বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি স্কুল কলেজ এই স্কাউট রয়েছে কিন্তু আমাদের শিক্ষার্থীরা স্কাউট শব্দের অর্থ কি – স্কাউট প্রতিষ্ঠার ইতিহাস জানেনা। তোমরা যারা স্কাউট শব্দের অর্থ কি – স্কাউট প্রতিষ্ঠার ইতিহাস সম্পর্কে জানতে চাও আমার পোস্ট তাদের জন্য।
প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা, নিচে তোমাদের জন্য স্কাউট শব্দের অর্থ কি – স্কাউট প্রতিষ্ঠার ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
স্কাউট শব্দের অর্থ কি
স্কাউট শব্দের অর্থ হলো বরখাস্ত করা চলো মজা করি, উপহাস, অবজ্ঞাসহ আচরণ করা ইত্যাদি। স্কাউট শব্দটির অর্থ দ্বারা আনন্দদায়ক, উদার, ভাগ্যবান ইত্যাদিও বোঝানো হয়ে থাকে। স্কাউট শব্দের অর্থ আবার চর এবং গুপ্তচর অর্থ ব্যবহৃত হয় অর্থাৎ এই সংস্থাটি অর্থাৎ স্কাউট শিক্ষার্থীদের আনন্দের মধ্যে দিয়ে শিক্ষাদান করে থাকে। তবে স্কাউট বিশ্বব্যাপী একটি যুবকদের জন্য সংস্থা এই অর্থে স্কাউট অর্থ যুব সংস্থা বলা যেতে পারে।
স্কাউটের মাধ্যমে যুবকদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটে যাতে করে তারা সমাজ গঠনে এবং যে কোন কাজে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। ১৯০৭ সালে লর্ড ব্যাটেন পাওয়েল স্কাউট আন্দোলন শুরু করেন এবং তিনি পেশায় ছিলেন একজন ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল।
স্কাউট প্রতিষ্ঠার ইতিহাস
১৯০৭ সালে রবার্ট স্টিফেন্স লর্ড ব্যাটেন পাওয়েল powel স্কাউটিং আন্দোলন শুরু করেন। তিনি ১৮৫৭ সালের ২২ শে ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। যার কারণে তার জন্ম তারিখ ২২শে ফেব্রুয়ারি অনুযায়ী বিশ্ব স্কাউট দিবস পালন করা হয়ে থাকে। লর্ড পাওয়ালের জন্মের অর্ধশতক পরে তিনি স্কাউটিং আন্দোলন শুরু করেন কারন তিনি পেশায় ছিলেন একজন ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল। সেনাবাহিনীর থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি স্কাউট আন্দোলন শুরু করেন।
কারণ তিনি মনে করেন স্কাউটিং এর মাধ্যমে একমাত্র শিক্ষার্থীদের অর্থাৎ যুবসমাজকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হয়। স্কাউটিং এর আন্দোলন ১৯০৭ সালে শুরু হলেও ভারতীয় উপমহাদেশেও ইংরেজ শাসনামল থেকেই স্কাউটিং ছিল। তবে বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে স্কাউট সমিতি গঠিত হয় এবং ১৯৭২ সালেই সরকারি স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ স্কাউট সমিতির পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে বাংলাদেশ স্কাউট নাম ধারণ করে।
তবে এই সংগঠনটিতে কোন নারীর সদস্যদের অংশগ্রহণের নিয়ম ছিল না। দীর্ঘ কয়েক বছর পরে অর্থাৎ ১৯৯৪ সালে নারীদের জন্য স্কাউট উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। ১৯৭৪ সালে নারীদের জন্য স্কাউট উন্মুক্ত করার পরে ডাবলু ও এস এম WOSM কর্তৃক ১০৫ তম সদস্য হিসেবে স্কাউটিং স্বীকৃতি লাভ করে। তবে বর্তমানে স্কাউট ব্যাপক চলমান রয়েছে বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি স্কুল কলেজে।
২০১৭ সালের স্কাউটের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে সদস্য সংখ্যা ছিল ১৭ লাখ এবং এই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ২০২১ সালের সামগ্রিকভাবে ২১ লাখ স্কাউট সদস্যের সংস্থা গড়ে তোলা লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল।
স্কাউট প্রতিষ্ঠাতার নাম কি
স্কাউট প্রতিষ্ঠাতার নাম হল রবার্ট স্টিফেন্স স্মিথ লর্ড ব্যাটেন পাওয়েল। তিনি ১৮৫৭ সালের ২২ শে ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯০৭ সালে তিনি স্কাউটিং আন্দোলন শুরু করেন। তিনি ছিলেন একজন ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্তলে লেফটেন্যান্ট জেনারেল। ব্রিটিশ সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি স্কাউটিং আন্দোলন শুরু করেন এবং তার এই আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষার্থীদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা।
স্কাউট কি এবং কেন করা হয়?
