সূচনা: প্রাচীন গ্রিসের অন্যতম নগররাষ্ট্র স্পার্টার জনগোষ্ঠী প্রধানত তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল। এগুলি হল- [1] স্বাধীন নাগরিক হিসেবে পরিচিত স্প্যাটিয়েট (Spartiet), [2] চাষবাস ও ব্যাবসায়িক পেশায় নিযুক্ত পেরিওকয় (Periocei) এবং [3] ক্রীতদাস হেলট (Helot)।
[1] পেরিওকয়দের পরিচয়: পেরিওকয়রা বংশগতভাবে গ্রিক জাতিরই মানুষ ছিল। ‘স্প্যাটিয়েট নামে স্বাধীন নাগরিক এবং ‘হেলট’ নামে ক্রীতদাসদের মধ্যবর্তী স্তরে পেরিওকয়দের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থান ছিল।ম্পার্টায় পেরিওকয়দের মােট সংখ্যা ছিল অন্তত ১ লক্ষ ২০ হাজার, অর্থাৎ স্পার্টার মােট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশের কাছাকাছি।
[2] নাগরিকদের আংশিক সহানুভূতি প্রাপ্তি: পেরিওকয়দের প্রতি স্পাটার স্বাধীন নাগরিকরা কিছু কিছু ক্ষেত্রে বেশ সহানুভূতি দেখাত। ইতিহাসবিদ উইল ডুরান্ট বলেছেন যে, পেরিওকয়রা ভৌগােলিকভাবে স্পার্টানদের বেষ্টন করে রেখেছিল এবং সামাজিক দিক থেকে তারা স্পার্টান ও হেলটদের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থান করত। পেরিওকয়রা নাগরিকদের তত্ত্বাবধানে সেনাবাহিনীতে কাজ করত। একথা বলা যায়, স্পার্টার সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনে পেরিওকয়রা একটা প্রয়ােজনীয় স্থান অধিকার করেছিল। ইতিহাসবিদ ফিনলে মনে করেন যে, স্পার্টানদের প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে পেরিওকয়রা বুদ্ধিমানের কাজ করেছিল। কেন-না, স্পার্টা তাদের শান্তি, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সুরক্ষা দিয়েছিল।
[3] স্বার্থের বিনিময়: পেরিওকয়রা শাসকগােষ্ঠীর হাতে থাকা জমিও চাষ করত। ইতিহাসবিদ ফিনলে বলেছেন যে, “সেনাবাহিনীতে স্পার্টান ও পেরিওকয়রা প্রায় সমান পরিমাণে ছিল। স্পার্টার সেনাবাহিনী যেমন পেরিওকয়দের সুরক্ষা দিত তেমনি তারাও স্পার্টানদের জন্য প্রয়ােজনীয় শিল্পোৎপাদন ও বাণিজ্যের কাজে নিজেদের নিয়ােজিত রাখত।
[4] নাগরিকদের সঙ্গে অধিকারগত ব্যবধান: স্পার্টার অধিবাসীদের মধ্যে দ্বিতীয় শ্রেণিভুক্ত পেরিওকয়রা ব্যক্তিগতভাবে স্বাধীন হলেও রাজনৈতিকভাবে তারা ছিল। পরাধীন। তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ছিল না। উর্বর কৃষিজমিগুলি নাগরিকদের হাতে থাকলেও পেরিওকয়দের জমি ছিল তুলনামূলকভাবে অনুর্বর।
[5] সামাজিক বাধানিষেধ: পেরিওকয়রা নিজেদের সমাজে স্বাধীনতা ভােগ করলেও স্পার্টার নাগরিকদের সঙ্গে তাদের কোনাে গভীর সামাজিক সম্পর্ক ছিল না। নাগরিকদের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করার অধিকারও ছিল না তাদের।
[6] শোষণের শিকার: অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পেরিওকয়দের শাসকগােষ্ঠী নাগরিকদের শােষণের শিকার হয়েছিল। শাসকরা মনে করত যে, শাসিত গােষ্ঠীর হাতে আর্থিক সমৃদ্ধি এলে তাদের মধ্যে বিদ্রোহ করার তাগিদ বৃদ্ধি পায়। এজন্য নাগরিকরা বাধ্যতামূলক বিভিন্ন অতিরিক্ত ও অযৌক্তিক করের বােঝা পেরিওকয়দের ওপর চাপিয়ে তাদের অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল করে রাখতে চাইত।
উপসংহার: হেলট ও পেরিওকয়দের প্রতি স্পার্টার রাষ্ট্রীয় দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে অধ্যাপক হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় লিখেছেন, “অপরাজেয় যােদ্ধা সৃষ্টি করাই হল রাষ্ট্রের একমাত্র লক্ষ্য। ‘helotes’ (হেলট), ‘perioeci’ (পেরিওকয়) প্রভৃতি অনিচ্ছুক প্রজাকে পদানত করে রাখার একান্ত প্রয়ােজনে এবং সর্বদা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে থাকার তাগিদেই এই ঘটনা সম্ভব হয়েছিল।
Leave a comment