ঔপনিষদিক মন্ত্রে নিম্নাত রবীন্দ্রনাথ তাঁর ব্যক্তিগত বিশ্বাস এবং জীবনচর্যাতেও যতদূর সম্ভব সত্য-শিব-সুন্দরের‌ সাধনা করে গেছেন। কাজেই তাঁর সমগ্র জীবনব্যাপী সাধনার ফলোৎপত্তি-রূপ যে অনুপম সাহিত্য সৃষ্টি করে গেছেন এবং সাহিত্য-বিষয়ে যে ধারণা ও বিশ্বাস জীবনভর পোষণ করে এসেছেন, তা-ও সত্য-শিব-সুন্দরের ভাবনায় নিষিক্ত হবে, এটিই তো স্বাভাবিক। বস্তুত রবীন্দ্রনাথ তাঁর সৌন্দর্যবোধ’ প্রবন্ধে সাহিত্যের সঙ্গে সৌন্দর্যের সম্পর্ক এবং সৌন্দর্যের সঙ্গে সত্য ও শিবের নিত্য সম্পর্ককেই প্রকাশ করতে চেষ্টা করছেন।

সাহিত্য-চিত্র-সঙ্গীতাদির রসগ্রহণে প্রথমেই প্রয়োজন সংযমের। এতে একটা প্রশ্ন উঠতে পারে যে শিক্ষাকালে ব্রহ্মচর্য পালন করতে গেলে তো শুষ্কতারই সাধনা করতে হয়, এখানে রসের স্থান কোথায়? মনে রাখতে হবে, জমিতে ফসল ফলাতে হলে প্রথম পর্বে এর ঘাস, গুল্ম উৎপাটন করে একে একটা মরুভূমির শূন্যতাই দান করতে হয়। বস্তুত শেষ রসের জন্য এই প্রাথমিক নীরসতাকে স্বীকার করে নিতে হয়। কিন্তু নিয়মসংযমকেই চরম লক্ষ্য বলে গ্রহণ করলে নিয়মলোলুপতাই হয়তো সপ্তম রিপু হয়ে দাঁড়াতে পারে। এই নিয়মের প্রতি আত্যস্তিক আকর্ষণ মনের কঠোরতা বাড়িয়ে দিয়ে স্বভাব থেকে সৌন্দর্যবোধকে একেবারে পিষে মারতে পারে। তাই সংযম সাধনা হবে পরিমিত, যাতে আনন্দের ভিত্তিটা যথেষ্ট শক্ত হতে পারে। দেহের মাংসপেশী প্রভৃতিকে একটা যথার্থ আকার দেবার জন্য যেমন শক্ত হাড়ের প্রয়োজন, সৌন্দর্যকে পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করবার জন্য তেমনি প্রয়োজন দৃঢ়মূল সংযম। সন্ধ্যাপ্রদীপ জ্বালানোর জন্য কেউ সারা ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয় না, তেমনি সৌন্দর্য উপভোগ করবার জন্য লাগাম ছাড়া প্রবৃত্তির প্রশ্রয় দিলে চলে না।

প্রয়োজনের বিচারে সৌন্দর্যের মূল্য হয়তো বেশি হয়, কিন্তু তার যে একটা আনন্দদানের দিক আছে, সেটি আমাদের উপরি পাওনা। যে কোনো ফলেই আমাদের উদরপূর্তি হতে পারে, তবু যা স্বাদে, গন্ধে, দৃশ্যে সুন্দর, তার প্রতিই থাকে আমাদের আকর্ষণ। আহারের সময়ও তাই শোভনতার দিকেও আমাদের নজর রাখতে হয়। প্রয়োজনের সম্বন্ধে আমাদের দীনতা আর দাসত্ব প্রকাশ পায়। পক্ষান্তরে আনন্দের সম্বন্ধে মুক্তি আছে বলেই জগতের সঙ্গে কেবল প্রয়োজনের সম্বন্ধ না রেখে আমরা আনন্দের সম্বন্ধও বজায় রাখতে চেষ্টা করি। একপতিব্রতা সতী স্ত্রীই যেমন প্রেমের যথার্থ সংযমের মধ্য দিয়েই প্রকৃত সৌন্দর্য উপভোগ সম্ভবপর, সমাহিত সাধকের নিকটই তাই সৌন্দর্য প্রত্যক্ষ হয়ে ওঠে, লোলুপ ভোগী তার স্বাদ পায় না, যেমন পেটুক কখনও ভোজনের রসজ্ঞ হতে পারে না।

