিন শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন। যথা- ১. প্রত্যক্ষণগত স্বজ্ঞাবাদ, ২. নির্বিচার স্বজ্ঞাবাদ ও ৩. দার্শনিক স্বজ্ঞাবাদ।

১. প্রত্যক্ষণগত স্বজ্ঞাবাদঃ প্রত্যক্ষণগত স্বজ্ঞাবাদ অনুসারে, কোনো বিশেষ কাজের ন্যায়ত্ব-অন্যায়ত্ব বা ভালোত্ব- মন্দত্ব প্রত্যক্ষণ অন্তরের বোধশক্তি বা অন্তর্দৃষ্টির মাধ্যমে সরাসরি নির্ধারণ করা হয়। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, ব্রুটাসের দ্বারা সিজারের হত্যা সরাসরি আমাদের বিবেক বা অন্তরের বোধশক্তির মাধ্যমে ন্যায় বলে আমরা মনে করি। আর একেই প্রত্যক্ষণগত স্বজ্ঞাবাদের একটি চমৎকার উদাহরণ বলে মনে করা হয়।

২. নির্বিচার স্বজ্ঞাবাদঃ আমরা একটা বিশেষ প্রাণীর কাজের ন্যায়ত্ব-অন্যায়ত্ব বা ভালোত্ব-মন্দত্ব বিচার বুদ্ধির পরিবর্তে প্রত্যক্ষ অন্তর্দৃষ্টির মাধ্যমে সরাসরি জানতে পারি, যেমন— ‘সত্য কথা বলা ন্যায়’। আর এটাকেই নির্বিচারে স্বজ্ঞাবাদের একটা প্রকৃষ্ট উদাহরণ বলা যেতে পারে। এই ধরনের অন্তরের বোধশক্তির সাহায্যে নৈতিক বিচার একটা বিশেষ বা ব্যক্তিগত ক্ষেত্রের পরিবর্তে একটা বিশেষ কাজের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বলে একে সাধারণ স্বজ্ঞাবাদও বলা হয়। এই নির্বিচার স্বজ্ঞাবাদ হিউম এর নৈতিক সংশয়বাদের বিরুদ্ধ মতবাদ হিসেবে স্কটিশ দার্শনিক সম্প্রদায় এর দ্বারা সমর্থিত হয়ে থাকে। হিউম সব ধরনের কর্তব্যকে পরোপকারিতার কর্তব্যে পরিণত করেন।

৩. দার্শনিক স্বজ্ঞাবাদঃ আমরা সরাসরি কেবল কোনো নৈতিক নীতি বা সূত্রকে জানতে পারি। যার মাধ্যমে কোনো কাজের ন্যায়ত্ব অন্যায়ত্ব বা ভালোত্ব মন্দত্বের নৈতিক বিচার করতে পারি। উদাহরণস্বরূপ আমরা স্বজ্ঞামূলক ভাবে জানতে পারি যে, কোনো মানুষকে নিছক উপায় হিসেবে গণ্য করা অন্যায়। আর এটাকেই দার্শনিক স্বজ্ঞাবাদের একটা প্রকৃষ্ট দৃষ্টান্ত বলে মনে করা যায়। এই ধরনের অন্তর্দৃষ্টি বা অন্তরের বোধশক্তির সাহায্যে নৈতিক বিচার নীতিবিদ্যায় সার্বিক নীতির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বলে একে সার্বিক স্বজ্ঞাবাদও বলা হয়।

সমালোচনাঃ স্বজ্ঞাবাদ বিভিন্ন ধরনের সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে। নিচে এগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো- 

প্রথমতঃ স্বজ্ঞাবাদ বিচার বিবেচনা বা বুদ্ধির পরিবর্তে স্বজ্ঞার শ্রেষ্ঠত্বকে দাবী করে বলে যে, বিচার বুদ্ধি নয়, বরং স্বজ্ঞাই নৈতিকতার মানদণ্ড হিসেবে একটা সন্তোষজনক মানদণ্ড। স্বজ্ঞাবাদের এই বক্তব্য কখনোও গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। 

দ্বিতীয়তঃ স্বজ্ঞা যেহেতু প্রত্যক্ষ অনুভূতি, সেহেতু এ ব্যক্তি নির্ভর। ব্যক্তিগত অনুভূতি হিসেবে স্বজ্ঞা এক এক ব্যক্তির কাছে এক এক ভাবে প্রতিভাত হয়ে থাকে বলে এক ব্যক্তির স্বজ্ঞা অন্য ব্যক্তির স্বজ্ঞার বিরোধীতা করতে পারে। তাই এই ব্যক্তিগত নৈতিক অনুভূতির সাহায্যে কাজের ন্যায়ত্ব-অন্যায়ত্বের নৈতিক বিচার করা সম্ভব নয়।

তৃতীয়তঃ নৈতিকতার মানদণ্ড হিসেবে স্বজ্ঞাবাদ একটা ব্যর্থ মতবাদ। কেননা প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমাদের স্বজ্ঞা যে সব আদেশ-নির্দেশ দিয়ে থাকে, সেগুলোর বিচার বিবেচনা করা সম্ভব। তাই স্বজ্ঞাবাদের প্রকৃতি আলোচনা করলে দেখা যায়, নৈতিকতার মানদণ্ড হিসেবে স্বজ্ঞাবাদ একটা সন্তোষজনক মানদণ্ড নয়৷

উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, নৈতিকতার মানদণ্ড সম্পর্কীয় মতবাদ হিসেবে স্বজ্ঞাবাদের অনেক সমালোচনা থাকলেও এর গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না। স্বজ্ঞাবাদ ভালোকে ভালো এবং ন্যায়কে ন্যায় বলে সম্বোধন করে।

দর্শন বিভাগের বই pdf, 

মাস্টার্স দর্শন বিভাগের বই pdf, 

দর্শন বিভাগের বইয়ের তালিকা, 

অনার্স প্রথম বর্ষের দর্শন বিভাগের বইয়ের তালিকা, 

ডিগ্রি ১ম বর্ষের দর্শন বই pdf, 

মাস্টার্স দর্শন বিভাগের বই pdf, 

অনার্স ৩য় বর্ষের বই দর্শন বিভাগ pdf, 

অনার্স ২য় বর্ষের দর্শন বিভাগের বই