অথবা, বিন্দু কে? তার পরিচয় দাও

উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘স্ত্রীর পত্র’ গল্পে মৃণালের বড় জায়ের বোন বিন্দু। তার বিধবা মা মারা গেলে সে তার বোনের সংসারে এসে ঢুকল। তাতে কেউ সন্তুষ্ট নয়। এমনকি তার আপন বোনও তাকে সহ্য করতে পারে না- সংসারে একটি আপদ হিসেবে দেখে। মূলত তাকে কেন্দ্র করেই গল্পে বিশাল এক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।

বিন্দুকে তারা বাড়ির বিভিন্ন কাজে লাগিয়ে দেয়। তার জন্য মোটা ভাত কাপড়ের ব্যবস্থা করা হয়। বিন্দুও বঞ্চিতদের ন্যায় ভয়ে ভয়ে থাকতে লাগল। সংসারে সে অপয়া। বাড়িতে কিছু হারিয়ে গেলে বিন্দুর দোষ হয়। আবার স্বদেশী হাঙ্গামায় বাড়ি বাড়ি পুলিশ তল্লাশি করলে তা নিয়েও বিন্দুকে সকলে সন্দেহ করে। তারপরও মৃণাল বিন্দুকে যখন ছাড়ে না তখন পাগল স্বামীর সাথে তাকে বিয়ে দেওয়া হয়। বিন্দু অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করে। বিন্দুর সাথে বাড়ির লোকেরা দুঃসহ ব্যবহারের কারণে মৃণালের ভিতর পরিবর্তন আসে। বিন্দু নামের মেয়েটি মৃণালের শ্বশুরবাড়ির পরিবারে বাহ্যিকভাবে স্থান দিলেও হৃদয়গত দিক থেকে কেউ তাকে আশ্রয় দিতে পারেনি পরিবারের মধ্যে। মৃণালই পেরেছে বিন্দুকে হৃদয়ে স্থান দিতে। অপরদিকে, মৃণাল ও তার রূপ কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব এবং বুদ্ধির, স্বীকৃতি পেয়েছে বিন্দুর ভালোবাসার মধ্য দিয়ে বিন্দুর সংস্পর্শে এসে। পুরুষশাসিত সমাজ বাস্তবতায় বিন্দুকে তুলে দেওয়া হয় একজন পাগলের হাতে- বলা যায় মানবিকতা এখানে লাঞ্ছিত। বিন্দুকে কেন্দ্র করেই উভয় স্থানে নানা ঘটনা-পরিক্রমার সৃষ্টি হয়। বিন্দু মৃণালের চেতনায় জ্বেলে দিয়েছে মুক্তির আলো। বলা যায়, ‘স্ত্রীর পত্র’ গল্পে বিন্দু গৌণ চরিত্র হলেও গল্পে তার উপস্থিতি প্লটকে দিয়েছে বেগ এবং মৃণালের চিন্তার জগৎকে করেছে প্রসারিত। তাই সার্বিক বিবেচনায় বলা যায়- ‘স্ত্রীর পত্র’ গল্পে বিন্দুই কেন্দ্র।”