বিশ্বের সমস্ত সৌন্দর্য আমাদের দৃষ্টির সম্মুখে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও যে তাকে দেখতে পাইনে, তার কারণ, আমাদের অন্তরে শুচিতার অভাব। এটা ধর্মনীতির কথা নয়, এটা আনন্দের কথা, আর্টের কথা। অবশ্য শাস্ত্রেও বলে যে ‘সুখার্থী সংযতো ভবেৎ। সৌন্দর্যবোধকে চরিতার্থ করতে চাইলে ভোগ-লালসাকে দমন করে শুচি হয়ে শান্ত হতে হবে। অতএব ব্রহ্মচর্যের তথা সংযমের সাধনা দ্বারাই সৌন্দর্যবোধ উদ্বোধন সম্ভবপর।

বাস্তবকে আমরা বিশ্বাস করি তার প্রত্যক্ষতার জন্যই। কিন্তু মানুষের সম্বন্ধে বাস্তবতা অনেকটাই অপ্রত্যক্ষ, তাই কারও মতে নেপোলিয়ন দেবতা, কেউ তাকে বলেন দানব, অথচ উভয় পক্ষই বাস্তবতার দোহাই দেয়। অতএব আসল সত্যটা শুধু প্রত্যক্ষতার উপর তলাতেই ভেসে বেড়ায় না, খানিকটা তার অপ্রত্যক্ষতার মধ্যেও ডুবে থাকে। তাই, যখন দেখি অনেক অসংযত কলাকুশলীরাও সৌন্দর্য সৃষ্টি করে চলছেন তখন সবটাকেই বাস্তব সত্য বলে গ্রহণ করা চলে না। যেমন, যিনি প্রচুর উপার্জন করেন, তিনি যদি প্রচুর ধন নষ্ট করেন, তবে এ কথা বলা সঙ্গত হবে না যে, যিনি ধন নষ্ট করতে পারেন, তিনি উপার্জনও করতে পারেন। বরং এ ক্ষেত্রে বলা উচিত, উপার্জন ব্যাপারে যিনি হিসাবী, সংযমী ও বিবেচনা-বুদ্ধিসম্পন্ন ছিলেন, ব্যয়ের ব্যাপারে তার সেই হিসাব-বুদ্ধি ছিল না। এইভাবেই বলা যায়, কলাকারগণ যে অংশে প্রকৃত গুণী, সেখানেই তাঁরা সাধক, সংযমী ও তপস্বী পুরুষ। প্রথমোক্ত ক্ষেত্রে তাঁরা চরিত্রকে দেখাতে পেরেছেন এবং অন্যত্র তাঁর চরিত্রের অভাব ঘটেছে। এখানে কেউ মনে করতে পারেন, তবে তা সৌন্দর্যবিকাশের ক্ষমতা এবং চারিত্রিক অসংযমের সহাবস্থান সম্ভবপর উভয়ের অপরিণত অবস্থায় তা কখনো কখনো সম্ভব হলেও সৌন্দর্যবোধের যথার্থ পরিণত ভাব কখনও চিত্তের অসংযমের সঙ্গে একই ক্ষেত্রে টিকতে পারে না, তাই বিধাতার সঙ্গে আড়াআড়ি করে বিশ্বামিত্র যে জগৎ সৃষ্টি করলেন, তাতে দত্ত-ক্রোধ-আদি মিশ্রিত ছিল বলে তা শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারেনি। আমাদের ক্রোধ-দত্ত প্রভৃতি ক্ষণকালের জিনিসকে চিরকালের মনে করে বিধাতার সৃষ্টির সঙ্গে বিরোধ করতে গিয়েই বিনষ্ট হয়।

