অথবা, স্টয়িকবাদের জন্ম সম্পর্কে কি জান?
ভূমিকাঃ গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটলের তিরােধান রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসের একটি যুগের অবসান ঘটায়। রাষ্ট্রচিন্তার অগ্রগতি সর্বপ্রথম বাধাপ্রাপ্ত হয় এরিস্টটলের মৃত্যুর অব্যবহিত পর থেকেই। প্রকৃত প্রস্তাবে এরিস্টটলের পর থেকেই রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচিত হয়। তখন থেকে রাষ্ট্রদর্শন অধিকতর ব্যক্তিতান্ত্রিক এবং সার্বজনীন হয়ে ওঠে।
স্টয়িকবাদঃ সাইপ্রিয়ট দার্শনিক জেনাে স্টয়িকবাদের অন্যতম প্রবক্তা। খ্রিষ্টপূর্ব ৩৪২ অব্দে তিনি সাইপ্রাসের সিটিয়াম শহরে জন্মগ্রহণ করেন। জেনাে ছিলেন নৈরাজ্যবাদের অন্যতম পুরােধা ক্রেটসের একজন বিশিষ্ট শিষ্য। আর এই কারণে তার দর্শনে নৈরাজ্যবাদের যথেষ্ট প্রভাব পরিদৃষ্ট হয়। স্টয়িকবাদের অপর একজন প্রবক্তা ছিলেন ক্রিসিপাস। এই দুই দার্শনিকের প্রচেষ্টার ফসলই হচ্ছে স্টয়িক স্কুল আর এই স্কুল থেকে উৎসারিত দার্শনিক মতবাদই হলাে স্টয়িকবাদ। প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক আইন স্টয়িক দর্শনের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। স্টয়িকবাদের মতে, প্রকৃতি হচ্ছে সৃষ্টিকর্তা, মানুষের যাবতীয় আশা আকাংখা এবং কার্যাবলীর উৎস আর প্রাকৃতিক আইনানুসারে জীবন নির্বাহ করার অর্থ সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছার উপর নিজেকে সমর্পণ করা। স্টয়িক মতবাদের প্রবক্তাগণ ঐশ্বরিক অনুগ্রহের উপর সবর্তোভাবে নির্ভরশীল। ঐশ্বরিক অনুগ্রহের উপর তাদের ছিল সুদৃঢ় বিশ্বাস এবং প্রত্যয়। স্টয়িকরা ব্যক্তিকে সমাজ হতে একটি স্বতন্ত্র সত্তা বলে বিবেচনা করত। মানুষ কোন রাজনৈতিক বন্ধনে নয় বরং নৈতিকতার বন্ধনে আবদ্ধ ছিল। স্টয়িকদের মতে, মানুষ দুই ধরনের আইন দ্বারা শাসিত হতাে- একটি রীতিনির্ভর আইন এবং অপরটি যুক্তিনির্ভর আইন। যা মানুষকে পৃথিবীর অন্যান্য সৃষ্টির মধ্যে একটি বিশেষ স্থান প্রদান করেছে।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, স্টয়িকরা বিলাসবহুল ও রাজনৈতিক জীবনের প্রতি অনাসক্ত ছিল, ব্যক্তির আত্মনির্ভরশীলতার উপর তারা অত্যধিক গুরুত্ব আরােপ করতাে। ব্যক্তির সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য এবং স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করাই তাদের মূল লক্ষ্য ছিল। বিশেষ করে ক্রিসিপাসের ব্যাখ্যানুসারে স্টয়িকবাদ সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠার প্রয়ােজনীয়তার উপর সবিশেষ গুরুত্ব আরােপ করে।
Leave a comment