স্কাউট হলো যুবকদের একটি আন্দোলন যে আন্দোলনে যুবকদের সার্বিক দিক থেকে অর্থাৎ সুনাগরিকভাবে গড়ে তোলার একটি প্রক্রিয়া বা প্রচেষ্টা করা হয়।স্কাউট হলো যুবকদের জন্য একটি সংস্থা একে যুবক সামাজিক আন্দোলন নামে অভিহিত করা হয়। আবার এটি স্কাউটিং আন্দোলন নামেও পরিচিত। তবে স্কাউট হলো বিশ্বব্যাপী যুব সামাজিক আন্দোলন এবং এই আন্দোলনটি স্কাউটিং পদ্ধতিতে পরিচালিত হয় এবং
এর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষার একটি প্রোগ্রাম করা হয় যেখানে ক্যাম্পিং, জলজ, হাইকিং, ব্যাকপ্যাকিং, কাঠের কারুকাজ সহ খেলাধুলা এবং বিভিন্ন ব্যবহারিক অঙ্গন সহ বিভিন্ন কার্যকলাপের ওপর জোর দেওয়া হয়ে থাকে।
কেন করা হয়?
স্কাউটিং এর মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী অর্থাৎ ছেলে বা মেয়ে তাদের নিজেদের একজন প্রকৃত অর্থে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়। যারা স্কাউটিং এর সঙ্গে জড়িত বা স্কাউটের সদস্য তারা নিজেদের সার্বিক দিক থেকে পরিপূর্ণভাবে গঠন করতে পারে কারণ এখানে শেখানো হয় ক্যাম্পিং, ব্যাকপ্যাকিং, হাইকিং, জলজ, কাঠের কারুকাজ, বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা, ব্যবহারিক অঙ্গন সহ সকল ধরনের কার্যকলাপের উপর জোর দেওয়া হয়ে থাকে। স্কাউট জীবনের শৃঙ্খলাবোধ ফিরিয়া আনতে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে যার কারণে তারা সব ধরনের কাজে পারদর্শী হয়ে ওঠে আর এই জন্যই স্কাউট বা স্কাউটিং করা হয়।
বাংলাদেশে স্কাউট দিবস
বাংলাদেশে প্রতিবছর ৮ এপ্রিল স্কাউট দিবস পালন করা হয়। যদিও ২২ শে ফেব্রুয়ারি বিশ্ব স্কাউট দিবস পালন করা হয় রবার্ট স্টিফেন্স স্মিথ লর্ড ব্যাটেন পাওয়েল এর জন্মদিন বাই ২২শে ফেব্রুয়ারি এবং তার জন্মদিন অনুসারে ২২ শে ফেব্রুয়ারি স্কাউট দিবস পালন করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে ৮ এপ্রিল স্কাউট দিবস পালন করা হয়। বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে স্কাউট সমিতি গঠন করা হয় এবং সেই বছরই সরকারি স্বীকৃতি লাভ করে এরপর থেকে প্রতি বছর ৮ এপ্রিল স্কাউট দিবস পালন করা হয়ে থাকে।
বাংলাদেশে স্কাউট এর ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে স্কাউট দিবসকে প্রথমবারের মতো স্মরণীয় করে রাখতে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ প্রকাশ করেছে ১০ টাকা মূল্য মানের একটি স্মারক ডাক টিকেট এবং একটি উদ্বোধনী খাম যার মূল্য ১০ টাকা এবং একটি ডেটা কার্ড যার মূল্য ৫ টাকা ও একটি উদ্বোধনী সিলমোহর।
নারীদের জন্য স্কাউট
বাংলাদেশ ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ স্কাউট সমিতি গঠিত হয় এবং সেই বছরই সরকারি স্বীকৃতি লাভ করে তবে বাংলাদেশ স্কাউট সমিতি পঞ্চম কাউন্সিল অর্থাৎ ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ স্কাউট নাম ধারণ করে। তবে বাংলাদেশ স্কাউট এ পর্যন্ত কোন নারী সদস্য বা মেয়ে শিক্ষার্থীর স্কাউট হওয়ার নিয়ম ছিল না। ১৯৯৪ সালে নারীদের জন্য স্কাউট উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় এবং ১৯৯৪ সালে WOSM (World Organisation of the Scout Movement) স্বীকৃতি লাভ করে।
স্কাউটিং এর প্রয়োজনীয়তা বা কার্যক্রম
স্কাউটিং এর প্রধান উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা এবং তাদের এমনভাবে গড়ে তোলা হয় যেখানে ক্যাম্পিং, জলজ, হাইকিং, ব্যাকপ্যাকিং, কাঠের কারুকাজ সহ খেলাধুলা এবং বিভিন্ন ব্যবহারিক অঙ্গন সহ বিভিন্ন কার্যকলাপের ওপর জোর দেওয়া হয়ে থাকে। স্কাউটের সদস্যগণ বিভিন্ন রকম বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম থেকে শুরু করে বিভিন্ন দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে ত্রাণ পৌঁছানো, পরিবেশ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে কার্যক্রম ভূমিকা পালন করে এবং বিভিন্ন টিকাদান কর্মসূচির ক্ষেত্রেও তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়া তারা নানাবিধ কার্যক্রমের জন্য এবং দেশ ও জাতি গঠনে সদা প্রস্তুত থাকে।