নদী তরঙ্গিত হয়ে সমুদ্রের দিকে চলতে থাকে, যদি কোথাও পাক পড়ে যায়, তবেই ঘূর্ণাবর্তের সৃষ্টি হয়। ফলে যেমন সমস্ত কিছুকে ডোবাবার চেষ্টা করে, তেমনি তার নিজের অগ্রগতিও হয় স্তব্ধ। আমাদের প্রবৃত্তিও কোনো একটা বিন্দুতে কেন্দ্রীভূত হলে নিজের ও পরের সমস্ত কিছু বিনষ্ট করে। য়ুরোপীয় সাহিত্যে যেন সেই পাক খাওয়া ঘূর্ণাবর্তের প্রলয়োৎসব চলছে। সঙ্কীর্ণ পরিধিতে তাকে মনোহর বলে মনে হলেও নিখিলের প্রেক্ষাপটে তার সৌন্দর্যের বিরোধ চোখে পড়ে। অতএব এটাকে শিক্ষার সম্পূর্ণত বলা চলে না, এটা স্বভাবের বিকৃতি। বৃহৎ বিশ্বের মাঝখানের সমগ্রতার সঙ্গে মিলিয়ে না দেখলে উত্তেজনা, সাময়িক আনন্দ ও বিকৃতিকেই সৌন্দর্য বলে ভ্রম হয়ে থাকে। চিত্তের প্রশান্তি ছাড়া সৌন্দর্যবোধকে পূর্ণভাবে উপলব্ধি করা সম্ভবপর নয়।

সঙ্কীর্ণ সীমায় আবদ্ধ বর্বরজাতির সৌন্দর্যবোধ এবং বৃহত্তর জগতে স্থাপিত সভ্যজাতির সৌন্দর্যবোধ তাই এক নয়। ছবি-বিষয়ে আনাড়ি ব্যক্তি পটের উপর রঙের বাহুল্য দেখলেই খুশি হয়। যেমন, গ্রাম্য ব্যক্তি দেউড়ির দারোয়ানের চাপ দাড়ি ও চাপরাস দেখেই মুগ্ধ হয়, রাজার মহিমা তার চোখে পড়ে না। তেমনি চিত্রের যিনি সমজদার, তিনি রঙচঙের ঘটায় মুগ্ধ হন না, তিনি পারিপার্শ্বিকের সঙ্গে মিলিয়ে সব কিছুর মধ্যে সামঞ্জস্য পেতে চান—এটিই তার প্রয়োজন, এতেই তার আনন্দ। এই কারণেই শুধু চোখের দৃষ্টি নয়, তার পিছনে মনেরও দৃষ্টি থাকা চাই—এবং এর জন্য প্রয়োজন প্রকৃত শিক্ষার। মনের দেখায় শুধু বুদ্ধিবিচার নয়, তার সঙ্গে হৃদয়ভাবকেও যোগ করতে হয়। ফুলের চেয়েও মানুষের মুখের সৌন্দর্য বেশি মনে হয় এই কারণেই যে, এতে আকৃতির সুষমা ছাড়াও রয়েছে চেতনার দীপ্তি, বুদ্ধির স্ফূর্তি, হৃদয়ের লাবণ্য, একই কারণে ঈশ্বরের মঙ্গলদূত-রূপে আবির্ভূত হয়, শ্রেষ্ঠদের প্রতি আমাদের আকর্ষণ হয় আরও গভীর।

এখানে আবার একটা প্রশ্ন ওঠে-মঙ্গলের সঙ্গে সৌন্দর্যের সম্পর্ক কী? আমাদের ভালো করে কিংবা প্রয়োজন সাধন করে বলেই কি মঙ্গলকে সুন্দর বলা হয়? তা নয়, যা কিছু মঙ্গল, তার সঙ্গেই জগতের একটা গভীরতম সামঞ্জস্য রয়েছে বলেই তা সুন্দর। সত্যের সঙ্গে মঙ্গলের পূর্ণ সামঞ্জস্যের জন্যই তা’ সুন্দর। সৌন্দর্যমূর্তি এবং মঙ্গলমূর্তি বস্তুতঃ অভিন্ন। মঙ্গলের একটা নিজস্ব ঐশ্বর্য আছে, যার কাছে ক্ষতি ও ক্লেশ নগণ্য বলে মনে হয়। সৌন্দর্য যেমন মানুষকে স্বেচ্ছাকৃত ত্যাগে প্রবৃত্ত করে, মঙ্গলও সেইরূপ করে। জাগতিক ব্যাপারে ঈশ্বরের ঐশ্বর্যকে প্রকাশ করে সৌন্দর্য; আর মঙ্গল তা-ই করে থাকে মানুষের জীবনের মধ্যে। মানুষের অন্তরতম সৌন্দর্যই মঙ্গল। ভোজের আয়োজনে প্রাচুর্য এবং সাজসজ্জা অবশ্যই ভালো, তবে তার সঙ্গে যদি যজ্ঞকর্তার হৃদ্যতা যুক্ত না হয়, তবে সবই ব্যর্থ, কারণ হৃদ্যতাই অন্তরের ঐশ্বর্য ও প্রাচুর্য—এরই সঙ্গে যুক্ত থাকে গভীরতর মঙ্গলসৌন্দর্য।

