প্রশ্নঃ কোন অবস্থায় বিক্রয় বাতিলের জন্য অথবা সার্টিফিকেট কার্যকরীকরনের জন্য বিক্রয়কৃত স্থাবর সম্পত্তির দখল পুনরুদ্ধারের জন্য দেওয়ানি আদালতে মামলা করা যায়?
ভূমিকাঃ সার্টিফিকেট জারি করার মাধ্যমে সরকারি অনাদায়ী দাবী আদায় করা হয়। অর্থাৎ কোন দেনাদার তার দেনা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে বা দেনা পরিশোধ না করলে সরকার তার বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট ইস্যু করে তার স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি নিলামে বিক্রি করে অনাদায়ী পাওনা আদায় করে।
কোন অবস্থায় বিক্রয় বাতিলের জন্য অথবা
সার্টিফিকেট কার্যকরীকরনের জন্য বিক্রয়কৃত স্থাবর সম্পত্তির দখল পুনরুদ্ধারের জন্য দেওয়ানি আদালতে মামলা করা যায়ঃ যখন বিক্রয় বাতিলের জন্য মামলা দায়ের করা যায় অথবা সার্টিফিকেট কার্যকরীকরনের জন্য বিক্রয়কৃত স্থাবর সম্পত্তির দখল পুনরুদ্ধারের জন্য দেওয়ানি আদালতে মামলা করা যায় নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো-
স্থাবর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার বা নিলাম বিক্রি রদের জন্য : অত্র আইনের ৩৬ ধারা অনুযায়ী-
* ৭ ধারায় নোটিশ জারি হয়নি শুধু এই কারণে নিলাম বাতিল হবে না।
* ৭ ধারার নোটিশ জারি না হওয়ার কারণে যথেষ্ট ক্ষতি হলে দেওয়ানি আদালতে মামলা দায়ের করা যায়।
* নিলাম বিক্রি রদের জন্য বা পুনর্দখল পাওয়ার জন্য ১ বছরের মধ্যে মামলা দায়ের করতে হবে।
* দেনাদার যদি সার্টিফিকেট কার্যক্রমে উপস্থিত থাকে অথবা এই আইনের ২২ ও ২৩ ধারা অনুযায়ী নিলাম রদের আবেদন করলে দেওয়ানি আদালত এই ধারায় কোন মামলা গ্রহণ করবেন না।
সার্টিফিকেট কার্যক্রমে প্রতারণা হলেঃ ৩৭ ধারা অনুযায়ী-
* সার্টিফিকেট কার্যক্রমে কোন অনিয়ম বা প্রতারণা হলে দেওয়ানি আদালতে মামলা দায়ের করা যাবে।
* এক্ষেত্রে দেওয়ানি আইন অনুযায়ী উক্ত ঘটনা জানার ৩ বছরের মধ্যে মামলা দায়ের করতে হবে।
কখন কোন কোন বিষয়ে দেওয়ানি আদালতে মামলা করা যায়ঃ দেওয়ানি আদালতে মামলা করার বিষয়ে এই আইনের ৩৪-৩৭ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে। নিম্নে তা আলোচনা করা হলো-
(i) সার্টিফিকেট সংশোধন ও বাতিল করার জন্যঃ
* সার্টিফিকেট বাতিল বা সংশোধনের জন্য এই আইনের ৩৪ ধারা অনুযায়ী দেওয়ানি আদালতে মামলা দায়ের করা যায়।
* এক্ষেত্রে ৭ ধারার নোটিশ জারির ৬ মাসের মধ্যে মামলা দায়ের করতে হবে।
* ৯ ধারা অনুযায়ী সার্টিফিকেট দেনাদার তার দায় অস্বীকার করে আপত্তি দিলে তা নিষ্পত্তি হওয়ার ৬ মাসের মধ্যে মামলা দায়ের করা যায়।
* ১০ ধারার আদেশের বিরুদ্ধে ৫১ ধারা অনুযায়ী আপীল করলে উক্ত আপীল নিষ্পত্তির ৬ মাসের মধ্যে মামলা করা যায়।
* তবে ৩৪ ধারা অনুযায়ী বিচারের জন্য দেওয়ানি আদালতে মামলা দায়ের করা যাবে না।
(ii) স্থাবর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার বা নিলাম বিক্রি রদের জন্যঃ
* ৭ ধারায় নোটিশ জারি হয়নি শুধু এই কারণে নিলাম বাতিল হবে না।
* ৭ ধারার নোটিশ জারি না হওয়ার কারণে যথেষ্ট ক্ষতি হলে দেওয়ানি আদালতে মামলা দায়ের করা যায়।
* নিলাম বিক্রি রদের জন্য বা পুনর্দখল পাওয়ার জন্য ১ বছরের মধ্যে মামলা দায়ের করতে হবে।
* দেনাদার যদি সার্টিফিকেট কার্যক্রমে উপস্থিত থাকে অথবা এই আইনের ২২ ও ২৩ ধারা অনুযায়ী নিলাম রদের আবেদন করলে দেওয়ানি আদালত এই ধারায় কোন মামলা গ্রহণ করবেন না।
দেওয়ানি আদালত কখন সার্টিফিকেট অফিসারের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করতে পারেঃ দেওয়ানি আদালত যখন সার্টিফিকেট অফিসারের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করতে পারে নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো-
(i) দেওয়ানি কার্যবিধির ৯ ধারা অনুযায়ী দেওয়ারি প্রকৃতির যে কোন মামলা দেওয়ানি আদালত গ্রহণ করতে পারবে।
(ii) সার্টিফিকেট অফিসার যদি তার ক্ষমতা বহির্ভূত কোন কাজ করে এবং ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ আদালতে তার প্রতিকার প্রার্থনা করে তাহলে দেওয়ানি আদালত সার্টিফিকেট না অফিসারের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করতে পারে।
(iii) সার্টিফিকেট অফিসার যদি এমন জরিমানা বা ফি আদায়ের আদেশ দেন যা তার ক্ষমতার বাইরে।
(iv) সার্টিফিকেট সই করার বা জারি করার পূর্বেই সমুদয় পাওনা পরিশোধ করা সত্বেও সার্টিফিকেট ইস্যু করলে।
(v) বিক্রয়টি বাতিল বলে গণ্য হলে এবং তা বাদীর স্বার্থ ক্ষুন্ন না করলে।
(vi) দাবীটি যদি এমন হয়, যা সরকারি দাবী আদায় আইন অনুযায়ী আদায়যোগ্য নয়।
(vii) সার্টিফিকেট দেনাদার অত্র আইনের ৩৪-৩৭ ধারা অনুযায়ী মামলা দায়ের করলে।
উপসংহারঃ সার্টিফিকেট জারির মাধ্যমে মূলতঃ দেনাদারের নিকট থেকে সরকারি অনাদায়ী পাওনা আদায় করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এজন্য তার স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি নিলাম করে বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়। অবশ্য এই বিক্রির জন্য অন্য ব্যক্তির ক্ষতি হলে তিনি দেওয়ানি আদালতে মামলা দায়ের করতে পারেন।
Leave a comment