স্পিয়ারম্যানের এই মতবাদের প্রচুর সমালােচনা হয়। আমেরিকার থনডাইক সর্বপ্রথম এই মতবাদের সমালােচনা করেন। তার মতে, মানসিক শক্তি হল অনেকগুলি বিশেষ বিশেষ স্বাধীন ক্ষমতার সমবায়, কিন্তু পরবর্তীকালে তার এই মত বর্জন করেন এবং বৌদ্ধিক কার্যের মধ্যে একটি একক উপাদানের সন্ধান করেন।
মনােবিদ গডফ্রে থম্পসন-এর মতে, স্পিয়ারম্যানের মতবাদের সাহায্য ছাড়াও আমাদের বৌদ্ধিক কাজকে অন্যভাবে প্রকাশ করা যেতে পারে, বুদ্ধির ক্ষেত্রে একটিমাত্র সাধারণ উপাদানের (G-factor) কথা না বলে বরং দলগত উপাদানের (Group fcactor) দ্বারাও সহগতির ওই প্রকৃতিতে বিশ্লেষণ করা যায়।
থাস্টোন G উপাদানের অস্তিত্বকে অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, সহগতির পরিমাণ খুবই সামান্য যার উপর ভিত্তি করে G-এর অস্তিত্ব প্রমাণ করা যায় না।
টমসন বলেছেন, কতকগুলি উপাদান বা ক্ষমতা একসঙ্গে থাকে দলবদ্ধ হয়ে, তাই সকল বুদ্ধিমূলক কাজের মধ্যে একটিই সাধারণ উপাদান থাকে এটা বলা যায় না।
স্পিয়ারম্যানের দ্বি-উপাদান তত্ত্বের সংশােধিত রূপ
থনডাইক ও থম্পসনের সমালােচনার প্রেক্ষিতে স্পিয়ারম্যান তার দ্বি-উপাদান তত্ত্বের সংশােধন করেন। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে তিনি দলগত ক্ষমতার (Group factor, সংক্ষেপে G) কথা বলেন। এই দলগত ক্ষমতা একদিকে যেমন সাধারণ ক্ষমতার মতাে সর্বজনীন নয়, তেমনই বিশেষ ক্ষমতার মতাে নির্দিষ্ট কাজেই প্রয়ােজন, এমন নয়। এর মাঝামাঝি অর্থাৎ একাধিক বৌদ্ধিক কাজে এর প্রয়ােজন, তবে সব কাজে নয়। এরূপ মানসিক উপাদান হল বাচনিক ক্ষমতা, সংখ্যাবাচক ক্ষমতা ইত্যাদি। তার মতে, একের বেশি বৌদ্ধিক কাজে ব্যবহৃত হয়, তাই দক্ষতা হল দলগত উপাদান বা Group factor। তবে সাধারণ উপাদানের মতাে নয়।
উপরের আলােচনা থেকে এই সিদ্ধান্ত করা যায় যে, দ্বি-উপাদান তত্ত্বটি গণিতশাস্ত্রের উপর ভিত্তি করেই প্রতিষ্ঠিত। কোনাে কোনাে ক্ষেত্রে এর সমালােচনা করা হলেও এটি মানসিক ক্ষমতার উপর গবেষণার দিগন্ত খুলে দিয়েছে। বুদ্ধি ও প্রবণতা অভীক্ষা প্রস্তুতিতে এর অবদান বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
স্পিয়ারম্যানের দ্বি-উপাদান তত্ত্বের শিক্ষাগত গুরুত্ব
স্পিয়ারম্যানের দ্বি-উপাদান তত্ত্বের শিক্ষামূলক তাৎপর্য এককথায় অনস্বীকার্য
(১) গুরুত্ব: শিক্ষক-শিক্ষিকার কাছে এর গুরুত্ব অপরিসীম।
(২) নির্দেশনা দান : ছাত্রছাত্রীকে যদি সঠিকভাবে শিক্ষামূলক ও বৃত্তিমূলক নির্দেশনা দান করতে হয়, তাহলে শিক্ষক-শিক্ষিকাকে অবশ্যই এই তত্ত্বের সঙ্গে পরিচিত হতে হবে।
(৩) বিষয় নির্বাচন : ছাত্রছাত্রীদের বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে এই তত্ত্বটি বিশেষভাবে সহায়ক হয়।
(৪) বিজ্ঞানমনস্কতা : যে-কোনাে বিষয়ে সাফল্যলাভ করতে হলে ওই বিষয়ের উপর বিশেষ দক্ষতার প্রয়ােজন হয়। যেমন— বিজ্ঞান শাখায় সফলতা লাভ করতে হলে, ছাত্রছাত্রীদের অবশ্যই বিজ্ঞানমনস্ক হতে হবে।
(৫) পাঠক্রম নির্বাচনে নির্দেশদান : এই ক্ষমতা সম্পর্কে শিক্ষক শিক্ষিকা অবহিত হওয়ার পর যদি ছাত্রছাত্রীদেরকে পাঠক্রম নির্বাচনের ক্ষেত্রে নির্দেশ দেন তাহলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ছাত্রছাত্রী সফলতা অর্জন করবে।
(৬) শিক্ষার্থীর আচরণ : শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বৌদ্ধিক আচরণ এর সাহায্যে ব্যাখ্যা করা সম্ভব।
(৭) বুদ্ধি সংক্রান্ত আলােচনা : এই তত্ত্ব বুদ্ধি সংক্রান্ত বিভিন্ন ব্যাখ্যা প্রদান করতে সক্ষম।
(৮) মৌলিক ধারণা : স্পিয়ারম্যান তত্ত্ব শিক্ষার্থীদের বুদ্ধি সংক্রান্ত মৌলিক ধারণা দিতে সক্ষম।
Leave a comment