‘আইভানহো’ (Ivanhoe) করে প্রকাশিত হয়? উপন্যাসটির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
উপন্যাসটির প্রকাশকাল ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দ। ঘটনাস্থল ইংল্যান্ড। উপন্যাসের পাত্র-পাত্রীগণও ইংল্যান্ডের অধিবাসী। প্রথম রিচার্ডের সমকালীন স্যাক্সন এবং নর্মানদের পারস্পরিক দ্বন্দ্বসংঘাত উপন্যাসটির পটভূমিকা রচনা করেছে।
স্যাক্সন বংশোদ্ভূত অভিজাত পরিবারের সন্তান আইভানহো। আইভানহো পিতা সেড্রিকের আশ্রিতা রাওয়েনাকে ভালবাসেন। রাওয়েনা রাজা আলফ্রেডের বংশোদ্ভূত, সেজন্য পিতা সেড্রিক চান স্যাক্সন রাজবং শের কোনো একজনের সঙ্গে রাওয়েনার বিয়ে হোক। এই নিয়ে মতভেদ হওয়ায়, রাগের মাথায় পিতা পুত্রকে নির্বাসিত করেন। আইভানহো রাজা প্রথম রিচার্ডের সঙ্গে ধর্মযুদ্ধে যোগদান করেন। রাজা রিচার্ডের শত্রু তাঁর ভাই জন। জন রিচার্ডকে সিংহাসনচ্যুত করতে চায়। আইভানহোর সাহায্যে রিচার্ড শত্রুদের পরাজিত করেন। কিন্তু তিনি আহত হন। আইভানহো আহত হওয়ায় তাঁকে শুশ্রুষা করে বাঁচিয়ে তোলেন আইজাক-এর মেয়ে রেবেকা। পরে যখন দুর্বৃত্তেরা রেবেকার সর্বনাশ করতে কৃতসঙ্কল্প, তখন আইভানহো তাকে রক্ষা করেন। আইভানহোর প্রতি রেবেকার প্রেম ভীরু কৃষ্ণকলির মতো। না ফুটেই ঝরে পড়ল। আইভানহোর সঙ্গে রাওয়েনার মিলন হল।
সে যুগে ব্যক্তিত্বকে ছাপিয়ে প্রতিবেশেরই প্রাধান্য ছিল। তাই চরিত্র বিশ্লেষণও প্রতিবেশ-নির্ভর। প্রেম ছিল বীরাচারের অনুপন্থী। তাই তাঁদের প্রেমচিত্র বর্ণহীন, মামুলী ও কৃত্রিম রীতির আদর্শে আড়ষ্ট। সম্ভ্রান্ত বংশীয় নায়ক-নায়িকার প্রেম নিবেদন একেবারে ছকে বাঁধা। আইভানহো রাওয়েনার সমস্ত আচরণ ও সংলাপ শ্রেণিপ্রতিনিধিমূলক। তাঁদের নিজেদের ব্যক্তিগত কথা বড় একটা শোনা যায় না। তবু উপন্যাসে রেবেকা নিন্দনীয় ইহুদী জাতির মেয়ে হওয়ায় তাঁর অবস্থা বৈগুণ্যের জন্য চরিত্রটি অনেকটা প্রাণবন্ত হয়েছে।
বাংলা উপন্যাসের ক্ষেত্রে বঙ্কিমচন্দ্র অনেকটা স্কটের ঐতিহাসিক উপন্যাসের পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন। বঙ্কিমের উপন্যাসে ইতিহাস কল্পনানুরঞ্জিত ও আদর্শধর্মী। ‘দুর্গেশনন্দিনী’তে ‘আইভানহো’র প্রভাব নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলে থাকেন। কিন্তু বঙ্কিম একে কোনোদিনই আমল দেননি। অথচ অনেকেই বঙ্কিমকে ‘বাংলার স্কট’ এই আখ্যায় অভিহিত করেন।
‘দ্য ব্রাইড অব লামারমুর’ (The Bride of Lamarmoor) উপন্যাসটির প্রকাশকাল ও সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
‘দ্য ব্রাইড অব লামারমুর’ উপন্যাসটির প্রকাশকাল ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দ। স্যার ওয়াল্টার স্কট রোমান্টিক যুগের একজন শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক। স্কটের উপন্যাস পড়তে পড়তে যা প্রথমেই অনুভব করা যায়, তা হচ্ছে তাঁর গল্প বলার ক্ষমতা।
স্কটের ‘দ্য ব্রাইড অব লামারমুর’ উপন্যাসের স্যর রেভনঝুড় খানিকটা অতিনাটকীয় চরিত্র। ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার জন্য তিনি রাজকোপে পড়েন। শুরু হয় বিড়ম্বনা, বিপর্যয়, সেই নিয়তি বিড়ম্বিত অবস্থা, নিদারুণ আর্থিক অনটনের মধ্যেও তাঁর মর্যাদা রক্ষার ব্যর্থ প্রয়াস এবং প্রেমের ব্যাপারেও বিপর্যয়কে রোখবার ব্যর্থ প্রচেষ্টা তাঁকে এক অনন্য ব্যক্তিস্তত্বের অধিকারী করেছে। এই লামারমুরের বধূ-প্রসঙ্গ রয়েছে রবীন্দ্রনাথের ‘পঞ্চভূত’ গ্রন্থের ‘নরনারী’ প্রবন্ধে। সেখানে পাই—“লামারমুরের নায়িকা আপনার সকরুণ সচল সুকুমার সৌন্দর্যে যতই আমাদের মনোহরণ করুক না কেন, রেঙ্গুড়ের বিষাদঘনঘোর নায়কের নিকট হতে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়া লইতে পারে না।” শত্রুকে মৃত্যুমুখ থেকে উদ্ধার করেছিলেন যুবক রেভনথুড়। আর ওই শত্রুকন্যার সঙ্গে হয়েছিল তাঁর ভালোবাসা। কিন্তু মিলন হল না। কুচক্রীর ষড়যন্ত্রে মেয়েটির বিয়ে হল অন্যত্র। রেভনস্থুড্ ছুটলেন তাঁকে উদ্ধার করতে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ঠিক সময়ে পৌঁছুতে পারলেন না। মেয়েটি উন্মাদিনী হয়ে আত্মহত্যা করে। লর্ড রেভ্নসুড সত্যই ভাগ্যবিড়ম্বিত।
একটা চমৎকার গল্প বলার ক্ষমতার জন্যই এই উপন্যাসটি পাঠকমনকে আকর্ষণ করে। উপন্যাসের শুরু থেকেই পাঠকমনের কৌতূহল একটার পর একটা ঘটনার আঘাতে ক্রমশ বেড়ে চলে এবং ঘটনার বিয়োগান্তক পরিণতি পরিণামে পাঠক মনকে আবিষ্ট করে রাখে।
স্কটের ‘দ্য ওয়েভালি’ (The Waverley) উপন্যাস সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো।
‘দ্য ওয়েভাব্লি’ উপন্যাসটি প্রকাশের মধ্য দিয়েই ঔপন্যাসিক হিসেবে স্কটের প্রথম আত্মপ্রকাশ ঘটল। প্রকাশকাল ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দ। এই প্রথম তিনি অসাধারণ খ্যাতি অর্জন করলেন। জানা যায়, আট-ন বছর আগে লেখা এক পাণ্ডুলিপির অংশ তিনি হঠাৎ পুরানো আলমারির মধ্যে পেয়ে যান এবং নিজের পুরানো লেখাতে নিজেই বিস্ময়বোধ করেন। এই লেখাটিকেই মেজে ঘসে নতুন করে সমাপ্ত করেন। এটিই তাঁর বিখ্যাত ‘দ্য ওয়েভারলি’ উপন্যাস। উপন্যাস সমাপ্ত করার কিছুদিন আগে তিনি ফার্নহাম-এর কাছে ওরেভাবুলি মাঠে গিয়েছিলেন। নামকরণ সম্ভবত এই সূত্রেই নেওয়া।
এডোয়ার্ড ওয়েভারলি রোমান্টিক মেজাজের এক তরুণ যুবক। কিছুটা তার পিতা এবং কিছুটা তার কাকার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে এবং ইংল্যান্ডের রাজা দ্বিতীয় জেমসের সমর্থক দলে ভিড়ে পড়ে। রাজকীয় সেনাবাহিনীর উচ্চপদে যোগ দিয়ে স্কটল্যান্ডে প্রেরিত হয়। সেখানে ব্রাডওয়ার্ডিনের ব্যারনের কন্যা রোজের সঙ্গে পরিচয় ও ঘনিষ্ঠতা হয়। কিছুদিন পরে এডোয়ার্ড হাইল্যান্ডে বেড়াতে যায় এবং সেখানে স্কটল্যান্ডের শাসকগোষ্ঠীর সমর্থক এক তরুণ দলপতি ফার্গুসের সুন্দরী বোন ফ্লোরার প্রতি প্রেমাসক্ত হয়। তৎকালীন অস্থিরতার জন্য ইংরেজপক্ষীয় সেনাপতি এডোয়ার্ডের সঙ্গে ফ্লোরার এই মেলামেশা ভারপ্রাপ্ত ইংরেজ প্রধান সেনাপতির ভাল লাগল না। ফলে সে জেকোবাইটদের ষড়যন্ত্রের শিকার হল এবং তার দলের সৈন্যদের মধ্যেও অসন্তোষ ও বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ল। শেষ পর্যন্ত এডোয়ার্ড অপমানিত, কর্মচ্যুত ও গ্রেপ্তার হল। অনুরক্তা রোজের চেষ্টায় সে বন্দীদশা থেকে মুক্তিলাভ করে এবং যুবরাজ চার্লসের অনুগ্রহ লাভ করে সে জেকোবাইটদের সৈন্যদলে আবার যোগ দেয়। প্রেস্টনপ্যানের যুদ্ধে সৌভাগ্যক্রমে সে প্রভাবশালী ইংরেজ সেনাপতি ও তাদের পারিবারিক বন্ধু কর্নেল টালবটের প্রাণরক্ষা করে। এই যুদ্ধশেষে কর্নেল টালবটের সহায়তায় এডোয়ার্ড আবার ব্রাডওয়ার্ডিনের ব্যারন পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়। ইতিমধ্যে স্বাধীনচেতা ফ্লোরা কর্তৃক এডোয়ার্ড প্রত্যাখ্যাত হল এবং এর ফলে নরম প্রকৃতি ও সমমনোভাবাপন্ন রোজের প্রতি সে আবার আকৃষ্ট হল। কিছুদিন পর রোজের সঙ্গেই এডোয়ার্ডের বিয়ে হল। ষড়যন্ত্রের অভিযোগে অভিযুক্ত হল ফার্গুস এবং নির্ভীকতার সঙ্গে বিচারের মুখোমুখি হল। ফ্লোরা শেষ আশ্রয় নিল কনভেন্টে।
Leave a comment