গর্ভিণী নারীর সৌন্দর্য বর্ণনায় য়ুরোপীয় কবি-সাহিত্যিকগণ কুণ্ঠাবোধ করলেও নারীর চরম সার্থকতা লাভের মুহূর্তটিকে বর্ণনা করতে আমাদের প্রাচীন কবিগণ অকুণ্ঠ ছিলেন। শরতের মেঘের বর্ণ-বিলাস কিংবা বসন্তের মলয় বাতাস বর্ণনায় কালিদাসের অপারগতা ছিল, এমন কথা বলা যায় না, তবু ‘মেঘদূত’ কাব্যে তিনি যে বর্ষার মেঘ, যা মঙ্গলময় পরিপূর্ণতার গম্ভীর মাধুর্যে স্তব্ধ ছিল, তাকেই বার্তা বহন কার্যে নিযুক্ত করেছিলেন, তার কারণ এতেই “সমস্ত পৃথিবীর মঙ্গল ব্যাপারের সঙ্গে পদে পদে গাঁথিয়া গাঁথিয়া তবে কবির সৌন্দর্যরস-পিপাসু চিত্ত তৃপ্তি লাভ করিয়াছে।” ‘কুমারসম্ভব’ কারোও কবি অকালবসন্তের আকস্মিক উৎসবে হরপার্বতীর মিলন ঘটায়নি, তপস্যার অগ্নি দ্বারা উজ্জ্বল করেই তবে পার্বতীর সঙ্গে মহাদেবের মিলন সাধন করেছেন। ‘অভিজ্ঞানশকুন্তলম্’ নাটকেও যখন অনুতাপের সঙ্গে ক্ষমা মিলিত হয়েছে তখনই রাজ-দম্পতির মিলন সার্থক হয়েছে। ফুল যখন ফলের গাঢ়তর মাধুর্যে পরিণত হয়েছে, তখনই সৌন্দর্যের সঙ্গে মঙ্গল একান্ত হয়ে উঠেছে।

যখনই সুন্দর ও মঙ্গলের সম্মিলন ঘটেছে, তখনই ভোগবিলাস দূরীকৃত হয়েছে। তাই অশোকের মহৎকীর্তির কোনো চিহ্ন পাওয়া যায় না তাঁর প্রমোদ উদ্যানে কিংবা রাজপ্রাসাদে, তা বর্তমান রয়েছে দুর্গম গিরিশিখরে, নির্জন সমুদ্রতটে, বিভিন্ন স্তূপ ও স্তম্ভে। নগর রাজধানীকে বাদ দিয়ে অরণ্য-পর্বতে এই সৌন্দর্য-সৃষ্টির কারণ এই এখানে মনুষ্য-রচিত সৌন্দর্য জগতের বৃহত্তর সৌন্দর্যকে অভিবাদন জানাচ্ছে। মানুষের শক্তি ও ভক্তি এখানে আপন সৌন্দর্য রচনাকে মঙ্গলময়ের মঙ্গলরূপের পার্শ্বে বসিয়ে ধন্য হচ্ছে। বিহ্বর সঙ্গে লক্ষ্মীর মিলনের মতোই এখানে মঙ্গলের সঙ্গে সৌন্দর্যের মিলন ঘটেছে। ব্যক্তিগত স্বার্থ ও বাসনা থেকে সৌন্দর্যকে দূরে সরিয়ে না নিলে তার মধ্যে পূর্ণতা আসে না আর এরই জন্য প্রয়োজন সংযম-সাধন।