বাংলাদেশে স্কাউটিং এর সদস্য সংখ্যা
বর্তমানে বাংলাদেশে স্কাউটিং এর সদস্য সংখ্যা হল ২২ লাখ। বাংলাদেশের সুবর্ণ জয়ন্তী অর্থাৎ ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বাইশ ২২ লাখ স্কাউট সদস্য নিয়ে বাংলাদেশ স্কাউট দিবস উদযাপন করা হচ্ছে এবং স্কাউটিং এর প্রধান উদ্দেশ্য হল দেশের শিশু, কিশোর এবং যুবকদের সৎ, দেশপ্রেমিক, চরিত্রবান, আত্মনির্ভরশীল এবং সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা। আর এই লক্ষ্যেই বাংলাদেশের বিভিন্ন স্কুল কলেজে অর্থাৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্কাউটিং কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
১৯৭২ সালের ৮ এপ্রিল বাংলাদেশে স্কাউটিং এর সূচনা হয় এবং এরপর থেকেই প্রতিবছর ৮ এপ্রিল বাংলাদেশ স্কাউট দিবস উদযাপন করা হয়। এবং ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে ১০৫ তম স্কাউট সদস্য হিসেবে স্কাউটের স্বীকৃতি লাভ করে।
স্কাউট ও গাইড কি
স্কাউট হল দেশপ্রেম, সমাজসেবা, শৃঙ্খলাবোধ ইত্যাদি। তরুণ সমাজ তথা যুব সমাজের চরিত্র গঠনের জন্য গড়ে তোলা একটি শিক্ষামূলক আন্দোলন। আর গাইড হলো দিক নির্দেশনা দেওয়া অর্থাৎ আমাদের তরুণ সমাজকে দিকনির্দেশনা দিয়ে তাদের সৎ, চরিত্রবান, শৃঙ্খলাবোধ, দেশপ্রেমিক, আত্মনির্ভরশীল এবং সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলায় হল স্কাউট ও গাইড।
বাংলাদেশের স্কাউট এর স্লোগান কি
১৯৭২ সালের ৮ এপ্রিল বাংলাদেশ স্কাউট এর সূচনা হয় এবং এরপর থেকে প্রতি বছর ৮ এপ্রিল বাংলাদেশ স্কাউট দিব উদযাপন করা হয় তবে বাংলাদেশের স্কাউটদের বিভিন্ন মূল মন্ত্র রয়েছে এর মধ্যে স্কাউটদের মূলত তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে যথা
রোভার স্কাউট
কাব স্কাউট এবং
স্কাউট
রোভার স্কাউটঃ রোভার স্কাউট এর মূল মন্ত্র হলো সেবা।
কাব স্কাউটঃ কাব স্কাউট এর মূল মন্ত্র হলো যথাসাধ্য চেষ্টা করা।(স্কাউট আইনঃi) বড়দের কথা মেনে চলা।ii) নিজেদের খেয়ালে কিছু না করা।)
স্কাউটঃ স্কাউটের মূলমন্ত্র হলো সদা প্রস্তুত।
যুক্তরাষ্ট্রে কতজন স্কাউট আছে?
যুক্তরাজে ২০২১ পর্যন্ত স্কাউট এর সংখ্যা ১৪১,৬৫৯ জন প্রাপ্তবয়স্ক এবং এর সাথে রয়েছে ৪ থেকে ২৫ বছর বয়সী ৩৬২,৭৫২ জন। যুক্তরাজের স্কাউট অর্থাৎ ইউ কে স্কাউট হলো ইউরোপের বৃহত্তম জাতীয় স্কাউট সংস্থা আর এই ইউরোপীয় স্কাউট অঞ্চলের সদস্যদের প্রতিনিধিত্ব করে শতকরা ৩৫ শতাংশ ২.৫ জন শিশুর মধ্যে একজন প্রাপ্তবয়স্ক।
স্কাউট প্রতিজ্ঞা
যারা স্কাউটের সদস্য তাদের কিছু নিয়ম নীতি মেনে চলতে হয় এবং তাদের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হয় যে-
আমি আবার এত মর্যাদার ওপর নির্ভর করে প্রতিজ্ঞা করছি যে-
* আল্লাহ ও আমার দেশের প্রতি কর্তব্য পালন করতে
* স্কাউট আইন মেনে চলতে
* সর্বদা অপরকে সাহায্য
আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করব।
শেষ কথা
স্কাউটের প্রধান উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা, যারা স্কাউটের সদস্য তারা সদা প্রস্তুত থাকে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক এবং উন্নয়নমূলক কাজের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখার তাই স্কুল কলেজের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানে ও স্কাউট প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন।
Leave a comment