সৌন্দর্য যতক্ষণ ইন্দ্রিয়ভোগ্য, ততক্ষণ তা স্পষ্ট, অসুন্দর থেকে তার সম্পূর্ণ পৃথক। বুদ্ধি যখন সৌন্দর্যবোধের সহায় হয়, তখন সুন্দর-অসুন্দরের ভেদাভেদটা আর তত স্পষ্ট থাকে না। মন তখন সামঞ্জস্য খুঁজে বেড়ায়, সেটা মিললে আনন্দ বোধ করে, মনে তাকেই সুন্দর বলে মেনে নেয়। এর সঙ্গে যখন কল্যাণবুদ্ধি যুক্ত হয়, তখন সুন্দর অসুন্দরের দ্বন্দ্ব আরও ঘুচে যায়। সতী যতক্ষণ রূপসী ছিলেন, ততক্ষণ মহাদেবকে পাননি, কিন্তু যখন ভাবরসে স্থিত হয়ে সুন্দরী হলেন, তখনই শিবকে লাভ করলেন। সৌন্দর্যের সঙ্গে শিবের অর্থাৎ মঙ্গলের মিলনেই সত্যের যথার্থ রূপ দেখা দিল।

সত্যের যথার্থ উপলব্ধিতেই আনন্দ এবং তা-ই চরম সৌন্দর্য। এই চলমান সংসারে যেখানে আমাদের মন বসে, সেখানেই আছে সত্যের স্বাদ। বস্তুত যেখানেই সত্যের উপলব্ধি, সেখানেই আনন্দকে পাওয়া যায়। মানুষের সাহিত্যাদি যাবতীয় শিল্পকলা জ্ঞাতে বা অজ্ঞাতে সত্যমাত্রকেই উজ্জ্বল করে দেখাচ্ছে। সমস্ত তুচ্ছকে অনাদৃতকে সত্যের গৌরবে আবিষ্কার করে সাহিত্য কলা-সৌন্দর্যে মণ্ডিত করে তুলছে। পাশ্চাত্যের কবি বলেন ‘truth is beauty. beauty truth’, আর আমাদের দার্শনিক বলেন, ‘আনন্দরূপমমৃতং যদ্বিভাতি’। যা কিছু প্রকাশ পাচ্ছে, তা-ই আনন্দরূপ, তাই-ই অমৃত। অর্থাৎ সবাই বলেন সত্যই সুন্দর আনন্দময়। কাব্যে-সাহিত্যে সত্যের এই আনন্দরূপ অমৃতরূপকেই প্রকাশ করা হয়। সত্যকে ইন্দ্রিয়, বুদ্ধি এবং হৃদয় দ্বারা পেলেই তাকে সাহিত্যে প্রকাশ করা যায়। সাহিত্য যেমন হৃদয়ের আবিষ্কার, তেমনি এতেও আছে সৃষ্টি-নৈপুণ্য! মরুভূমির বুকে পিরামিডে, পর্বতগুহা হস্তিগুম্ফায় কিংবা কোনারকের সূর্যমন্দিরে মানুষ আপনার সৃষ্টি-নৈপুণ্যের যে নিদর্শন রেখেছে, তাতে রয়েছে সত্যকে সে যতটা আনন্দরূপে অমৃতরূপে উপলব্ধি করতে পেরেছে, তারই চিহ্ন। সাহিত্যও এরূপ চিহ্ন। যুগে যুগে মানুষের মন এইভাবেই চিহ্ন এঁকে এঁকে সত্যের সুন্দরের মূর্তির প্রতি মানব-হৃদয়কে আহ্বান জানিয়ে চলছে। দেশে-কালে এই চিহ্ন বিস্তৃত হয়ে চলেছে। এই বিশাল ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জগৎ যে আজ আমাদের হৃদয়ের জগৎ হয়ে উঠেছে, তার কারণ মানুষের এই আবিষ্কার-চিহ্ন সাহিত্য। শাস্ত্রে সত্যের বিবিধ শক্তির কথা বলা হলেও সাহিত্য বলে, যে, সত্যই আনন্দ, সত্যই অমৃত। তিনিই রস, এই রসকে লাভ করেই মানুষ আনন্দিত হয়।